“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

শুক্রবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

অর্ধেক নয় চাই পূর্ণ আকাশ

[ photographer Jayanta Das, West Bengal, India   
https://www.facebook.com/jayanta.das.3133?fref=ts ]























© সুনীতি দেবনাথ

ক অদ্ভুত সংগ্রাম নিরন্তর অন্দরে 
অন্তরে দৃশ্যমান জগতের সবখানেই
আমিও সে সংগ্রামের শরিক একজন।
আমার সংগ্রামের হাতিয়ার একমাত্র আমার কলম,
আমার প্রিয় কলম। আমার সংগ্রাম
আমার অস্তিত্ব আর অধিকার
প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম - নিরবধি কালের সংগ্রাম।
নারীকে অর্ধেক আকাশের অধিকার দেবার কথা শোনা যায়,
শুনে হাসি পায়- নারীর অধিকার আর পূর্ণতা কি আধাআধি ভাগ করা?
পূর্ণতার মানচিত্রে কখনো কি ঠাঁই নেই তার?
অথচ কলম হাতে নিলে মনে হয় নারী বা পুরুষ
এমন কোন চেতনা নয়, পূর্ণতার প্রত্যাশী এক প্রাণ শুধু।

আমার সমগ্র চেতনা বলে আমি পূর্ণ হব,
পূর্ণ হব মানব জাতির এক পূর্ণ অংশীদার রূপে।
চৈতন্যের প্রথম প্রভাতে মনে হয়েছিল আমার সংগ্রাম তো ব্যাপ্ত যুগ যুগান্তরে-
সম্পূর্ণ এক মানবী হবার কামনা আমার,
অর্ধেক আকাশ কি পূর্ণতাকে ধরে?
যখন আমার কলমটাকে,
এই সংগ্রামের হাতিয়ারটাকে
শক্ত করে আঙ্গুলে চেপে ধরি
সমগ্র সত্ত্বাকে আমার
কাগজের বুকে অক্ষরের নিয়ন্ত্রিত পরিভাষায় সুস্পষ্ট করে প্রকাশ করতে চাই,
সে মুহূর্তে মনে হয়
আমি তো নারী মাত্র নই
অথবা মদমত্ত কোনো পুরুষও নই।

আমি তাহলে কে? আমি তাহলে কী?
নানা সব প্রশ্নের জটিল ধারাপাতে অনুভব করি
আমার পরিচয় হতে পারত একজন সম্পূর্ণ মানব অথবা মানবী,
যে আখ্যাই হোক না কেন দেওয়া
শ্রেণী বা খণ্ডতার ঊর্ধ্বে আমার পরিচয় হতে পারত পূর্ণতার মানদণ্ডে।
সমগ্র চেতনার যে ফসল আমি উজাড় করে দিতে চাই,
সে ফসলের জন্য
অর্ধেক আকাশ বড় ছোট পরিসর।

অর্ধেক আকাশ - তাহলে কি সূর্যও খণ্ডিত?
খণ্ডিত চাঁদ খণ্ডিত গ্রহ নক্ষত্র আর বিশ্বজোড়া যা কিছু সবই খণ্ডিত?
এ পৃথ্বীর এ বিশ্বের সমগ্র অণু পরমাণুর সংসার -
তার অর্ধেকের অধিকার নিয়ে আমি পূর্ণ হব কবে?
পুরুষ ও নারী সব কিছুর অর্ধেকের অধিকারী।
অর্ধেক আকাশ নিয়ে
মানব প্রজাতির দুটি ধারা
কোনও দিন কি পেতে পারে পূর্ণতার স্বাদ?
মনে তো হয় না।
খণ্ড মাঝে মনে হয় পূর্ণতা অধরা থেকে যায়।

তার চেয়ে ভাল মনে হয়
আমাদের সমগ্র সত্ত্বাকে নিয়ে
এক অভূতপূর্ব অনবদ্য প্রার্থনায় অমল হয়ে উঠি,
এই পৃথিবী এই আকাশ মানুষের গড়া রাষ্ট্র ও সমাজ
জন্মলগ্ন থেকে লৌকিক অলৌকিক যত সব বিষয় আশয়
আমাদের ধরে আছে ঘিরে আছে,
আমাদের সত্ত্বাকে ছেয়ে আছে -
আমাদের পৃথক দেহ আত্মা মননকে বিদ্ধ করে আছে,
সেসব কিছু মিলে তো পূর্ণতার একক সৃষ্টি হয়,
সে এককের বহির্ভূত হবার ক্ষমতা আছে কি কারও?
তাহলে সমগ্র চেতনা নিয়ে
অস্তিত্ব নিয়ে প্রত্যেকেই আমরা পূর্ণ হয়ে উঠি।
অনুভবের ভাঁজে ভাঁজে ইচ্ছাকে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত করে
আমরা সবাই পূর্ণ হতে চাই,
পূর্ণতার বিশাল ব্যাপ্তির প্রান্তরে সততই লীন হতে চাই।
খণ্ডিত আকাশে নয়, অর্ধেক আকাশেও নয়,
এক সুসম্পূর্ণ সুসমঞ্জস আকাশে সম্পূর্ণ অস্তিত্ব নিয়ে
প্রত্যেকই আমরা মানবসত্তার অপূর্ব বৈভবে বেঁচে যেতে চাই।

----------------------------------------------------------------
আমার সংগ্রাম আমার জিজ্ঞাসা আমার স্বপ্ন দেখার কবিতা ' অর্ধেক নয় চাই পূর্ণ আকাশ'! এ কবিতা আমার অস্তিত্বের দাবি উচ্চারণের কবিতা। শ্রদ্ধেয় বাচিক শিল্পী বাংলাদেশের জনপ্রিয় প্রতিবাদী কবিতার আবৃত্তিকার বদরুল আহসান খান আমার প্রিয় বন্ধু এই কবিতাটি আবৃত্তি করে এর প্রাণ প্রতিষ্ঠা করলেন। আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, শ্রদ্ধা নিবেদন করছি শিল্পীর প্রতি ! বদরুল সাবের কণ্ঠে youtube - এ এটি আমার চতুর্থ কবিতা । এই কবিতা আমি সকল নারী- মুক্তির সংগ্রামীদের উৎসর্গ করছি।







কোন মন্তব্য নেই: