(বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের এই কবিতাটি
এমনিতেই আমার প্রিয়। এককালে পার্থ ঘোষের গলাতে শোনা আবৃত্তি এখনো স্মৃতিতে
ধরা আছে। আন্তর্জালে সন্ধান না পেয়ে , এখানেই তোলে রাখলাম।--সুশান্ত কর)
(C)image:ছবি |
সাঁওতাল মেয়েদের গান
পাহাড়িয়া মধুপুর , মেঠো ধূলিপথ
দিনশেষে বৈকালি মিষ্টি শপথ;
‘মোহনিয়া বন্ধুরে! আমি বালিকা
তোরই লাগি গান গাই, গাঁথি মালিকা।
‘আজো সন্ধ্যার শেষে খালি বিছানা;
আমি শোব , পাশে মোর কেউ শোবে না---
তুই ছাড়া এই দেহ কেউ ছোঁবে না।’…
সুরে সুরে হাওয়া তার মিষ্টি বুলোয়;
সাঁওতাল মেয়ে-কটি দৃষ্টি ভুলায়;
দিন শেষ---ধুধু মাঠ—ধুধু মেঠো পথ
সাঁওতাল মেয়ে-কটি ছড়ালো শপথ!
হাওয়ায় হাওয়ার মতো তাদের শপথ!
২
(ধীরে মাদল)
আয় মিতেনী, আজ রাতে
চাঁদকুড়োনো মাঝ রাতে
আবছা আলোর কান্নাতে
মুখ রেখে তুই ঝর্ণাধারে আয়!
আয় জোয়ানের মন –জ্বালা
নাচ দিয়ে সই, গাঁথ মালা---
চুমুর গেলাস মদ ঢালা
দে ছুঁড়ে দে, তিন পাহাড়ের গায়।
(জোরে মাদল)
আহা মাদল , মাতাল মাদল বাজছে তোরই জন্যে
লো!
খুশির হাওয়া, পাগলা হাওয়া গান দিল রাজকন্যে
লো!
আয়, কাছে আয়, মন দে লো!
৩
চোখ কেন তোর কাঁপছে মেয়ে
বুক কেন তোর দুলছে?
গাল দুখানি লালচে , শরীর
সাপের মতোই ফুলছে?
কাকে
মারবি ছোবল লো?
কোন
ছেলে তোর কী করলো!
মাদল ভেবে কেউ কি তোকে
আজকে বাজালো?
ফুল দিয়ে নয় , ফাগ ছড়িয়ে
বিকেল সাজালো?
কেমন দিবি সাজারে?
আর যাবি না পাহাড়ে!
৪
এত গান আকাশে
এত গান বাতাসে!
সাঁওতাল
মেয়েটির টিপ কপালে
ছেলেটি পেছন তবু নিল কী-বলে?
রাঙা-ফুল মেয়েটির খোঁপায় জ্বলে
ছেলেটি বাজালো বাঁশি তবু
কী-ব’লে?
এত মদ আকাশে
এত মদ বাতাসে!
নেশা
যেন ধ’রে যায় ছেলেটির বাঁশিতে
মনে
হয় দোষ নেই ভালোবাসা-বাসিতে,
তবে
চাঁদ সরে যাও, যাও তা হলে…
‘ও
ছেলে, পেছন তুই নিলি কী বলে?’
‘পথ
ভুলে গেছি মেয়ে খিলখিল হাসিতে;
শোন,
কোনো দোষ নেই ভালোবাসা-বাসিতে।’
এত আলো আকাশে
এত আলো বাতাসে!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন