“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

বুধবার, ১৪ মার্চ, ২০১৮

ত্রিপুরা ডায়েরি : তিনটি কবিতা



 ।। শিবানী দে।। 
(C)Image:ছবি





















  পাগলি মাসি


বে সে কারও মাথায় বুলিয়ে দিয়েছিল সান্ত্বনার হাত,
তার করুণ ভেজা চোখে পেয়েছিল কেউ সহানুভূতি,
তার অন্তঃস্থল থেকে উঠে আসা আশ্বাসবাণীতে  
কেউ হয়েছিল উদ্বুদ্ধআশা খুঁজে পেয়েছিল জীবনের 
মনের ভেতরে ডুব দিয়ে সে তুলে আনত সত্যবচন,
জীবনের প্রতি যে বিশ্বস্ততার ভাগ্যে ফলে যেত আশীর্বাদ
কিন্তু মানুষ বড় পরনির্ভরনিজের শক্তি খুঁজতে অনীহা,
চেষ্টা করবার পরিবর্তে সমস্যা নিয়ে আসে তার কাছে,
মাসিতুমি করে দাও সমাধানতুমি পথ দেখাও
বোঝে না তারাসে আসলে বলত,
আশা মানেই জীবননিরাশা প্রচণ্ড মিথ্যা
প্রতিদিনই সূর্য ওঠেনতুন দিনের জন্ম হয়
ভক্তদের যাচ্ঞার ভারে তার শরীর শীর্ণমাথায় পাকায় সম্ভ্রান্ত জটা,  
অনিদ্রার ঘোরের ঢুলুঢুলু চোখে তাকে তার উপাস্যের মতই দেখায়,
তার সামনে ধুপ ধুনোখিচুড়ি লাবড়া প্যাড়া ফলমূলের ভোগে
প্রতিদিন দেবীর কৃপা পাবার আশা    
বিরক্তবিতৃষ্ণঘুমের জন্য আনছানদেবীর তা হতে নেই,  
দেবীর আসন বাঘের পিঠেবাঘের হাজার দাঁত নখ
আজ নিভন্ত প্রদীপের মত তার প্রাণ ধুক ধুক করে,
এখন সে শুয়ে আছে পিছন ফিরে লেপমুড়ি দিয়ে
মাথার জটা মেঝেয় লুটোয়
ধূপের সুঘ্রাণ ভেদ করে আসছে পেচ্ছাপের কটু গন্ধ,
সাজানো ভোগ নৈবেদ্যে বসছে মাছিবসছে তার মুখেও
বড় বড় নখওলা হাতে তাড়াচ্ছে ক্ষীণ প্রাণশক্তিতে
নাছোড় ঘ্যানঘেনে আবদারের উত্তরে অবোধ্য চিৎকার
বাজছে কাঁসরবাজছে ঘণ্টামন্দির সাজছে ফুলে,
ক্লান্ত বৃদ্ধা শেষ অপেক্ষায়ওরেক্ষান্তি দেশান্তি দে 







 কাঁটা তারের বেড়া

ই তো কাঁটাতারের বেড়াএকটি বন্ধ লোহার দরজা
সপ্তাহান্তে খোলেপশরা বসে বিকিকিনির হাঁটে
হৃদয়েরও কি বিনিময় হয়মা কস্বেশ্বরী
স্নেহের আঁচল বিছায় কমলাসাগরের ঘাটে ?
একই তো দেখতে দুটো ধারকোনো ফারাক নেই কোথাও
একই মানুষএকই রকম বোল  
এপারের গাছ ডালপালা মেলে ওপারে ছায়া ধরে,
ওপারের মেঘ এপারে ঝরায় জল
এপারের ঘাস হামা দিয়ে এগোয় কাঁটাতারের তলায়,
ওপারের লতা এধারে বেয়ে ওঠে
এধারের বক ওধারে উড়ে জলায় মাছ ধরেওধারের শালিখ
এধারের জমিতে দানা খুঁটে  
ওধারের আজান হাওয়ার সাথে এধারে ভেসে আসে,
এধারের হাওয়া ওধারে ভাসায় ঘণ্টার মিঠে বোল 
মানুষের হাত কেন পলকা বেড়ার দুধারে গোটানো?
বেড়া ভাঙ্গখোলদুয়ার খোল











রবার বাগান


বার বাগানের ন্যাড়া মাথার উপর চাঁদ উঠেছে
উদোম জমির গায়ে উপর অজস্র কাটাকুটি 
লোভের বলিরেখাময় মাটির শরীর
আগাছা নেই ঘাস নেইনেই কোনো পাখির কাকলি 
নেই ঝিল্লির ডাক কিংবা জোনাকির স্ফুলিঙ্গ
উলঙ্গ গণিকা নিঃশব্দে বসে মৃত্যুদিনের প্রহর গোনে
চাঁদের আলোয় তার ধূসর বার্ধক্য আজ বড়ই প্রকট
কত অল্প সময়েই এই গোলককে ধূসর করে দেওয়া যায়
 অতিবৃষ্টির বিষুব সবুজ অঞ্চলেও
আদিগন্ত উদোম টিলাগুলো লাভের রবার গাছ পোষে  
রবারের চৌকো টুকরোগুলো রোদে শুকোয়
গাড়িতে বোঝাই হয়ে যায় কোন দূরে দূরান্তরে
মুঠো মুঠো টাকা ঘরে আসেটাকা!
পাকা ঘরগাড়িকত বিলাসসামগ্রী
সন্তানেরা যাবে দিল্লিব্যাঙ্গালোরআমেরিকা
অনেক টাকার বড় প্রয়োজন
অল্প সময়েই কত জীবনকথার ঝাঁপ ফেলা যায়
ধর্ষিতা উদোম জননী পড়ে থাকে শূন্য রবার বাগানে
সারা অঙ্গে কাটাকুটি নিয়ে সূর্য  চাঁদের আলোর নিচে
তার আর সন্তান হবে না  



কোন মন্তব্য নেই: