।। সাদিক মোহাম্মদ লস্কর ।।
কী কাজ করিতে আইলি এ ভব সংসারের মাঝে….
পেশা
মানে কী? অন্যের চাইতে বেশি রোজগার করার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা, না চাল-ডালের ব্যবস্থা
করা, না একই কাজ নানা ভাবে করে আজীবন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা? যে যেভাবে নেয় সেই ভাবেই
কাজ করে যায় আজীবন। আমরা যে কাজই করি না কেন একে অন্যের সেবা করে একে অন্যের চাহিদা
মেটানোটাই উদ্দেশ্য – You’re gonna have to serve somebody। আমিও পেশা বলতে তা’ই বুঝি।
পেটের জোগাড় করার জন্যে এত হাপিত্যেস করতে হয় না। আসলে যাদের অন্ন সংকট তাদের রক্ত
চুষে পিঠের জোগাড় করতেই জনম কাবাড় হয়ে যায়। ঠিক কোন জায়গা থেকে আমি পড়াশোনা ছাড়া অন্য
কাজ শুরু করেছিলাম, তার হদিস পাওয়াই মুশকিল।
পাইওনিয়ার ২০১৫ |
এদিকে ২০১৪ সালে আমার কাছে আরেকটা প্রস্তাব এল। প্রায় বন্ধ হয়ে পড়া আরেকটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বাঁচাতে হবে। ‘মিল্লত একাডেমি’ নামের ইংলিশ স্কুলটিকে বাঁচাতে গেলাম। দেখলাম সেখানেও কোনও সরকারি অনুমোদন নেই। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ওই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের জড়ো করে অসহায় অভিভাবক ও শিক্ষকদের মুখে হাসি ফুটিয়ে
পাইওনিয়ার ২০১৯ |
অধ্যক্ষের কার্যালয়ে চেখে দেখা ২০১৭ |
অধ্যক্ষের কার্যালয় ২০২০ |
এদিকে ২০১৬ সালে বাঁশকান্দি নেনা মিয়া উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালন ও উন্নয়ন কমিটি পুনর্গঠনের সময় আমাকে একটি মহল থেকে সভাপতি মনোনয়নের প্রস্তাব দেওয়া হল। বিধায়ক রাজদীপ গোয়ালা ও স্কুলের অধ্যক্ষ সহ অনেকেই আমাকে চাইলেন স্কুলের সার্বিক উন্নয়নের জন্যে। অনেকে বিরোধিতা করেছেন, কিন্তু বিজেপির জেলা তথা রাজ্যস্তরের নেতারাও এই আপত্তিতে সায় দেননি। কয়েক দশকের অবহেলায় নিমজ্জিত জাহাজের মত এই বিশাল প্রতিষ্ঠানকে প্রথমে ডাঙায় তুললাম প্রবল প্রতিকুল পরিস্থিতিতে অর্থাৎ পরিকাঠামোর উন্নয়ন হল। এখন তাকে ঘষা-মাজা করে কাজের উপযোগী করে তোলা অর্থাৎ শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা বেশ কষ্টকর অভিজ্ঞতা। পড়ুয়াদের পড়ার দরকার নেই, অভিভাবকদের যত্ন নেওয়ার দরকার নেই, শিক্ষকদের পড়ানোর দরকার নেই, পরিদর্শকের পরিদর্শনের দরকার নেই। কারণ একটাই – নকল। নকল যোগানকে আশ্রয় করে পরীক্ষা আর ভর্তির সময় অনেকের অনেক ধরণের রুজিরুটির ব্যাপারও ছিল। আমি সেই মৌচাকে হাত দিলাম আর ভেঙে ফেললাম। পরিস্থিতি কী হতে পারে তা সহজেই অনুমান করা যায়। স্বয়ং অধ্যক্ষ বহুবার আমাকে হঠানোর চক্রান্ত করে বিফল হয়েছেন। অন্য কেউ এই মৌচাকে হাত দেওয়ার সাহস করে না। কিন্তু কেউ প্রকাশ্যে আমার বিরোধিতাও করেনি। তবে আমাকে কেউ ভয় পায় না – ভালোবাসে, হয়তো একটু সমীহ করে। কেউ কেউ সহমর্মিতার সুরে হুমকিও দিয়েছেন যে নকল বন্ধ করলে সমাজবিরোধিরা নাকি আমাকে হত্যাও করতে পারে। এরই মধ্যে এসে পড়ল মহাবিপদ – করোনা ও লকডাউন। স্কুল কবে খুলবে ঠিক নেই, মনে হচ্ছে সব কিছু আবার নতুন করে শুরু করতে হবে।
সরকারি চাকরি করার উদ্দেশ্য আমার ছিল না। এমনকি শিক্ষকতা করাও আমার উদ্দেশ্য ছিল না। কিন্তু নিয়তি ধাক্কা দিতে দিতে আমাকে শিক্ষক হিসেবেই কাজ করাচ্ছে। এই একটা কাজ আমি খুব ভালো করে করতেও পারি আর স্বতঃস্ফুর্তভাবে করি। এখন প্রায় অর্ধশত শিক্ষিত মানুষ আমার সহকর্মী হিসেবে কাজ ও রোজগার করছেন। শিক্ষা নিয়ে আরও কাজ করতে চাই। এ প্রসঙ্গে একটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলছি, কাছাড়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া সরকারি স্কুল দু’টিকে যদি অর্ধেক খরচে আমার কাছে সমঝে দেওয়া হয় তো সেগুলোকেও সবচেয়ে ভালো স্কুলে রূপান্তরিত করার আত্মবিশ্বাস আমার আছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন