“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

শুক্রবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০১৯

মৃত্যঞ্জয়

।। সুপ্রদীপ দত্তরায় ।।
(C)Image:ছবি









তুমি কি শুনতে পাচ্ছো মৃত্যুঞ্জয়
কেন জানি কটা দিন থেকে
 
প্রতি মুহূর্তে মনে একটা ভয় ,
বুঝি এই মুহূর্তে কিছু একটা ঘটবে।
এই যে আমি চলছি, পোস্টের ধার ঘেঁষে,
 
স্নানে যাচ্ছি, বাথরুমে বা ওই পথে ;
হঠাৎই দুটো হাত পেছন থেকে ---
না-- , আমি ঠিক বোঝাতে পারি না,
 
আমার, ভিতরে ভীষণ, ভীষণ ভয়।
তুমি শুনতে পাচ্ছো মৃত্যুঞ্জয় ?
মৃত্যু নিয়ে আমি খুব ভাবি না জানো, 
ওসব ভাবনা আমার মধ্যে নেই,
 
প্রতি মুহূর্তেই মৃত্যু গ্রাস করবে আমায়,
তেমন প্রত্যাশাও আমাতে নেই ।
তবে মৃত্যুর আগে যে হাজার মৃত্যু ----,
তোমাকে ঠিক বোঝাতে পারি না,
 
কী ভীষণ জ্বালা, ভয়ঙ্কর ভয়
 
ঠিক বলে বোঝাবার নয়।
তুমি বুঝতে পারছো না, মৃত্যুঞ্জয়
আমার ভীষণ,
  ভীষণ ভয়।
এই যে খাচ্ছি, দেখতে পাচ্ছো নিশ্চয়।
এসব খাবার নিয়েও আমার ভারী ভয়।
কী খাচ্ছি, কেন খাচ্ছি, 
যা খাচ্ছি ঠিক খাচ্ছি কি
  ? 
সব তো প্ল্যাস্টিক , সার আর ফরমালিন ।
দোকান থেকে খাবার কিনতে ভয়, মনে হয়,
 
যা কিনছি, সেটা খাবার নাকি বিষ ।
দোকানিটা শয়তান, নাকি কিলবিস।
কী বীভৎস দৃষ্টি, কুৎসিত হাসি,
গায়ে পড়ে আলাপ জমাতে চায়,
 
মানুষকে মানুষ ভাবে না ওরা ,
আমি বোঝাতে পারছি না তোমায়,
 
তুমি কি বুঝতে পারছো মৃত্যুঞ্জয় ?
 
বিশ্বাস কর, আমার ভীষণ,
  ভীষণ ভয় ।
আচ্ছা, আমাকে তোমার কেমন মনে হয় ?
 
কোথাও কি ভারসাম্যের অভাব আছে ভাবো?
  
লোকে বলে আমার সবটাই মানসিক
 
ওরা ঠিক আমাকে বুঝতে পারে না ।
সত্যি করে বলতো, আমি কি পাগল?
 
এই যে কথা বলছি, ক্রমাগত, অনর্গল,
 
আমি কি সুস্থ না । আমার চলা, বলা --,
তোমরা সত্যি জানো না
 
আমার ভিতরে
  কি কষ্ট, কি যন্ত্রণা --;
তোমরা বুঝতে পারবে না । আমার ভয় --
কি বলতে কি বলে ফেলি, যদি ভুল হয় ?
যা বলি, বলাটা কি ঠিক ?
নাকি যতটুকু বললাম, সবটা বেঠিক?
 
যা বলতে চাই, আমি বলি কি সব ?
নাকি সবটাই চাপা । আসলে
 
না বলা কথাগুলো ডুবন্ত বদ্বীপ ।
তুমি শুনতে পাচ্ছো মৃত্যুঞ্জয় ?
 
এই যে চলা, তোমার লুকোচুরি খেলা
 
আমার গান, ভালবাসা, ভালোলাগা
 
সবেতেই সংশয় ।
ভাবি যা করছি, বোধহয় ঠিক হচ্ছে না,
 
আবার যা হচ্ছে তা চাইছি না,
 
আসলে
  কি চাইছি সেটাই তো জানি না , 
শুধু ভয় ভয় আর ভয় ।
বাবা বলতেন, মাথাটা পরিষ্কার
 
অঙ্কে আমি সবসময়ই ভালো,
 
সোনার মেডেল পেয়েছি, একবার নয় বহুবার ।
কী লাভ হল বলো ? তোমাকে পেলাম ? নাহ  !
জীবনের অঙ্কটা যে কি শুভঙ্করী ধাঁধা
 
কিছুতেই মিলাতে পারি না ।
কি করলে যে মন পেতে পারি --,
  থাক ।
গত সপ্তাহে সুজির পায়েস করেছিলাম,
 
তোমার প্রিয়, তোমায় বলেও ছিলাম আসতে,
এলে না । চুলে বাঁধা রজনীগন্ধাগুলো
 
কোজাগরী রাত্রিতে বিদ্রূপের হাসিতে,
চোখে যে বৃষ্টি ডাকে, তার
  হিসেব অজানা ।
লক্ষ তারার আলোকে হার মানায় যে চাঁদ
 
আমার ঘরে তার প্রবেশ নিষেধ ।
ওখানে শুধুই অন্ধকার । আমি জানি মৃত্যুঞ্জয়,
এখন তুমি ইকেবানার বুকে মুখ গুঁজে ধ্যানস্থ ।
কোন আর্তিই স্পর্শ করে না আর ।
তোমার জীবনে আমি,
  ঝরে যাওয়া শুকনো পাতা ।
গতকাল দুপাতা ঘুমের ঔষধ এনেছিলাম কিনে।
তিনটে ইতিমধ্যেই খাওয়া শেষ । অবশেষ ?
থাকবে না, সবগুলোই খাবো আজ।
অন্তত একটা দিন, একটা দিন আমাকে
সমস্ত ভয়কে জয় করতে হবে ।
প্রমাণ করতে হবে আমারও সাহস অনেক ।
জানি না গুড নাইট নাকি গুড বাই বলা উচিত ,
 
শুধু একটা ইচ্ছে ছিল মৃত্যুঞ্জয় --
যদি একবার, শুধু একবার যদি কাছে আসতে
 
যদি একটা সুযোগ দিতে আমায় ,
যদি জানতে পেতাম কি আছে ইকেবানাতে
 
যা অদেয় আমার;
  যদি জানতে পেতাম ---।
বিশ্বাস করো মৃত্যুঞ্জয়, সমস্ত ভয়কে জয় করে
আমি তোমাকে দেখিয়ে দিতাম -----। আমি পারি,
আমার কাছে এখনো অনেক কিছু আছে।
বিলিয়ে দেবার জন্য আমার অনেক কিছুই
  বাকি।
আসলে মৃত্যুঞ্জয়, আমার ভয় , ভীষণ ভয়,
 
ইকেবানা আমার সব কেড়ে নিতে চায়,
 
আমার ঘর, স্বপ্ন, আমার ভালবাসা ।
তুমি বুঝেও বুঝতে চাইছো না
ইকেবানা আমার শত্রু, আমার সতীন ,
 
একটা জলজ্যান্ত সর্বনাশা ।


কোন মন্তব্য নেই: