“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

বৃহস্পতিবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

ভালো নেই

 ।। সুপ্রদীপ দত্তরায়।।









জানিস, মনিশ 
তুই মানিস আর না মানিস
আমি জানি , আমরা কেউ ভালো নেই।
তুই, আমি, পলা পঞ্চতপা
সুবীর, কাশীদা পার্লি ,মনিদীপা, 
পাশের বাড়ির রাঘববাবু, লক্ষ্মীপুরের রাঙাকাকু
মৌটুসি, ছগনমল, অরিন্দম 
আমরা কেউ ভালো নেই রে। 
তবু প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা 
ফেসবুক, ওয়াটস্আপ , টেলিফোনে
শুভেচ্ছা আর শুভকামনা 
ভালো থাকার, সুখে থাকার স্বপ্ন বোনা ।
এই যে ধোপদুরস্ত পোশাক, গাড়ি , বাড়ি , 
ফুটানি রকমারি ; সবই লোক দেখানো 
ভেতরটা প্রচণ্ড রকম ফাঁপা ।
আমাকে বলেছিল গোপা;  সবটাই নাকি প্রলেপ,  
লোক দেখাতে রাখা । ভেতরের দুঃখ যন্ত্রণাকে 
দুমরে মুচরে মোড়ক দিয়ে ঢাকা ।
বাড়ি থেকে বেরোতে যেমন চাই --
একটা ঝা-চকচকে ধোপদুরস্ত পোশাক , 
শরীরের সমস্ত মলিনতা ঢাকতে ---
মনেরও তেমনি একটা পোশাক থাকা চাই 
একটা পোশাক যা তাকে আড়াল করতে পারে 
লোকের থেকে, শোকের থেকে ।
যখন সে নিজের সম্মুখে দাঁড়াচ্ছে  , 
তখন তো সে নেংটা , একেবারেই উলঙ্গ ।
কপাট খুলে বেরিয়ে আসে হতচ্ছাড়া ছবি
মনের আনাচে কানাচে লুকিয়ে থাকা শ্যাওলা 
খসে যাওয়া পলেস্তারে চুন আর বালি
আর বিশাল অংশ জুড়ে কাজলের কালি।
ভেতরটা আসলে কারোরই ভালো নেই।
এই যে নাগপুরের কাকিমা, এত প্রতিপত্তি 
এত বৈভব । যখন তখন বিদেশ ঘুরছেন, 
মুখ খুলতেই সবকিছু হাতের কাছে পাচ্ছেন 
মনে তারও সুখ নেই । একমাত্র ছেলে 
এক্সিডেন্টে স্পটডেড। বৌটা বেঁচেছিল যদিও 
বাঁচাতে পারেনি। সাতদিনে সব শেষ 
এক বুক শূন্যতা নিয়ে নাতিটি কোলে ।
গতকাল ডিভোর্স দিল রবিনের ছেলে 
ওদের নাকি আন্ডারস্টেণ্ডিঙের অভাব।
এটাই স্বভাব। মেনে নিতে পারে না।
হাসপাতালে ডাক্তাররা দিয়েছে জবাব 
দীনুদার মাকে । ওনার নাকি লাস্ট স্টেজ
বরুণের ছেলেটির ছিল ক্রিকেটে ক্রেজ
খেলতোও ভালো । স্টেট ট্রায়েলে ছিল 
ওটা রেগিং ছিল নাকি জাতি শত্রুতা 
এখন সে ডিপ্রেশনে, ক্রিকেটে বৈরিতা ।
দীপালিটা রোজ নাকি লুকিয়ে কাঁদে 
ছেলে মেয়ে নেই । গিয়েছিল সিক্তার সাধে 
 হয়তো সেখানে কিছু কেউ বলে থাকবে।
চিকিৎসা যে হয়নি তাতো নয়।
তবু বুকের মধ্যে এক কষ্ট তো থাকবে ।
শান্তার বরটা, কত বয়স আঠাশ পার !
হুট করে চলে গেল, ডাইবেটিস, হাই সুগার ।
দীপনের ছেলেটি ড্রাগস নেয়, তাই অশান্তি ।
বাড়িতে মারধর করে, বলেছিল অবন্তী ।
আসলে জানিস কি - কেউ শান্তিতে নেই । 
বিশ্বাস কর, কেউই সুখে নেই ।
 মাঝে মাঝে মনে হয়
সুখের ঠিকানা বুঝি স্বপ্ন শহর , 
আর শান্তির ঠিকানাটি শ্মশানের চিতা।
বাকি সব বৃথা খোঁজা , শুধুই শূন্যতা ।






কোন মন্তব্য নেই: