“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

বৃহস্পতিবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৮

নষ্টালজিক

।। আ.জাহিদ রুদ্র ।।



(C)Image:ছবি













শূন্যতার দ্রাক্ষারসে জারিত জীবন
আহত পালকের মত
 
গলিত আঁধারে ঢাকে অকস্মাৎ,
ধূসর মুখের এলেবেলে প্রতিশ্রুতি
শুকনো জলে সাঁতার কাটে নিনাদ ভরা ভোরের পাখি।
দেখি,কেমন যেন প্রতিশ্রুতি মিলে 
এ বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে
পিপাসায় স্তন চুষা বেয়াদব
 
মানচিত্র বেচে খণ্ড-খণ্ড পঙক্তির গোলমালে,
চোখের দৃষ্টি কোলাহলের স্রোতে আত্মমগ্ন
আয়না ঋতুশেষে আলোহীন অশ্লীলতায়
 
জড়িয়ে বুনিছে প্রেম।
শব্দের ফাটলে মসৃণ পাতার ঘুমন্ত অলঙ্কার
চরকির মতো ঘুরপাক খায়,
বিকৃত খবরের প্রতিটা শিরোনাম
হোল-সেল রেট দরে বিক্রি,হাটে....
কিছু পুঁজ পড়া হাতে।
হতভাগা পৃথিবীটা ক্ষয়িত ক্যান্সারে
ধ্বস্ত অনুরাগে তিলে তিলে
 
ডুবন্ত রবি শেষ প্রান্তে।


পাগলীটা ও মা হয়েছে

।। আ জাহিদ রুদ্র।।

(C)Image:ছবি







ছিন্ন বস্ত্রে এলোপাথাড়ি কেশে রাজপথে
বাবুদের গেটে
 
রাত পোহাতো যে মেয়েটি
জানো, আজ মা হয়েছে!
সে তো পাগলী,
দশ মাস আগে রোজ দেখা যেতো গলির মোড়ে
কদিন হলো আর পাত্তা পাইনি।
আজ গেটের সামনে দেখি কন্যা শিশুটি
স্তন টানছে ওর,
সমাজপতির দানব লালসায় নগ্ন-ভগ্ন দেহটা
স্নান করে বীর্যের অপবিত্র জলে,
মানবতার কষাঘাত তবুও আমি নিঃশ্চুপ!
নিষ্ঠুর চাহনি আর মেকি ক্ষুধা মেটানো বুঝি
পাগলীটাই ছিল?
এ কেমন হরমোন দোষ,রেহাই দিলি না পাগলীটারে
তোরা বিষাক্ত উত্তেজনা থেকে
রাতের অন্ধকারে চাহিদা মেটালো যারা
আর্তনাদটা শুনলো না রাস্তার কুকুর ছাড়া
পাগলী তো জানে যৌবন কি!
ক্ষণিক অগ্নিঝরা ঘর্ষণে রঙিন বাসর
রাজপথ ভাসে অভিশপ্ত রক্তস্রোতে।
কলুষ ধরণী চেয়ে দেখো চক্ষু মেলিয়া
স্রষ্টার আসন আরস ছেদিয়া
নির্বাক সভ্য দালাল আজিকে
পাগলীটা ও মা হয়েছে।


বুধবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৮

ভুতুড়ে বাড়ি

।। অভীক কুমার দে ।।
(C)Image:ছবি









চোখের সামনে এখন যে দালান বাড়িটায় ভুতুড়ে পরিবেশ, যৌবনে রূপসী ছিল। প্রাণের ছটফটানি ছিল। পরিবেশ পরিস্থিতি রূপ কেড়ে নিয়েছে তার, যৌবনও গেছে চলে। দিয়েছে এক ভয়াল আবছায়া।

কারণ পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, কোনও এক অপরিচিত পাখি বা পাখিদল বট না হয় অন্য কোনও বীজ রেখে গেছে বিষ্ঠায়। ওখানেই দালানের ক্ষত ছিল কে জানে ? তারপর বীজের কাজ বীজ করেছে।

মাথার উপর ফাঁকা ছাদটার আবেগ বেশি। সময়ে অসময়ে খুশি মতো চিন্তায় ডুবে যায়। মেঘ জমা হলে অঝোরে ভাসিয়ে দেয় বুক। খুব বেশি বৃষ্টি না হলেও কুয়াশার হাত থেকে নিস্তার পাওয়া মুশকিল দালানের। বীজের তাতে ক্ষতি নেই, বরং খুশিতেই অঙ্কুরিত হয়েছে বেশ। চোখ মেলে, পাতা ছাড়িয়ে আকাশ দেখেছে। পাতার খাঁজে পাতা গজালো। একদিন দালানটাকেই জাপটে ধরেছে শিকড়। শ্যাওলায় ঢেকেছে বাড়ি, তার উপর নানান জাতের হেমলক।

যে পাখি বা পাখিদল বীজ রেখে গেছে হয়তো এ পথেই ডানা ভাসায়নি আর। গাছেদের ছায়া এসে ভর করেছে বাড়ির গায়ে এবং হেমলকীয় অন্ধকার। এমন সময় দিন আর রাতের মুখ মনে হয় একইরকম। যে প্রাণের ছটফটানি ছিল, অন্ধকার মেখে মেখেই নিঃশেষ হয়ে গেছে কোনও একদিন। বাড়ির অস্বস্তিই বা কার মনে দাগ কাটে ! দালান গেলে দালান হবে, প্রাণ গেলে প্রাণ। যদিও একদিন এই বাড়ির পন্থাই ঠিক ছিল, ভুল যা কিছু পন্থীর পন্থার।


মঙ্গলবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৮

হরেক ভাষার দঙ্গলে

।।এম রিয়াজুল আজহার লস্কর।।


(C)Image:ছবি










রেক ভাষার দঙ্গলে
থাকি আসাম জঙ্গলে
নিচ্ছি ছড়ার শিক্ষা তো
মানুষ হইনি বিখ্যাত।
         

সোমবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৮

পিত্তরস

।। অভীক কুমার দে ।।

(C)Image:ছবি










সেই তখন থেকেই দাঁত মেজে আসছি !
খাবারের কথা মনে পড়লেই পিত্তরস জমে।
রসিকের তিক্ততা শরীর খেতে জানে,
চিবিয়ে খায়।
কষিয়ে খায়।
রসিয়ে খায়।
আমাদের সেই শুরু থেকেই কান্না,
মা বলতো-- আর না, ভীষণ ব্যথা বুকে।
দুধের দাঁত পড়ে দাঁতাল হলাম, তবু
দাঁত মেজেই চলছি এখনও।
অপুষ্ট মা'র বুক ভালো চুষতে পারিনি বলে
মেজেই চলছি, দাঁত !
ডান থেকে বামে,
বাম থেকে ডানে,
এখন তো রাম জানেন দাঁতের
কী দশা।
কেউ খেতে পারলো কি পারলো না তাতে কী !
পিত্তরস আসমুদ্রহিমাচল।


বন্ধন

।। অভীক কুমার দে ।।

(C)Image:ছবি








কেউ সুতো মনে করতে পারো, আসলে রাখি একটা সূত্রের নাম। এক ঠাকুর জানতেন, রাখির সুতোয় আত্মার জোড়া দিলেই মানুষের আত্মীয় হবে দেশ, দেশের মানুষ এবং মানুষের দেশ হবে। এই সূত্র ধরেই তুমি আমি আর নিরপেক্ষতা।
কেউ হয়তো সূত্র বুঝতে পারেনি বলেই
ভুল অঙ্ক কষে গণিত- অজ্ঞ। ভুল সূত্রে রাখি অতি সাধারণ মেয়ে হয়ে কারো অকেজো হাতে অথবা কোনো অন্য ধারায় হাতের কবজি খোঁজে। ওখানে শক্তির প্রতিযোগিতা। নিজেই নিজের দ্বন্দ্বময়।
বস্তুজগৎ বলে ক্ষমতার কথা। ক্ষয়িষ্ণু সব। সুতোর যেমন পচন আছে, আত্মাও মুক্তি চায়। বস্তুবাদের নিয়মেই ঢিলেঢালা বাঁধন এবং বিপরীতধর্মীতায় পূবের পথেই হাঁটে।
মনের মানুষ চোখের জলে,
ফেঁসে আছি কে কার কলে !
আবার কোনো ঠাকুর এলে রাখির সুতো বদল হবে, এমন ত' আত্মা বলে না ! বরং নতুন করে সুতো পাকাই, মনসুতো এবং জড়িয়ে যাই বন্ধনে।

শনিবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৮

শুনুন

।। অভীক কুমার দে ।।









তটা বুঝি,প্রতিটি একক ঠিক না হলে ঐক্য ঠিক নয়। আমি আমার নিজের একক নিয়েই চিন্তিত। প্রতিদিন জীবনের যন্ত্রাংশ মেরামত করতে করতে নিজের কারখানাই তছনছ করি। কেরামতিও জানা নেই।
যতই দিন যায় বয়সের চূড়ান্ত সময়ের মুখোমুখি শরীর,আমার মধ্যরেখা টানটান হয়ে আছে। সূর্যটাও খুব জ্বালায় এখন। আলোর হেরফের হতেই চশমার এপারে স্লুইস গেট খুলে যায়,ওপারের কেউ কাঁচ ভেদ করে দেখতে চায় না।
আজকাল আমি আমার ভেতর বেঁচে মরে আছি। সেই বেঁচে থাকা আমিকে একক ধরেই আগলে আছে আমার গর্ভাশয়। সময় সময় শব্দ ধারণ করে। কলমের গোপন পথে বেরিয়ে আসে মরে থাকা আমির গায়ে ছড়িয়ে থাকা সাদা থানে।
আমার বন্ধু যারা একক খুঁজে দেখে-- পূর্ণতার অপেক্ষা। আপনি যদি রাজার নীতির দীক্ষা নিয়ে সমর্পিত এবং সতীর্থ খুঁজছেন,আমি আপনার গোত্রজ নই তবে। একটু সরে দাঁড়ান,গর্ভাশয় থেকে শব্দেরা কিছু বলতে চায়,শুনুন...


বৃহস্পতিবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৮

ভাই

(C)Image:ছবি


















।। সুপ্রদীপ দত্তরায়।।

এমনটিতো কথা ছিল না ভাই 
তোর প্রতিটি কাজ সরবে নীরবে 
করেছি সমর্থন । প্রতি পদে পদে 
আলোচনা বিতর্ক হয়েছে বিস্তর,
মতান্তর হয়নি যে তা নয়।
তবু দিনশেষে কাঁধে হাত রেখে 
ফিরেছি বাড়ি, মনান্তর হয়নি কখনো ।
যা করেছিস, আলোচনা করে 
একক সিদ্ধান্তে নয় । তবে কেন ----?
এমনটিতো কথা ছিল না ভাই ।
জানিস, সত্যি বলছি,  শান্তি পাই না রে।
বিশ্বাস হয় না কিছুই, 
নিজের চোখে সবই তো দেখেছি
তবু মানতে কষ্ট হয়, একটা অজানা ভয় 
নিজেকে জানিস বড় একা মনে হয়, 
মনে হয় একটা বিশাল শূন্যতা 
এত লোক চারপাশেতে, তবু যেন একা
আমার প্রতি শ্বাসে যে নির্ভরতা, 
যে বিশ্বাস ছিল, ছিল ভরসার স্থল 
সব শুষে নিয়েছে ঐ বরাকের জল।
মানতে পারি নারে, বড় কষ্ট , 
                         সবই অদৃষ্ট ।
প্রতিমা নিরঞ্জনে বল কত লোক যায়
সুস্থ, অসুস্থ, মত্ত অবস্থায়
সবাই তো ফিরে যায় নিজ ঠিকানায়
তোর জন্য কেন ভাই এমনটা লিখন
পারি না, পারি নারে বুক ফেটে যায়, 
রাগে, দুঃখে, যন্ত্রণায়----।
শুনেছি কলকল ধারা তার মোহময়ী রূপ 
কুটিল রাক্ষসী সে, জিহ্বা লোলুপ 
বড় অদ্ভুত --, তুই নির্বোধ, 
জানিস না  ও যে  ওত পেতে থাকে
আনমনে কেউ যদি, কিংবা বিপাকে
স্পর্শ করে গঙ্গা ভেবে, অসাবধানতায়, 
টেনে নিয়ে যায়। তারে কুটিল আক্রোশে , 
চেপে ধরে শ্বাস , অবিশ্বাস্য ক্ষিপ্রতায় ।
তুই তো সাঁতার জানিস না তাই ---।
বিপদে ভরসা দিতি, বলতি আমায়
যা হয়েছে ভালোই হয়েছে, 
                    তিনি পরম করুণাময় 
আসলে মিথ্যা, মিথ্যে সব মনের সান্ত্বনা 
এই যদি তার হয় পরম করুণা, 
                          তবে কীসের মান্যতা 
কীসের বিশ্বাসে রোজ পূজা পাঠ ধ্যান 
মানুষ তো আমরা ভাই  দেবতা নয় 
ছলে বলে অসুরেরে করি না পরাজয় 
বিচার করি, তাই বারবার মনে হয় 
তিনি কঠিন, তিনি  নিষ্ঠুর  দয়াময়
যে তার স্মরণ লয়, তার সর্বস্বান্ত হয়।
বিশ্বাস কর, কোন আস্থা থাকে না আর 
বারবার মনে হয়, এ কেমন বিচার ?
ভিতরটা বিস্ফোরণে টুকরো টুকরো আজ
তবু যেন প্রতিটি মুহূর্তে বিস্ফোরণের সাজ ।
মানুষ তো, আর পারি না তাই ----।
এমনটিতো কথা ছিল না ভাই ।








মাথামোটা


।।   রফিক উদ্দিন লস্কর  ।।

(C)Image:ছবি










লোকটা এমন মাথামোটা    
সবকিছুতে ওস্তাদ,
জোর গলাতে চেঁচিয়ে যায়
অন্ধকারে বসায় ফাঁদ।
এদিক ওদিক দিব্যি ঘুরবে
নিজের সাফাই গেয়ে,
পাল্টা কথায় যায়নি কেহ
আসতে পারে ধেয়ে!
সত্যাসত্যের ধার ধারে না
নিজের শুধু চাই!
এমন মানুষ আজও আছে
রাস্তা ঘাটে পাই।
_________
নিতাইনগর,হাইলাকান্দি
(আসাম-ভারত)

বুধবার, ২২ আগস্ট, ২০১৮

লিমেরিক



  ।।   এম রিয়াজুল আজহার লস্কর  ।।
















বিবি নেছা শরিফুলে ছাগল পোষে ঘরে,
মাঠ থেকে ঘাস নিচ্ছে কেটে বস্তা দুটি ভরে,
সেদিন একটা ছাগল
হঠাৎ হলো পাগল

সেই ছাগের হুঁশ ঠিক করেছি ওষুধপত্র করে !
@
'শব্দ তরঙ্গ' ,  পৃষ্ঠা নং ৩০
( কপিরাইট সংরক্ষিত )

মঙ্গলবার, ২১ আগস্ট, ২০১৮

মর্মান্তিক


  ।।এম রিয়াজুল আজহার লস্কর  ।।

(C)Image:ছবি








ভূতটা ছিলো সহজ সরল ঝুলত গাছের ডালে,
ঝুলতে গিয়ে হঠাৎ সেদিন সেই না পড়ে খালে,
দুষ্টরা সব জমেই তারে করল শুরু বাঁশ !
মারের চোটে আর বাঁচেনি হয়েই আছে লাশ !
@
ঐক্যটা হোক স্বপ্ন সবার, পৃষ্ঠা নং ২০
( কপিরাইট সংরক্ষিত )