“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

মঙ্গলবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০

ডিজিটাল ভিখিরি

             রফিক উদ্দিন লস্কর    

 

(C)Imageঃছবি

 

 

 

জকাল আছে কত ডিজিটাল ভিখিরি  
ফেসবুক আর ইউটিউবে দেখা পাই তারি।
কেও খুঁজে কমেন্ট বা করতে একটি লাইক
সত্যমিথ্যার ধার ধারেনা শতাধিক পাইক।
সাজুগুজু, পরিপাটি, আবার ভিখিরির দল! 
ডিএসএলআর বা স্মার্টফোন সহায় সম্বল।   
এমন বাহানা করে, ভাবে সব মানুষ বোকা
আজ মূল্যবোধ বিবর্জিত কত শত খোকা।
কেহ  হাটে সারাদিন ফেসবুকের পাতাতে
লাইক কমেন্টের টেনশন  ঘুরপাক মাথাতে।  
আজ ঘরে বসে ভিখিরিরা হাত পাতে বেশ
ওরা নেশায় পড়িয়া করে জীবনটাও শেষ।   
ওরা রাতারাতি বড়ো হওয়ার স্বপ্নে বিভোর    
সোনার ছেলেরারও আছে গলায় বহু জোর।  
সাংঘাতিক সাংবাদিক আর পাবেন গায়ক 
এই যুগের ভিখিরিরা কিন্তু পোশাকে নায়ক।  
পরের জমিনে বসতি গেড়ে করে অহংকার
ওদের মতো বুদ্ধিজীবির দেখা মেলা ভার। 

২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ ইং
কাটলিছড়া, হাইলাকান্দি (আসাম-ভারত)

সোমবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০

ভদ্রতার বাইরে

              রফিক উদ্দিন লস্কর    

(C)Imageঃছবি


 

 

 

 

 

 

 

 

 

কুনের মতো চোখ দু'টি পড়েছে যেথায়
জীবন্ত জীবেরও বিনাশ ঘটবে সেথায়।
হায়েনার মতো বসে যারা সুযোগে খোঁজে 
ওরা মিথ্যের মুখোশ পরে সবসময় যুঁজে। 
বোকা ভাবে সবাইকে যত্তসব ধূর্ত শেয়াল
অতি চালাকের গলায় দড়ি হয়নি খেয়াল। 
নিজের স্বার্থ করতে হাসিল অন্যের মাঠে
সভ্য সমাজে এমন দুরাচার কেমন খাটে!?   
মুখোশ পরে ওরা করে যায় তাদের দুর্নীতি
বড্ড কঠিন হয় বুজতে এদের মতিগতি।
ওরা মুখেমুখে তোমায় দিবে কতই আশা
বেলাশেষে দেখবে সব ছিলো মিথ্যায় ঠাসা।
অন্যের দোষ খুঁজা এটাই মাত্র ওদের কাজ
নিজে করে মন্দ কাজ নেই তাতে লাজ।
শুধু বড় বড় কথা বললে বড় হওয়া যায়না
সততা, আত্মবিশ্বাস হয় মনুষ্যত্বের রচনা।

২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ইং
কাটলিছড়া, হাইলাকান্দি (আসাম-ভারত)

রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০

কৃষক

      রফিক উদ্দিন লস্কর  

 

 

(C)Image:ছবি


 

 

 

 

রা রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে
ফসল ফলায় মাঠে,
আমার দেশের কৃষক ভাইয়ের
দেখা পাবে হাটে।

ওরা কষ্ট করে যে ফসল ফলায়
ঝরায় গায়ের ঘাম,    
এই সমাজের কারো কাছে ওরা
পায়নি সঠিক দাম।    

ওরা পেটটাও ভরে পায়নি খেতে 
রোজ দু'বেলা ভাত,
তারা ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে
কেঁদে চলে সারারাত।

ক্ষুধার কি জ্বালা দুনিয়ার বুকে
ধনীরা কি কভু বোঝে?
ওদের দুঃখ কষ্ট দুর হবে কিসে
সেই পথ নাহি খোঁজে।

কৃষক ভাই সে হতে পারে গরীব
সবসময়ই থাকে সৎ,
ধান্দা করেনি চাষি বড়দের মতো  
খোঁজেনি বেজাল পথ। 

ওরা হাঁটে দীর্ঘপথ শুনাতে কিছু
খরা, দেনা, শস্যের দর ,
কেও শুনেনি ভাই ওদের আর্তনাদ
ওরা দুঃখি জনম ভর।

কৃষকের রক্ত ঘামে হয়েছে উর্বর
আমার দেশের মাটি,
ওরা অভুক্ত রাজ্যের রাজা-সৈন্য
সোনার চেয়েও খাঁটি।

২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ইং
কাটলিছড়া, হাইলাকান্দি (আসাম-ভারত)

শনিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০

নরাধম


.          রফিক উদ্দিন লস্কর 

 


 

 

 

 

 

 

তোমার ঘৃণার চশমাটা যদি খোলো
এই পৃথিবীকে দেখবে অনেক সুন্দর,
যদি বেআব্রু মুখটায় লাগাম টানো
দেখবে পৃথিবীটা ভালোবাসার বন্দর।
মিথ্যের পাহাড়ে তুমি হও হাতী বাঘ
জানি সত্যের দাবানলে হবে ছারখার,
হিংসার বাজারে কর প্রভাতফেরি
দয়ার ভুবনে জানি অবসান হবে তার।
বিভেদের প্রাচীর যতো করবে উঁচু
সম্প্রীতির কম্পনে তাহা পড়বে খসে,
যদি ঈর্ষার তির ছুঁড়ে ঘায়েল কর
আমি আনন্দঅশ্রু হয়ে হাসবো বসে।
পাথর হৃদয় জানি দয়াহীন থাকে
অধম হয়েও যদি চালাও ছোরা বুকে,
উত্তম হয়ে সেদিন রবো নিরুত্তর
মানবতার সন্ধানে ঘুরবো ভূলোকে।

২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ইং
কাটলিছড়া, হাইলাকান্দি (আসাম-ভারত)

বৃহস্পতিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০

নির্ঘুম রাত


            রফিক উদ্দিন লস্কর 

 

(C)Image:ছবি

 

 

 

 

 

 

 

 

নিশীথের শয্যা এখন বিষাদের চাদর
বুকের যমুনায় চলাচল অশ্রুর আদর।
মনের শহরে শত অট্টালিকার ফাঁকে
একান্তে মেঘবালিকা আলপনা আঁকে।
বহু বিবর্ণ ছবি জীবনের অ্যালবামে
কালের দর্পণে সব ভাসে রঙিন খামে।
নির্জন রাতে আমি ও একফালি চাঁদ
বহুদূর রাত গড়ায় নিতে বেদনার স্বাদ।
জোনাকি পোকার ঐ আলোর করে
বেজে ওঠে মেলোডি বেদনার বালুচরে।
আকাশের একপ্রান্তে ছায়াপথের মতো
হৃদয়ে সুপ্ত আগ্নেয়গিরি অসংখ্য ক্ষত।
অনন্ত একাকী আমি হৃদয়ের প্রান্তরে
বেঁচে আছি আঁধারে স্বপ্নের চিবুক ধরে।

২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ইং
কাটলিছড়া, হাইলাকান্দি (আসাম-ভারত)

বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০

নিদাঘদিনে শীতের স্মৃতিঃদস্তয়ভস্কি’র ইউরোপ কথা

 

(C)Imageঃছবি

 

।। সপ্তর্ষি বিশ্বাস ।।

 

তদিনে Poor Folk, The Double, White Nights বা Humiliated and Insulted এবং The House of the Dead হেন রচনাগুলি লিখিত, প্রকাশিত হয়ে গেছে। ১৮৬২ সাল এসেছে এই গ্রহে। রাশিয়া দেশে এসেছে নিদাঘ। দস্তয়েভস্কি পাড়ি জমিয়েছেন ইউরোপে। আড়াই মাসের সফর শেষে ফিরে এসে সে বছর শীতেই লিখতে বসেছেন তাঁর ইউ-রূপকথা অথবা ইউরোপ কথা। ভ্রমণ-কাহন নয়। ভ্রমণরত মানুষটির মর্মকথা। যদিও দাবী করেছেন দস্তয়েভস্কি ভ্রমণকালীন নোটনির্ভর এই রচনা তবে পাঠ আরম্ভ করেই বোঝা যায় যে আদতে তা তিনি করেন নি কেননা গ্রন্থটিতে এর কোনো প্রয়োজন নেই। এই মর্ম-ভ্রমণকথা ১৮৬২/৬৩র ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি না হয়ে হতেই পারে ২০৬২/৬৩র এমন কোনো ভূগোল যেখানে

      দস্তয়েভস্কির Winter Notes on Summer Impressions কে বিদগ্ধেরা তাঁর মেজরনা মাইনররচনা বলবেন জানিনা তবে আমার কাছে আটটি অধ্যায়ের এই নভেলা-অবয়ব গ্রন্থটির মূল্য অনেক। মূল্য অনেক দস্তয়েভস্কির মনোজগতের, তাঁর পরবর্তী রচনার সূত্র হিসাবে, যেমন তেমনই ১৮৬২ সালের দেড়শো বছরেরও পরের সময়ের অন্ধকার ছায়ায় সেই সময়কে উপলব্ধি করবার নিমিত্তও।

দস্তয়েভস্কির ইউরোপ-বিমুখতা, ইহুদী-অস্বস্তি, নির্বাসন জনিত মানসিক সমস্যা, আবেগ মথিত অদ্ভুত জাতীয়তাবাদ ইত্যাদি ইত্যাদি অথবা তাঁর রচনার জটিলতার অন্তর্গত বহুমাত্রিকতা’ ‘স্বর-বহুলতা’ – এই সমস্তই বহু আলোচিত, বহু বিদ্বানজন দ্বারা আলোচিত এবং আলোচিত হবে, হতে থাকবে ভবিষ্যতেও। আমার এই রচনায় এই সকল অনুষঙ্গে যদিবা এসেও পড়ে তাহলেও তা থাকবে অনুষঙ্গ হিসেবেই। Winter Notes on Summer Impressions আমাকে শোনায় এক ভিন্ন কাহন।

            আমি দস্তয়েভস্কির মুগ্ধ পাঠক শুধু নই আমি তাঁর ভক্ত নতুবা গ্রন্থটির প্রথম দুইটি অধ্যায় এবং তৃতীয় অধ্যায়েরও বেশ কিছুটা হয়তো পার হতে হতামই না সক্ষম। যদিও অধ্যায়গুলি গ্রন্থটির পঞ্চম অধ্যায় “Baal” এ পৌঁছানোর প্রস্তুতিপর্ব, যদিও এই অধ্যায়গুলিতেও মাঝে মাঝেই ঝলসে ওঠে দস্তয়েভস্কির সূচীভেদ্য অন্তর্দৃষ্টি তথাপি অধ্যায়গুলি কিঞ্চিৎ ক্লান্তিকর। যেন রানওয়ে ধরে ছুটতে থাকা এরোপ্লেন যা ডানা তুলে আকাশে ভেসে পড়ে পঞ্চমে, পঞ্চম অধ্যায়ে, যেখানে দস্তয়েভস্কি বলে ওঠেন:

Can this, you think, in fact be the final accomplishment of an ideal state of things? Is this the end, by any chance? Perhaps this really is the “one fold”? Perhaps we shall really have to accept this as the whole truth and cease from all movement thereafter?...

কী এই বিপন্ন বিস্ময়েরউৎস যার ছায়ায় দাঁড়িয়ে এমন অসহ যন্ত্রণায় আর্তনাদ করে ওঠেন দস্তয়েভস্কি? যে দস্তয়েভস্কির জীবনে ইতিমধ্যে ক্ষত করে গিয়েছে নির্বাসন, বিক্ষত করেছে প্রিয়জন বিয়োগ, জটিল প্রেম ও দাম্পত্য সেই দস্তয়েভস্কি এই ভাবে আমর্ম কম্পিত কোন নারকীয়তায়? … এই বিপন্ন বিস্ময়েরউৎসারণ ঘটায় লন্ডন শহরের ক্রিস্টাল পেলেইস্‌যা একদা বিশ্বের সাতটি আশ্চর্যের চেয়েও দর্শনীয় হয়ে উঠেছিল পৃথিবীবাসির কাছে। এই অভ্র প্রাসাদদেখানোর প্রদর্শনী তখন চলছিল লন্ডন শহরে। সেই অভ্রভেদী অভ্র প্রাসাদও তা দেখে জীবনকে ধন্য করবার নিমিত্ত এসে জড়ো হওয়া পিপীলিকাহেন জনতা দস্তয়েভস্কির মর্মে ঘটায় অগ্নিকান্ড। তিনি লিখেন:

It is all so solemn, triumphant and proud that you are left breathless. You look at those hundreds of thousands, at those millions of people obediently  trooping into this place  from all parts of the earth - people who have come with only one thought, quietly, stubbornly and silently milling around in this colossal palace; and you feel that something final has accomplished here - accomplished and completed. It is a biblical sight, something to do with Babylon, some prophecy out of the Apocalypse being fulfilled before your very eyes.

এখানে এসে মনে পড়ে আরেক কবির অনুভব, এমনি অহং-বিত্ত, অহং-বৃত্তের পরিধিটিকে সহসা চাক্ষুষ দেখে ফেলে:

রবীন্দ্রনাথ দাঁড়ালেন ন্যুইয়র্কের

                           ষাটতালা বাড়ির ছায়ায়

       কে উঁচু? – উচ্চতা

চূর্ণ-চূর্ণ হলো দৈত্যরাজ্যে, কোটি জ্বলন্ত ডলার-অর্কের

   আলো-নেভা কালো ছাইয়ে জমলো তুচ্ছতা।

  গান জেগে রইলো মহাকালের মায়ায়।

 – চৈতন্যের শুভ্র স্তম্ভ কবির উদ্ভাবনায়

 'তিন প্রশ্ন' (অংশ),অমিয় চক্রবর্তী'

দগ্ধ দস্তয়েভস্কি বলে চলেন:

You feel that a rich and ancient tradition of denial and protest in needed in order not to yield, not to succumb to impression, not to bow down in worship of fact for the ideal.... You sense that it would require great and everlasting spiritual denial and fortitude in order not to submit, not to capitulate before the impression, not to bow to what is, and not to deify Baal, that is, not to accept the material world as your ideal."

অতঃপর নিশীথ-লন্ডন-ছবি:

“prostitutes swarm by night in their thousands. You will find old women there and beautiful women at the sight of whom you stop in amazement. There are no women in the world as beautiful as the English.”

একই গ্রন্থে প্যারিস বিষয়ে বলতে গিয়েও দস্তয়েভস্কি টের পান একই রকমের এক মৃত্যুমুখী টানের উপস্থিতি:

 “Both Paris and London have one thing in common: the same desperate yearning, born of despair, to retain the status quo, to tear out by the roots all desires and hopes they might harbour within them, to damn the future in which perhaps even the very leaders of progress lack faith, and to bow down in worship of Baal.” …

বাল’ – ইহুদী লোককাহিনীর, ধর্মীয় সাহিত্যেরো সেই দেবতাকিংবা অপ দেবতাযাকে তার নানান দৈবকিংবা দানবিকক্ষমতাহেতু পূজিত হতে দেখে আদত দেবতাবা দেবতারাক্ষুব্ধ হয়েছিল। … Baal এই অনুষঙ্গে কতোটা সঠিক কিংবা বেঠিক সে তর্কে না গিয়ে বলি, যে, পৃষ্ঠাগুলি পাঠ করতে করতে অবলীলায় মনে আসে:

I wander thro' each charter'd street,

Near where the charter'd Thames does flow.

And mark in every face I meet

Marks of weakness, marks of woe.

 

In every cry of every Man,

In every Infants cry of fear,

In every voice: in every ban,

The mind-forg'd manacles I hear

 

How the Chimney-sweepers cry

Every blackning Church appalls,

And the hapless Soldiers sigh

Runs in blood down Palace walls

 

But most thro' midnight streets I hear

How the youthful Harlots curse

Blasts the new-born Infants tear

And blights with plagues the Marriage hearse

 

মহাকবি WILLIAM BLAKE এর এই কবিতাটির ( London ) সঙ্গে ইংরেজি সাহিত্যের সঙ্গে সামান্য পরিচয় থাকা পাঠকও পরিচিত। BLAKE এর কবিতাটির জন্মকাল ১৭৯৪ আর দস্তয়েভস্কি আঁকছেন ১৮৬২ সালের চিত্র। উভয়ের রচনার আপাত: বিষয় লন্ডন নগর হলেও উভয়ের রচনার সময়কাল ভিন্ন, ভিন্ন তাঁদের ব্যক্তিত্ব, ভিন্ন তাঁদের দৃষ্টি। তথাপি, আজ ৩০০ বৎসরের দূরত্বে বসে একটি রচনা মর্মে নিয়ে আসে অন্যটিকে। যে নগর পরবর্তীতে প্রেরণা হয়ে উঠবে The Waste Land কাব্যের, সেই নগরীর সান্ধ্য জীবন দস্তয়েভস্কিকে দিয়ে লিখিয়ে নেয় এই পংক্তিগুলিঃ  ‘…in London the masses can be seen on a scale and in conditions not to be seen anywhere else in the world. … Saturday nights half a million working men and women and their children spread like the ocean all over the town, clustering particularly in certain districts, and celebrate their sabbath all night long until five o’clock in the morning, in other words guzzle and drink like beasts to make up for a whole week. They bring with them their weekly savings, all that was earned by hard work and with many a curse. Great jets of gas burn in meat and food shops, brightly lighting up the streets.’ এই ছবিটি আর শুধুমাত্র লন্ডনের কিংবা প্যারিস, নিউইয়র্কের নয়। বহু কালেই ছবিটি ছড়িয়ে পরেছে একদা কথিত তৃতীয় বিশ্বেও। এই বেঙ্গালোর শহরের এবম্বিধ রাত্রিগুলিকে আমি চিনি। এখানেও  ‘as if a grand reception were being held for those White Negroes. Crowds throng the open taverns and the streets. There they eat and drink. The beer houses are decorated like palaces. Everyone is drunk, but drunk joylessly, gloomily and heavily, and everyone is somehow strangely silent. Only curses and body brawls occasionally break that suspicious and oppressively sad silence....everyone is in a hurry to drink himself to insensibility... wives in no way lag behind their husbands and all get married together, while children crawl and run about among them”দস্তয়েভস্কির সমসাময়িক আরেক মহাপ্রাণ, যিনি দস্তয়েভস্কির দ্বারা ঘৃণিত ইউরোপেরই সন্তান, তাঁর লন্ডন-ছবির দিকে তাকানো যাক:  “After roaming the streets of the capital a day or two, making headway with difficulty through the human turmoil and the endless lines of vehicles, after visiting the slums of the metropolis, one realises for the first time that these Londoners have been forced to sacrifice the best qualities of their human nature, to bring to pass all the marvels of civilisation which crowd their city; that a hundred powers which slumbered within them have remained inactive, have been suppressed in order that a few might be developed more fully and multiply through union with those of others. The very turmoil of the streets has something repulsive, something against which human nature rebels.

তথাকথিত অর্থে কবিনন এই বাক্যগুলির রচয়িতা, তবু একি নয় কবিতা: “The hundreds of thousands of all classes and ranks crowding past each other, are they not all human beings with the same qualities and powers, and with the same interest in being happy? And have they not, in the end, to seek happiness in the same way, by the same means? And still they crowd by one another as though they had nothing in common, nothing to do with one another, and their only agreement is the tacit one, that each keep to his own side of the pavement, so as not to delay the opposing streams of the crowd, while it occurs to no man to honour another with so much as a glance. The brutal indifference, the unfeeling isolation of each in his private interest, becomes the more repellent and offensive, the more these individuals are crowded together, within a limited space.

And, however much one may be aware that this isolation of the individual, this narrow selfseeking,is the fundamental principle of our society everywhere, it is nowhere so shamelessly barefaced, so self-conscious as just here in the crowding of the great city” 

                            এই অংশ পাঠ করতে করতে কিংবা দস্তয়েভস্কিরবাক্যগুলি পাঠ করতে করতে মনে কি আসেনা রক্তকরবী’, ‘যক্ষপুরী’? …    

“The dissolution of mankind into monads, of which each one has a seseize everything for themselves, while to the weak many, the poor, scarcely a bare existence remains. What is true of London, is true of Manchester, Birmingham, Leeds, is true of all great towns. Everywhere barbarous indifference, hard egotism on one hand, and nameless misery on the other, everywhere social warfare, every man's house in a state of siege, everywhere  reciprocal plundering under the protection of the law, and all so shameless, so openly avowed that one shrinks before the consequences of our social state as they manifest themselves here undisguised, and can only wonder that the whole crazy fabric still hangs together” – বাক্যগুলি, আগে যেমন বলেছি,  তথাকথিত অর্থে কোনো কবির নয়। বিদগ্ধ পাঠক নিশ্চয়ই বুঝেছেন যে অংশটি Friedrich Engels এর The Condition of the Working Class in England গ্রন্থের The Great Towns অংশ থেকে উদ্ধৃত।  

                                    Friedrich Engels  এর গ্রন্থটি  ১৮৪২ থেকে ১৮৪৪ সালের মধ্যে লিখিত। দস্তয়েভস্কি গ্রন্থটি ১৮৬২ সালের আর BLAKE এর কবিতাটির জন্মকাল ১৭৯৪। এই রচনাত্রয়ীকে একত্রে স্মরণ করবার মূলে  দারিদ্রের অপরূপ-নির্মম বর্ণনাই শুধু  নয়। কিন্তু আমার চিন্তার সূত্রটি এই, যে, ব্লেইক স্বপ্নাদেশ পাওয়া সাধক-কবি, এঙ্গেলস, এক বস্তুবাদী তথা দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদে বিশ্বাসী এক বিপ্লবীজন আর দস্তয়েভস্কি, এনার্কিজমের ধ্যান ধারণা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত না হতেপারা এবং সেন্ট্‌ সাইমনি সমাজতন্ত্রআর রাশিয়ানঅর্থডক্সচার্চের ঈশ্বরএর মাঝামাঝি পিষ্ট হতে থাকা একজন দার্শনিক অথচ তিনজনেই দেখছেন একই সত্য, প্রকাশও করছেন একই রকমের মর্মন্তুদ চীৎকারে, অভিশাপে। গর্জে উঠছেন  “এ আমার, এ তোমার পাপবলে শুধু একটি ক্ষেত্রেই এঙ্গেলস অপর দুই মহাপ্রাণ থেকে আলাদা যেখানে এঙ্গেলস চিনে নিতে পারছেন, যে, এই বাইবেলী ‘Baal’ টি মূলত: আর কিছু নয় পুঁজিবাদের নগ্নতম স্বরূপ।

       Winter Notes on Summer Impressions এ দস্তয়েভস্কি সমাজতন্ত্রের উল্লেখ করেছেন এবং মৃদু হলেও স্পষ্ট সমর্থনের দিকেই ঝুঁকেছেন তিনি। তবে তাঁর সমাজতন্ত্র’-ধারণা যে ফ্রেডরিখ এঙ্গেলসের সমাজতন্ত্র’-ধারণার সঙ্গে মেলেনা তা আগেই বলেছি। সমাজতন্ত্র সম্বন্ধে দস্তয়েভস্কির ধারনাকে অনুধাবনের নিমিত্ত এই বাক্যটি হয়তো একটি সূচক: “Socialism – this is also Christianity, but it proposes that it can succeed with reason” Winter Notes on Summer Impressions পর্বের অনেক অনেক পরে ১৮৭২-৭৫ সালের নোটবুকে কথাটি লিখেছেন দস্তয়েভস্কি। কাজেই তাঁর চোখে ওই নারকীয় ছবি ক্ষমতার, অহঙে, ভীতির, মমতাহীনতার সমস্তই পাপীইউরোপের যার প্রতিপক্ষে তিনি খাড়া করেছেন তাঁর রাশিয়ান জাতীয়তাবাদঅথচ রাশিয়ান মৃত্তিকা সঙ্গে তাঁর যোগসূত্র মূলত: সাংস্কৃতিক কেননা আদি পুরুষের নিরিখে দেখলে দস্তয়েভস্কি ঢের বেশী পোলিশ। তথাপি লক্ষণীয়, হয়, এই যে, পুঁজিবাদ এমনই এক ঘৃণ্য দানব যার হিংস্র, রক্তাক্ত নখরগুলিকে শনাক্ত করে নিতে অসুবিধা হয়না উইলিয়াম ব্লেইক থেকে এঞ্জেলস, দস্তয়েভস্কিভিন্ন বিশ্বাসের সন্ততি হলেও কোনো মহাপ্রাণ ব্যক্তির, কোনো যুগেই। তবে ওই হিংস্র থাবাটির হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার যুক্তি-পথ না আছে ব্লেইকে, নাত দস্তয়েভস্কিতে।

ফিরে যাই আবার আরম্ভে। Winter Notes on Summer Impressions’ এ আমার একটি প্রাপ্তি ওই দহনের অনুভূতি আর দ্বিতীয় প্রাপ্তি আবারো ফিরে পাওয়া বিশ্বাস পুঁজিবাদের কবল থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র পথ হিসেবে যৌক্তিক, দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ ও তার সন্ততি সামাজতন্ত্র যা Christianity নয় আর তাই  it can succeed with reason’

           রচনাটিতে ইংরেজি উদ্ধৃতির এই আধিক্য প্রকৃত প্রস্তাবে আমার অক্ষমতাহেতু। এঙ্গেলস এর মূল ইংরেজি থেকে মূলানুগ অথচ তেমনি কাব্যিক অনুবাদ করবার ক্ষমতা আমার নেই। দস্তয়েভস্কির গ্রন্থটি আমি পড়েছি Kyril FitzLyon কৃত ইংরেজি অনুবাদে এবং সেই অনুবাদও এমনই সাবলীল যে কোথাও মনে হয়নি অনুবাদ বলে। এই অবলীল অনুবাদ হয়তো দুর্বল হয়ে পড়ত আরেকবার অনুবাদে। আমাকৃত বঙ্গানুবাদে।

 

২২ সেপ্টেম্বর২০২০

 বেঙ্গালোর

 


https://amarsonarbanglaamitomaybhalobasi.blogspot.com/2020/09/blog-post_23.html