“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

শুক্রবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০১৯

মৃত্যঞ্জয়

।। সুপ্রদীপ দত্তরায় ।।
(C)Image:ছবি









তুমি কি শুনতে পাচ্ছো মৃত্যুঞ্জয়
কেন জানি কটা দিন থেকে
 
প্রতি মুহূর্তে মনে একটা ভয় ,
বুঝি এই মুহূর্তে কিছু একটা ঘটবে।
এই যে আমি চলছি, পোস্টের ধার ঘেঁষে,
 
স্নানে যাচ্ছি, বাথরুমে বা ওই পথে ;
হঠাৎই দুটো হাত পেছন থেকে ---
না-- , আমি ঠিক বোঝাতে পারি না,
 
আমার, ভিতরে ভীষণ, ভীষণ ভয়।
তুমি শুনতে পাচ্ছো মৃত্যুঞ্জয় ?
মৃত্যু নিয়ে আমি খুব ভাবি না জানো, 
ওসব ভাবনা আমার মধ্যে নেই,
 
প্রতি মুহূর্তেই মৃত্যু গ্রাস করবে আমায়,
তেমন প্রত্যাশাও আমাতে নেই ।
তবে মৃত্যুর আগে যে হাজার মৃত্যু ----,
তোমাকে ঠিক বোঝাতে পারি না,
 
কী ভীষণ জ্বালা, ভয়ঙ্কর ভয়
 
ঠিক বলে বোঝাবার নয়।
তুমি বুঝতে পারছো না, মৃত্যুঞ্জয়
আমার ভীষণ,
  ভীষণ ভয়।
এই যে খাচ্ছি, দেখতে পাচ্ছো নিশ্চয়।
এসব খাবার নিয়েও আমার ভারী ভয়।
কী খাচ্ছি, কেন খাচ্ছি, 
যা খাচ্ছি ঠিক খাচ্ছি কি
  ? 
সব তো প্ল্যাস্টিক , সার আর ফরমালিন ।
দোকান থেকে খাবার কিনতে ভয়, মনে হয়,
 
যা কিনছি, সেটা খাবার নাকি বিষ ।
দোকানিটা শয়তান, নাকি কিলবিস।
কী বীভৎস দৃষ্টি, কুৎসিত হাসি,
গায়ে পড়ে আলাপ জমাতে চায়,
 
মানুষকে মানুষ ভাবে না ওরা ,
আমি বোঝাতে পারছি না তোমায়,
 
তুমি কি বুঝতে পারছো মৃত্যুঞ্জয় ?
 
বিশ্বাস কর, আমার ভীষণ,
  ভীষণ ভয় ।
আচ্ছা, আমাকে তোমার কেমন মনে হয় ?
 
কোথাও কি ভারসাম্যের অভাব আছে ভাবো?
  
লোকে বলে আমার সবটাই মানসিক
 
ওরা ঠিক আমাকে বুঝতে পারে না ।
সত্যি করে বলতো, আমি কি পাগল?
 
এই যে কথা বলছি, ক্রমাগত, অনর্গল,
 
আমি কি সুস্থ না । আমার চলা, বলা --,
তোমরা সত্যি জানো না
 
আমার ভিতরে
  কি কষ্ট, কি যন্ত্রণা --;
তোমরা বুঝতে পারবে না । আমার ভয় --
কি বলতে কি বলে ফেলি, যদি ভুল হয় ?
যা বলি, বলাটা কি ঠিক ?
নাকি যতটুকু বললাম, সবটা বেঠিক?
 
যা বলতে চাই, আমি বলি কি সব ?
নাকি সবটাই চাপা । আসলে
 
না বলা কথাগুলো ডুবন্ত বদ্বীপ ।
তুমি শুনতে পাচ্ছো মৃত্যুঞ্জয় ?
 
এই যে চলা, তোমার লুকোচুরি খেলা
 
আমার গান, ভালবাসা, ভালোলাগা
 
সবেতেই সংশয় ।
ভাবি যা করছি, বোধহয় ঠিক হচ্ছে না,
 
আবার যা হচ্ছে তা চাইছি না,
 
আসলে
  কি চাইছি সেটাই তো জানি না , 
শুধু ভয় ভয় আর ভয় ।
বাবা বলতেন, মাথাটা পরিষ্কার
 
অঙ্কে আমি সবসময়ই ভালো,
 
সোনার মেডেল পেয়েছি, একবার নয় বহুবার ।
কী লাভ হল বলো ? তোমাকে পেলাম ? নাহ  !
জীবনের অঙ্কটা যে কি শুভঙ্করী ধাঁধা
 
কিছুতেই মিলাতে পারি না ।
কি করলে যে মন পেতে পারি --,
  থাক ।
গত সপ্তাহে সুজির পায়েস করেছিলাম,
 
তোমার প্রিয়, তোমায় বলেও ছিলাম আসতে,
এলে না । চুলে বাঁধা রজনীগন্ধাগুলো
 
কোজাগরী রাত্রিতে বিদ্রূপের হাসিতে,
চোখে যে বৃষ্টি ডাকে, তার
  হিসেব অজানা ।
লক্ষ তারার আলোকে হার মানায় যে চাঁদ
 
আমার ঘরে তার প্রবেশ নিষেধ ।
ওখানে শুধুই অন্ধকার । আমি জানি মৃত্যুঞ্জয়,
এখন তুমি ইকেবানার বুকে মুখ গুঁজে ধ্যানস্থ ।
কোন আর্তিই স্পর্শ করে না আর ।
তোমার জীবনে আমি,
  ঝরে যাওয়া শুকনো পাতা ।
গতকাল দুপাতা ঘুমের ঔষধ এনেছিলাম কিনে।
তিনটে ইতিমধ্যেই খাওয়া শেষ । অবশেষ ?
থাকবে না, সবগুলোই খাবো আজ।
অন্তত একটা দিন, একটা দিন আমাকে
সমস্ত ভয়কে জয় করতে হবে ।
প্রমাণ করতে হবে আমারও সাহস অনেক ।
জানি না গুড নাইট নাকি গুড বাই বলা উচিত ,
 
শুধু একটা ইচ্ছে ছিল মৃত্যুঞ্জয় --
যদি একবার, শুধু একবার যদি কাছে আসতে
 
যদি একটা সুযোগ দিতে আমায় ,
যদি জানতে পেতাম কি আছে ইকেবানাতে
 
যা অদেয় আমার;
  যদি জানতে পেতাম ---।
বিশ্বাস করো মৃত্যুঞ্জয়, সমস্ত ভয়কে জয় করে
আমি তোমাকে দেখিয়ে দিতাম -----। আমি পারি,
আমার কাছে এখনো অনেক কিছু আছে।
বিলিয়ে দেবার জন্য আমার অনেক কিছুই
  বাকি।
আসলে মৃত্যুঞ্জয়, আমার ভয় , ভীষণ ভয়,
 
ইকেবানা আমার সব কেড়ে নিতে চায়,
 
আমার ঘর, স্বপ্ন, আমার ভালবাসা ।
তুমি বুঝেও বুঝতে চাইছো না
ইকেবানা আমার শত্রু, আমার সতীন ,
 
একটা জলজ্যান্ত সর্বনাশা ।


অন্য মাতাল

।। সুপ্রদীপ দত্তরায় ।।
(C)Image:ছবি

--- " দাদুন ! কী হচ্ছে ? সবাই দেখছে তো ?"
পাপড়ির কথা শুনে বিশ্বম্ভরবাবু একবার মুখ তুলে তাকালেন মাত্র  ।তারপর মুচকি হেসে আবারো একখানা বই এর  পাতা উল্টাতে উল্টাতে  নাকের কাছে নিয়ে গন্ধ শুকতে লাগলেন । এই বইপাড়াটা বিশ্বম্ভরবাবুর খুব প্রিয় জায়গা । সেই ছাত্রজীবন থেকে এখানে যাতায়াত করছেন । চুম্বক যেমন লোহাকে আকর্ষণ করে , তেমনি একটা অমোঘ আকর্ষণ আছে এই পাড়ায় । এখানকার  প্রতিটি গলি, প্রতিটি দোকান তার চেনা । চাকুরীতে থাকাকালীন কলকাতায় এলে সময় সুযোগ করে একবার হলেও  ছুটে এসেছেন এখানে । দেখতে দেখতে বয়স ছিয়াশি পেরিয়ে গেছে । এখনও মন খারাপ হলে এখানে আসার জন্য মন ছটফট করে তার । তবে এখন আর একা একা চলতে সাহস পান না বিশ্বম্ভরবাবু । তাছাড়া মন চাইলেও শরীর সবসময় সাথ দেয় না । যন্ত্রগুলোতে জংধরা । এটা ওটা লেগেই আছে । সময় যে ফুরিয়ে আসছে সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই । তাই হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শুয়েই বিশ্বম্ভরবাবু  সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যদি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পারেন তবে যাবার পথে শেষবারের মত হলেও একবার বইপাড়াটা ঘুরে যাবেন । অন্তত একটু সময়ের জন্য হলেও । সেই মতো নাতনিকে পটিয়ে রাজিও করিয়েছেন। তিনি জানেন, অন্য কেউ এই ঝুঁকি নেবে না । নাতনিটি ডাক্তার, বিশ্বম্ভরবাবুকে বোঝার চেষ্টা করে । সেই নাতনিকে সঙ্গে নিয়েই আজ তিনি এখানে এসেছেন ।
--- "এই যে দাদু , কিছু চাই কি ? " দোকানদারের প্রশ্নে বিশ্বম্ভরবাবু অন্যমনস্ক ভাবে মাথা নেড়ে না বললেন ।
---" আপনার হাতে ঐ বইটা কালকূটের অমৃত কুম্ভের সন্ধানে ।"
---" জানি --"।
--- "নাম শুনেছেন কালকূটের? "
--- " জানি ---।"
--- " খুব ভালো বই--।"
বিশ্বম্ভরবাবু আবারো বললেন --- " হ্যাঁ, জানি ---।" 
--- " কী করে বুঝলেন  ? গন্ধ শুঁকে  ?" 
আজকালকার ছেলে ছোকরারা ভাল করে কথা বলতে চায় না ।  কেমন যেন কাঠ কাঠ  কথা । ওদেরকেও দোষ দেওয়া যায় না, যুগটাই এমন হয়ে গেছে । ওরা যে খারাপ, তা নয়। অনেক কিছুই ওদের গর্ব করার মত । শুধু বই পড়তেই যত অনীহা । দোকানির প্রশ্নে বিশ্বম্ভরবাবুর কপালের ভাঁজটি  শুধু দীর্ঘায়িত হলো । নিঃশব্দে হাতের বইটা রেখে দিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে এলেন। একটা সময়ে এই কাউন্টারে দাঁড়িয়েই বই নিয়ে হয়েছে বিস্তর আলোচনা । ভাড়ের চা, চারমিনার সিগারেট আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা । তখনকার দোকানদারদেরও বই নিয়ে খুব পড়াশোনা ছিল । আজকালকার ছেলে ছোকরাদের মত এত ফাঁপা নয় । ভালো লাগতো কথা বলে ।
দুপা এগোতেই আনন্দ পাবলিশার্স । আহা  কত ভালো ভালো বই এখান থেকে প্রকাশিত হয়েছে, তার নাম বলে শেষ করা যাবে না । গুটি গুটি পায়ে কাউন্টারে গিয়ে দাঁড়ালেন, হাতে তুলে নিলেন ঘণাদা সমগ্র । অনেকবার পড়েছেন বইখানা, তবুও হাতে তুলে নিলেন বইখানা । পাশের দোকান থেকে একটা ভদ্রলোক মুখটা  চেনা চেনা লাগছে, চোখাচোখি হতেই হেসে বললেন, " দাদা এদিকটাতে কি একবারও আসবেন না ।" বিশ্বম্ভরবাবু নামটা মনে করতে পারলেন না, তবু হেসে ওখানটাতে চলে গেলেন । দোকানটাতে সব প্রকাশকদেরই বই সাজানো । বিশ্বম্ভরবাবুর মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠলো । কী নেই  এখানে?  তারা শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের গণদেবতা, আজিজুল পারভেজের একাত্তরের গণহত্যা - রাজধানী থেকে বিয়ানীবাজার , স্বপ্নময় চক্রবর্তীর হলদে গোলাপ, আলেক্স হেলির রুটস, জয় গোস্বামীর ঘুমিয়েছো, ঝাউপাতা, যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল, সুকুমার সেনের ভারতীয় আর্য সাহিত্যের ইতিহাস । বিশ্বম্ভরবাবু পাগলের মতো এই বই থেকে অন্য বই এ ছুটছেন, যেন কোনটা  ফেলে কোনটা তুলে নেবেন । একটা আলাদা শক্তি তার মধ্যে কাজ করছে। তিনি একটার পর আরেকটা বই এর মলাট খুলে ধরছেন আর  প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিচ্ছেন । বুকের ভেতরটা যেন অনেকদিনের পরে হালকা লাগছে । একটা অযাচিত খুশিতে মনটা ভরে উঠলো । আপন মনে বিড়বিড় করে উঠলেন ---
অসতো মা সৎ গময়, তমসো মা জ্যোতির্গময় , মৃত্যোর্মা অমৃতং গময়।
--- " দাদুন  !  আবার  ?"
দোকানি ভদ্রলোক চুপচাপ দেখছেন আর মুচকি মুচকি হাসছেন । এবারে আর পাপড়ির কথাতে রাগ করলেন না বিশ্বম্ভরবাবু । তিনি জানেন বইয়ের একটা নিজস্ব গন্ধ আছে,  সেই গন্ধে আছে মাদকতা। একবার যে এই নেশার পাল্লাতে পড়েছে, তার মুক্তি নেই । সবাই তার স্বাদ জানে না , বোঝে না ; তারা অভাগা। নাতনিটির জন্য তার করুণা হলো । ওরা জানতেই পারলে না কি বিশাল অমৃত কুম্ভে ওরা দাঁড়িয়ে । পকেট থেকে মানিব্যাগটা বের করে  একটা গজেন্দ্র মিত্রের ট্রিলজি " কলকাতার কাছেই, উপকণ্ঠে আর পৌষ ফাগুনের পালা "  কিনে নাতনির হাতে দিয়ে বললেন, "এইগুলো পড়েছিস ?"
--- " না: , বই পড়তে আমার ভালো লাগে না ।"
একটু হাসলেন বিশ্বম্ভরবাবু । বললেন," একবার আমার জন্য পড়ে দ্যাখ, ভালো লাগবে।" তারপর আপন মনেই বললেন, "আমি তোকে যেখানে নিয়ে এলাম, এখানে লুকোনো আছে অমৃত কুম্ভ । যদি মন দিয়ে খুঁজতে পারিস দিদিভাই  , একদিন তুই  অমরত্ব লাভ করবি । আমি তোকে কথা দিলাম ।"
তারপর চাদরের খোটাতে চোখের কোণ মুছতে মুছতে বললেন, " চল, আর এখানে দেরি করা ঠিক হবে না । এবারে যাওয়া যাক ।"


রবিবার, ২০ জানুয়ারী, ২০১৯

মধ্যভাগ এফিডেভিট

।। অভীক কুমার দে  ।।
   
(C)Image:ছবি
   
রীরের জন্ম কেবলমাত্র জীবনের শুরুকেই দৃশ্যমান করে। এই শুরু যেকোনো জীবের জীবনের জন্য প্রযোজ্য,কিন্তু মানুষের জীবনে শুরু মানে কেবলমাত্র শরীরের জন্ম নয়। ভিন্ন সময় ভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকার শুরু লক্ষ্য করা যায় এক জীবনে। মানুষ তার দক্ষতায় শুরু থেকে আবার শুরু করতে পারে। মানুষের কাছে এই পৃথিবী একটা একজিবিশন সেন্টার। মানুষ গবেষক, বাকি সবকিছুই গবেষণার সামগ্রী।
 
        মানুষ ছাড়া বাকি প্রাণীদের দলগত নাম রেখেছেন মানুষ নামক গবেষকরা। হতে পারে আলাদা জাতি, ভিন্ন গোত্র, তবুও দলগত নামই। কোনও কোনও ক্ষেত্রে গবেষণার বিশেষ সামগ্রী হলে, সেক্ষেত্রে আলাদা নাম রাখেন। একেকটি ভিন্ন শরীরের একেকটি নাম থাকে। প্রয়োজনে পদবীও। এই শুরু জীবনের শুরুর জন্য শুরু। একটি যন্ত্রের চালু হওয়া। তারপর সামগ্রী তৈরি হবে। তৈরি হওয়া সামগ্রীর আশানুরূপ গুণগত মান চিহ্নিত হলেই জীবনের শুরু বলা যায়। অর্জুনের দৃষ্টির মত স্থির লক্ষ্য ও নির্ভেজাল সিদ্ধান্ত অটুট হলে সেই নির্দিষ্ট বিষয় সফলতার দিকে এগিয়ে যেতে পারে এবং সেখান থেকেই শুরু করা যায়।
           আমার মধ্যভাগ নিয়ে খুব চিন্তায় আছি। আমার এই শরীরের পারিবারিক ডাক নাম 'নিতু'। ছোটবেলা থেকে বেশ আপন হয়ে মনের নরম বিছানা দখল নিয়েছে। কিন্তু আমাকে যখন বাহ্যিক পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য ঠেলে দেওয়া হচ্ছে এবং বিদ্যালয় নামক একটা যান্ত্রিক জগতে নিক্ষেপ করা হচ্ছে,তখন আরেকটা অপরিচিত নাম জুড়ে দেওয়া হল। সতিনের মতোই নরম বিছানায় ভাগ বসাতে থাকে। আমার ভেতরঘরে রোজ লেগে থাকা দ্বন্দ্ব পাগল করে তুলছিল।
         যে নামটি প্রথম পেয়েছি, যে নামটি পারিবারিক, সে নামের প্রতি খুব বেশি যত্নবান ছিলাম। সামাজিক পরিবেশের গোলকধাঁধায় পড়ে পরে পাওয়া নামের প্রতি উদাসীন ছিলাম। কখনো ঠিকঠাক খবরও রাখা হয়নি--- শারীরিকভাবে সুস্থ আছে কি নেই, সে নামের মনের বাউল কখন কী খোঁজে, এত বড় আকাশটাকে চেনে কিনা, পাখির মত ডানা মেলে নীলের গভীরতা খুঁজে দেখার ইচ্ছে কেমন। স্কুল জীবনের এতগুলো বছর আমার উদাসীন আচরণে একপ্রকার একঘেয়ে দিনযাপন করে চলছিল সামাজিক নাম 'অভীক কুমার দে'
 
         যতদিন উদাসীন ছিলাম, মধ্যে অবস্থানরত নির্ভেজাল 'কুমার' নিয়ে কোনও চিন্তা ছিল না। দুদিকেই বিস্তৃত সাম্রাজ্য। একদিকে গতি, গন্তব্য আর বিস্তার। এক লাগামহীন নির্ভীক দৌড়বাজ 'অভীক'। অন্যদিকে যুগের প্রতিফলন। শুষ্ক, রুক্ষ, দুঃসময়ের ছবি, কুশাসনের প্রতিফলন, প্রতীকী ক্ষুধার্ত 'দে''কুমার' আমার অনড় ছিল মাঝখানে।
      যখন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গুছিয়ে শুরুটা খুঁজছিলাম, তখন দেখি আমার নিতুর সতিন কষ্টে আছে। ওকে নিয়ে কানকথা হচ্ছে। কটূক্তি করছে সমাজ। দ্বিতীয় নামের ভেতর কুমারের অবস্থান দেখে ঠাট্টা করছে। একবার নিজের অজান্তে হলেও হাত বুলিয়ে শরীরটাকে বিবস্ত্র পেয়েছে পুনরায়। অনুশোচনায় বুকের উঠোনে শীত বাতাস বয়ে গেছে বারকয়েক। যদিও শরীর জানে, এই নাম সমাজ দিয়েছে। সমাজ তার প্রাতিষ্ঠানিক যন্ত্রে ছেঁকে লিখিত রূপ দিয়েছে। এই শরীরটা শুধু অনুগামী কেরানি ছিল তখন থেকেই।
       সময়কে চিনতে গিয়ে দেখেছি, সেই শুরু শুরুই ছিল না। নতুন করে শুরু করতে গেলে আরেকবার শুরুকে খুঁজতে হবে। তাই এই শরীর হাঁটতে শুরু করা প্রয়োজন। কেননা, প্রতিবার প্রতি মোড়ে ধাক্কা খায় শরীর। প্রতিটি মোড় বলে-- 'কুমার' নিষ্ক্রিয় নয়, অসহায় নয়, অভীকের সাথে জুড়ে থাকার কথা। 'কুমার' গন্তব্য জানে, গতি বোঝে, বিস্তারও জেনে যাবে একদিন। তারপর দুঃসময়ের ছবি মুছে দিতে কুশাসনের প্রতিফলনের মুখোমুখি হবে। ক্ষুধার প্রতীকী চিহ্নগুলো আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবে। চিৎকার করে বলতে কোনও ভয় পাবে না-- এই শুষ্কতা এমন রুক্ষতা পৃথিবীর নয়। শুরুতে এমন ছিল না কিছুই। নির্ভীকের অসীমান্ত দেশের মধ্যভাগ এফিডেভিট প্রয়োজন।


মলমের শরীর


।। অভীককুমার দে ।।
(C)Image:ছবি










য়স আমার সত্তর পেরিয়ে...
কত কি কীটনাশক খেয়ে আয়ত্তে নেই শরীর,
ভোট ভোট পেটের ভেতর,
ভিন্ন মতাদর্শী সার্জন আসে
চিকিৎসার জন্য অঙ্গ নির্বাচন হলে
মুখোশ আর মেকআপে মুখোমুখি
 
বসে
 
শোনে
বোঝার ভান করে, আশ্বস্ত হলে--
সময় বুঝে পুরো চেকআপ এবং
 
দীর্ঘ সার্জারি।
বয়স আমার সত্তর পেরিয়ে...
ক্ষত শুকোয় না
মলম লাগাই রোজ
সময় কাটাই শুধু।
যুক্তি- যুক্ত- ভাঙা- গড়া এসব নিয়ে লাগালাগি
রাগারাগিও কম হয় না, কেউ এমনও আছে--
আমাকে নিয়ে শুধু মেতেই ওঠে না, বরং
 
সুযোগ বুঝে বিভাজিত শরীর ঘেঁটে দেখে প্রতিদিন !
প্রতিদিন নথিপত্র দেখি বারকয়েক,
সত্তর পার হওয়া শরীর
 
মুড়মুড়ে জোড়া
মলম লাগাই আর একেকটি দিন অতিরিক্ত বেঁচে থাকি !


বৃহস্পতিবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০১৯

ভালবাসা










।। সুপ্রদীপ দত্তরায় ।।




ভালবাসিস ?
আমাকে? 
চল যাবি , 
নরকে ।
নরকের 
পাথরে 
ভালবাসা 
পরখে, 
খাটি কিনা
জানা যায়, 
নিমেষের 
পলকে ।
তারপরও
বলছিস , 
আহারে 
বলবি না ।
এ জীবনে 
ভালবাসা 
হয়তো বা 
মিলবে না ।
তারপরও 
ভরসা ---,
দিস তবে
ভালবাসা,
কথা দেই 
এজীবনে 
আর কিছু 
চাইবো না ।
এক আকাশ 
রোদ মুখে  
যদি ঝরি
তোর বুকে, 
পারবি তো
মেনে নিতে  
বেহাগ বা , 
পুরবীতে ।


বুধবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০১৯

'উজান' উদযাপন করতে যাচ্ছে ২১শে ফেব্রুয়ারি,১৯ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস...


গামী ২১শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে এবারেও ‘উজান সাহিত্য গোষ্ঠী’ এই দিনটি পালন করতে চলেছে।
            এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ৩রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, রবিবার সকাল ৯টা ৩০মিনিটে দুর্গাবাড়ি শিশুবিদ্যালয়ে  এবং ২১শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৯টা ৩০ মিনিট থেকে দুর্গাবাড়ি প্রাঙ্গণে রেখায়-লেখায় ‘আঁকা এবং লেখা’ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। এই প্রতিযোগিতাতে অংশ নেবার জন্যে সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অভিভাবকদের প্রতি ছাত্র-ছাত্রীদের অনুপ্রাণিত করবার অনুরোধ রইল। সেই সঙ্গে ২১শের মূল অনুষ্ঠান তথা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিকেল ২টা ৩০ মিনিটে দুর্গাবাড়ি পূজা মণ্ডপে বিজয়ীদের পুরস্কার বিতরণ করা হবে। সেখানে সবাই উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠান সুন্দর  এবং সফল করবার অনুরোধ জানাচ্ছি।
              ২১শের মূল অনুষ্ঠানে প্রতিবারের মতো এবারেও গানে, কবিতায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সঙ্গে আয়োজন করা হচ্ছে বিশেষ বক্তৃতানুষ্ঠান। সেখানে আমন্ত্রিত হয়ে বক্তৃতা করবেন...

বাসব রায়
বক্তৃতার বিষয় হচ্ছে 'ভাষা এবং জীবিকা'
অতুল শর্মা
বক্তৃতার বিষয় হচ্ছে ঃ 'অনুবাদ সাহিত্য আৰু মোৰ অভিজ্ঞতা'

তারিখ ১৫ জানুয়ারি, ২০১৯                                                    ইতি
তিনসুকিয়া                                                        সুজয় রায়         ভানু ভূষণ দাস
                                                                     সভাপতি                সম্পাদক
                        উজান সাহিত্য গোষ্ঠী, তিনসুকিয়া
যোগাযোগের ঠিকানা: ভানু আর্টস, রাঙাগড়া রোড, (সুবচনী আলির বিপরীতে), তিনসুকিয়া, আসাম।
দূরভাষ তিনসুকিয়া ভানু ভূষণ দাস ৯৪৩৫৩৩৫৪৪০,৯৯৫৭১৩৯৬৯৭; সুজয় রায়  ৯৯৫৪৭৯৭১২২;
            গোপাল বসু ৯৪০১৩৩০৪৮৯, গোপাল মজুমদার ৯৪৩৫৩৩৩৯৩০, ৮৬৩৮৪৭৫২৫৪,
ত্রিদিব দত্ত ৯৮৫৪৮২৫৬৪৩, ৮৬৩৮০৮১৯৯৫,  সবিতা দেবনাথ ৮৪০৩৯৫১৪৯৯, ৮৬৩৮২০৭৭৬১,
সুমিত পাল ৯৯৫৪১৭২০৭০,  কঙ্কন দাস ৭০০২৭৬৮০০৮, অমৃত দাস ৯৭০৬১৩৫৩৬৫, উত্তম দাস
৯৮৫৪১৩৮২১৯।
ডিগবয় পার্থ সারথি দত্ত ৯৪৩৫৩৩৭৫৫২,৭০০২০৯৫৭৯১;বরহাপজান রাজেন্ড খাউণ্ড ৯৯৫৪০৫৪০৭২;
মাকুম   স্বরূপ দাস ৯৭০৬১৮৮৮০৪ ডিব্রুগড় সুরজিত দেবনাথ ৯৭০৬৮৪৯৯৭০;
গুইজান প্রমেশ দাস  ৮৬৩৮২৪৯১৭২; বরডুবি স্বস্তি সাধন চক্রবর্তী ৮৭২১০২০০২৬; মার্ঘেরিটা সমীর দাস 
৭০০২৯৩০৯৮৫



ছবি এবং কথার প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী এবং সময়সূচী
১) প্রতিযোগিতা দুটি ভাগে হবে
২) ক) ৩রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রবিবার সকাল ৯টা ৩০মিনিট থেকে দুর্গাবাড়ি শিশু বিদ্যালয়ে ‘লেখা এবং আঁকা’র প্রতিযোগিতা।    
    খ) কথা বা কবিতা-পঙক্তিগুলো সুন্দর করে লিখতে হবে। সঙ্গে দেওয়া ছবিটি আঁকতে হবে,অথবা কথার সঙ্গে সঙ্গতি
        রেখে একই  আদলে অন্য ছবিও আঁকা যেতে পারে।
    গ) আয়োজকদের তরফে কাগজ সরবরাহ করা হবে। বাকি আঁকা এবং লেখার সামগ্রী প্রতিযোগিদের নিয়ে আসতে হবে।
    ঘ) আঁকার সময় দুই (২) ঘণ্টা
    ঙ) শ্রেণি অনুসারে এই প্রতিযোগিতা চারটি বিভাগে বিভাজিত হবে।
    চ) অংশগ্রহণের মাশুল ৫০/-টাকা
৩) ক) ২১শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৯টা ৩০মিনিট থেকে দুর্গাবাড়ি প্রাঙ্গণে ছবি আঁকার খোলা প্রতিযোগিতা।
    খ) বিষয় হবে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সংগ্রাম এবং ঐতিহ্য’, অথবা ‘মাতৃভাষার মান’ অথবা সঙ্গে  দেওয়া যে কোনো একটি কবিতার পঙক্তিকে অনুসরণ করে ছবি আঁকতে হবে। সেই ক্ষেত্রে যে কবিতা অনুসৃত হলো তার নম্বর উল্লেখ করতে হবে। যেমন ‘আকালৰ চোতাল...সর্বোত্তম প্রতিভা’ কবিতাটি অনুসরণ করলে লিখতে হবে (১)। কবিতা পঙক্তি লিখে দিলে আরো প্রশংসনীয় হবে।
   গ) আয়োজকদের তরফে চিত্রপট (ক্যানভাস) সরবরাহ করা হবে। কিছু রঙের যোগান দেওয়া হবে।  বাকি আঁকা এবং লেখার    
       সামগ্রী প্রতিযোগীদের নিয়ে আসতে হবে।
 ঘ) আঁকার সময় তিন (৩) ঘণ্টা
ঙ) বয়স এবং শ্রেণির বাঁধন-বিহীন এই প্রতিযোগিতা সাধারণের জন্যে উন্মুক্ত। যে কেউ অংশ নিতে পারেন।
চ) অংশগ্রহণের মাশুল ২০০/-টাকা
৪)  দুটি প্রতিযোগিতাতেই  শিল্পীর স্বাক্ষর এবং ছবির নাম (যদি দিয়ে থাকেন) মাতৃভাষাতে  লিখতে হবে।
৫) বিজয়ী ছবি ২১শের মূল অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হবে। এবং সেখানেই বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হবে।
                                   
                                            *****
বাকি বিস্তৃত তথ্যের জন্যে নিচের ছবিগুলো দেখুন...
(ক্লিক করে বড় করুন )