“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন, ২০২২

পথের দুর্দশা

 

।। মিঠুন ভট্টাচার্য ।।














তোমার আলপথ ধরে
আমি এগোই।
বর্ষা এলো
তাই বীজ বপনের পালা।
ধেয়ে এল
বিশাল বপু নিয়ে বন্যার জল।
পেছনে যাই বাড়ীর দিকে
জানমালের হেফাজতে।
জল আমার প্রেমে
আমায় ছোঁয়ার ইচ্ছেয়
আমার গলা অবধি চলে আসে।
আমি সিঁড়ি ভাঙি
গ্যাসের উনুন, ডেগ, থালা, বাটি নিয়ে
ছাদে ত্রিপল টাঙাই,
বিছানা নিতে ভুলে যাই।
মাছ সবজির আড়তে মজুদ ফুরোয়,
বৃষ্টির জল ধরি,
খাবার পানি নাই।
চালের উপর সংসার পেতে
উনুন গড়ায় পুকুরে তো
আলু পোস্তের
ছবি ভাসে মোবাইল স্ক্রিনে,
খিদে মিটে দুটো বিস্কুট, এক ঢোক জলে।
এই আমার অফিসার মাইনের সংসার। 


বুধবার, ২৯ জুন, ২০২২

ধর্মানুভূতি: আহত ও আঘাত এই কথা দুটিতে জড়িয়ে থাকে

।। জাহিদ রুদ্র ।।


"আমি হিন্দু" "আমি মুসলমান একথা শুনতে শুনতে কান ঝালা-পালা হয়ে গেলো।কিন্তু “আমি মানুষ” একথা কাহাকেও বলতে শুনি না। যারা মানুষ নয়, তারা হিন্দু হোক আর মুসলমান হোক, তাদের দিয়ে জগতের কোনো লাভ নেই।"
                                  -----রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


ধর্মান্ধতাই ধর্মের মৌলবাদ। এই মৌলবাদই দেশে দেশে শিল্প ও সংস্কৃতির জন্য হুমকি হয়ে পড়েছে। ধর্মান্ধতা মানুষের একটি কমন ত্রুটি। এর প্রধান ভিত্তি হচ্ছে কোন নির্দিষ্ট বিধিবিধান বা প্রথার প্রতি যাচাই বাছাই না করে অন্ধ আনুগত্য করা। তাইতো অভিজিৎ রায়ের কথায় ‘ধর্মান্ধতা, মৌলবাদের মতো জিনিস নিয়ে যখন থেকে আমরা লেখা শুরু করেছি, জেনেছি জীবন হাতে নিয়েই লেখালিখি করছি।’

প্রচলিত ধর্মগুলি মানুষকে হিংসা বিদ্বেষ শিক্ষা দেয়, সুস্থ মানসিক বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, কর্মবিমুখ অলস পরনির্ভরশীল করে গড়ে তোলে, মানুষের মধ্যে তৈরি করে বিভেদ বিভাজন। এখনো এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে, জ্ঞান বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষের সময়েও তা থেমে যায়নি। বিশ্বের সভ্য মানুষেরা যখন ধর্মের আদলে কর্মে মনোযোগ দিয়ে যাচ্ছে এগিয়ে, তখন কতিপয় ধুরন্ধর মতলববাজ পরজীবী শ্রেণী সাধারণ মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে বাড়িয়ে চালাচ্ছে তাদের পুঁজিবাদী ব্যবসা! ছড়াচ্ছে উন্মাদনা! মানুষকে ঠেলে দিচ্ছে অন্ধকারে! থামিয়ে দিচ্ছে উন্নতির অগ্রযাত্রাকে! মানুষ ঠকছে, হচ্ছে প্রতারিত! তাইতো কখনো 'রামের' নামে আবার কখনো 'গোস্তাকে রসুলের' নামে মারছে-মরছে।

সাহাদাত হোসেন মান্টো ধর্মান্ধতা নিয়ে বেশ কিছু কাজ করেছেন। তার ‘ঠাণ্ডা গোস্ত’ গল্পে দেখি,দেশভাগের সময়কার দাঙ্গায় মুসলমানের রক্তে হাত রাঙানো শিখ যুবক ঈশ্বর সিংহ ঘরে ফিরে কিছুতেই প্রেমিকার সঙ্গে সঙ্গম করতে পারছে না। প্রেমিকার সন্দেহ হয়, তার পুরুষ নিশ্চয় অন্য নারীসঙ্গে মজেছে। ঈর্ষার জ্বালায় ঈশ্বরের কৃপাণ কোষমুক্ত করে সে ক্ষতবিক্ষত করে তাকে। মুমূর্ষু ঈশ্বর স্বীকার করে, সে এক অচেতন মুসলিম বালিকাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছিল, কিন্তু ক্রমশ বুঝতে পারে আসলে সে বালিকাটির শবের সঙ্গে... আখ্যানের তীব্র সংবেদনশীলতা বোঝেনি পাকিস্তান। ‘আমরা মুসলমানরা এতই আত্মমর্যাদারহিত যে আমাদের মৃত কন্যাদেরও শিখরা ধর্ষণ করে যায়?’—এমন প্রশ্ন তুলে লাহোর আদালতে মামলাও ঠুকে দেয় পাক আমলাতন্ত্র। যাইহোক এই কথাগুলো বলার কারণ হলো আমরা আর কত এভাবে একে অপরের রক্তস্নানে নিজেকে পবিত্র করবো ?

অনেক বড় ধরনের দূর্ঘটনা দেখেও আমরা খুব শক্ত থাকতে পারি। সেটা যতই মানবাধিকার লঙ্ঘণ হোক, সেটা যতই দেশের উন্নয়নে বাধা হোক, জনগণের স্বাধীনতা হরণ হোক আমরা মাথা ঠান্ডা রাখতে পারি। শ্রেণী সংগ্রামের পথে না গিয়ে আমরা চলছি ভোটের রাজনীতিতে, তাতে কোন ভাবেই আমাদের অনুভূতিতে আঘাত আনতে পারে না। কিন্তু যখন দেখি ধর্ম নিয়ে একে অপরের মন্তব্য বা কেটে মেরে রক্ত ঝরায়, তখন আমাদের আবেগ তীব্র উল্কাপিন্ড হয়ে যায়। হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায়,শক্ত হয়ে যায়। মনে হয় নিজের শরীরে যন্ত্রনা হচ্ছে।পৃথিবীতে মনে হয় ধর্মের চেয়ে কেউ আত্মার এত কাছে থাকে না।

ধর্ম যে কতটা ঠুনকো কতটা ভঙ্গুর তার বারবার প্রমাণিত।মানুষ হতে ধর্মের কোনো প্রয়োজন নেই। একুশ শতকের আগের একটা মহান শিক্ষা আজ‌ও আমরা আমাদের বাচ্চাদের দিতে পারিনি - 'ধর্মের বেশে মােহ যারে এসে ধরে অন্ধ সে জন মারে আর শুধু মরে'।

খারাপ মানুষকে ধর্ম ভালো করতে পারছে না। মানুষের ধর্ম নিজের ও মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করা, ভালোকথা ভালোবাসা দিয়ে মানুষকে খুশি করা। জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রসারে, মনুষ্যত্ব মানবতাবোধ অর্জনের মধ্য দিয়ে, নিশ্চয়ই একদিন বিভাজন দূরীভূত হবে।

ছবিঋণ : জিষ্ণু রায়চৌধুরীর ফেসবুক ওয়াল থেকে।

সোমবার, ২৭ জুন, ২০২২

জলস্ফীতি


 ।। মিঠুন ভট্টাচার্য ।।












রাকের বহমানতা
যেভাবে মিশে আছে আমার অন্তরে,
তাকে বিদায় জানিয়ে
নতুন পরিষ্কার জলে চান করতে বড় সাধ জাগে।
অবরুদ্ধ মানুষ,
জলের তেষ্টা,
হঠাৎ করে থমকে পড়া জীবন,
আবেগ সঞ্চারী মুখে বিস্ফোরণ,
সবই একদিন শেষ।
তবু বুকে লেগে থাকা স্মৃতির আস্তরণ
হয়তো পলিমাটিতে ঢাকা পড়বে।
কিছুই থেমে থাকে না
মিশে যাবে উচ্ছল সাগরে। 

রবিবার, ২৬ জুন, ২০২২

অভিভাবকগণ, সাবধান! ফুবিং আপনার সন্তানকে ধ্বংস করবে!


কটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে বেশিরভাগ তরুণ-তরুণীই ফুবিংয়ে ভুগছেন এবং শুধুমাত্র তাদের স্মার্টফোনের জন্য তাদের সঙ্গী, পিতামাতা এবং তাদের আশেপাশের লোকজনকে উপেক্ষা করছেন।  এক গবেষণায় এই উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে।

 হায়দ্রাবাদের তরুণদের মধ্যে পরিচালিত একটি গবেষণায় উদ্বেগজনক ফলাফল এসেছে। এই  অধ্যয়নের সহ-লেখক এবং হায়দ্রাবাদের ইএসআইসি হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ সুধা বালা তার গবেষণায় বলেছেন, 'হায়দ্রাবাদের যুবকদের মধ্যে মানসিক যন্ত্রণার উপর ভয় দেখানোর পরিণতি' এটি বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সাথে তাদের সম্পর্কের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।

'ফুবিং' শব্দটি হল 'ফোন' এবং 'স্নাবিং'-এর একটি পোর্টম্যানটো— তার অর্থ দাঁড়ায় অন্যের দিকে মনোযোগ না দিয়ে নিজের ফোনে ব্যস্ত থাকা। দুটি শব্দের সংমিশ্রণ এবং এটি একটি প্রচারণার অংশ হিসাবে ২০১২ সালে একটি অস্ট্রেলিয়ান বিজ্ঞাপন সংস্থা তৈরি করেছিল যা পরে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।

 ২০১৮ সালে ICMR-এর সহযোগিতায় শহরের ডাঃ বালা, ধরনি টেককাম এবং হর্ষল পান্ডাওয়ে এই গবেষণাটি চালু করেছিলেন।  তারা ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিসিন এবং কলা বিভাগের মোট ৪৩০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে গবেষণাটি পরিচালনা করেন।

 সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে যে শহুরে যুবকদের মধ্যে ফুবিংয়ের প্রবণতা বেশি, তাদের মধ্যে ৫২ শতাংশই ফুবিংয়ে নিমগ্ন বলে জানা গেছে।  এর মধ্যে, ২৩ শতাংশ ফুবিংয়ের ফলে গুরুতর মানসিক যন্ত্রণার সম্মুখীন হয়েছিল, যখন ৩৪ শতাংশের মাঝারি মানসিক যন্ত্রণা ছিল।  এটি বলেছে, ফুবিংয়ের পরিমাণ এবং মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে একটি পরিসংখ্যানগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক পাওয়া গেছে।

অনেক ক্ষেত্রে, বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে, ফুবিং গেমিং আসক্তিতে পরিণত হতে দেখা গেছে।  শহরের একটি হাসপাতালের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ১৪ বছর বয়সী একটি ছেলে দশম শ্রেনীর পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি সত্ত্বেও অনলাইন গেম খেলে দিনে ১৮ ঘন্টা পর্যন্ত ব্যয় করে।

 যাইহোক, এই ফুবিং কিশোর বা তরুণদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়  রেনোভা হাসপাতালের কনসালটেন্ট সাইকিয়াট্রিস্ট এবং সাইকোঅ্যানালাইটিক সাইকিয়াট্রিস্ট ডাঃ আসফিয়া কুলসুম বলেন, কখনও কখনও প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ফুবিং পাওয়া যায়।

 তিনি বলেন, অনেক উদাহরণ রয়েছে যে স্ত্রীরা তাদের ফোনে বেশি সময় ব্যয় করে তাদের স্বামীদের সাথে দাম্পত্য কলহের দিকে নিয়ে যায়।  সংক্ষেপে শুধু এটাই বলা যায় যে, ফুবিং আধুনিক মানুষকে গ্রাস করতে শুরু করেছে। এর আগে থেকে এর প্রিকিউশন অবলম্বন না করলে অদূরে মানসিক বিকারগ্রস্থতার স্বীকার অনিবার্য।

(নীচের এই লিংকে ক্লিক করে আরও পড়তে পারেন)


বৃহস্পতিবার, ২৩ জুন, ২০২২

বীতশ্রদ্ধ মা

।। মিঠুন ভট্টাচার্য।। 
 
















কান্নার ভাষা নেই
শুধুই বাঁচার তাগিদ।
জলের নাম জীবন বইতে লেখা ছিল
উপলব্ধি অনেকের ছিল না।
আবার অনেকের ধারণা ছিল টাকা দিয়ে মিনারেল
ওয়াটার বোতল ভুরি ভুরি মেলে বাজারে।
আজ সেই টাকা ব্যাঙ্কে গড়াগড়ি খায়,
জল কেনার না আছে পয়সা, না দোকানী
না কোন বিলাসী গাড়ির ডিকি।
নেই এম্বুলেন্স, নেই কিছু
না আছে স্বর্গরথ, না কোন খালি শ্মশান,
চারিদিক জুড়ে আর্তনাদ।
রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের বোমায় বেঁচে যাওয়া লোক
জীবনে থেকে জীবনের আর্তি শুনছে নিজে।
প্রিয়জনকে বুকে আগলে গলাজলে ভেসে, কাঁধে তুলে
পথ হাটা ডাঙার জলস্রোতে।
আমি যদি মানুষের দেবতূল্য হতাম
হয়ত থেমে যেতে এই প্রলয় ধ্বংস ।
আমি শুধু প্রকৃতি সৃষ্ট এক জীব।
ভুলে আছি আমার নাড়ির ইতিহাস, বিজ্ঞান
তাই মায়ের এমন রূদ্ররূপ। 

বুধবার, ২২ জুন, ২০২২

আত্মকথন










।। জাহিদ রুদ্র ।।
বু নিজেকে নিয়ে কাজ করাটা বড় কঠিন
শূণ্যে  কি আর যোগ করে লাভ হয়?
কোন এক দশকের তো আর আমি কবি নই

শুধু আপাদমস্তক কবিতাময় জীবন

আমি দেশ-বিদেশ তো দূরের
করিমগঞ্জ শিলচর বা কলকাতা বা ঢাকা কেন্দ্রিক ও কোন কবি নই

আদৌ কোনো নাগরিক কবি বা রাজকবিও নই
আমি চাই শুধু এই পৃথিবীর বাসযোগ্য একটুকরো জমি 

আমি নই কোন করপোরেট মিডিয়া- মদদপুষ্ট 
আমার অনীহা আকাদেমি বা একাডেমির সহায়তা
রাজনৈতিক মদদপুষ্ট বুদ্ধিজীবী কবি নই 

শুধুমাত্র জল, জমি, জঙ্গল জীবন চাই

মৌলবাদ বা প্রগতিশীলতার বাধাদানকারী
আমি ঘৃণা করি।

একমাত্র আমার চেতনার কম্পাসই আমার দিক নির্দেশনায় চলি
প্রয়োজন নেই আমার কোন পত্রিকায় বা সামাজিক মাধ্যমে বাহ্ বাহ্ নেবার

তাতে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই

নেই কোন পা চেটে পুরষ্কারের আসক্তি
প্রত্যাখ্যান করি তৈলমর্দন করে কারো ঠোঁটে ওঠে প্রশংসা কোড়াবার, এতে প্রবল বিতৃষ্ণা

আমি অমুক কবি তমুক কবি নই
আমি নিতান্তই এক সাধারণ মানুষ 

কেউ পড়ুক বা না ই পড়ুক
কিছু বলুক বা না ই বলুক 
অনুরাগে বুকে তুলে নিক বা দূরে ছুঁড়ে দিক
আমার ইচ্ছে শুধু
লক্ষ চোখের অন্তরালে আগুন ভরা স্বপ্নগুলো
আঁধার থেকে টেনে আনা।

কারণ দুর্ভিক্ষের চেয়ে অশ্লীলতা আর কিছু হতে পারে
আমার জানা নেই!
ঝাপসা আর স্বচ্ছের মধ্যবর্তী ফ্রেমে আটকা
শুধু এই

আত্মকথন।

মঙ্গলবার, ২১ জুন, ২০২২

হৃদ-কথা

।।  মিঠুন ভট্টাচার্য।।

(C)Image:ছবি









শান্ত স্নিগ্ধ বৃষ্টিস্নাত তুমি
অত্যন্ত আপন।
এই তুমিকে
খোজ করেছি
সেই গান শুনে ভেসে বেড়ানোর কাল থেকে
আজ অবধি।
সেই তুমিতেই যেন
সবকিছুর সমর্পণ।
বন্ধুতা যেন তোমার মাঝেই বসত করে,
গভীরতা যেন তুমি দিয়েই শুরু হয়ে
সবুজ অরণ্য গড়ে।
বিপুল প্রসারিত মনহাওরে
আমি বৈঠা নিয়ে শ্বাস নিতে চাই।
এই তুমিতেই থাকতে চাই
সদ্যোজাত যুবক হয়ে।
শুধু তুমি থেকো। 

রবিবার, ১৯ জুন, ২০২২

নৌকা বাইচ বরাকের ঐতিহ্যবাহী দৌড় প্রতিযোগিতা


আবহমানকাল থেকে নৌকা দৌড় প্রতিযোগিতা বাংলার লোকসংস্কৃতির নদী কেন্দ্রীক পরিচায়ক। বরাক উপত্যকার ঐতিহ্য বহন করে। বিশেষ করে আমাদের করিমগঞ্জ জেলায় এই নৌকা দৌড় প্রতিযোগিতা এই অঞ্চলের মানুষের আনন্দের সঞ্চার জোগায়। কালের পরিক্রমায় হারিয়ে গেলেও জনপ্রিয়তা ও সমাদর লোক হৃদয়ে আজও আছে এক বিশেষ স্থান দখল করে।

এক সময় এ দেশে যোগাযোগ ছিল নদী কেন্দ্রিক আর বাহন ছিল নৌকা। নৌ শিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল বিভিন্ন শিল্পকেন্দ্র। এসব শিল্পে যুগ যুগ ধরে তৈরি হয় দক্ষ ও অভিজ্ঞ কারিগর।কালের বিবর্তনে পাশ্চাত্যের ভাবধারায় আধুনিক সুযোগসুবিধার সম্মিলনে কতক শহর গড়ে উঠলেও গ্রামবাংলায় নৌকা দৌড়ের কদর এখনও ব্যাপক। নৌকা বাইচে আমজনতার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণই তার প্রমাণ।

এই নৌকা দৌড় প্রতিযোগিতা বিশেষ করে বর্ষাকালে হয়ে থাকে। নদীতে বা বিলে যখন জল ভর্তি হয় কানায় কানায়, প্রায় কিছু জায়গায় বন্যার আকার ধারন করে। ঠিক সেই সময় আনন্দ উপভোগ জোগাতে এই প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। তবে একসাথে সব জায়গায় এই প্রতিযোগিতা শুরু হয়না। এক এক জায়গায় এক এক সময়ে হয়ে থাকে।করিমগঞ্জে বিশেষ করে শণবিল,বদরপুর ঘাট, শনিবাড়ি,সুতারকান্দী (কৈয়া বিল) এইসব অঞ্চলে হয়ে থাকে।

নৌকাবাইচের সময় মাঝি-মাল্লারা সমবেত কণ্ঠে গান গায়। এতে তাদের যেভাবে উৎসাহ বাড়ে ঠিক দর্শকদেরও বাড়ে আগ্রহ। তৈরি হয় এক মনোরঞ্জক পরিবেশ। প্রতিযোগিতায় আরও রয়েছে বিজয়ীদের পুরস্কারের ব্যবস্থা। পুরষ্কার হিসেবে দেওয়া হয়ে থাকে মোটা অংকের টাকা,টিভি, নৌকা ইত্যাদি। আমাদের এলাকায় এই দৌড় প্রতিযোগিতা হয় কৈয়া বিলে বা শনিবাড়ি লঙ্গাই এ। দৌড়ের নৌকাগুলোর নাম ও আছে যেমন সোনার তরী, অগ্রদূত, পঙ্খিরাজ, ময়ুরপঙ্খী ইত্যাদি। 

এই জনপ্রিয় নৌকা দৌড়ে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বস্তু হলো জনপ্রিয় সারিগান। তাল, করতাল বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে সারিবদ্ধভাবে চলে গান। শাহ আবদুল করিমের --

চন্দ্র-সূর্য বান্ধা আছে নাওয়েরই আগায়
দূরবীনে দেখিয়া পথ মাঝি-মাল্লায় বায়
ঝিলমিল ঝিলমিল করে রে ময়ূরপঙ্খী নায় ।।

রঙ-বেরঙের যতো নৌকা ভবের তলায় আয়
রঙ-বেরঙের সারি গাইয়া ভাটি বাইয়া যায়
ঝিলমিল ঝিলমিল করে রে ময়ূরপঙ্খী নায় ।।

একটার পর একটা চলে

আল্লায় বলিয়া নাও খোল রে
ভাই সক্কলি।
আল্লাহ বলিয়া খোল।।
ওরে আল্লা বল নাও খোল
শয়তান যাবে দূরে।।
ওরে যে কলমা পইড়া দেছে
মোহাম্মদ রাসূলরে
ভাই সক্কল।...

বা এটাও

যাত্রাকালে বাধা দিওনা    বিদায় দেওগো সকালে
আমার নীলগো রতন    কাল রতন সাজাইয়া দে…
রাধিকা সুন্দরী জল ভরিতে যায়    সোনার নুপুর বাজে রাঙা পায়।
দেখরে কার রমনী জলে যায়।

(এই গানগুলো এক প্রতিযোগির কাছ থেকে সংগ্রহ করা, নাম - গফুর চাচা)।

নৌকা দৌড় শ্রাবণ মাস থেকে শুরু করে ভাদ্র-আশ্বিন মাস পর্যন্ত হলেও মূল আকর্ষণ শ্রাবণ সংক্রান্তির নৌকা দৌড়। কালের বিবর্তনে যদিও আমরা বিশ্বায়নের যুগে তবু নিজের লোকসংস্কৃতির ইতিহাস মিটিয়ে দেয়া কোন ভাবেই সম্ভব নয়।

শনিবার, ১৮ জুন, ২০২২

একাকী ভালোবাসা

 
 ।। মিঠুন ভট্টাচার্য ।। 
 













অনেক তুমিদের ভীড়ে
তুই শেষ বেলায়
বৃষ্টি পরে রামধনুতে ছবি এঁকেছিলি
পশ্চিম আকাশে।
ঘরে বাইরে
ধূপ-ধূনোর গন্ধে
যখন ঠাকুরঘরে আলো জ্বলল,
তখন বাইরের আলো মিলিয়ে
কৃষ্ণপক্ষের রাত
অন্ধকার জড়ো করছিলো।
আবার
কোন শুক্লপক্ষে
অন্য তুই,
জোৎস্নার আলোয় নেমে আসবি
আমার ঘরের বারান্দা জুড়ে
এক ছাদের দিনে।
তুই তখন
আমার ঘরের
দেয়াল লিখনে
অহংকারপূর্ণ স্লোগান।

সোমবার, ১৩ জুন, ২০২২

বন্ধু স্বজন তোমায় বলি


 
 
 ।। মিঠুন ভট্টচার্য ।।
 













সম্পর্কের কিছু লিখি
পরিবার বৃত্তান্তে।
অনেক অমূল্য বাঁধন
তোলা থাকে
কবির কবিতায়,
নিজের অনুষঙ্গে।
বিজ্ঞান বলে
বহুকোষী বিবর্তনের ইতিহাসে
সবাই এক সূত্রে গাঁথা।
তবু বেড়াজালে আগলে
অসাম্যের ব্যথা-অপমানে,
উদ্বৃত্ত লোভের ফাঁদে
হিংসা রচনা করি।
শক্তিপীঠে একাত্ম হই।
পেছন ফিরেই
আবার আগ্রাসী,
সব বই খাতা উপড়ে
সসীম থেকে অসীমে
স্থাপিত হই।

শনিবার, ১১ জুন, ২০২২

কেকে-র ‘প্রেমের পাঠশালা’ এবং সলিল চৌধুরীর সেই অমোঘ উচ্চারণ ‘আজ নয় গুন গুন গুঞ্জন প্রেমে’

 ।। সুশান্ত কর ।।

 [লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে শিলচরের দৈনিক বার্তালিপিতে ১০ জুনের সংখ্যাতে। ৪ এর পাতাতে।]




মরা দেখছিঅনেকে আবেগে বলছেন—‘আমাদের প্রজন্ম প্রেম করা শিখেছে--কেকে-র গান শুনে।তা আমাদের প্রজন্মও প্রেম করা শিখেছে কিশোর লতার মতো বলিউড শিল্পীর গান শুনে। এতে নিজের গৌরব কোথায়এহেন কেবলই বলিউড ছবির গান শোনে প্রেম শেখা লোকজন থাকলে কেউ কোনও দিন বাংলা গান শুনে প্রেম করা শিখবে না। আমাদের সময় যদিও লোকে প্রেম করা শিখেছে হেমন্ত সন্ধ্যার গলাতে এই পথ যদি শেষ না হয়’—এমন অসংখ্য গান শুনে। এখন দেখে শুনে মনে হচ্ছে যেন--বাংলা গানে প্রেম শিখবার স্বপ্ন দেখানো ভুলিয়ে দেবেন কেকে--অনুরাগীরা। আমাদের কেকে-কে নিয়ে বলবার কিছুই নেই। তাঁর অবাঞ্ছিত করুণ অকাল মৃত্যুর প্রতি শোক এবং বিশাল প্রতিভার প্রতি সম্মান জানিয়েই লিখছিআমাদের প্রতিটি শব্দ অনুরাগীদের জন্যে নিবেদিত।

             প্রেম’ কাকে বলেএই যে বুলডোজার নামছে গোটা দেশে--এর বিরুদ্ধে দাঁড়ানোকে প্রেম বলে নাহিংসার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোকে প্রেম বলে নালোকে যে কাজ পায় নারোজগার পায় নাবাসা পায় না --- এই নিয়ে প্রশ্ন করাকে প্রেম বলে নাকেকে বা কিশোর অনুরাগীরা তো প্রেমের সংজ্ঞাকেও খাটো করে এনেছেন। আমরা তো প্রেম করা শিখেছি চল্লিশ পঞ্চাশের সলিল চৌধুরী শুনে। হেমাঙ্গ বিশ্বাস শুনে। অজিত পাণ্ডেশুভেন্দু মাইতি শোনে।  ভূপেন হাজরিকা শুনে। পরে সুমন নচিকেতা লোপামুদ্রা শুনে। শুনুনসুমনের পেট কাটি চাঁদিয়াল'  আর অনুভব করুন প্রেম কাকে বলে। শুনুন লোপামুদ্রার  ‘নিভন্ত এই চুল্লিতে মা একটু আগুন দে’। শুনুন ফারজানা ওয়াহিদ সায়ানের গলাতে ‘ আমি সুন্দর হব’, শুনুন কৃষ্ণকলি ইসলামের গলাতে ‘ হাত ধরেছি হাঁটছি পথে’। তাদের তুলনাতে রূপঙ্করও খাটো। আমার মনে পড়ে না রূপঙ্করের এমন কোনও গান। কেকে বা বলিউডের অধিকাংশ শিল্পী--তাতে শ্রেয়াশানঅভিজিতশানুবাবুল সুপ্রিয়র মতো বাঙালি শিল্পীদেরও নিতে পারেন--কতটা  এই সব বড় প্রেমের গান গাইতে পারেআমাদের কাছে তো সেরা প্রেমের গান বেজেছে --এই দুই বছর আগে--  ফয়েজ আহমদের ফয়েজের ... হম দেখেঙ্গে'। যার কবিতা সম্প্রতি সিবিএসই- পাঠ্য থেকে বাদ পড়েছে। যারা দুই দশক ধরে এত প্রেম'-এর পাঠ নিলেন--তাঁরা কজনে এর জন্যে সামাজিক মাধ্যমে ঝড় তুললেনতখন তো জানা হবেতাঁদের বাণী--সেই সব প্রেমনয়--রাজনীতি। ১৫ আগস্ট, ২৬শে জানুয়ারিতে নেতাজি জন্মজয়ন্তীতে খেয়াল করেন নি কি বাঙালি এখন ভুলে গেছে এই সত্য যে বাংলাতে অবিস্মরণীয় সব দেশপ্রেমের গান রয়েছে—ভারতে বাংলাদেশে? তাঁরা বলিউডের হিন্দি দেশপ্রেমের গানকেই গান বলে চেনে। সর্বত্র।   সত্য বটে বলিউড সিনেমার গানে বহু ছেলে বা মেয়ে প্রেমের জন্যে প্রাণ দিতে পারে--কুলের কালি গায়ে মাখাতে পারে--তারা কজনে হাজার মানুষের ভিড়ে নেমে সাহস করে গাইতে পারে সমরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরে...

‘যারা কাফেতে মোড়েতে বসে আছো

আমি তোমাদের ছেড়ে চললাম

তোমরা হতাশ-পেয়ালা ভরে নিলে

আমি রক্ত ঝরিয়ে কাঁদলাম ।

 

চারমিনারের ধোঁয়াতে

জীবন-পেয়ালা জমাট কুয়াশা

ফ্লুরেসেন্ট আলোর মোড়ে মোড়ে ঘোরে

তৃষিত মুক্তিপিপাসা ।

আজ ভেঙে যাবকাল জুড়ে যাব

তবু ভাঙতে জুড়তে চলেছি

কালবোশেখিটা তোমাদের দেব

খুঁজে আনতেই চলেছি।

 

ওগো হতাশ তোমরা কেঁদো না

কোনও সান্ত্বনা আমি দেব না

সূর্য ডোবার সংকেতে দেখ

মুক্তি-রঙের নিশানা ।

সাহারা হৃদয় দাঁড়িয়ে যারা

মোড়ে মোড়ে আজও হতাশায়

আমার রক্ত ঝরে ঝরে যাক

তাদের শূন্য পেয়ালায় ।

আজ ভেঙে যাবকাল জুড়ে যাব

তবু ভাঙতে জুড়তে চলেছি

বিদ্রোহী আমি বিপ্লবে ডাক

তোমাদের দিতে এসেছি

            সেই ছেলেটিও গাইতে জানে নাযে কাজ পায় নি বলে প্রেমিকা পায় না। সেই মেয়েটি যার রূপ ভালো নয় বলে কেউ ফিরেও তাকায় না। অথচজানা উচিত ছিল।

আর সব বাদ দিন-- এতো যে প্রেম--- এর ঠাঁইটা তো হৃদয়ে। কাগজে জানা যাচ্ছে ,দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগে ভুগছিলেন কেকে। তিনি অবহেলা করে গেছেন--এবং এই অবহেলাতেই তাঁর মৃত্যু। তাঁর প্রেমের পাঠশালারছাত্রদের কী সেই সবেও সরব হতে মানাআরও দশজনকে সতর্ক করবার দায় নিতে হবে নাঅথবা ধরুনপ্রশ্ন উঠেছে--কলেজ ছাত্ররা এত লাখ লাখ টাকা পায় কই বলিউড শিল্পীকে এনে অনুষ্ঠান করতেএই সব নিয়ে প্রশ্নে ভাবতেও মানা কি প্রেমের পাঠশালার ছাত্রদেরঅনুষ্ঠানগুলোতে অব্যবস্থার চূড়ান্ত নিয়েও যে তর্ক উঠছে সেই সব নিয়েও ভাবতে নেই কি প্রেমিক ছাত্রদের বা প্রেমিকা ছাত্রীদের?

রূপঙ্কর খুব অন্যায় করেছেন--নিজেকে কেকে-র থেকে বড় শিল্পী বলে। তাঁর ও চাঁদ শোনেদুই চারটার বেশি ছেলে মেয়ে প্রেম শেখেনি মেনেই নিলাম। তাঁরও জানা দরকার--তিনি সব বাঙালির জন্যে গান করেনও না। বিশেষ করে যারা হাণ্ড্রেড পার্সেন্ট লভবা  দেবতা-প্রেমের গান ঢাকের তালেজন্মদিনের পার্টিতেও নাচবেন বলে চালিয়ে দেন। সেই সব বাঙালি শিল্পীর থেকেও তাঁর অনুরাগী কম--এর অন্যরকম হবার কথাই না।

বার্তালিপি, ১০ জুন

এমনিতেই প্রাক-স্বাধীনতা আমল থেকে হিন্দি ভাষাকে কেন্দ্র করে এক কেন্দ্রিক রাষ্ট্র গড়বার এক পুঁজিবাদী চাপ চিরদিনই ছিল। বহু আগেই আমরা তার কাছে আত্মসমর্পণ করে রেখেছি। আমরা ধরতেও পারি না আমরা যাকে নিজের পছন্দ অপছন্দ বলি
সেটি একটি রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক নির্মাণ। আর গত তিন দশকে তো আমরা বিশ্বায়নের স্বপ্নে মজেই আছি। কেকেশানশ্রেয়ারা তো এই বিশ্বায়ন যুগের শিল্পী। সেখানে বাংলা গান দাঁড়াবে কোথায়তিনি কেকে হতে পারেন নাপারবেন না--আগামী অনেক প্রজন্মই পারবে না। সেখানে তাঁর এহেন আমরা অনেক ভালো গাইএমনিতেও দম্ভ--আর কেকের বিরুদ্ধে বললে বেশি বেশি দম্ভ বলেই শোনাবে। ভোটের সময় ভোট টানবার জন্যে ‘জয় বাংলাবলে চেঁচানো--আর স্বজীবনে বিশ্বায়নের স্রোতে গা ভাসানোই এখন নতুন প্রজন্মের ধর্ম। সারা দেশেই। এরা জয় শ্রীরাম’ ধ্বনিতে দেশে রাজনৈতিক হাঙামা করলেও ভজনের আসরেও এমন ভিড় করে না। এরা ভজনকেও ডিজে গান বানিয়ে যায় মসজিদে। কী করতে যায় সবাই জানেন। তারা কেকে কেন শুধু--- অভিজিৎ শান শ্রেয়াকে এনে--ভিড় জমাবার ভণ্ডামিটা করবেই। আর করে বলেই গায়ক রূপঙ্করকে ‘সভ্যতা’ শেখাতে গিয়ে এরা নিজেরা সভ্যতার সব সীমা ছাড়িয়ে যেতেও কুণ্ঠিত বোধ করে না  

 সেই ছাত্রেরা ফিরেও দেখবে না গান বেচে যাদের সংসার চলে--তাঁরা বাঁচলেন কি মরলেন যখন আর সিডি ক্যাসেট বাজারে চলে না। কোভিডে যাদের গান শেখাবার পাঠশালাও ছিল বন্ধসারা দেশেই।  কালিকা প্রসাদের পরে দোহার’-এর মতো দল টিকবে কি টিকবে নাএই নিয়ে তাঁদের তর্কটা অনেকটা রাশিফল মিলল কি না মিলল বিচার করবার আমোদের মতো। তাঁরা তো কালিকাকে চিনেছেনজি-সারেগামা দেখে। জি চ্যানেল কী করে চিনেছেসেই প্রশ্নও তাদের মনে দেখি না। এরা এখনকার দোহারের সংগ্রামের খবর রাখে না।  রূপঙ্করও কি কোনোদিন এই সব নিয়ে বেশি ভেবেছিলেনতাঁর গান শুনে মনে হয় নি কোনও দিন। আমাদের না-শোনা গান থেকে থাকতেও পারে।  অগত্যা-- তাঁর মনের ক্ষোভকে গদ্যে জানাবার ভাষার সমস্যা হতেই পারে। তার উপরে তাঁকে বলতে হচ্ছিল যে দলকে সমর্থন করেন সেই দলেরই ছাত্রদের বিরুদ্ধে। সেই দলটি যে তিনি কেন করেন?—এমন আদর্শবাদী প্রশ্নও খুবই সরল প্রশ্ন। এও শিল্পীর অস্তিত্বের সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি সর্বভারতীয় প্রশ্ন। অসমেরও হাল একই।

এর পরে নাহয় তিনি একই কথা--গানেই বলুন। কিছু হলেও লোক বেরোবে যারা শুনবে বুঝবে। তিনি বাংলা গানের অন্যতম সেরা শিল্পী ছিলেন আছেন। কোনও ট্রলই তা দমাতে পারবে না। এই কদিন আগেও ইস্কাবন’ ছবিতে গাওয়া তাঁর গান জোনাকি’ আন্তর্জালে লাখো মানুষ শুনছেনএবং প্রশংসাতে ভরিয়ে দিচ্ছেন। আন্তর্জালের সব কটি মঞ্চে গানটি রয়েছে। এবং লাখো মানুষ শুনছেন। কেউ একটিও কটু কথা বলেন নি ফেসবুকে ছাড়া।  তিনি আগামীতে গানেই বলুন তাঁর রাগের কথাক্ষোভের কথাক্রোধের কথা। এই যেমন কিছু বাঙালি শুনেছেন শিলাজিতের সেই গায়ে কাঁটা দেয়া গান এই গিটারটা বন্দুক হয়ে যেতে পারে যদি ভয় দেখাও/ নীল আকাশটা লালে লালে লাল হয়ে যেতে পারে যদি চোখ রাঙাও!

 হ্যাঁআমরা নিশ্চিত তাঁর আক্রমণের অভিমুখ কেকে ছিলেন না। ছিলেন নিজের দলেরই এই সব কলেজ ফেস্টের আয়োজকেরা। যারা  বাংলা গায়কদের ছেড়ে বলিঊডের দামী শিল্পীদের দিকে ঝুঁকেছেন। এটি কে ভালো কে মন্দ শিল্পীর তর্কই নয়--এক বাংলা গানের শিল্পীর জীবিকা সংকটেরবলা ভালো গান শ্রমিকের সংকটের চিল-চিৎকার। বাণিজ্যিক গানের কারিগরেরা তাঁদের কোনও পাঠশালাতেই এই সব সংকটের কথা বলতে শেখানই নি। এমন কি ভারতের গৌরব লতা মুঙ্গেশকরও না। একটিই গান মনে করতে পারি তাঁর  --- তাও সলিল চৌধুরীর কথাতে। এর পরে আর কইতবু সেই গানটি আমরা এখানে পুরোটাই তুলে দিতে পারি। যাতে কেকে-র মতো বলিউড শিল্পীদের যারা বাঙালি হলেও হতে পারেন--প্রেমের পাঠশালার ছাত্রেরা ধরতে পারেনআমরা বলতে কী চাইছি... আমরা কোন পাঠশালাতে বড় হয়েছি। কোন পাঠশালাকে আজকাল বলা হয়ে থাকে দেশদ্রোহী'দের পাঠশালা। নইলে এই লেখককেও ছোটো করে  হলেও ট্রলের শিকার হবার সম্ভাবনাই বেশি।

আজ নয় গুন গুন গুঞ্জন প্রেমে

চাঁদ ফুল জোছনার গান আর নয়

ওগো প্রিয় মোর খোল বাহু ডোর

পৃথিবী তোমারে যে চায়।

আর নয় নিষ্ফল ক্রন্দন

শুধু নিজের স্বার্থের বন্ধন

খুলে দাও জানালা,আসুক

সারা বিশ্বের বেদনার স্পন্দন

ধরণীর ধূলি হোক চন্দন

টিকা তার মাথে আজ

পরে নাও পরে নাও পরে নাও।

কার ঘরে প্রদীপ জ্বলেনি

কার বাছার অন্ন মেলেনি

কার নেই আশ্রয় বর্ষায়

দিন কাটে ভাগ্যের ভরসায়

তুমি হও একজন তাদেরই

কাঁধে আজ তার ভার

তুলে নাও তুলে নাও তুলে নাও।।

পুনশ্চ সংযোজনঃ গীতিকার সলিল চৌধুরী বা গায়িকা লতা মুঙ্গেশকর ‘সেকেলে’ হয়ে গেছেন। নতুন যুগের নতুন কথা নতুন স্বর চাই অনেকে দাবি করতেই পারেন। সলিল চৌধুরীর গানের কথা কি সত্যি ‘সেকেলে’ হয়ে গেছে, কেউ বুকে হাত দিয়ে বলুন দেখি।  কাল কি সত্যিই এতো দ্রুত চলে?

শনিবার, ৪ জুন, ২০২২

হাংরি জেনারেশন


 জাতীয় নিরাপত্তা’ বলতে বুঝি জীবন ছাড়া
 বিবেকের কাছে বেঁচে থাকার বিনিময় প্রথা 
 এবং যে কোন কিছুর জন্য অন্ধ ‘হ্যাঁ’ হয়ে থাকা
 অশ্লীল বলে বিবেচিত হওয়া মনে,
অনুকূলতার সামনে সেজদা করতে শেখেছে
‘জাতীয় নিরাপত্তা’ বিপন্ন লবণাক্ত ঠোঁটে।
 'সবচেয়ে বিপজ্জনক' কথা
 শ্রম লুট শ্লোগান ধরেছে ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন।
 এমনকি লোভ থেকে বিশ্বাসঘাতকতা
 আর কোনো সতর্কতা ছাড়াই গ্রেফতার
 এতোটা ভয়ঙ্কর হয় না
 নীরবতা ভয় পায় যতটা।

নিজের ভিতর থেকে
পৃথিবীর সভ্যতায় গজিয়ে ওঠা ধাবমান ট্রেনগল্পে
ইন্টেলিকচ্যুয়েল বার্তাজীবি লিখছে 'ঘুম পাড়ানি মাসিপিসি মোদের বাড়ি এসো'।
 ক্ষীণ কৃমির আলোয় পড়া
 ভ্রুকুটি নিয়ে জীবনের মধ্য দিয়ে যাওয়া নিঃসন্দেহে ভালো নয়,
 তবু স্বমূত্র গোমূত্র স্নানজল পান করা ফোবিয়া
 নিজের জন্য নিষ্ক্রিয়তায় কমিয়ে দেয় 
 ইচ্ছা তীব্রতার অভাবে।

সবকিছু সহ্য করতে
রুটিনের প্রাণী হয়ে ওঠা স্বপ্ন- মৃত্যু
ক্লান্ত ঝোকা কাঁধে 'উলঙ্গ রাজার কলিং বেল বাজায়
শব্দ আসে - হাংরি জেনারেশন।