“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

বুধবার, ২৪ মে, ২০১৭

রাজীব মজুমদারের 'বৃদ্ধ ডায়েরি ' সিরিজের ৩৩ টি কবিতা


বৃদ্ধ ডায়েরি

 ।। রাজীব মজুমদার ।।
ব্লগপোষ্ট: +Rajesh Chandra Debnath 

























১.
রেখেছিলাম যতনে সুমেরু শীর্ষে
পরাগরেণু উড়িয়ে ভেবেছিলাম
সুরভিত করবো
কিন্তু কে জানে - প্রহরীদের এলার্জি হবে
...........
২.
আলো জলে বিভ্রান্ত হয় -
স্পন্দন পরিধি বাড়লে আমি বিভ্রান্ত হই,
একারণে অন্ধকার নামলে তুমি বিভ্রান্ত হও
...........

৩.
আমার কাছে গলিপথ মানে বিসর্গের স্মৃতি,
তুমি আছো রহস্যের খোঁজে মন্থনে একাকী
...........

৪.
গা ভেজালে অভিযোগ আসে, নীতির অতলে ডুবি-
স্রোত যেভাবে পলাতক হলো- নদীপথ পাল্টে দেখি
...........

৫.
পাতার আড়ালে গা ঢেকে দেখি - ক্লোরোফিলের স্বাদ কেমন হয়
তোমার আড়ালে যেটুকু ছিলাম, বেরিয়ে দেখি সম্ভ্রম ক্ষয়
...........


৬.
ইদানীং ভুলে থাকাকে ভালো থাকার মতো বোধ করি ,
প্রচণ্ড গরম সত্ত্বেও তোমার দেওয়া হাতপাখা বাক্সবন্দি
...........

৭.
জিতে পাওয়া নুড়িগুলো রেখে দিলাম শিয়রের ভাঁজে, যেগুলো এইমাত্র সমুদ্র দিয়ে গেছে তার বুকে উত্তাল ঝড়ের পরমুহূর্তে এখন শুধু সময় এগুবার পালা ... জল কেটে কেটে এই সমুদ্রযাত্রায় যখন সব পিছনে পড়ে যাবে, দিগন্তের পর দিগন্ত শেষে আরেক দিগন্তের পাড়ে যখন জনশূন্য দ্বীপ পেয়ে যাবে, তখন নাবিক নুড়িগুলো ঘষে অতীতের ঘরে আগুন জ্বালাবে
...........

৮.
গল্প এখানেই শেষ স্বাভাবিকভাবেই যা হলো, গল্প নিজের মতো করে অতৃপ্তিতে শেষ হলো না তাদের দাবি গ্রাহ্য করে - না আমাদের আবেগের মতো করে
.
যারা বার বার দাবি করে আসছিলো - নৌকোয় বসে ধর্না দিয়ে বলেছিল, এই গল্প আমরা যেভাবে চাইছি সেভাবেই শেষ হতে হবে তারা বর্তমানে সৈকতে বসে বালি কাটছে, কেউ উদর যন্ত্রণায় ছটফট করছে, কেউ আবার স্বর্গসুখ ভেবে উচ্ছন্নের দিকে পা বাড়িয়েছে এই সময়তো মোটেও সহিষ্ণু মাঝিদের অনুকূলে নয় আমরা যারা বন্দরে আদান প্রদান দেখি - আমাদেরও হৃদয় আছে, যেখানে প্রতিদিন হাজার সেতু রচনা হয়, লক্ষ লোক আসে, চরিত্র বাঁচে, নিজে থেকে গল্প তৈরি হয়
...........

৯.
ঘরোয়া ম্যাচগুলি যে যেমন খেলেছে, খেলেছে এখন আন্তঃদেশীয় ম্যাচ চলছে জোরকদমে আবেগের বড় গলা, আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্ত, ম্যাচ ফিক্সিং, সর্বোপরি ভিনদেশী ভাড়াটে গুণ্ডা দিয়ে স্বনামধন্য খেলোয়াড়ের মানহানি ও জীবন ঝুঁকির পর্যায় ; - আপাতত ম্যাচ নিজেদের দখলে করে নিয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বী সময় এগুতে থাকুক ... সততার ফল বড়ো হতে থাকুক ঐ যে অদূরে বিশ্বকাপের আসর বাকি ঐখানে হবে আসল ফয়সালা - মূল বিচার - মূল ফলশ্রুতি
...........

১০.
অচিরে ভেসে যাবে প্রতিশ্রুতির মেঘ, অন্য আকাশে দেখা পাবে না তাদের, যারা জমাট বাঁধতে পথ দেখিয়েছে পিছন পিছন একদল অপরাধী কর্মহীন হয়ে বাসা বদলে নিতে ছটফট করবে সময়, সে ন্যায়দণ্ডের পরিচালক এই রাশি রাশি ক্ষয়, অহেতুকের জয় ভবিতব্যে বৃক্ষ ফলাবে
...........

১১.
সব উদাসীনতার খরচা আমি দেবো,
যার ডাকনাম তোমার স্বীকারোক্তি
আঁধারি আলাপ বেশ ভালো লাগে -
হয় প্রেমিক হবো, না হয় অপরাধী
...........


১২.
হাওয়া আর ধৈর্য, তোমরা বুলি হয়ে থেকে যেও
আমি আর নিঃসঙ্গতা আলোর পথ খুঁজে নেবো
...........


১৩.
আকাশের কোনো চাহিদা ছিলো না ,
দু'পাড় ঘেঁষে ছড়িয়ে ছিলো নদীর ক্লেশ
সশব্দে বরফ গলে সাজিয়ে দিলো রামধনু,
শুধু একবার জড়িয়ে ধরার বাহানায় ...
.
এই জলচক্র
...........

১৪.
দুপুরের কোলাহল থেমে গেলে দু' আঁটি খড় পড়ে থাকবে বারান্দায় একটি একটি করে ঝরে পড়া পাতার অশ্বত্থটি নিজেকে নিংড়ে দেবে উনুনের মহিমায় ছাই রঙের পুরোনো হাঁড়িটা হা হয়ে বসে থাকবে উঠোন কোনে, একটু আগুন পাওয়ার অপেক্ষায়
...........

১৫.
পুরোনো ঘড়িটা বাজার চেনে,
দূরবীন চোখে রোজ ভাঙে গতির বাহাদুরি
.
আমরা বোকালোচন, শুধু রং মাখি -
নীল আকাশে হলুদ প্রজাপতি
...........

১৬.
সামান্য বয়ে যাওয়া ধারাকে নদীর নাম দিয়ে
কি জাদু দেখালে ! তুমি চলে যাও ডিঙা বেয়ে
অনাহারে আমাদের মায়ামুক্তি ঘটুক ;
তারপর নাহয় - খনন করতে করতে ফিরে যাবো
ঠিক উৎসের কাছে
...........

১৭.
.
এই চলাফেরায় কি আছে লিখে রাখার মতো। ছায়া সে আর ছায়া হয়ে উঠে না।
যে রোদ মেলে দিয়েছ শরীরজুড়ে, ইমিটেশন সর্বস্ব। একে ছাড়ো, শরীরকে আর ঠকিয়ো না।
ওঁম শান্তি, ওঁম শান্তি, ওঁম শান্তি ...
সাধনার বলে... ২২ ক্যারাটের গুহায় রোদ লাগালে ছায়া তৈরি হয়।
...........


১৮.
.
পাতালপুরে আমার নিজস্ব ঘর রয়েছে হলুদ পাললিকে উষ্ণতা আটকে রেখে নিজেকে ছেড়ে দিই আরও আরও তলদেশে একদিন  ঝরে আসে   ঝলসানো পাতারা ঝরে পড়ে ঝড়ের অজুহাতে   ক্ষয়ে যায়, মিশে যায় আরেকটি স্তর গড়ে আমার বাষ্পের উপরে
...........

১৯.
.
মাঝেমাঝে যখন লালন পায়, বাড়ির দুরন্ত চড়ুইটিকে ফিনিক্স ভাবা শুরু করি   প্রতি সকালে যাকে খুদ খাওয়াই, সে তখন অচিন   কি কাণ্ড !  ঘরের ভিতর ঐ পাখি ক্যামনে আসে যায়
...........

২০.
.
রঙিন মেঘ দেখে নদীকে জিজ্ঞেস করি, কি হে, আদান প্রদান কতদূর এগোলো ? নদী হেসে উত্তরে বলে, ধন্ধে আছি প্রার্থী অভিনয়, সে কোনপক্ষে বৃষ্টি ডেকে আনে ?
............

২১.
.
কি সব রটনা লেগে আছে, এ প্রণয়রহিত পথে -
পুষ্পবনের প্রজাপতি বিপণনে রঙ বিকোচ্ছে
...........

২২.
.
বৃক্ষ
প্রণয়রহিত বেঞ্চ
.
শেষ ট্রেন
লোকাল হয়রানি
দম দেওয়া ঘড়ি
সময় অচল
.
পথ আছে পাশে
দৃশ্যে কেও নেই
...........

২৩.
.
আর একটু এগিয়ে গেলে -
আমার অলিন্দ পাবে ;
আধমরা অল্পপ্রাণ - আগুন খেয়ে
ফুঁ দিয়ে বুঝিয়ে যেও তাকে
তুমিও অনর্গল পাহাড়ায় থাকো
হর্ষ বিলাসে শ্বাসকষ্ট নিয়ে
...........

২৪.
.
ধুলো গায়ে জড়িয়ে আছে মন
বিষণ্ণ তালপাতার বিকেল,
মৃদু কয়েক ঠেলা দখিনা বাতাস,
নিশ্চুপ চাঁদ, দ্বিধাগ্রস্থ রাত -
এরা সকলে
আজ কোনো না কোনো ছুতোয়
আমাকে ঘুমোতে দেবে না
এ রাত কুয়াশাচ্ছন্ন,
যতোটা পারুক দীঘল হয়ে যাক,
একটু একটু করে শেষ হয়ে যাওয়া
সলতের আগুন ধুকধুক নিভে যাক
আমিতো নির্বিকার - ভুলে যাচ্ছি মন্ত্র
পাথরের বুকে ফুল ফোটাবার
...........

২৫.
.
যেভাবে যা ক্ষয়ে যাওয়া, মিশে যায় হাঘরে ,
নিদালি বাষ্পে উড়াই - আমি আজ আমারে
.
মাটিরও অভিমান থাকে শিকড়ে শিকড়ে ,
আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকি - বিনয়ী সাঁতারে
...........


২৬.
.
ভাগের শীতটুকু মুড়ে দিলে পাললিক সংস্পর্শে
এ অবধি, সেতুর ঘুচিয়ে করার কাজ
বিকেল শেষে দেহের ভিতর অজস্র গোধূলি ডুবে
বিরতি ঠেলে - দুই থেকে তিনের কোলাজ
...........

২৭.
.
কোলাহল থেকে দূরে সরে এলে একটি নদী পাওয়া যায়, যে নদীর সূত্র বিবিধ বাক্যে শুরু হলেও শেষ হয় অসমাপ্ত লিখে কেন এমন হয় ? একা নিজেকে নিজে খনন - সেকি সমুদ্রের গভীর গোপন, নাকি, দূর থেকে দূরারোগ্যে টানে ভিড়ের উচাটন ? কখনও হয়তো নিসর্গের সশব্দ চুম্বনে সাদা পায়রা উড়ে, কখনও আবার ঝিঁ ঝিঁ পোকা ব্যস্ত হয় একনাগাড়ে সংশয় একারণে বোধহয় জলের প্রকৃতি নিয়ে হাজারও প্রশ্ন গড়ায় নিচের দিকে - ওখানেই নাকি সকল উত্তর, মহীরুহ কিসে বাড়ে
...........

২৮.
.
ঐ নাম যেন পৃথিবীর কারোর না ,
চোখ থেকে বিস্মৃতি সরে গেলে
খড়কুটোর জীবাশ্ম লেগে থাকে
কেজিদরে বেচা কাগজের ভাঁজে
.
পৃথিবী বুঝে না, বা বুঝতে চায় না -
এখানে তাঁরা বাঁচে যারা পাথর খোদে
কি হয়েছিলো আগে, কিবা হয় এখন?
এটাই নিয়ম - সেই ডারউইনের পাঠে
...........


২৯.
.
একটি গ্রাম ছোট হতে হতে একদিন নিশ্চিহ্ন পাচারকৃত কিছু হৃদপিণ্ড অলীক হেসে ভাগে রেখে যায় দেহতত্ত্বের গান যারা ছুটছে, বধির অথবা অন্ধ প্রতিনিয়ত খাঁচার ভিতর নিজেকে হ্রস্ব করে চলেছে, অথবা তাদের ঘরে লালনের জন্য দরজা বন্ধ
...........

৩০.
.
বরং একটা বুক দেখে বিঁধে যাওয়া শ্রেয়
নাভির গহীন মূলে
নেশাতুর সাপ লুকিয়ে থাকে
কয়েক ফোঁটা বিষ শুধু হজম ঠেকাবে,
পুরো শরীর গিলে খাবে আদিম ছোবলে
এরপর তো শুকনো শরীর , হাড় সর্বস্ব
.
তার চেয়ে বরং
একটা হৃদয় দেখে হেরে যাওয়া শ্রেয়
...........

৩১.
.
এ সময় কতদূর বিস্তৃত হবে,
কে জানে ;
আমি নিভৃত মনে নিসর্গ চেয়েছি
কতো পিছুটান, কতো সীমারেখা
ছেড়ে এসেছি ,
তবু ছাড়তে পারিনি
চলছো অবিরাম, বায়ব সহবাসী
...........

৩২.
.
সত্যের কাছ থেকে মিথ্যে যদি প্রমাণ ধার নেয়,
তবে সেই প্রমাণের মধ্যে কেমন পরকীয়া গন্ধ থাকে
দিব্যি দিয়ে বলছি -
কালি দুগ্গা বিশ্বকর্মা এরাও তখন শ্লীলতাহানি খোঁজে
...........

৩৩.
.
এখানে যারা মুক্তির স্বাদ খোঁজে, এরা কি সত্যি এর স্বাদ বোঝে ? বলে রাখা সমীচীন - এ একপ্রকার নরম অসুখ
বদ্যির কাছে নিয়ত হাওয়া খোঁজা, আঙুল গুনে পীড়িত মন বুঝা -
সব যেন বিলাসীর কাছে বিলাসের আদব কায়দা
............


কোন মন্তব্য নেই: