“সাদা বকপাখির তরঙ্গায়িত ডানার মতো মুমলির মন মেঘলা আকাশ
ছাড়িয়ে বহুদূর উড়ে যেতে লাগলো !” ...ঠিক এভাবেই তমা বর্মণের সাম্প্রতিক গল্পগ্রন্থটির প্রথম
গল্প ‘মৃত্তিকা মন’ শেষ হচ্ছে । কিন্তু এই শেষের সাথেই লেখিকা প্রমাণ করছেন যে বাংলা গল্পের সোনার খনিটিতে
তিনি আরও কিছু হিরে মানিক জমা করা সুরু করছেন । ‘মৃত্তিকা মন’ ছাড়াও আরো আটটি গল্প তমা এই সংগ্রহে স্থান দিয়েছেন । গল্পগুলি পড়তে পড়তে আমার এমন ধারনা হয়েছে যে সমগোত্রীয়
কয়েকটা গল্প নিয়েই এই সংকলন । আপাত সাধারণ এক ছিমছাম লেখিকা তমার ভেতর যে ঘুণে ধরা সমাজের
অপ্রথা সমূহের বিরুদ্ধে এক চির কালীন বিদ্রোহী ও প্রতিবাদী রয়েছে, এই বই তাঁরই জ্বলন্ত দলিল ! তমা প্রতিটি গল্পের কেন্দ্রে একটি নারী চরিত্র এঁকেছেন , যার চোখ দিয়ে তিনি ভালবাসা, ক্ষোভ, পাশবিকতা, বঞ্চনা ও আরো বহু অনুভবের বয়ান লিপিবদ্ধ করেছেন । তাঁর গল্পের নারীটি কখন শিশু, কখন যুবতী বা মধ্যবয়েসি, এবং এদের সবার মধ্যেই জ্বলছে এক সুতীব্র আগুন, আর সেই আগুনে বড় অসহায় ভাবে আমাদের মেকি সমাজ
ব্যবস্থা ও দুমুখো চরিত্র গুলো পুড়ে যেতে থাকে । তাঁর গল্পের চরিত্র মুমলি আমাদের কঠিন জিজ্ঞাসার মুখে ঠেলে দেয়, সুমি রুখে দাঁড়ায় আপোসহীনতার বিরুদ্ধে, জাহ্নবীর চোখে চকচক করে ওঠে মানসিক উত্তরণের ঝলক, এবং ঠিক একইভাবে মিথিলা, রেশমি বানজারা, হিরামোতিরাও আসে এক একটি উদ্যত মশাল নিয়ে । আর আমরা পাঠকরা আমাদেরই পরিচিত জগতটির পঙ্গুত্ব দেখতে থাকি !
তমা ছাত্রীকাল থেকেই কবিতা লিখতেন, ‘নির্জন কোলাহল’ নামের একটা কবিতার বইও তাঁর ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়ে গেছে। সেটি পড়ার সৌভাগ্য না হলেও ফেবুতে পড়া লেখিকার কবিতার বলিষ্ঠ কথকতা আমাদের মন
কেড়েছে । কিন্তু গল্প লেখাতেও তমা যে সম্ভাবনাময়ী ‘মৃত্তিকা মন’ তাঁরই প্রমাণ । ত্রিপুরার উল্লেখযোগ্য প্রকাশক সংস্থা ‘নীহারিকা’ বইটিকে সর্বাঙ্গসুন্দর করে সাজিয়েছেন, মুদ্রণ ভুল প্রায় নেই বললেই চলে । বিক্রমজিৎ দেব প্রচ্ছদে তুলির টানে এক মায়াময় আলো সৃষ্টি করেছেন । যদিও ভেতরের নামলিপিতে ইংরেজিতে Cover Design by: Charu Pintu লেখা থাকায় বিভ্রান্তি হয়েছে . তমা বর্মণের সাবলীল ভাষা
পাঠককে আনন্দ দেবে, আর তাঁর গল্পের বিষয়বস্তু চয়ন আগামীতে আরও অনেক আঙ্গিক
ছুঁয়ে যাবে এই কামনা জানাই ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন