।।শৈলেন দাস।।
(C)Image:ছবি |
শিলচর শহরে ই-রিক্সা চলাচলের ক্ষেত্রে যে বাধা রয়েছে তার প্রধান কারণগুলি
হল - ১) অটো চালক/মালিক সংস্থাগুলির যৌথ আপত্তি। ২) বছর দুয়েক আগে জারি করা একটি
সরকারি নির্দেশ এবং ৩) সামান্য রাজনীতির ক্ষেত্র প্রস্তুত করার কারক।
ই-রিক্সা শহরের যেকোন
জায়গা থেকে যাত্রী তুলে তাদের নিজস্ব গন্তব্যে পৌঁছে দেয় সামান্য ভাড়ার বিনিময়ে
এবং শহরের প্রধান রুট ছাড়া যেকোন গলিতে যাত্রীদের পৌঁছে দিতে কোন ধরনের গড়িমসি
করেনা। অপরদিকে অটো রিক্সা তাদের নির্ধারিত রুট ছাড়া অন্য কোথাও রিজার্ভ না নিলে
যায়না। বোঝাই যাচ্ছে এতে যাত্রীদের খরচের বহর কতটা বাড়ে। একটা উদাহরণ দিলেই
ব্যাপারটা স্পষ্ট হবে। শিলচর রেল ষ্টেশন বা ইণ্ডিয়া ক্লাব পয়েন্ট থেকে কোন অটোই
একজন বা দুইজন যাত্রী নিয়ে বিবেকানন্দ রোড বা কলেজ রোড যাবেনা, গেলে রিজার্ভ নিতে
হবে সেক্ষেত্রে কম করেও ভাড়া হবে পঞ্চাশ বা ষাট টাকা
বা তারও বেশি। অথচ ই-রিক্সা একজন বা দুজনকে নিয়েই রওয়ানা দেবে রিজার্ভ ছাড়াই। ভাড়া
হবে জন প্রতি দশ টাকা মাত্র।
ই-রিক্সার আরেকটি সুবিধা হল এর বহিঃগঠন একদম খোলামেলা, ফলে যাত্রীদের অনেক
সুবিধা হয়েছে। তারা আগে থেকেই বুঝতে পারে, যে ই-রিক্সাটি আসছে সেটিতে কতজন যাত্রী
রয়েছেন, তার বসার জায়গা হবে
কিনা বা হলেও কোন সীটে তার বসার সম্ভাবনা ইত্যাদি। অন্যদিকে অটোর ক্ষেত্রে এই
সুবিধাগুলি অপ্রতুল। একে তো বুঝাই যায়না, যে অটোটি আসছে সেটি অপেক্ষারত যাত্রীকে
তুলবে কিনা। আর যদি তুলেও অটো থামানোর পর দেখা যায় বসার সীট নিয়ে অসুবিধা। বিশেষ
করে কোন মহিলা যাত্রী যখন অটোতে উঠতে গিয়ে দেখেন ভেতরে দুজন পুরুষ যাত্রী রয়েছেন
তখন সংকোচ বোধ করা স্বাভাবিক এবং থামিয়ে অটোতে না উঠতে বলাও এক ধরনের বিরক্তিকর
অভিজ্ঞতা।
অটো রিক্সা পরিবেশ বান্ধব নয়। জৈব জ্বালানি ব্যবহার করে যেহেতু অটো
চলে এতে ন্যূনতম হলেও পরিবেশের ক্ষতি হয়। তাছাড়া বেশিরভাগ অটোই মেকানিক্যাল
ত্রুটির জন্য অধিক ধোঁয়া ছাড়ে যা শহরের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
ই-রিক্সা নন-মোটরাইজড
বাহনের আওতায় পড়ে বলে ট্র্যাফিক নিয়ম-কানুন এই বাহনের ওপর প্রযোজ্য নয়৷ তাছাড়া
পারমিট বা রেজিস্ট্রেশন নেবার দরকার হয় না বলে ই-রিক্সা চালকরা যেমন খুশি চালায়
এবং যেখানে সেখানে পার্ক করে৷ স্বাভাবিকভাবেই তা ট্র্যাফিক জ্যামের কারণ হয়। তবে
শরের ব্যস্ততম রুটে অনুরূপ সমস্যা সৃষ্টির
অভিযোগ অটো রিক্সার ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য। বাকি থাকল সরকারি নির্দেশ এবং
রাজনৈতিক ক্ষেত্র প্রস্তুত করার কথা। জনগণের বৃহত্তর সুবিধার কথা বিবেচনা করে
পুরনো কোন নির্দেশ প্রত্যাহার করে নতুন নির্দেশ জারি করা সরকারের কাছে এমন কোন
জটিল বিষয় নয়। প্রয়োজনে যাত্রী-বাহন হিসেবে ই-রিক্সার লাইসেন্স ও রেজিস্ট্রেশন ইস্যু
করার শর্ত জুড়ে দিলেই হল যাতে ট্র্যাফিক নিয়ম লঙ্ঘন করলে শাস্তি দেয়া যায়৷
একটি বিশেষ
ব্যবস্থাকে সুবিধা পাইয়ে দিতে যুক্তিসংগত নতুন ব্যবস্থাকে
অবদমিত করার প্রয়াস রাজনৈতিকভাবে আত্মঘাতী। যেহেতু নিজেদের জন্য সুবিধাজনক বলে
নতুন ব্যবস্থাটিকে জনগণ গ্রহণ করেছেন সাদরে তাই যাত্রীদের সুবিধার কথা ভেবে যেকোন
ধরনের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ না করাই শ্রেয়।
অটো চালকদেরকে তাদের
পরিষেবা যেমন সহজলভ্য এবং সরলতর করতে হবে তেমনি শহরে ই-রিক্সার চলাচলকে স্বাগত
জানিয়ে সাধারণ শ্রেণীর বেকার ভাইদের প্রতি মানবিক দায়িত্ব পালনে উদার এবং সহনশীলও
হতে হবে, প্রয়োজনে কিছুটা
ক্ষতি স্বীকার করেও।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন