।। অশোকানন্দ রায়বর্ধন।।
(C)Image:ছবি |
কামতাপুরি ভাষার
আলাদা আইডেন্টিটির বিষয়টা আলোচনায় আনতে হলে প্রথমে এই ডায়ালেক্ট প্রভাবিত অঞ্চল সম্বন্ধে
কিঞ্চিৎ আলোকপাত প্রয়োজন ৷বাংলাভাষার অঞ্চলকে ভাষাবিজ্ঞানীরা প্রধান পাঁচটি উপভাষিক অঞ্চল হিসেবে
ভাগ করেছেন ৷ রাঢ়ী,
বঙ্গালী, বারেন্দ্রী, কামরূপী
ও ঝাড়খন্ডী ৷ এই অঞ্চলভেদ অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের উত্তরপূর্বের ভাষিক অঞ্চল হল কামরূপী ৷ শুধু
এইটুকুকে কামরূপী উপভাষার
অঞ্চল বলে চিহ্নিত করলেও ভুল হবে ৷যেহেতু এই অঞ্চলটি পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তে রয়েছে ফলে
এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে পশ্চিম আসাম, বিহার,
নেপালের দক্ষিণ সীমান্ত ও বাংলাদেশের উত্তরাংশের
রঙপুর ৷ ফলে এই অঞ্চলে বসবাসকারী লোকজনের ব্যবহৃত উপভাষাই কামরূপী প্রভাবিত ৷ আর এই বৃহত্তর ভূখণ্ডের ভাষাকেই কামতাপুরী
নামে অভিহিত করা হচ্ছে ৷ সীমান্তবর্তী অঞ্চলের ভাষা হওয়ার ফলে এই ভাষার উপর প্রতিবেশী ভাষিক
প্রভাব বা মিশ্রণ রয়েছে ৷ সাধারণ্যে এই অঞ্চলের ভাষা বাহে, রাজবংশী, গোয়ালপুরীয়া,
রংপুরী, উত্তরবঙ্গীয় ইত্যাদি নামে পরিচিত ৷ আসামের গোয়ালপুরিয়া লোকগীতি
( সূত্র: প্রতিমা পাণ্ডের
গাওয়া মাহুতবন্ধুর গান) , উত্তরবঙ্গের
বিখ্যাত ভাওয়াইয়া গান
( ও কি, ও বন্ধু কাজল ভোমরা
রে / ও কি গাড়িয়াল ভাই ) বাংলাদেশের বিখ্যাত নাটক
নুরুলদীনের সারাজীবন ( জাগো বাহে কোন্ঠে সবায়) এই ভাষারূপের নিদর্শন ৷ মূলত
ইন্দো- আর্য ভাষাবর্গের অন্তর্ভুক্ত বাংলা, অসমিয়া,নেপালি ইত্যাদি ভাষাসৃষ্ট
এবং প্রভাবিত এই ভাষা ৷ ফলে কামতাপুরী ভাষার মধ্যে তিনটি ভাষারই লক্ষ্মণ রয়েছে ৷ ফলে এদের যে কেউ
এই ভাষাকে তাদের উপভাষা হিসেবে দাবি করতে পারে ৷ কিন্তু ভাষাবিজ্ঞানীরা বাংলা উপভাষা হিসেবেই
চিহ্নিত করেছেন
একে ৷ এখন কথা হল, বাংলার
উপভাষা হয়েও যদি কামতাপুরী স্বতন্ত্র ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি পায় তা হলে মূল বাংলাভাষা থেকে অনেকটা
দূরে থাকা চট্টগ্রামের
বাংলাভাষাও আলাদা ভাষার মর্যাদা দাবি করতেই পারে ৷ সিলেটের ভাষাও তদ্রূপ নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে এবং
নিজস্ব লিপির সৌজন্যে স্বতন্ত্র ভাষার মর্যাদা দাবি করলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না ৷
পাশাপাশি ভাষাকে কেন্দ্র করে আলাদা ভূখণ্ডের দাবি যদি
জোরালো হয়ে ওঠে তাহলে পশ্চিমবঙ্গ
ও আসাম
এই দুটি প্রদেশ আবার খণ্ডিত হওয়ার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয়া যাবে না ৷পক্ষান্তরে একথাও
বলা যায়, ক্রমাগত ক্ষুদ্র
ক্ষুদ্র ভাষাগুলি প্রতিনিয়ত যেভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে সেক্ষেত্রে কোন ক্ষুদ্র ভাষা যদি স্বীকৃতিপ্রাপ্তির
মাধ্যমে যথাযথ লালন ও চর্চার পরিসর পায় তাহলে লাভই হয় ৷ অন্যথায় ঢাকিসহ মনসা বিসর্জনের মতো
নব্যস্বীকৃত ভাষাসহ সমৃদ্ধ মূল ভাষাটিও ভাষাসন্ত্রাসে হারিয়ে যাওয়া বিচিত্র নয়
৷
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন