।। শিবানী ভট্টাচার্য দে ।।
(C)Image:ছবি |
শেখর
ভট্টাচার্য ভৈরব গাছটির উপরে চড়ে ডালগুলো কেটেই ফেললেন। ভৈরবগাছ মানে বাড়ির মূল চত্বরের
বাইরে একটা বড় গাছ, যাকে পুজো করে ভৈরব হিসেবে মানা হয় এই বিশ্বাসে
যে ভৈরব বাড়ির রক্ষা করবেন। ভৈরব গাছে চড়তেই বাড়িশুদ্ধ লোকে আঁতকে উঠল। পবিত্র
পূজিত গাছে পা ঠেকাতেই নেই, সেখানে
সেই গাছে চড়া!
আর বোধ হয় রক্ষা নেই। কালভৈরব কুপিত হয়ে আর এ বাড়ির কাউকে আস্ত রাখবেন না। বামুন
গেরস্ত, বাচ্চাকাচ্চার বাপ হয়ে এরকমের কাজ কেউ করে!
শেখরের মা কমলিনী দেবী হায় হায় করে উঠলেন, মুখপোড়া, জন্মে
অবধি শান্তি দিল না, এখন ভৈরব কুপিত হলে আবার হতচ্ছাড়ার কী যে হবে।
একটার পর একটা বিপদ মুখপোড়ার লেগেই আছে, তবুও
দেবতায় ধর্মে মন নেই। শেখরের বউ লতিকা হতাশ, ঠাকুরঘরের
দুয়ারে মাথা কুটে কাঁদতে লাগলেন। হে ঠাকুর, আমার
বাচ্চাদের উপর কোপদৃষ্টি দিওনা বাবা। ওদের বাপের পাপ যেন অবোধ শিশুদের না লাগে।
শেখরের দিদি হৈমবতী আর্ত চিৎকারে বলছেন নেমে আসতে। বাচ্চারা চুপ, কী
হবে, কী হবে ভাব, বড়দের
ভয় দেখে ঘাবড়ে গেছে। ছোট্ট
মেয়েটি পর্যন্ত হাঁ করে দাঁড়িয়ে আছে। এমন কি গাছ কাটার শব্দে ওবাড়ি থেকে শেখরের
জেঠতুতো দাদাও এসে জিগ্যেস করলেন, ভৈরব
গাছ কেটে ফেললে শেখর? কমলিনী বল্লেন, দ্যাখ
অবিনাশ, প্রতিষ্ঠিত ভৈরব, সেই
গাছে উঠে ডাল কাটছে।
শেখর
গাছ থেকে নামছেন, তাঁর মা রুদ্ধশ্বাস, ছেলেমেয়েরা
তাকিয়ে আছে, ভৈরব এক্ষুনি না ফেলে দিয়ে হাতে নাতে পাপের ফল দেন। কিছুই হল না, তিনি
নিরাপদেই নেমে
এলেন। বললেন, কী ভৈরব ভৈরব
করছ তোমরা? ভৈরব তো শিব, তা
এক জায়গায়, ঠাকুরঘরে তো আছেনই। এই দিকে অনেকগুলো কলা আনারস
গাছ আছে, একটা ভাল পেয়ারা গাছ আছে, পঞ্চমুখী
জবার গাছ লাগিয়েছি, এই শিংরা গাছের
জন্য গাছগুলো রোদ পাচ্ছে না। তাই কেটে দিলাম ডালগুলো। সারা বাড়ি আর ঠাকুরঘর বানিয়ে
ফেলতে হবে না। হাউমাউ করা ছাড় তোমরা। আর ভৈরব যদি রক্ষাই করেন তাহলে কানাই দাসের
বাড়ি ডাকাতি
হল কেন? তারা তো রোজ ভৈরবপুজো করে।
ভৈরব
তৎক্ষণাৎ চাক্ষুষ কিছু শাস্তির চমৎকার না দেখানোতে সবাই একটু যেন নিরাশ হয়েও
আশ্বস্ত হলেন। লতিকা ঠাকুরঘর থেকে বেরিয়ে চুপচাপ ঘরের কাজে লাগলেন। অবিনাশ
দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে গেলেন। কমলিনী দেবী গজগজ করলেন আরো কিছুক্ষণ, কী
যে হবে তোমাদের, ভেবে
ভয়েই মরি । দেবকোপ তো সোজা ব্যাপার নয়। দেবকোপে মানুষকে ধরলে কোন দিক থেকে ক্ষতি
হবে বোঝা যায়না----ইত্যাদি ইত্যাদি।
কিন্তু
শেখর ঠাকুরদেবতাদের আগাছা পরিষ্কার করবেন বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। দিনকয়েক পর
তিনি ঠাকুরঘরে নারায়ণশিলা, শিবলিঙ্গ ও জগদ্ধাত্রীর ছবি—একটা
করে এই তিনটি বিগ্রহ ছাড়া বাকি যত দেবতার
ছবি, ঘট ইত্যাদি ছিল, সব
বিদায় করে দিলেন। এমন কি বিপত্তারিণী, মনসার
ঘট ও। যে তিনটি রাখলেন, সে তিনটি বহুপুরুষের পূজিত দেবতা, তাই
হয়তো একটু দুর্বলতা। আবার সবাই দেবকোপের
ভয়ে কাঁপছিল, কিন্তু বিশেষ কিছুই ঘটল না।
ঠাকুরের
সংখ্যা কমানোর পর বরং ঠাকুরঘরটা ছিমছাম দেখতে লাগছিল, আর
পুজোর সময়টাও কম লাগছিল, এতগুলো দেবতার যথানিয়ম সেবায় একঘণ্টাতে ও পোষাত
না। আর এতগুলো ঠাকুরের ফুল তোলা, পুজোর
জোগাড়, পুজোর বাসন মাজা---তাড়াতাড়ি করে করলেও অন্তত
আরো এক ঘণ্টা। এই কাজগুলো করতে
হত শেখরের বড় মেয়ে ঋতাকে, সে একটু বড় ছিল, আট
কি ন'বছর
বয়স। কাজ কমে যাওয়ায় সে খুশি হয়েছিল, কিন্তু
সেই খুশিটাকে ঠিক উপভোগ করতে পারছিল না পাছে ঠাকুর পাপ দেন। কিন্তু কয়েকদিন পর ও
ঠাকুর কিছু অঘটন না ঘটানোয় ব্যাপারটা প্রায় ভুলেই যাচ্ছিল।
এর
বেশ কদিন পর সাপ ঢুকল ঘরে, তাও রাতের বেলা, যখন
বাচ্চারা শুয়ে পড়েছে, লতিকাও আরেকটু পরে শোবেন, শেখর
শেষ বিড়িটি টানছেন, এমনি সময়ে। লতিকা-ই দেখেছিলেন সাপ ঢুকে যাচ্ছে, শেখরকে
চিৎকার করে ডেকে দেখালেন, দেখতে দেখতে
সাপটা ছেলেমেয়েদের তক্তাপোষের নিচে ঢুকে গেল। লতিকা ভয় পেয়ে বাচ্চাদের ডেকে বললেন
তারা যেন চুপটি করে মশারির ভেতরে শুয়ে থাকে, এমন
কি মশারির গায়েও যেন হাত না লাগায়, খুব
সাবধান, ঋতা উঠে বসে মশারির মধ্যথেকেই বিছানার চারপাশ
দেখল, ছোট ভাই বোনদের হাত পা মশারির গায়ে লেগে নেই তো, শুনল
তার বাবা বলছেন, ও কিছু না, ব্যাঙ
খেতে সাপটা ঘরের ভেতরে
ঢুকেছে। তাদের মাটির মেঝের ঘরে দুএকটা কুনোব্যাঙ থাকতই তার বাবা মাকে বিছানায় শুতে যেতে বলছিলেন, লতিকা
দাঁড়িয়েই রইলেন, বলছিলেন, বিপত্তারিণীর
ঘট, মনসার ঘটটাও উঠিয়ে দিলে। কী যে হবে জানিনা। শেখর বললেন, বললাম
তো, ব্যাং খেতে সাপটা ভেতরে ঢুকেছে, তুমি
বরং হারিকেনটা নিয়ে রান্নাঘরে যাও, কটা
মরিচ আর পাটকাঠি নিয়ে এসো। লতিকা খুব সাবধানে রান্নাঘর থেকে সব নিয়ে এলে শেখর
কাঠিগুলো জ্বালিয়ে লঙ্কা পুড়িয়ে ধোঁয়া দিলেন, একটু
পরে সাপটা বেরিয়ে এলো। শেখরের কাছে লাঠিতো ছিলই, বেশির
ভাগ সময়েই
লাঠি হাতে ঘুরতেন, তাদের জঙ্গলের দেশের সর্বত্র সাপখোপ
শেয়ালটেয়ালের আনাগোনা। সেই লাঠি দিয়ে দু ঘা দিতেই সাপটা মরে গেল। শেখর সেটা লাঠির
আগায় করে বাইরে নিয়ে গিয়ে পুড়িয়ে
ফেললেন, ততক্ষণে
ঋতা ও তার ছোট ভাইবোন লঙ্কাপোড়ার ধোঁয়ায় কেশে উঠে সাপের শেষকৃত্য দেখল, দেখল
যে তাদের মা আবার ঠাকুরঘরের দরজায় মাথা ঠেকাচ্ছেন।
শেখর
বাড়ির সম্বৎসরের পুজোপার্বণের আগে থেকেই কমিয়ে দিয়েছিলেন। লতিকাকে উপবাস করতে দিতে
চাইতেন না। বিপত্তারিণী, জন্মাষ্টমী, শিবরাত্রি, কয়েক
রকমের ষষ্ঠী, কার্তিকপুজো, সূর্যব্রত
ইত্যাদি অনেক ব্রত আগে করা
হত, শাশুড়ির সঙ্গে লতিকাও কিছুকিছু করতেন, শেখরের
অসহযোগিতায় সব ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে গেল। কমলিনী রাগ করে বাইরে তাঁর বোন কিংবা
ভাইয়ের বাড়ি গিয়ে কিছু কিছু পুজো করে
আসতেন, বাড়িতে শাশুড়ি বউ দুজনের জেদে শুধু হত কোজাগরী
লক্ষ্মীপুজো । দুর্গাপুজোয় শেখর পরিবারকে নিয়ে বাইরে গিয়ে রাত অবধি অন্য গ্রামের
পুজো দেখাতে নিয়ে যেতেন। কালীপুজোয়
দীপ জ্বালানো হত, আর বাচ্চারা স্কুলের সরস্বতীপুজোয় যোগ দিত।
শেখর সব চাইতে বেশি পছন্দ করতেন, ভাইফোঁটা পৌষসংক্রান্তি বিজয়াদশমী ও
নববর্ষ, কারণ এগুলো মুখ্যত বিশেষ খাওয়াদাওয়ার উৎসব।
তিনি
টোলে কিছুদিন সংস্কৃত পড়েছিলেন, অবস্থার
চাপে স্কুল শেষ করতে না পারলেও যা পড়েছিলেন, তাতে
ইংরাজি ও সংস্কৃত দুটো ভাষাই বেশ শিখেছিলেন। ছোটখাটো চাকরি পেতে পারতেন, কিন্তু
তা হলে দূরে যেতে হত, সেটা পরিবারের জন্য সম্ভব ছিল না। আর
স্থানীয়ভাবে গুরুপুরোহিতের ব্যবসায় চালাতে পারতেন, কিন্তু
করলেন না। হয়তো ব্রাহ্মণসমাজের ভেতর থেকে উঠে ব্রাহ্মণত্বের শূন্যগর্ভতা দেখতে পেয়েছিলেন, চালকলা
বাঁধা বৃত্তির প্রতি বিরূপতা এসেছিল। কমলিনী রাগ করে ছেলেকে ধর্মহীন কালাপাহাড়
বলতেন। পুজোপার্বণ করিস
নে, দেবকোপে তোদের দুঃখ ঘুচবে না। লতিকা স্বামীর
যুক্তি শেষপর্যন্ত হয় বুঝতেন, নয়
ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিতেন।
আসলে
সেই গোটা সময়টাই ছিল বড় কঠিন। বছর কুড়ি আগে স্বাধীন হওয়া দেশ, ফেলে
আসা দেশের দুঃখ, বছর বছর বন্যা, যুদ্ধ, রিফিউজি---দেশের
সমস্যার সাথে সাথে সাধারণ মানুষের জীবন হয়েছিল দুর্বিষহ, প্রায়ই
দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি দেখা দিত।
গ্রামে যাদের জমিজমা ছিল, তারাই শুধু দুবেলা ভরপেট খেতে পেত। রেশনে মোটা
ভুষিওলা আটা পাওয়া যেত, দাম চালের চাইতে কিছু কম, অনেকেই
ভাতের বদলে রুটি খেতে তখন অভ্যাস করছিল। কাজেই দেবকোপ তখন সারা দেশেই পড়েছিল, দু-চারজন
লক্ষ্মীর কৃপাধন্য ছাড়া।
সেই
আকালের সময়ে শেখর স্থির করলেন, তিনি
নিজেই জমি চাষ করবেন। এতদিন জমি ভাগচাষ হত, যে
চাষ করত, সে অর্ধেক ধান নিয়ে যেত। তখনকার খাদ্যসমস্যার প্রেক্ষিতে
শেখর জমি আর ভাগচাষে দিতে চাইলেন না, একটা
বলদ কিনে বাড়ির একটা বাঁজা গাইয়ের সাথে লাঙ্গলে জুতে নিজেই চষতে লাগলেন, সঙ্গে
শুধু একজন মজুর। এবার বাড়িশুদ্ধ আপত্তির সঙ্গে গ্রামেও আপত্তি উঠল------ ব্রাহ্মণসন্তানের নিজের
হাতে চাষ করতে নেই। তায় আবার গাই জুতে। গোমাতাকে কষ্ট দেওয়া মহাপাপ। বাড়ির লোকের
আপত্তি অবশ্য ধোপে টেকে না। কিন্তু গ্রামের সমাজপতিরা শেখর ও তাঁর পরিবারকে ‘একঘরে’ করে
দিল---তিনি সামাজিক নিয়ম মানছেন না, তায়
গরুর উপর অত্যাচার নামক মহাপাপ ও করছেন। তখনকার দিনে এইসব গ্রামে ‘একঘরে’ মানে
হল কোনো উৎসব আমন্ত্রণে ডাক না পাওয়া। কিন্তু শেখরের তাতে বয়েই গেল, তিনি
অন্যের বাড়ির নেমন্তন্ন খাবার লোভে নিজের কাজ ছাড়লেন না। যখন বাচ্চাদের কারো স্কুলের
ভর্তির ফর্ম পূরণ করতে হত,
‘পেশা’র জায়গায় তিনি সগর্বে লিখতেন, ‘কৃষক’, যা
নিয়ে হাসাহাসি কম হত না। বামুন হয়ে চাষা! অন্তত ‘যাজনবৃত্তি’ লিখলে
হয়! বা্মুনের ছেলে, ভালো সংস্কৃত জানে, এত
ভালো মন্ত্র পড়ে, পুজোপাঠ করলে ভালোই করতে পারে, সব
ছেড়ে দিয়ে চাষা হয়েছে।
তবে, জীবনসংগ্রামের
প্রতি সহানুভূতিও ছিল। নিমন্ত্রণ না করলেও শেখর যে সব প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে তাঁর
সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন, পড়াচ্ছেন, তার
প্রতি একটা নীরব শ্রদ্ধা ও সমর্থন ছিল। ফলে যখন
তাঁর ছেলেমেয়েরা যখন একে একে স্কুল ডিঙ্গোল, কলেজে
গেল, আস্তে আস্তে ‘একঘরে’র
শাস্তি শিথিল হয়ে গিয়েছিল। অনেকেই তাদের বাড়িতে উৎসব-পার্বণে আবার ডাকতে শুরু
করেছিল, এর অনুঘটক ছিল গ্রামের পরবর্তী প্রজন্ম, যাদের
মধ্যে শেখরের ছেলেমেয়েদের বন্ধুবান্ধব ছিল। নতুন প্রজন্মের মধ্যে কিছুটা শিক্ষার
প্রসার হবার সাথে সাথে আগের রক্ষণশীলতা কমে নতুন হাওয়া আসতে শুরু করেছিল।
অধিক
পরিশ্রমে শেখরের স্বাস্থ্য খারাপ হচ্ছিল, তাতে
তাঁর অনুশোচনা ছিল না। বলতেন, বেশি
পরিশ্রম করলে
শরীর খারাপ হবেই, যা যাবার তা যাবেই, তার
জন্য ভাবতে পারব না। তিনি চেয়েছিলেন তাঁর সন্তানেরা পড়াশুনো শিখে কাছেপিঠেই কিছু
কাজ করবে, সঙ্গে বাড়ি জমিও তদারক করবে।
কিন্তু
সে তো হল না। দেশের কর্তারা গ্রামকে গ্রামেই রাখলেন, শহরগুলোর
লোকসংখ্যা বাড়লেও কোনো সুযোগসুবিধে বাড়ল না, বরং
কমে গেল। তাই চাকরি করতে গেলে দূরে যেতেই হবে, গ্রামে
থাকলে বেকার।
বেকার হলেও শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা চাষবাসের দিকে যাবেনা, ‘চাষা’ বললে
বড় অসম্মান, ‘চাষার
ছেলে’ একটা বড় গালি। বেকার শিক্ষিত ছেলেরা ট্যুইশানি
করবে, ব্রাহ্মণ হলে সঙ্গে যজমানির পার্টটাইম কাজ করবে, চাষের
কাজে হাত কখনো নয়। শেখর সগর্বে নিজেকে চাষা বলতেন, তাঁর
সন্তানেরা সেটা মনে থেকে মানতে
পারেনি, অন্য অনেকের মত, বোঝা
গেল। তারা বাইরে কাজের খোঁজে গ্রাম থেকে এক এক করে বেরিয়ে পড়ল।
কিন্তু
সকলের তো আর চাকরি হয় না, সকলে মানাতেও পারে না। যে ছেলে চাকরিতে পারল না, একসময়
ফিরে এল। কিন্তু গ্রামে আর আস্তানা বাঁধল না। সে ইদানীং কপালে লম্বা সিঁদুরের তিলক
পরছিল। শেখর তাকে এরকম বেশে কখনো দেখেন নি। ছেলে বলল, আজকাল
সে পুজো করে, তাই তিলক পরেছে। শহরে আজকাল নতুন মন্দির হচ্ছে, পুজোআচ্চার
চল বেড়েছে, সে সেখানেই যাজনিক ব্যবসায় করছে। আপাতত একটা
কালীবাড়ি্র সঙ্গে তার কথা হয়েছে। নিত্যপুজো ছাড়াও, দুর্গাপুজো কালীপুজো সরস্বতীপুজোর সময়ে
তার বেশ আয় হবে, আজকাল লোকে ঠাকুরকে ভাল জিনিষ, পুরুতকে
ভাল দক্ষিণা দেয়। বাবা তো তাকে কখনো শাস্ত্র শেখান নি, শেখালে
সে আরো আগেই এই দিক দিয়ে আয় করত।
শেখরের
মনে পড়ল, কদিন আগে তাঁর এক শিক্ষিত চাকরি করা বিবাহিতা
মেয়ে বলেছিল, সে তার ছেলের কোষ্ঠী বানিয়েছে। শেখর ভাবতেই
পারেন নি যে তাঁর সন্তানেরা কেউ জ্যোতিষে বিশ্বাস করবে। তিনি তাঁর কোনো ছেলেমেয়ের
ভাগ্য জানার চেষ্টা করেন নি, কারণ
তিনি কর্মেই বিশ্বাস করতেন । এখন শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের একজন জ্যোতিষে বিশ্বাস করছে, তো
আরেকজন পুজোয় মন দিয়েছে!
শেখর
বুঝতে পারলেন, তিনি এদের উপর কোনো ছাপই ফেলতে পারেন নি। আস্তে
আস্তে তিনি নিরুদ্যম হয়ে পড়লেন।
শেষের দিকে আবার জমি ভাগচাষেই দিয়ে দিয়েছিলেন, নিজে
দেখতেও যেতেন না। দেবকোপ
তাঁর উপর সত্যিই শেষ পর্যন্ত পড়েছিল বৈ কি!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন