“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

মঙ্গলবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

স্বগত সংলাপ-২৬

 [ Photo Curtsy: Jayanta Das,
https://www.facebook.com/photo.php?fbid=888366911271172&set=a.129311733843364.27274.100002936130787&type=1&theater   ]



© সুনীতি দেবনাথ


জ আর কোনও কাজ নেই, কোনও কাজ নয়,
এসো আমি এখানে বসি তুমি ওখানে
আমি বসি ঝাউগাছটার তলে সমুদ্রকে সামনে নিয়ে 
কোথায় বসবে তুমি নিজেই করো ঠিক বেশী দূরে না,
আমার সামনে সমুদ্র তোমার সামনেও সমুদ্র উত্তাল।
এ সময় আর কিছু নয় দুজনে শুধু কথা বলা
বহুদিনের জমা কথা আজ বলাবলি শেষ হবে
তারপর দুজনে মিলে নাহয় গুণে যাব ঢেউ সমুদ্রের ঢেউ।
আমাদের দুজনের এখন সাত সমুদ্র দূরত্ব,
আজ সেই দূরত্ব পেরিয়ে স্মৃতির নৌকোয় ভেসে
সমুদ্রকে সামনে রেখে দুজন মুখোমুখি।

স্মৃতির বলাবলি কথারা নীরবতার ঘেরাটোপে থাকে
একথা আমি জেনে গেছি, তুমি জানো কি না জানা নেই।
নৈঃশব্দ্যেও শব্দ সব ঢেউয়ের মত মাতাল হয়ে আসে
আরও বেশী মুখরতা নিয়ে ভিড় করে জানি তা,
আমাকে এই নির্জন সৈকতে নৈঃশব্দ্যের কাছে ঠেলে দিয়ে
দুজনের মাঝামাঝি অদৃশ্য দেয়াল তুলে কোথায় যে গেলে
জানা তা হলোনা হলোনা
এবার দেয়াল ভাঙ্গার পালা, সীমাতিক্রমণের সময় মোক্ষম
কথা শুধু কথা দিয়ে দুজনের দুজগৎ ভরাবার পালা,
অগুনতি কথা জড়ো করে অন্যতর কথামালা সাজাবার দিন।

নাহয় অদৃশ্যেই থাকলে তুমি আমি ভেবে নেবো ঠিক সামনেই আছো।
এতোদিন যেসব কথা উচ্চারণের বহির্ভূত ছিল, রুদ্ধ ছিল,
আজ আকাশকে সাক্ষী রেখে সমুদ্রকে সাক্ষী রেখে
অনর্গল কথা বলে যাবো, জমা কথা শেষ হলে সব
তোমার কথা সব সমুদ্রের গভীর মন্দ্ররোলে ঢেলে দিয়ো।
আমি ঠিক বুঝে নেবো, নাও যদি বুঝি কোন ক্ষতি নেই,
অনেক নাবলা কথা রেখে আমিও তো একদিন চলে যাব
যাবার আগে সমুদ্রের কাছে আমাকেও সব কথা জমা দিতে হবে।
সেদিন সেই চরম পরম ক্ষণে তোমার কথা আমার কথা
সমুদ্রই মিলিয়ে মিশিয়ে গড়ে তুলবে এক অপরূপ কথোপকথন।

স্মৃতির মলিন তমসুকে এমন সব ঘটনার রূপরেখা নেই,
নেই চলে যাবার কালে আমাকে বলার মত বাকি বহু কথার চিহ্নরেখা।
মনে হয় সেসব তুমি সমুদ্রকে দিয়ে গেছো, সমুদ্রও তাই
সারাদিন সারারাত তরঙ্গে তরঙ্গে অভিঘাত তুলে শুধু কথা বলে
আর স্মৃতিকে ঘিরে রাখা নাবলা কথার নিগূঢ় বাণী উচ্চারণ করে।
তাই বহু বহু মানুষের আনন্দ বেদনার বহু কথা থেকে গেছে,
অনুচ্চারিত থেকে গেছে, যুগ যুগ ধরে চলে যাওয়াদের বিস্তৃত আখ্যান,
মনে হয় যাবার আগে তাদের নাবলা কথার আখ্যান সমুদ্রের জিম্মায় দিয়ে গেছে।
আর তাই সমুদ্র দিনরাত সারাক্ষণ তরঙ্গের বিক্ষুব্ধ উচ্চারণে
সারাক্ষণ কথা বলে চলে তরঙ্গের আঘাতে আঘাতে।
গম্ভীর ভয়াল মন্দ্রকণ্ঠে সমুদ্র বেদনার বিস্তৃত কথা উচ্চারণ করে,
আর ঢেউয়ের মাথায় মাথায় নরম সফেন আস্তরে অনুক্ত বাণী নাচে।
অনন্তকালের চলে যাওয়া মানুষের ইতিকথা
অনন্ত যাত্রার সব কথা বুকে নিয়ে বলে বলে কালসমুদ্র তরঙ্গ বিক্ষুব্ধ।


-------------------------
[ কলকাতা, ভারত নিবাসী আমার প্রিয় আলোকচিত্র শিল্পী জয়ন্ত দাশ ১৯ আগস্ট, ২০১৫ তারিখে World Photography Day উপলক্ষে তাঁর যে মূল্যবান ফটোগ্রাফ পোস্ট করেন, সেই অনবদ্য ফটোগ্রাফটি আমার কবিতার অনুষঙ্গ হিসেবে ব্যবহার করতে দিয়ে আমাকে আনন্দ দিলেন। আমি তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ। ]

কোন মন্তব্য নেই: