“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

শনিবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৯

নদীটি সাপের মত

।। অভীককুমার দে।।

অনলাইন ভেবে হাত বাড়ালেই
যৌগিক আসনে বুঁদ শরীর মরা গাছের মত,

লাশের জঙ্গলে প্রতারণার আগুন,
স্বাধীনতার মন্ত্র পাঠ শেষে সুমনের ভেতরেও রাক্ষস জন্মায়,
অতঃপর আমাজনের মতই জ্বালিয়ে মারে।

এসময় মরা জঙ্গলের ভাঙা বুক খোঁজে কে !

অফলাইন থেকে কেউ ডেকে বলছে-
কোথাও সবুজ নেই আর
বাতাসে ভাসছে পোড়া মানুষের ছাই
শুকনো নদীটি সাপের মত
প্যাঁচিয়ে আছে গলা।

জম্পুই

।। অভীককুমার দে।।

ওয়াচ্ টাওয়ারে সন্ধ্যা ঘনালেই নীরবতা
মেঘের বুকে সূর্যের রেখে যাওয়া প্রেম
চুপিচুপি চুমু খাবে বনের গালে,
এমন ত্রিকোণ প্রেম ভালোবাসে না কাঞ্চন।

একটু আগেই বৃষ্টি হয়েছিল খুব
পাহাড়ি পাতায় ভেজা ঠোঁটের কামুক আদর
চোখের পাতায় দিগন্তরেখা
কালো আকাশ- নদী
শরীর ছড়িয়ে ক্লান্ত জম্পুই

একা রাত কাটে কাঞ্চন।

মনের নাম মহাশয়

।। অভীককুমার দে।।

মনে করি, বিদ্যুৎ আছে। আমি ঘুমাতে এসে বাতিগুলো বন্ধ করে দিয়েছি। এখন এসময় চারদিকে অন্ধকার, তাই দেখছি না; যদিও চোখ খোলা আছে।

মনে করি, যেহেতু রাত, সূর্য নেই, উত্তাপও নেই। রাত মানেই নীরব, নীরব মানেই নিয়ন্ত্রিত অস্তিত্বের নির্বোধ অবস্থান। এখানে একেকটি স্বাধীন লাশ, তাই গোলযোগ নয়।

মনে করি, অন্ধকারের ঢলে শরীর অনিচ্ছাকৃতভাবেই প্রবাহিত। চোখ বন্ধ করা যাক। তারপর নাগিন নৃত্যের মুদ্রা নিজস্ব বিছানায়। ধরা যাক, প্রতিটি রাতের নির্ঘুম যাপনবিধি ঘুম নগরীর দরজায়, মিলেমিশে স্বপ্নের কোলাজ।

মনে করি, বিদ্যুৎ চমকাবে এক সময়। আপাতত 'চোরের কিল মতে মতে' খাওয়া যাক। যেহেতু বোবার শত্রু নেই, সেহেতু 'সুখের ঘুম' বলে অভিনয় হলে ক্ষতি কি ?

মনে করি, এই শরীর ঘামে ভিজে যায়নি, বরং ধরা যাক সুখানুভূতির অতিরিক্ত অশ্রু নিষ্কাশন পথ খুলে রেখেছে লোমের গোড়া।

লড়াই

।। অভীককুমার দে।।

সারাজীবন ধরেই লড়াই চলছে
লড়াইয়ের মানে বুঝে নিতে চেষ্টাও চলছে,

জীবনটার পেটের ভেতর খাবার ফুরিয়ে গেলে
দিন শেষে কিছুই থাকে না বিশেষ
এক একটি দিন কেটে যায় অবান্তর,
লড়াই চলছে...

শো- ম্যান কুঁজ

।।অভীককুমার দে।।

হে অর্জুন, দাস হয়ে কেন ! এত শুভেচ্ছার কী প্রয়োজন ? যিনি অকৃতজ্ঞ তার আবার ত্রিকালের সমগ্রতায় সাধ কেন ! তিন শতাব্দীর খবর জানেন না যিনি ত্রিকালদর্শী ! হনুমান হবার ইচ্ছে জেগেছে বুঝি ?
হে অর্জুন, তুমিও বোঝো, শো- ম্যান নিজেই কুঁজ, প্রদর্শনী। মরার অমরত্ব হয় না, অমরত্ব হয় কাজের।
হে অর্জুন, দাসত্ব কেন !  চোখ ভেদ করার যুগ নেই এখন। তীরন্দাজী করতে হলে লক্ষ্যভেদ জানতে হবে। ত্রিকাল নিয়ে গেছে সত্য ত্রেতা দ্বাপর। এখন কলি। পায়ে পায়ে কৃতজ্ঞ খোঁজার চেয়ে মহাপ্রভুর মত দুহাত উপরে তুলে পথ খুঁজুন, অন্ততপক্ষে কুরুক্ষেত্রের মত যুদ্ধ হবে না।
হে অর্জুন, কলির লোভ গিলে অন্ধ হয়ে গেলেন ? বিবেকের কোথাও বিন্দুমাত্র আলো যদি থাকে, দেখুন-- শো- ম্যান কুঁজ ত্রিকালদর্শী নয়, সাধকও না। প্রদর্শনীর ভেতর নিজেও দৃশ্যমান নৈবেদ্য, আপনার মতই।

শুক্রবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৯

জন্মাষ্টমী

             রফিক উদ্দিন লস্কর

আজ তিথি জন্মাষ্টমী তাই মহা ধূমধাম,
শোভিত মন্দির আর ভক্তের কৃষ্ণনাম।
পাড়ার এয়োরা উপবাসী সমস্ত দিন,
আপনমনে কৃষ্ণধ্যান, কৃষ্ণনামে লীন।
দৈববাণী হয়েছিলো কংস নরপতিরে,
দৈবকীর অষ্টম গর্ভজাত বধিবে তারে।
রাতদিন কংস রাজা চিন্তিত অন্তরে,
কবে অশনিসংকেত দৈবকীর উদরে।
লৌহ আবেষ্টনীতে কংসের কারাগার,
বন্দি দৈবকী তাতে, আছে পাহারাদার।
ঘুমের আবেশে যখন কারারক্ষীগণ,
দৈবকির কোল আলো শ্রীকৃষ্ণ তখন।
কৃষ্ণ যখন জন্ম লভে কংস কারাগারে,
স্বর্গ হইতে দেবগণে পুষ্প বৃষ্টি করে।
জনক বসুদেব ছিলেন চিন্তায় মগন,
কি করে রক্ষিবেন প্রাণের কৃষ্ণধন।
অঝোরে বরিষা ঝরে রাত্রি অন্ধকার,
বসুকি তার সহস্র ফণা করে বিস্তার।
পাশবিক সকল শক্তি করিতে দমন,
স্বর্গ হতে দ্বাপর যুগে হলো আগমণ।
যমুনা পারাপারে আসেন শৃগাল বাহন,
যশোদার কাছে কৃষ্ণকে করতে অর্পণ।

শনিবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৯

ইচ্ছে করে

  রফিক উদ্দিন লস্কর

ইচ্ছে করে হারিয়ে যেতে
সবুজ কোনো বনে,
সঙ্গ দিতে শীতল বায়ের
গাছগাছালির সনে।

তলিয়ে যেতে ইচ্ছে করে
নীল সাগরের জলে,
চুপটি করে শুনবো কথা
ঝিনুকেরা যা বলে।

ইচ্ছে প্রবল মিশে যেতে
রাতের অন্ধকারে,
কষ্ট নিয়েও থাকবে হাসি
অধরের দুই ধারে।

বৃহস্পতিবার, ১ আগস্ট, ২০১৯

নিমিত্ত



         

                                  ।।     শিবানী ভট্টাচার্য দে  ।।

স্কুলের সংস্কৃত বইয়ে একটা শ্লোক পড়েছিলাম, যার বাংলা অর্থ হল--

জল, আগুন, বিষ, শস্ত্র, ক্ষুধা, ব্যাধি, পাহাড় (উঁচু জায়গা) থেকে পড়া---- এসবের কোনো একটি নিমিত্ত পেয়ে দেহধারীদের মৃত্যু হয়ে থাকে।’ 

এই নিমিত্তগুলোর পরিধির ভেতরে যে আরো কত 'শাখাকারণ' আছে, যুগ যুগ ধরে আরো কত নতুন নতুন নিমিত্তের উদ্ভব হয়েছে, পঞ্চতন্ত্রকারের  তা হয়তো মাথায়ই  আসেনি। 
  
এখন আমরা দেখি এই নিমিত্তগুলোর মধ্যে আরও কত শাখাকারণলুকিয়ে থাকতে পারে। 

১। জল : সাধারণ ভাবে, জলে ঝাঁপ দিলে সাঁতার-না-জানাদের মৃত্যু হতে পারে, জলে হাত-পা বেঁধে ফেলে দিলে ডুবে মৃত্যু হতে পারে। খরা অঞ্চলে দিনের পর দিন খাবার জল না পেলেও হতে পারে, বন্যায় ভেসে গিয়ে মৃত্যু হতে পারে।   
প্রাচীন শ্লোক-লেখক ভাবেনও নি হয়তো, যে জল আরো কত ভাবে মৃত্যুর নিমিত্ত হতে পারে। যেমন, আর্সেনিকদুষ্ট জল বা কলিফর্ম যুক্ত জল খেলে সঙ্গে সঙ্গে না হোক, কিছুদিন ধরে রোগে ভুগে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে পারে। মাটির তলার জল বহুজাতিক জলব্যবসায়ীরা তুলে নিলে, বা সরকারি উদ্যোগেই বাঁধ দিয়ে নদীর একদিকে জল জমিয়ে অন্যদিকে জলশূন্য করে ফেললে, জলা, পুকুর, নদী ভরাট করে ফেললে্‌, জলাভাবে মানুষসহ সব প্রাণী ধুঁকতে ধুঁকতে জিভ বের করে শেষ শ্বাস নেবার রাস্তায় যেতে পারে।

২।আগুন : ঘরে আগুন লাগলে, দাবানলে ঘিরে ফেললে, বজ্রাঘাতে আগুন লাগলে প্রাণীর মৃত্যু হতেই পারে, যুদ্ধের আগুনেও মৃত্যু হতে পারে, এসব পুরোনো কথা। জানা ছিল না যা, তা আগুন আরো কত ভাবে লাগতে  পারে। বাজারকে  দাহ্যপদার্থের গুদামে পরিণত করে অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা না রাখলে,  এবং বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি  এবং বিদ্যুৎসরবরাহ ব্যবস্থার সংস্কার না করার ফলে জতুগৃহ তৈরি হতে পারে, তাতে  মানুষের দাহন হতে পারে।  
পণের দাবি না মেটায় স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির লোকেরা বউয়ের গায়ে আগুন দিলে, দলিতদের বাড় বেড়েছে মনে করলে তাদের গায়ে আগুন লাগিয়ে দিলে, সংখ্যালঘুদের বাড়িতে বা ব্যাগে  গোমাংস  রাখার সন্দেহ হলে  তাদের বাড়িতে, গাঁয়ে এবং গায়ে আগুন ধরালে যে কিছু দেহীর প্রাণ খাঁচাছাড়া করার অন্যতম নিমিত্ত হতে পারে, তা সে আদ্যিকালের শ্লোক-রচয়িতার ধারণায় বোধ হয় ছিল না।
      
৩।বিষ : আগেকার দিনে অপরাধীদের বিষপানে মৃত্যুর বিধান ছিল। কেউ কেউ বা জীবন  অসহ্য হলে হাতের কাছে যা বিষ পেত খেয়ে মরত। পঞ্চতন্ত্রকার জানতেন না, এছাড়াও অনেক ভাবে অনেক ধরণের বিষ প্রয়োগ করা যায়। খাবার জিনিষ চকচকে দেখাতে বিষরঙ দিয়ে চকচকে করা হয়, মাছে মাংসে ফর্মালিন, সব্জিতে পেস্টিসাইড, ফলে কার্বাইড, জলে আর্সেনিক--- বিষ প্রয়োগে  প্রাণীহত্যার অনেক রাস্তা আছে। তা ছাড়া আছে প্লাস্টিক। পলিব্যাগ খেয়ে গরু মোষ, সাগরে ফেলা পলিব্যাগ ও অন্যান্য প্ল্যাস্টিক খেয়ে তিমির মত জন্তুও বেশ মরছে, বিষে প্রাণী মরবার উদাহরণ এখন জলেস্থলে। যানবাহনের ধোঁয়া, রাসায়নিক কারখানার বিষবাষ্প ফুসফুসে ঢুকে যাওয়াও প্রাণীদের অক্কা পাওয়ার নিমিত্তের  তালিকায় আজকাল ঢুকে গেছে। 

৪।শস্ত্র : অস্ত্রশস্ত্র তো মারার জন্যই। সে শত্রু মানুষ হোক, আর পশুপাখি শিকার করার জন্যই হোক। তবে এখন শস্ত্রের অনেক রকম হয়েছে, আগুন, বিষ, ব্যাধি অনেক কারণই শুধু এক শস্ত্রে লুকোনো থাকতে পারে। শস্ত্র থেকে আগুন, শস্ত্র থেকে ব্যাধি, শস্ত্র থেকে বিষ উৎপাদন হতে পারে, আর অস্ত্রশস্ত্র একদেশ থেকে অন্য দেশে, এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে  আকছার চালান হচ্ছে, এসব সেই একই নিমিত্তে।
   
৫। ক্ষুৎ(ক্ষুধা) : দীর্ঘসময় খাদ্য না পেয়ে মানুষ মরতে পারেই, দুর্ভিক্ষ অনাহার সব  যুগেই আছে, তাই শ্লোকের মৃত্যু-কারণের তালিকায় ক্ষুধা আছে। কিন্তু শ্লোক-রচয়িতার যা জানা ছিল না, তা  হল, ক্ষুধাতে খাবার না পেয়ে কাঁচা লিচুর মত টক্সিক ফল খাওয়া, আর বছরবছর এন্‌সেফেলাইটিসে গোছাগোছা বাচ্চার টেঁসে যাওয়া। ক্ষুধার্ত গরীব  মানুষকে সস্তায় গুদামের পচা চাল রেশনে খাইয়ে, ভেজাল খাবার খাইয়ে রোগ বাঁধিয়ে তাড়াতাড়ি পটল তুলতে যাবার রাস্তা  করা। ধনী চাষির খামারে উৎপাদিত কেমিক্যাল সার আর কীটনাশকে ভরপুর খাদ্যবস্তু  পরীক্ষার জন্য  সাধারণ  মানুষই গিনিপিগ ---  খিদে পেয়েছে, ব্যাটারা খা। খাবার না থাকে তো আমের আটির শাঁস সেদ্ধ, তেঁতুলের বিচির আটা খা। ইঁদুর খা, পোকা খা, কচুঘেঁচু তুলে খা, বাঁচিস না বাঁচিস  তাতে কি। বাঁচার উলটো রাস্তাটা খোলাই আছে। ক্ষুধার নিমিত্ত মৃত্যুর শাখাকারণের তালিকায় অন্যতম সংযোজন।

৬। ব্যাধি : রোগে মানুষ মরবে না তো কি? মানুষ কেন, পশু পাখি মাছ উভচর সবাই রোগে মরে। রোগ ব্যাধি চিরন্তন। এর জন্য অত ভেবে লাভ নেই। হাসপাতাল হবে, ডাক্তার থাকবে, ওষুধ থাকবে সেবিকা থাকবে, পরিষেবা থাকবে, আর রোগ ভ্যানিস এতো সব চাওয়াটা বড্ড বেশি বেশি চাওয়া না? সব কিছু থাকলে যমরাজ কি করবে? তাই দুর্লভ ডাক্তার নার্স থাকলেও ভুল চিকিৎসা থাকতে পারেই, ক্যাপস্যুল থাকলে ভেতরে ওষুধ না থাকতেও পারে, প্রেসক্রিপশনের লেখা  চার রকমের ওষুধের মধ্যে  দুরকম হাসপাতালে নেই, সারা বাজার ঢুঁড়েও পাওয়া না যেতে পারে, এ্যাম্বুলেন্স মিছিলে ট্র্যাফিক জ্যামে পড়ে রুগী মরতে পারে। কাজেই ব্যাধিতে মৃত্যু  তখন ছিল বটে, এখন তার সূত্রে আরো ঢের কারণ বেরিয়েছে, অতোসব আগেকার শ্লোক লেখার দিনে জানা ছিল না। 

৭। পাহাড় থেকে পতন : পাহাড়ে কখনো সকনোই বেড়াতে যাওয়া হয়, দুঃসাহসী যারা অগম্য  পর্বতে আরোহণ করতে যায়, তাদের দুচারজনের মৃত্যু হতে পারে। আগেকার দিনে অবশ্য পাহাড়ের উপর থেকে অপরাধীকে ফেলে দিয়ে মেরে ফেলা একটা অন্যতম শাস্তি ছিল। আজকাল  বহুতল   থেকে ঝাঁপ দিয়ে কেউ কেউ আত্মহত্যা করে, বহুতল থেকে ফেলে দিয়ে কাউকে কাউকে হত্যা ও করা হয়  উড়ন্ত বিমানের  যান্ত্রিক গোলযোগে ভেঙ্গে পড়ে যাত্রীর মৃত্যুও  আকছার।  এসব ঘটনায় যন্ত্রের বিকলতা, উচ্চস্থান,  আগুন, কুয়াশা,  এতগুলো ফ্যাক্টর একসঙ্গে কাজ করে-- এতোসব প্রাচীনেরা জানতেন না।

তাঁদের দেওয়া নিমিত্তগুলোর  বাইরে আরো কত বেরিয়েছে আজকাল। সেগুলোর অনেক  রকমফের, নিত্যনতুন নানারকম বেরোচ্ছে, দেখতে পাবেন চারদিকে তাকালে। কিছু প্রাইভেট, কিছু পাবলিক। যেমন,

কোনো মেয়ে কোনো প্রেমিকের ডাকে সাড়া দিল না, ছুঁড়ে মারো অ্যাসিড, শেষ করে দাও মেয়েটিকে। জ্বলে দগ্ধে মরুক সে। 
  
বাচ্চাকে ধর্ষণ করে সে কঁকিয়ে উঠবার আগেই তার গলা টিপে নালায় ফেলে দাও। 

কোনো মেয়েকে নেতা  ধর্ষণ করেছে, মেয়েটি পুলিশে জানিয়েছে। মেয়েটির বাপকে জেলখানায় নিয়ে মারতে মারতে শেষ করে দাও, ট্রাকের নিচে ফেলে মেয়েটিকে তার বাকি গুষ্ঠিসুদ্ধ পিষে দাও।

কোনো অজুহাতে, (বিশেষ করে দেশদ্রোহের) কোনো প্রতিবাদীকে ধরে বিনা বিচারে জেলে ভরে রাখ দিনের পর দিন। এমনিই রোগে, অর্ধাহারে সে মরবে, গ্যারান্টি।

তবে এ পর্যন্ত সব চাইতে অমোঘ একটা নিমিত্ত আবিষ্কার হয়েছে --- এন আর সি। আপাতত  উত্তরপূর্বাঞ্চলে কার্যকরী। পরে সারা  দেশেই কার্যকরী হবে বলে শোনা যাচ্ছে। একসঙ্গে অনেক মানুষকে শেষ রাস্তা দেখানোর ব্যাপারে  মোক্ষম কার্যকর। যাদের অনভিপ্রেত মনে কর, তাদের বেশ কয়েক লাখ লোককে বিদেশি বলে দাগিয়ে দাও, তারা হবে না ঘরকা, না ঘাটকা। রাষ্ট্রহীন হবার ভয়ে, ডিটেনশন ক্যাম্পে যাবার ভয়ে গলায় দড়ি দিয়ে গাছে নয়তো ঘরের কড়িতে ঝুলবে, নয় রেলের লাইনে  গলা দেবে, নয় বিষ খাবে, নয়তো এমনিই ভয়ে হার্টফেল হয়ে মরবে, আরো কত কি করে মরতে পারে। যদি এ রাস্তা না নেয়, তাহলে কনসেন্ট্রেশন, থুড়ি, ডিটেনশন ক্যাম্পের মধ্যে চাঁদ সূর্যের চেহারা ভুলে, ঘর পরিবারের মুখ ভুলে, নিজের ও  বাপের নামধাম ভুলে গাদাগাদি করে দিন কাটাবে, মানে, বেশিদিন কাটবে না, কাটতে পারেনা, এমন মোক্ষম এই নিমিত্তটি।

প্রাচীনেরা প্রাণ বের করবার এত সব নিমিত্তের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন না।