“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

সোমবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৩

প্রিয় সবুজ আস্তানা



প্যালেস্টাইনে আলপটকা 
বোমারু বিমানের বর্ষণে 
তোমার মৃত্যু। 
আমি ভেঙে
উত্তরাখণ্ডে জলস্রোতে ভেসে গড়িয়ে যাই,
হয়তো তেলেঙ্গানায় খুটি ধরে
জীবন খুঁজি।
তোমায় যে আর মোবাইল স্ক্রিন থেকে বারান্দায়
খুঁজে পাই না। 















সোমবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৩

জলাভূমি

 ।। শৈলেন দাস ।।

।।শৈলেন দাস।।

শহরের শরীর ক্রমশ: বেড়ে চলেছে। নতুন নতুন এলাকা যুক্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তার উপর সরকার পৌরসভাকে পৌরনিগমে উন্নীত করার অধিসূচনা জারি করায় শহরের লাগোয়া একপশলা জমিও এখন শহরের অন্তর্ভুক্ত। এমতাবস্থায় একসময়ের শহরতলী দুর্গাবিল এখন শহরের কেন্দ্রবিন্দুতে। শ্রমজীবী প্রান্তিক মানুষের বসতবাড়ি যেন 'গোল্ড ফিল্ড' সদৃশ। তাই এখানকার বাসিন্দাদের জমির পাট্টা দেওয়ার জন্য সরকারি প্রক্রিয়া অনেকদূর এগিয়েও বাতিল হয়ে গিয়েছে। সতীশ লক্ষ করেছে দুর্গাবিলের প্রান্তিক মানুষের সাথে ক্ষমতাবানদের নিষ্ঠুর আচরণ, রাজনীতিবিদদের ইকোফ্রেন্ডলি চক্রান্ত এবং ভদ্রজনদের চিরাচরিত অবজ্ঞার সাথে নতুন সংযোজন অমানবিক অপপ্রচার। মানুষের ভুল এবং গাফিলতির ফলে বাঁধ ভাঙ্গা উচ্ছ্বাসে বন্যার জল যখন ঘরের চালের উপর দিয়ে যাচ্ছিল তখনও এক শ্রেণীর মানুষ বলতে থাকেন এর কারণও নাকি ঐ দুর্গাবিলের জবর দখল।

 

কয়েকদিন আগে স্থানীয় পত্রিকায় একটি সংবাদ বেরিয়েছিল - শহরে বহু কোটি টাকা ব্যয়ে বিনোদন পার্ক তৈরি হবে, এর জন্য জমিও নাকি চিহ্নিত হয়ে গেছে। সামান্য কিছু প্রতিবন্ধকতার জন্য জায়গাটির নাম উল্লেখ করা হয়নি। আজ দুর্গাবিলের যতীন এবং অন্য আরও কয়েকজন সতীশের ভাড়া বাড়িতে এসেছে। হাতে সবার সরকারি নোটিশ। যতীনরা যেন নিজের থেকেই দুর্গাবিলকে জবরদখল মুক্ত করে সরে যায় অন্যথায় সরকার বাধ্য হয়ে উচ্ছেদ অভিযান চালাবে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বুলডোজার চালিয়ে উচ্ছেদ অভিযানের খবর প্রতিদিনই আসছে। সতীশের আশঙ্কা ছিল একদিন তার প্রয়োগ দুর্গাবিলেও হতে পারে কিন্তু তা যে এত তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে সে ধারণা তার ছিল না। যতীন বলল - এই মুহূর্তে আমরা কি করব? কার কাছে যাব? পনের দিন পর যে মাথার উপর আর ছাদ থাকবে না। সতীশ তাদের কি সান্ত্বনা দেবে বুঝে উঠতে পারছে না। বলল - তোমরা বাড়ি যাও এবং নিজেরা সংগঠিত হও। আমি দেখি কতদূর কি করা যায়। সবাইকে এক থাকতে হবে কিন্তু।

সেদিন যতীনরা চলে যাওয়ার পরেই সতীশ কাজে নেমে পড়ল। তাদের দেওয়া নোটিশ এর সূত্র ধরে খোঁজাখুঁজি করতে গিয়ে গভীর চক্রান্তের হদিস পেল সে। শহরের একাংশ ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, ভুমাফিয়ারা সম্মিলিতভাবে ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করেছে দুর্গাবিলের প্রান্তিক মানুষগুলোকে উচ্ছেদ করার। সেখানে অত্যাধুনিক বিনোদন পার্ক তৈরি করে নিজেদের অংশীদারিত্ব অনুযায়ী মুনাফা লুটার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করতে যেকোনো পন্থা অবলম্বন করবে তারা। সরকারি অফিস এবং সংবাদ জগতের ভেতরের খবর যারা জানে তাদের কয়েকজনের সাথে নিজের সুসম্পর্কের দরুন সতীশ এমন কিছু তথ্য জোগাড় করতে সক্ষম হল যা থেকে এটা স্পষ্ট যে দুর্গাবিলের মানুষগুলি শয়তানদের কুনজরে পড়েছে। আসন্ন বিপদ থেকে এই খেটে খাওয়া মানুষগুলোকে বাঁচানো তার দ্বারা সম্ভব হবে না। এই অসম লড়াইয়ে চাই এমন একজন যোদ্ধা যে প্রান্তিক মানুষের আর্তনাদ শুনলে অস্থির হয়ে উঠবে এবং রুখে দাঁড়াবে সর্বশক্তি দিয়ে। যাকে দেখলে বধ্যভূমিতেও পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠবে প্রান্তিক মানুষের মনোবল।

 

সংসদীয় নির্বাচন আসন্ন। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল নিজেদের জয় ধরে রাখতে বিভিন্ন কার্যসূচি হাতে নিয়েছে তাই ফুরসত নেই দলীয় নেতাদের। ঘণ্টা খানেক অপেক্ষার পর সতীশের ডাক পড়েছে ভিতরে যাওয়ার। বসার ঘরে এখনও জনাকয়েক মানুষ রয়ে গেছে। একজন ভেতরের দরজা দিয়ে সতীশকে উপরে চলে যেতে ইঙ্গিত করল। উপরে উঠেই সতীশ দেখল ড্রইং রুমের সোফায় আরাম করে বসে আছে হরিভানু কৌস্তভ, সোশ্যাল মিডিয়ায় সতীশের সাথে সোসিও পলিটিক্যাল ইস্যুতে যার তর্ক বিতর্ক চলে প্রায়ই। এমতাবস্থায় সে যখন চলে আসবে কিনা ভাবছিল ঠিক তখনই ভিতরের রুম থেকে বেরিয়ে আসল সৌম্য দর্শন সুবাহু যুবক দিব্যাংশু। 'সতীশদা হরিভানুকে নিয়ে কোন সংকোচ নেই। ভিতরে এস, ও আমাদেরই লোক' বলেই নিজের চেয়ারে বসল সে। সতীশ সামান্য কুশল বিনিময় করে সংক্ষেপে তুলে ধরল দুর্গাবিলের যতীনদের কথা। দিব্য বলল 'আমি কি করতে পারি তাতে?' 'মানে?' পাল্টা প্রশ্ন করল সতীশ। 'স্বার্থান্বেষী কিছু ক্ষমতাবান লোক আমাদের মানুষগুলিকে সমূলে উপড়ে ফেলবে আর আমরা চুপ করে হাত গুটিয়ে বসে থাকব? প্রতিরোধ গড়ে তুলব না? সতীশকে উত্তেজিত হতে দেখে জলের গ্লাস এগিয়ে দিল দিব্য। শান্ত স্বরে বলল 'ইন্টারনেটে বিদ্রোহের ইতিহাস ঘাটাঘাটি করে তুমি আবেগিক হয়ে গেছ সতীশদা, তাই এরকম বলছ। ভেবে দেখ একবার, সামান্য কয়েকটি পরিবারের জন্য শহর উন্নয়নের এত বড় মেগা প্রকল্পে আমি বাগড়া দেই কি করে? পার্টি আমাকে মোর্চার দায়িত্ব দিয়েছে, তা সামলাব না এইসব ঝামেলায় জড়াব?' হরিভানু বলল 'এবার আমাদের সংসদীয় আসনটি সংরক্ষিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মোর্চার দায়িত্ব ভালভাবে সামলালে পার্টি দিব্যকে প্রার্থী করতে পারে। এ কথাটা মাথায় রাখতে হবে আমাদের।' গ্লাসটা টেবিলে রেখেই উঠে পড়ল সতীশ। ক্রুদ্ধ স্বরে হরিভানুকে লক্ষ্য করে বলল 'ভাই, আনুগত্য আমাদের ধাতে নেই। আমাদের ইতিহাস বিদ্রোহের ইতিহাস।' দিব্যকে বলল - সংরক্ষিত আসনে প্রার্থী হওয়ার বাসনা পোষণ করছ মনে অথচ যাদের নামে এই আসন সংরক্ষিত হবে তাদের আর্তনাদে তোমার হৃদয় কেঁপে উঠবে না না? চলি ভাই। বলেই বেরিয়ে পড়ল সে। পেছন ফিরে দেখল না আর দিব্যর দিকে।

 

দুর্গাবিলের তিন দিক থেকে বুলডোজার ঢুকে উপড়ে ফেলছে প্রান্তিক মানুষের বাড়িঘর। সেখানে উপস্থিত হয়ে সতীশ কর্তৃপক্ষকে বোঝানোর চেষ্টা করছে "পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে এভাবে প্রান্তিক মানুষের বসতবাড়ি ভেঙ্গে ফেলা অন্যায়। এখানে বসবাস করার জন্য ল্যান্ড এডভাইসারি কমিটির অনুমোদন রয়েছে তাদের।' কাগজপত্র দেখিয়েও কোন লাভ হয়নি। কর্তৃপক্ষ বলছে এসব নাকি ভুয়ো। সরকারি রেকর্ডে এটা শুধুই এক জলাভূমি, যা আজ খালি করাতে হবে যে কোন মূল্যে। নিজেকে বড় অসহায় মনে হচ্ছে সতীশের। দিব্যাংশুকে বারবার ফোন করেও পাওয়া যাচ্ছে না। মোবাইল সুইচ অফ রয়েছে তার। ব্যক্তিগত অসুবিধার কারণে বুলডোজারের সামনে গিয়ে পথ আগলে দাঁড়াতে পারছে না সে নিজেও। শ পাঁচেক অসহায় নারী পুরুষ অপেক্ষায় প্রহর গুনছে বাস্তুচ্যুত হওয়ার। ঠিক এমন সময় দুর্গাবিলের দক্ষিণ দিক থেকে মাইকের আওয়াজ ভেসে আসছে 'জয় ভীম, জয় ভারত'। সতীশ বুঝতে পেরেছে এটা দিব্যরই কাজ। নিজের অজান্তেই তার ডান হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে উঠলো। 'জয় ভীম, জয় ভীম' বলে চিৎকার করতে থাকলো কর্তৃপক্ষের সামনে। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা যতীনকে বলল - 'আর প্রতিবাদ করে কাজ হবে না দাদা, সবাইকে নিয়ে প্রতিরোধে নেমে পড়ো। দিব্য আসছে।' মুহূর্তের মধ্যে 'জয় ভীম' ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠল দুর্গাবিল। নারী-পুরুষ সবাই একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়ল বুলডোজারের উপর, শুরু হল পুলিশ জনতা খণ্ড যুদ্ধ।

 

শতাধিক মানুষকে সঙ্গে নিয়ে মিছিল করে দুর্গাবিলের দিকে এগিয়ে আসছে দিব্যাংশু। মাইকযোগে প্রাঞ্জল ভাষায় তুলে ধরছে সতীশের জোগাড় করা তথ্যগুলি। কুচক্রী জনপ্রতিনিধি এবং ভূমাফিয়াদের নাম উল্লেখ করে ধিক্কার সূচক বক্তব্য রাখছে সে এবং পার্শ্ববর্তী জনগণের প্রতি আবেদন রাখছে এই ঘৃণ্য চক্রান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে। এদিকে পূর্ব নির্ধারিত সূচী অনুযায়ী আজই মোর্চার প্রতিটি মণ্ডলের মিটিং চলছিল। গুগল মিট এর মাধ্যমে মোর্চার জেলা প্রধান হিসাবে কথা ছিল দিব্য মত বিনিময় করবে তাদের সাথে। হরিভানু নিজের মোবাইল দিয়ে সেই মিটিংয়ে সম্প্রচার করে দিয়েছে দিব্যোর এই প্রতিবাদী কার্যসূচি। কয়েকটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের সাংবাদিকদের পাশাপাশি দিব্যর কিছু ছেলেরাও দুর্গাবিলের উচ্ছেদ অভিযানের মর্মান্তিক দৃশ্য লাইভ টেলিকাস্ট করছে বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যম নেটওয়ার্কে। এসবই দিব্যর মস্তিষ্ক প্রসূত।

দিব্যাংশুর আবেদনে কাজ হয়েছে। ধীরে ধীরে প্রতিবাদে সামিল হচ্ছে মানুষ। গোটা উপত্যকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করেছে। সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে দুর্গাবিলের অসহায় জনগণের আর্তনাদ পৌঁছে গেছে সর্বত্র। উপত্যকার হাওর এবং প্রান্তিক অঞ্চলগুলি থেকে শ'য়ে শ'য়ে জনতা গাড়ি করে শহর অভিমুখে রওয়ানা হওয়ার ভিডিও আসছে ঘন ঘন। অল্প সময়ের মধ্যেই 'জয় ভীম, জয় ভারত' স্লোগান সম্বলিত পোষ্টে ছেয়ে গেছে সোশ্যাল মিডিয়ার দেয়ালগুলি। এদিকে সতীশকে পুলিশের লাঠির আঘাত থেকে বাঁচাতে গাড়ি থেকে লাফিয়ে পরল দিব্যাংশু। বাহুবলে ছুড়ে ফেলল কয়েকজন পুলিশ কর্মীকে। দিব্যাংশুকে নিজেদের মধ্যে পেয়ে দুর্গাবিলের পীড়িতরা উজ্জীবিত হয়ে উঠল নতুন উদ্যমে। তাদের আর্তনাদ হয়ে উঠল আক্রমণের ডাক। আহত সতীশের মনে হল ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে, দিব্যাংশুই যেন ঐতিহাসিক চরিত্র দিব্বোক!

 

প্রায় ঘন্টাখানেক পর উপর মহলের টনক নড়েছে। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বন্ধ হয়েছে দুর্গাবিলের উচ্ছেদ অভিযান। স্থানে স্থানে রুখে দেওয়া হয়েছে শহর অভিমুখে আসা আমজনতার গাড়িগুলিকে। জেলাধিপতি সহ পার্টির জেলা সভাপতি স্বয়ং উপস্থিত হয়ে আশ্বস্ত করেছে জনগণকে। তবে সরকারি কাজে বাধা প্রদান এবং জনগণকে উত্তেজিত করার অভিযোগে দিব্যাংশু ও সতীশকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। দলীয় অনুশাসন ভঙ্গ করায় দিব্যাংশু ছয় বছরের জন্য নিলম্বিত হয়েছে পার্টি থেকে।

 

হরিভানু অদূরে শান্তভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। নিজের তৈরি ছকে দুর্দান্ত সাফল্য এসেছে তবুও চোখ মুখ তার প্রতিক্রিয়াহীন।

 


মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৩

যে ঠাকুর,জমিন-দার

 ।। সপ্তর্ষি বিশ্বাস।।

(C) সৌজন্য


কবি ওমপ্রকাশ বাল্মিকী র " ঠাকুর কা কুঁয়া" র ছায়ায় ]
—- –--- 
চুলা মাটির। মাটিপুকুর
ছেনে তোলা। পুকুর
কারযে ঠাকুর,
জমিন-দার।
#
ক্ষুধা রুটির। রুটি আটার। কার
আটাআটার ক্ষেতপুকুর
যার। যে ঠাকুর,
জমিন-দার।
#
বলদহালজোতখামার
সবই তাঁরপুকুর
যার। যে ঠাকুর,
জমিন-দার।
লাঙ্গলও তাঁরকেবল ঘাম,
রক্তখাটা —- হে আমারহে
তোমার। এবং শেষে
ফসল কারসবই তাঁরপুকুর
যার। যে ঠাকুর,
জমিন-দার।
#
পানি ও জলশস্যাগার,
এবং পাড়ারাস্তাঘাট
সবই তাঁরপুকুর
যার। যে ঠাকুর,
জমিন-দার।
তাইলে বাকি
সব আমার
গ্রামশহরদেশটি আর
দেশের ভার?
দশের ভার?
—-
সপ্তর্ষি বিশ্বাস 
০৩/১০/ ২০২৩
[https://amarsonarbanglaamitomaybhalobasi.blogspot.com/2023/10/blog-post.html?m=1]





 


বৃদ্ধাশ্রম : ছিন্ন চিন্তা, ভিন্ন স্বর

 

 ।। মৃন্ময় দেব ।। 

 

(C) সৌজন্য সুমন চট্টোপাধ্যায়

বৃদ্ধ + আশ্রম = বৃদ্ধাশ্রম ! অর্থাৎ, বৃদ্ধের আবাস, বৃদ্ধের আশ্রয়। আশ্রয় কথাটার মধ্যে আশ্রয়হীনতার ব্যথা-বেদনা একেবারে গুপ্ত নয়। বিভিন্ন কারণে বাধ্য হয়ে বৃদ্ধাবাসে যারা জীবন কাটাচ্ছেন তাদের স্মৃতিতে ফেলে আসা  কর্মমুখর দিনগুলি বুঝি কানে কানে বলে যায়, ‘এমন তো কথা ছিল না!চিরন্তন আশীর্বাণী আয়ুষ্মান ভবঠাট্টার মত কানে বাজে। এও হয়তো মিথ্যে নয় যে, আশ্রম গড়ে ওঠার মূলে যত না শ্রম, তার চেয়ে বেশি বুঝি ভ্রম। সে বোধহয় সব আশ্রমের ক্ষেত্রেই খানিকটা সত্যি, বৃদ্ধাশ্রমের বেলায় তো বটেই। আন্তর্জাতিক বয়স্ক নাগরিক দিবস উদযাপনের সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের বর্তমান বাড় বাড়ন্ত সময়ে কথাগুলো মনে এলো। না, বৃদ্ধাশ্রমের প্রয়োজন নেই, বার্ধক্যের বারানসি নয় বৃদ্ধাশ্রম, বরং সামাজিক অবজ্ঞা অবহেলার নিদর্শন ইত্যাদি সস্তা মত কিংবা মন্তব্যে বাজিমাতের রুচি বা অভিপ্রায় নিয়ে কথাগুলো ছুঁড়ে দেওয়া হচ্ছে এমন নয়। আসলে গোটা বিশ্বজোড়া এই ক্রমবর্ধমান সমস্যাটি নিয়ে ভাবনা-চিন্তা না করলেই যে নয়। যেহেতু বয়স তো নিজের নিয়মেই বাড়ে, বাড়বে, কারোর তোয়াক্কা না করেই। তবু, বয়স যখন মুখের রেখায় ত্রিকোণমিতিআঁকতে শুরু করে, ‘আমি বৃদ্ধ হলামএই বোধ যখন অনিবার্য উদ্বেগে আকুল করে তখন বার্ধক্যকে দ্বিতীয় বসন্তমনে করার সাধ থাকলেও সে সাধ্য কজনেরই বা থাকে!

অতএব, মন ছুটতে চাইলেও শরীর সায় দেয় না। অনু-পরিবারে সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও হয়তো সঙ্গ দেওয়ার মত সময় থাকে না সন্তান-সন্ততির। সন্তান-সন্ততির কথায় মনে পড়ে গেল আজকের বৃদ্ধাবাসে আশ্রয় নেওয়া একাংশও এককালে মশগুল ছিলেন ‘তুমি আর আমি আর আমাদের সন্তান,  এই আমাদের পৃথিবীমার্কা মধ্যবিত্তীয় দর্শনে। আজ সে পৃথিবী আরও ছোট হয়ে পড়েছে, সন্তান-সন্ততি সরে গেছে দূরে, হয়ত ভিন্ন পারিপার্শ্বিকতার চাপে, যাপনের ভিন্ন বাস্তবতায়। কাকেই বা দায়ী  করা যাবে এমন অবাঞ্ছিত অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণতির জন্য। সেভাবে হয়ত কাউকেই না, বড়জোর আত্মবিলাপের মগ্নতায় বলা যেতে পারে, ‘দোষ কারও নয় গো মা, আমি স্বখাত সলিলে ডুবে মরি শ্যামা!খানিকটা বাড়াবাড়ি হয়ে গেল কি? কারও কারও তেমন মনে হলেও কিছুই বলার নেই। আসলে সমস্যাটাই বাড়াবাড়ি রকম বেড়ে উঠছে ক্রমে। আমাদের এখানেই নয় কেবল, সব দেশে, সর্বত্র। আমাদের দেশে বরং অনেক দেরিতেই উপলব্ধি ঘটেছে, অভিজ্ঞতাও সাম্প্রতিক কালের। ফলে, বহু দেশে যখন বয়স্কদের সমস্যা নিয়ে নানা বাস্তবানুগ চিন্তাচর্চা ও পরিকল্পনা দানা বাঁধতে শুরু করেছে আমাদের এখানে তখন আবেগের আতিশয্যে না-বৃদ্ধদের বৃদ্ধাবাস গড়ার তাড়না পেয়ে বসেছে।

এ বড় সুখের সময় নয়এ বড় আনন্দের সময় নয়’- কেননা, সমস্যার গভীরতা, মাত্রা ও পরিধি সম্পর্কে আমরা যথেষ্ট সচেতন হয়ে উঠতে পারিনি এখনো। হিমশৈলের চূড়াটি দেখেই আমরা হা-হুতাশ করে চলেছি। আড়ালে যে বিশাল অংশটি রয়েছে সে সম্পর্কে আন্দাজটুকুও কি আছে আমাদের? না, নেই। আর সে কারণেই বাৎসরিক বয়স্ক দিবস উদযাপন, হাসপাতালে, অফিস-আদালতে বয়স্কদের জন্য আলাদা কাউন্টার, বাসে-ট্রেনে নির্ধারিত পৃথক আসন, বড় বড় শহরে- মেট্রো সিটিতে সিঁড়ি ভাঙার ধকল থেকে রেহাই দিতে এলিভেটর, নামমাত্র বার্ধক্য ভাতা ইত্যাদি সু-ব্যবস্থার যোগান দিয়ে বিরাট দায়িত্ব পালনের আত্মপ্রসাদ লাভ করছি। এর চেয়ে বড় মাপের পৃথকীকরণের সামাজিক উদ্যোগ হচ্ছে বৃদ্ধাবাস, বৃদ্ধাশ্রম প্রতিষ্ঠা সরকারি-বেসরকারি সহায়তায়।  বেসরকারি উদ্যোগের পাল্লাই ভারি এক্ষেত্রে। সরকারী উৎসাহও কম নেই এর পেছনে, যেহেতু দায় বাঁচে। বিশেষ বিশেষ দিনে নেতা-আমলাদের দর্শন মেলে আবাসগুলোতে, ফলমূল বিতরণ, স্বাস্থ্য পরীক্ষা-টরীক্ষা ইত্যাদি সবকিছু মিলিয়ে বেশ একটা মাখো মাখো ভাব লক্ষ্য করা যায়। এসবের প্রয়োজন যে একেবারেই নেই তেমন কথা বলার মত নির্বোধ আমরা অবশ্যই নই। যেসব ব্যক্তি ও  সংস্থা এমনতর উদ্যোগে সামিল হচ্ছেন, সেবার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসছেন তাদের চিন্তা ও কাজকে তুচ্ছ মনে করার স্থল নেই, বাসনাও নেই। এগুলো ভালো না মন্দ, আমাদের সমাজের পক্ষে উপযোগী না অনুপযোগী সেসব বিতর্কও অবান্তর, অহেতুক। এসব উদ্যোগের স্বল্প মেয়াদি হলেও  উল্লেখযোগ্য ভূমিকা যে রয়েছে তা অনস্বীকার্য।

তাহলে সমস্যাটা ঠিক কোথায়? সমস্যাটা কাজের পদ্ধতিতে নয়, বরং ভাবনার ধরনে, সমাধান  খোঁজার পদ্ধতি ও প্রক্রিয়ায়। সমস্যাকে সঠিকভাবে অনুধাবন করা না গেলে, সমস্যার শেকড়ে না  পৌঁছতে পারলে সদিচ্ছা সত্ত্বেও সমাধানের সূত্র খুঁজে পাওয়া কঠিন। উপরে দৃষ্টান্তমূলক যেসব  উদ্যোগের বিবরণ উল্লেখ করা হয়েছে তার মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান এই সমস্যাটির নিরসন যে সম্ভব নয় এটুকু বোধ উদ্যোগে যারা সামিল তাদের নেই এমনও নয়। ক্ষুদ্র সামর্থ্য নিয়ে যথাসাধ্য করারপ্রশংসনীয় ভাবনা থেকেই তারা এগিয়ে আসছেন, একথা উপলব্ধি করেই যে দীর্ঘ সময় জুড়ে  কেবল দানখয়রাতের উপর নির্ভর করে এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখা প্রায় অসম্ভব। ব্যক্তিগত কিংবা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সামাজিক গোষ্ঠী বা সংগঠনের তরফে সমস্যাটিকে পারিবারিক সমস্যাহিসেবে দেখার এক ধরনের সহজ সরল প্রবণতা লক্ষণীয়। ছেলেমেয়ে বহুদূরে, বিদেশেকিংবা সন্তান-সন্ততি নেই, অথবা পরিবারে বনিবনা হচ্ছে না, অসুস্থতায় শুশ্রূষা করার লোক নেই ইত্যাদি যেসব কারণে বৃদ্ধাবাসের আবশ্যকতা জরুরি হয়ে দেখা দেয় যাদের কাছে এমনতর মধ্যবিত্তশ্রেণির মানুষের জন্যই বৃদ্ধাবাস আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠে। আর্থ-সামাজিক দিক থেকে প্রান্তীয় বর্গে যাদের অবস্থান তাদের জন্য কিন্তু এরকম ব্যবস্থা গড়ে ওঠে না। গড়ে উঠছে না, কারণ সীমিত আর্থিক সামর্থ্যে তা গড়ে তোলা সম্ভব নয় কোন ব্যক্তি অথবা সংস্থার পক্ষে।

তবে কি রাস্তায়, ফুটপাথে, কারখানার শ্রমিক লাইনে, বস্তিতে জীবন কাটিয়ে যে মানুষেরা বার্ধক্যে পৌঁছে যান ঠিকানাবিহীন, কর্মক্ষমতা থাকেনা বলে কোন আস্তানাই জোটে না যাদের বরাতে (তাদের সংখ্যাও তো নেহাত কম নয়তাদের কথাও কি ভাবব না আমরাকেউ কেউ, এমনকি   অনেকেই হয়ত ভাববেন, ভাবেনও নিশ্চয়; কিন্তু তার পেছনে থাকে এক ধরনের সহানুভূতি, সহমর্মিতা নয়। যেহেতু সামাজিক যাপনে সহমর্মিতার অবকাশ তৈরিই হয়নি। কারণ চিরটা কাল আমরা চেনা লোককে’ দেখেছি ‘অচেনার গাম্ভীর্যে। আমাদের তথাকথিত শিক্ষিত পরিশীলিত মন সেবার মানসিকতা নিয়ে কদাচিৎ তাদের দিকে সাহায্যের হাত প্রসারিত করলেও অধিকার অর্জনের লড়াইয়ে সামিল হয় না, হতে পারে না অথচ আমরা ‘সাম্যের গান গাই’, গেয়ে যাই। এই তো জীবন, যাপন-বৃত্তান্ত আমাদের।  এ এক অ-কোষ বিড়ম্বনা, আর এ বিড়ম্বনা ঘুচাতে ঝরে না একবিন্দু চাতক-জল!

এ কেবল বয়স্কের সমস্যা নয়, কোনও একটি পরিবারের একার, একক সমস্যাও নয় মোটেই। এ এক সামাজিক সমস্যা, সর্বাঙ্গীণ ও সর্বজনীন। জন বার্ধক্য (Population ageing) সম্পর্কে যাদের সম্যক ধারণা নেই তাদের পক্ষে এ সমস্যার ব্যাপ্তি এবং বিস্তৃতি অনুধাবন অসম্ভবপ্রায়। এর মূলে রয়েছে গড় আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি ও জন্মহার হ্রাসের ফলে জনবিন্যাসগত পরিবর্তন। পরিসংখ্যান দিয়ে যদি বলা যায় তাহলে এ মুহূর্তে আমাদের জনসংখ্যার সবচেয়ে বড় অংশটি হচ্ছে ১৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সী, অর্থাৎ তরুণ, এবং উৎপাদনক্ষম। অথচ এই অনুপাত বদলে যাচ্ছে ক্রমশ, এবং খুব দ্রুত। অনুমান করা হচ্ছে ২০৩০ নাগাদ ৬৫ বছরোর্দ্ধ নাগরিকের সংখ্যা এই তরুণ বর্গের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যাবে। বিশেষজ্ঞদের অনেকে এমন আশঙ্কাও ব্যক্ত করছেন যে ২০৪৬ সাল  নাগাদযা আগে কখনো ঘটেনি তাই ঘটতে চলেছে। অর্থাৎ শতাংশের  হিসেবে বয়স্ক নাগরিকের হার -১৫ বছর বয়সী শিশুদের হারকেও ছাপিয়ে যাবে। ২০৫০ সালে বয়স্ক নাগরিকের সংখ্যা বর্তমানের  দ্বিগুণ হয়ে মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশে পৌঁছবে। যেহেতু অনুমান করা হচ্ছে যে ২০২২ ২০৫০ সময়সীমায় ৮০+ বয়স্ক নাগরিকের সংখ্যা ২৭৯% হারে বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ ভারতবর্ষ, ‘বৃদ্ধদের আবাসহিসেবে স্বীকৃত হবে। ইতোমধ্যে আমেরিকা সহ বেশ কিছু উন্নত দেশ  সে পর্যায়ে  পৌঁছেও গেছে। তার ফল যে কী ভয়ানক হতে পারে তা ভাবলেও শিউরে  উঠতে হয়।

এই জনবার্ধক্যের সবচেয়ে মারাত্মক দিকটি হচ্ছে নারীকরণ (feminisation) ও পল্লীকরণ (ruralisation), অর্থাৎ এই বৃদ্ধদের বড় অংশ হচ্ছে মহিলা এবং বয়স্ক নাগরিকের ৭০%এর অধিকের বসবাস গ্রামাঞ্চলে, যেখানে স্বাস্থ্য পরিষেবা সহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধা এখনও অপ্রতুল।মহিলাদের আর্থ-সামাজিক ক্ষমতায়ন হালে যে পর্যায়ে বিরাজ করছে তাতে আগামীতে এই বিরাট সংখ্যক বৃদ্ধাদের অবস্থা কী দাঁড়াবে তা সহজেই অনুমেয়। বিশ্বজোড়া মন্দার পরিপ্রেক্ষিতে এদের খাতিরে সরকারি বরাদ্দ কতটা কী পরিমাণ বাড়তে পারে সে বিষয়ে সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। করোনা কালে বয়স্কদের অধিকতর মৃত্যুহারের অভিজ্ঞতা থেকে তা আন্দাজ করা তেমন কঠিন নয়। পরিসংখ্যানবিদদের কেউ কেউ এমনতর দুর্দৈবকে জনবিন্যাসের ভারসাম্য বজায়ের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক নিদান বিবেচনা করতেও প্ররোচিত হয়েছেন। অনাগত দিনে যৌবনের যূপকাষ্ঠে বয়স্কের বলিদানের আরও ভয়ঙ্কর রূপ যে দেখা যাবে না সেকথা নিশ্চয় করে বলা মুশকিল। সমস্যার মোকাবিলা করতে হলে বাস্তবসম্মত পরিকল্পনার প্রয়োজন। আর  সঠিক পরিকল্পনার জন্য চাই সঠিক তথ্য। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের উপর আমরা এখনো নির্ভরশীল। ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভেন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে ও সেন্সাসের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তথ্য আহরণের কাজ এখনি শুরু না করলে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা স্থির করা কঠিন হবে।

বার্ধক্য যেহেতু অনিবার্য, কাজেই বর্তমান বাস্তবতার প্রেক্ষিতে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণের প্রশ্নে প্রাথমিক ও প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত সক্ষম বার্ধক্য। আর তার জন্য প্রয়োজন বয়স্কদের জন্য এক সুনির্দিষ্ট সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্প’ (Social Security Scheme) বর্তমানের বার্ধক্য ও বিধবা ভাতা, অন্নপূর্ণা যোজনা ইত্যাদির আওতাধীন বয়স্কের সংখ্যা নেহাত নগণ্য বলা যায়। যেহেতু বয়স্কদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা গভীর ও ভিন্ন গোত্রের কাজেই এক সামূহিক স্বাস্থ্যবীমা যোজনার আওতায় তাদের নিয়ে আসা জরুরি। তার জন্য সরকারি উদ্যোগ আবশ্যক। বয়স্ক নাগরিকের শারীরিক ও মানসিক সমস্যার নিরসনে দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন। অথচ মুষ্টিমেয় কিছু মেডিকেল কলেজ বাদ দিলে অধিকাংশ মেডিকেল কলেজ ও জেলাস্তরের হাসপাতালগুলিতেও কার্যকরী জেরিয়েট্রিক (Geriatric) বিভাগ নেই। বয়স্কের স্বাস্থ্যের প্রশ্নে অঙ্গীকারবদ্ধ না হলে সক্ষম বার্ধক্যঅর্জন দিবাস্বপ্ন হয়েই থেকে যাবে। এক্ষেত্রে যথার্থ পরিকল্পনা নিয়ে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। এযাবৎ সামান্য যা কাজ হচ্ছে তার বেশিটাই বে-সরকারি স্তরে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সৌজন্যে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি বৃদ্ধাবাস-বৃদ্ধাশ্রমকে প্রশাসনিক ও সামাজিক যৌথ নজরদারিতে নিয়ে আসা নিতান্ত আবশ্যক।

সক্ষম বার্ধক্যের প্রশ্নে বয়স্ক নাগরিকদের নিজস্ব আত্মসহায়ক গোষ্ঠী বা সংস্থা গড়ে তোলার  দিকেও নজর দিতে হবে। বৃদ্ধাশ্রমকেই একমাত্র ভরসার স্থল না করে স্বল্প মেয়াদী আবাস (Short term shelter) কিংবা ডে কেয়ার সেন্টার (Day care centre) গড়ে তোলা যেতে পারে। সর্বাবস্থায় বিভিন্ন বয়সীদের সঙ্গে সহাবস্থানের, বিবিধ প্রজন্মের সাহচর্যে বসবাসের সুযোগ সৃষ্টি করা জরুরি।  এক্ষেত্রে বৃদ্ধাবাস’ (Old Age Home), ‘শিশু নিবাস’ (Child Care Centre) ইত্যাদিকে এক ছাদের তলায় নিয়ে আসার পরিকল্পনাও গ্রহণ করা যেতে পারে। পাড়ায় পাড়ায় উৎসাহী তরুণ-তরুণীদের উদ্যোগে সহমর্মী ও সহায়ক গোষ্ঠী গঠনও দরকার। এগুলোর কোনটাই অসম্ভব কিংবা অসাধ্য নয় মোটেই। প্রয়োজন শুধু সদিচ্ছার, সহমর্মিতার। নবীনের উদ্যম ও প্রবীণের প্রজ্ঞা সহযোগে এবং অঙ্গীকারবদ্ধ সরকার ও কল্যাণকামী রাষ্ট্রের উদ্যোগে গড়ে উঠতে পারে এক ইতিবাচক বৃদ্ধাশ্রম - পরিসরে যা প্রসারিত যৌথ-পরিবার সদৃশ, অন্তকরণে আপনমর্মে সামাজিক সমাজ থেকে ছাঁটাই করে নয়, সামাজিক অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমেই সম্ভব সক্ষম বার্ধক্যেরলক্ষ্য অর্জন। অন্তত এরকম এক স্বপ্ন সম্বল করেই বার্ধক্যের কোঠায় পা রাখা ছাড়া উপায় কী! আর স্বপ্ন সফল হওয়ার সংকেত যদি মেলে তো সন্ধে নামার সময় হলেও – ‘পশ্চিমে নয়, পূবের দিকে মুখ ফিরিয়ে ভাবব আমি,  একটু ভালো চা পাওয়া যায় কোন দোকানে!’