।। জয়শ্রী ভূষণ ।।
(লেখাটি অভিনয় ত্রিপুরা,৭ম বর্ষ, ১ম সংখ্যা তথা শারদ সংখ্যা, ২০১৪-তে প্রকাশিত হয়েছিল--- লেখিকা )
(লেখাটি অভিনয় ত্রিপুরা,৭ম বর্ষ, ১ম সংখ্যা তথা শারদ সংখ্যা, ২০১৪-তে প্রকাশিত হয়েছিল--- লেখিকা )
...রাত প্রায় দুটো বেজে গেছে,...ক্লান্ত লাগছে
ভীষণ... বাইরে ঝিঁ ঝিঁ পোকা ডাকছে,
মা আর ভাই অঘোর ঘুমে। আমার আ...র পড়তে
ভালো লাগছে না, সামনেই ফাইনাল পরীক্ষা, পড়াশোনা
ভালো করে করতেই হবে, বই বন্ধ করে যে শুয়ে পড়বো তাও ইচ্ছে করছে না। কি রকম যেন অস্থির অস্থির লাগছিল মনটা। সবাই ঘুমিয়ে
পড়ার পর নিশাচরের মত আমি ১১ টা – ১১-৩০
টায়, পড়তে বসি রোজদিন। সারা বছর নয়, শুধু পরীক্ষার মাস খানেক আগে। তাই অস্থিরতা, ভয়
সব কিছু যত রাত বাড়তে থাকে, ততই আমাকে
আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরতে এগিয়ে আসার চেষ্টা করতে থাকে। আমিও মনে-প্রাণে সমস্ত ইচ্ছা শক্তির সাহায্যে সব ভয়কে ঢাঁই-ঢুঁই মুক্কা মেরে জীবনে সবাইকে নিয়ে
ভরপেটে নিশ্চিন্তে মাথার উপর এক টুকরো আকাশের নীচে ভালো
ভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন-পূরণের জন্য আবার বই এর অতল
গভীরে ডুব দিয়ে হারিয়ে যাই। এই করতে করতে যখন আবার
হাঁপিয়ে উঠি, শ্বাস নেওয়ার জন্যে যেমনি
মাথা তুলি ,অমনি
ক্লান্তি, ভয়, অস্থিরতা আমার পাশে আসার জন্য ছুটোছুটি শুরু
করে দেয়। হঠাৎ করেই মনে পড়ল, আরে যাহ্, ভুলেই
গেছি, একটু জেগে জেগে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে
নিই, তাহলেই তো আবার সতেজ তরতাজা লাগবে। এই মোক্ষম দাওয়াইটার কথা ভুলেই গেছিলাম, মনে পড়তেই মনটা
খুশীতে ফুরফুরে হয়ে গেল। ভয়- অস্থিরতা – ক্লান্তি
এক নিমেষে হাওয়া। যেমনি ভাবা তেমনি কাজ। চট করে বাতি নিভিয়ে
চোখ বন্ধ করে শুরু আমার স্বপ্ন দেখার খেলা। চোখ বন্ধ করেই দেখে নিলাম, মার সাদা
জর্জেট শাড়ি তে ছোট ছোট সবুজ আর বাদামি ফুলগুলো। এবার এটাকে
কেটেই ভীষণ সুন্দর একটা জামা বানাতে হবে। স্বপ্নের মধ্যেই design করে নিলাম। একটু পরেই স্বপ্ন দেখা শেষ করে আবার বই এর দুনিয়ায়
মজে গেলাম নতুন উদ্যমে।
অভিনয় ত্রিপুরাঃ ৭ম বর্ষ, ১ম সংখ্যা |
অভিনয় ত্রিপুরাঃ ৭ম বর্ষ, ১ম সংখ্যা |
আমার মায়ের সাদা শাড়ি গুলি আমার target ছিল। বাবা মারা যাওয়ার পর আমার পরমা সুন্দরী ৩২ বছরের মাকে প্রথমে ধবধবে সাদা শাড়িতে দেখে চীৎকার করে উঠেছিলাম। কারণ মার ওই রূপ আমাকে বাবার হঠাৎ মৃত্যু , মার সিঁথি থেকে সিঁদুর গায়েব , জীবনকে এলোমেলো করে দেওয়া, --- ভুলতে দেবে না, আমাকে শুধুই পেছনে নিয়ে যাবে তা টের পেয়ে গেছিলাম। তাই মার যত সাদা শাড়ি ছিল তা আমি কেটে কেটে নিজের জামা, চুড়িদার বানিয়ে নিতাম, আর বাড়ির বড়দের বলতাম, তোমরা মাকে সাদা শাড়ি দেবে না, মাকে ভীষণ বিচ্ছিরি লাগে, দিলেই কিন্তু আমি কেটে আমার জামা বানিয়ে নেব। ১৯৮৬-১৯৮৭ তে একান্নবর্তী পরিবারে এত সব উচাটনের মধ্যেই আমি মাকে আমি রঙিন শাড়ি পরতে বাধ্য করি, এবং আমার মা আজও রঙিন শাড়িই পড়েন। আর জীবনের কৈশোরের দুয়ারে পা ফেলার সময় এত সব উঠাপড়া, ভাঙ্গা গড়ার মধ্যেও আমি নিজের সাদা মনকে রঙিন করার জন্য স্বপ্ন দেখতাম জেগে জেগে, হরেক রকমের স্বপ্ন, চোখ বন্ধ করে পৌঁছে যেতুম যেখানে খুশী, আমার মনের উড়োজাহাজের ডানা মেলে স্বপ্নের জগতে বিচরণ ছিল আমার নিত্য খেলা এবং এই স্বপ্ন দেখাই ছিল আমার সবচেয়ে প্রিয় Hobby. আমার মত জেগে জেগে স্বপ্ন দেখার উদ্ভট নেশা আর কারও ছিল কি না আমার জানা নেই, তবে আমার সত্যি খুব ভালো লাগত স্বপ্ন দেখতে, কারণ স্বপ্ন দেখতে আমার টাকা পয়সার দরকার নেই, কারও সাহায্যেরও দরকার নেই, শুধু চোখ বন্ধ করে জেগে জেগে স্বপ্ন দেখার আনন্দ ও আবেগের অনুরণন আমাকে জীবনে এগিয়ে যাবার শক্তি দিত, সাহস যোগাত, এবং তা ছিল আমার একান্ত ব্যক্তিগত। এখনও মনে আছে, বিহারের দ্বারভাঙ্গায় চাকুরির তিনমাসের প্রশিক্ষণ শেষে সহকর্মীদের ছোট ছোট Autograph notebook এ নিজের প্রিয় Hobby র জায়গায় লিখেছিলাম- “ My fav hobby is to dream” ।
এরপর অনেক বছর কেটে গেছে, সময়ের
সাথে সাথে অনেক কিছু বদলে গেছে, আর
কখন নিজের অজান্তে ঠিক কবে থেকে এই
স্বপ্ন দেখার নেশা যে হারিয়ে গেলো মনে করতে পারছি না, সত্যি
বলতে ভুলেই গেছিলাম কখনও
স্বপ্ন দেখা আমার শখ ছিল।
প্রতিবছরের মত এবারেও ‘রূপমে’র ব্যবস্থাপনায় ৩৫তম নরেশ চন্দ্র পাল স্মৃতি সর্ব ভারতীয় একাঙ্ক
নাটক প্রতিযোগিতার আসর বসেছিল ৮ই ফেব্রুয়ারি
২০১৪ থেকে ১৪ই ফেব্রুয়ারি২০১৪ পর্যন্ত , শিলচর
জেলা গ্রন্থাগার মিলনায়তনে । বোধহয় ২০০৭ এর পরে
এবারেই অনেক বছর পর আমি রূপমে নাটক করিনি । না
করায় বেশি রোমাঞ্চিত হয়েছিলাম, কারণ নিজে নাটক করার দরুন, প্রতি বছরই আমার অনেক
ভালো নাটকই দেখা হয় না, তাই এবার
ঠিক করেছিলাম, শত ব্যস্ততার মধ্যেও আমার পছন্দের দলগুলির নাটক দেখতেই
হবে। আমার ছেলে বাবাই কে বললাম,
বাবাই সব পড়াশোনা, ক্যারাটে-
তবলা- আর্ট- ক্লাস আগড়ম বাগড়ম তোমার যা আছে
চটপট সব সেরে নেবে, এবার কিন্তু কিছু নাটক
দেখবো। আমার ছেলে বাধ্যের মত ঘাড় নাড়ল এবং সত্যি সত্যি এবার অসাধারণ কিছু নাটক দেখলাম।
শিলচরের ‘দশরূপক’- এর নাটক দেখার জন্য আমি সব সময় উদগ্রীব
হয়ে থাকি। দ্বিতীয় দিনে অর্থাৎ ৯ই ফেব্রুয়ারি ২০১৪ এর সন্ধ্যায় আমি ও আমার ছেলে নাটক দেখার জন্য অদম্য উৎসাহে শিলচর জেলা
গ্রন্থাগারে উপস্থিত হলাম, ‘দশরূপকের’ নতুন নাটকের আস্বাদন
নিতে । সেদিনের চতুর্থ নাটক ছিল, বরাকের
বিখ্যাত নাট্যকার, নির্দেশক ও পরিচালক চিত্রভানু ভৌমিকের নতুন নাটক ‘ঠিকানা’ । নাটক আরম্ভ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে আমি ও আমার ছেলে নিজের জায়গায় বসে পড়লুম, এবং নতুন ভালো লাগার
আশায় উদ্বেলিত হতে শুরু করল আমার মন। কেন জানি না, চিত্রভানু ভৌমিকের (ঝুমুরদার) নাটক আমাকে এক অন্য জগতে পৌঁছে দেয়, ঠিক কি রকম যে ভালো লাগায় মন ভরে ওঠে
ভাষায় প্রকাশ করতে পারব
না। একটু পরেই প্রেক্ষাগৃহের আলো নিভে
গেল, মঞ্চের পর্দা আস্তে আস্তে খুলতে শুরু
করল। ঠিক তখনই আমার নয় বছরের ছেলে আমার কানে কানে বলল, “মাম্মা-
তুমি যে বলছ তোমার এবার নাটক না করে ভালো
লাগছে, সত্যি বল তো
তোমার ওই stage দেখে মন খারাপ লাগছে না।” বোধহয় আমাকে মঞ্চে না দেখে ওর মনটা
খারাপ লাগছিল। ওর কথা শুনে আমার মনটা মোচড় দিয়ে উঠল
বলে মনে হল। ওর কথা শোনার আগে পর্যন্ত এ নিয়ে আমার
কোন অভিব্যক্তি ছিল না, কিন্তু ওর কথা শুনেই মনে হল যেন ওই মঞ্চ ও আমার মধ্যে কবে এক
গভীর সখ্যতা গড়ে উঠেছে নিজেই জানি না , মনটা কেমন কেঁপে উঠল।
ছেলেকে সত্যিই বললাম, “হ্যাঁ রে বাবা, মনটা
একটু কেমন জানি করছে, চল
নাটক দেখি।”
মঞ্চে আলো পড়লো,
আগের দিনের আসাম টাইপের হাফ দেওয়ালের অনেক পুরনো ঘর, বাঁপাশে একটি খাট , ১৭/১৮
বছরের একটি মেয়ে খাটে
বসে ব্লাউজ সেলাই করছে, খাটের পেছনে একটি আলনা, তার
সাথেই একটি কাঠের পুরনো চেয়ার,ডান
পাশে মেয়েটির মা হাত সেলাই মেশিন দিয়ে সেলাই করছে। চেয়ারের পাশে
একটি দরজা বাইরের রাস্তা এবং মায়ের পেছনে দরজাটি রান্নাঘরের দিকে। মঞ্চ সজ্জা নিখুঁত মনে হয়েছে আমার । এই মঞ্চ অন্তত আমাকে ও
আমার মত মধ্যবিত্তদের এক পলকে অতীতের দোরগোড়ায়
পৌঁছে দিয়েছিল। মঞ্চের বাঁপাশে খাটে
বসে মেয়েটি গুনগুন করে গাইতে গাইতে সূচ সুতা দিয়ে ব্লাউজ সেলাই করতে করতে মা-মেয়ের কথোপকথনের মধ্যেই নাটকের শুরু। মেয়ে মা কে বলছে, “জান
মা, ওরা
বলেছে ব্লাউজ গুলোর fittings, finishing খুব ভালো হয়েছে,
মাগো, এবারে বলেছে আরও বড় একটা অর্ডার পাব। এবারের বড় অর্ডারের টাকা পেলে মা
তোমাকে একটি পা মেশিন কিনে দেবে। তোমার হাতে এত ব্যথা, তার
মধ্যে ঘরের সব কাজও তোমাকে
সামলাতে হয়।” মা
বলল, “না রে মা, ওই টাকা দিয়ে তোকে
আমি একটা হারমোনিয়াম কিনে
দেব। অভাবের সংসারে তোর পড়া বন্ধ করতে
হয়েছে, এত মিষ্টি তোর গানের গলা, না না এবার টাকা পেয়ে আমি তোকে হারমোনিয়াম কিনে দেব।” হারমোনিয়াম না পা মেশিন – এই
নিয়ে দুজনের খুনসুটি, উপচে পড়া ভালবাসার কথা কাটাকটি আমাকে এক
নিমেষে মনে করিয়ে দিল মার সাদা জর্জেট শাড়ি।
সমস্ত শরীরে গায়ে লোম গুলো কাঁটার মত দাঁড়িয়ে গেল। মনে পড়ে গেল সেই ২৫/৩০ বছর
আগের আমার স্বপ্ন দেখার খেলার কথা। ছোট- ছোট আশা, আকাঙ্ক্ষা
ও স্বপ্ন পূরণের জন্য একটু একটু করে হাড়ভাঙা পরিশ্রমের
সঞ্চয়, এ সঞ্চয় শুধু টাকার নয়, স্বপ্নেরও সঞ্চয়, ছোট
ছোট, টুকরো
টুকরো খুশি, আশা, আগামী
দিনে ভালো থাকার আপ্রাণ ইচ্ছা, আমাদের আজকের কষ্ট , না
পাওয়ার বেদনা , যন্ত্রণা সব ভুলে- সব পাওয়ার স্বপ্নে
বিভোর হয়ে থাকা যে আমাদের আজকের কষ্ট-যন্ত্রণাকে কতটা
লাঘব করে, তা আমি আপনাদের লিখে বোঝাতে পারবো না, এ শুধু উপলব্ধি করতে
হয়। আমি ভাল করে লেখা গুলো পড়তে পারছি না, আমার
চোখ জ্বালা করছে, আমার চোখে জল কেন আমি জানি না, এ
জল কবেকার- কোথাকার তাও জানি না। মেয়ে
ব্যাগে করে অর্ডার সাপ্লাই দেওয়ার জন্য সব গুলো ব্লাউজ নিয়ে
বেরিয়ে গেলো দোকানের উদ্দেশ্যে , মা
মেয়েকে বললেন সাবধানে যেতে ও তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে।
এরই মধ্যে মা ঘরের ও রান্নাঘরের বাকী কাজ করতে শুরু করলেন, ঝাড়ু
দিতে দিতেই বাড়িওয়ালা এসে
হাজির, পর্দা ফাঁক করে ঘরে এলেন। মার অভিনয়ে ছিলেন মিতালি রাজকুমারী, অসম্ভব
সাবলীল অভিনয়, মনেই হচ্ছিল না নাটক দেখছি, মেয়ের
অভিনয়ে ছিল আমার প্রিয় অঙ্কিতা সেনগুপ্ত, ওর আমি চিরকালের fan ।
আমি তো একেবারে নাটকের বিষয়বস্তু ও
নাটকের চরিত্রদের সাথে এতটাই
একাত্ম হয়ে গেছিলাম, এখন মনে হচ্ছে বোধহয়
মঞ্চেই ওদের আশেপাশে ছায়ার মত জড়িয়ে ছিলাম।
বাড়িওয়ালা বলে কথা, কাঠের চেয়ার এগিয়ে দিয়ে
পান সেজে দিলেন। অনেক বছর ধরে একই বাড়ীতে ভাড়া আছেন, বাড়িওয়ালা এলেই মনে হয় এই বুঝি বাড়ি ছাড়তে বলবেন, এই
বুঝি আবার ভাড়া বাড়তে চলল, এই দ্বন্দ্ব-দ্বিধা
নিয়ে মা বাড়িওয়ালার সাথে সম্ভ্রম নিয়ে কথা বলছিলেন। এই ভাব নিয়েই
বাড়িওয়ালাও কথা বলছিল, অনেক দিন তো হল, তোমরা
এ বাড়ীতে আছ, ভাড়াও অনেক
কম, এই সব বলতে বলতেই বাড়িওয়ালা মাকে বলল, একটা
নতুন ভাল scheme আছে, দশ হাজার টাকা ২ বছরে
দুইগুণ। দারুণ লাগলো আমার, আমাদের এতদঞ্চলের cheat fund গুলির রমরমা ব্যবসা, মানুষের স্বপ্ন
পূরণের short cut রাস্তার ভুয়ো স্বপ্ন
দেখানোর সমস্যাকে নাট্যকার কি সুন্দর ও সুচারু বুদ্ধিমত্তার সাথে নাটকের এই অংশে punch করলেন, খুবই
ভাল একটি সতর্কবাণী বা message যাই বলুন। এই
যে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ছোট বড় খারাপ ভাল বিষয় গুলো নাটকে উঠে আসা আমার কাছে নাটকের সাফল্যের চাবি বলে মনে হল এবং কেন চিত্রভানু
ভৌমিক একজন দক্ষ নাট্যকার, উনার
মানুষের জীবনের সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম অনুভূতি, আবেগ ও কষ্ট গুলো পড়ার ক্ষমতা ও নাটকের বিষয়ে ও মঞ্চে এর প্রকাশের জায়গা
করে দিয়ে ছবির মত স্বচ্ছ ভাবে দর্শকদের মন হয়ে মগজ
পর্যন্ত পথ পাড়ি দিতে পারাই এর আসল রহস্য। বাড়ীওয়ালার
চরিত্রে অভিনয় করছিলেন, বিবেক রঞ্জন দাসগুপ্ত। উনার অভিনয়ে উনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, যে উনি একজন চিট
ফান্ড এজেন্ট। এবারে মা ঘর
পোড়া গোয়ালে সিঁদুরে মেঘ দেখার মত আঁতকে
উঠলেন, প্রচণ্ড জেদ ও আত্ম বিশ্বাসের সাথে নিজের
স্বপ্ন-পূরণের জালে পা দিতে অস্বীকার করলেন, ঠিক তখনই বাইরে থেকে ছেলের প্রবেশ, ছেলের ভূমিকায় অভিনয়
করেছিলেন স্বপন দাস। সেও মার সাথে সুর মিলিয়ে যথেষ্ট ভদ্র
ভাবে কিন্তু অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে আর কোন চিট ফাণ্ডে টাকা
নিবেশ করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করল। ঘরটি অনেক পুরনো, সারাই এর জন্য অনুরোধ
করল একটু পরেই বাড়িওয়ালার প্রস্থান। ছেলেও জরুরী কাজে আবার বেড়িয়ে গেল,ছেলের কথায় জানা গেল
নতুন কেটারিং এর ব্যবসা শুরু করেছিল, তার
একটি পাওনা আনতেই বেড়িয়ে যাচ্ছে । যাবার আগে মনে প্রাণে প্রার্থনা
করছিল, যেন ওর কাজটা আজ হয়ে যায়, মাকেও বলতে বলতে
বেড়িয়ে গেল, মা আজ
যেন আমার জরুরী কাজটা হয়ে যায়। মেয়ে আরও এক ব্যাগ
কাপড় সেলাই এর জন্য নিয়ে বাড়ি ফিরল ক্লান্ত হয়ে, এসেই
মাকে সাহায্য করতে শুরু করে দিল,
ততক্ষণে মা
আরও কিছু কাপড় সেলাই করতে বসে পড়েছিলেন । ইতিমধ্যে বাবা অটো চালক বাড়ি ফিরলেন ক্লান্ত হয়ে। মেয়েকে বললেন, “মা
একটু খাবার জল দে, খিদে পেয়েছে।” প্যাসেঞ্জার
নিয়ে এদিকে আসা তাই এক ফাঁকে ঘরে ঢুকে একটু জিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা
। স্বামীকে খাবার খেয়ে নিতে বলে রান্না ঘরে যাবার পরই বাবার মোবাইল ফোনে কারও অসুস্থ হবার খবর ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ট্রিপ, তাই
না খেয়েই তাড়াহুড়ো করে বেড়িয়ে গেলেন, বাবার
চরিত্রে ছিলেন অশোক দত্ত। খুবই ভাল অভিনয় করেন, এই
নাটকেও কোন বিচ্যুতি ছিল না। বাঁপাশে দরজার পাশে একটি জানালাও ছিল। হঠাৎ কিছুক্ষণ পর পরই, পাশের বাড়ির এক নাদুস
নুদুস গাবদা গুবদা মোটা
মহিলা কপালে সিঁদুর ধেবড়ে গেছে, জানালা
দিয়ে ডেকে মায়ের সাথে প্রথমে কিছু গোয়েন্দাগিরি
কথাবার্তা, তারপর আশেপাশের পরনিন্দা পরচর্চা তারপরই
একটি বাটি এগিয়ে দিয়ে একটু চিনি, কখনও
বা তেলের জন্য অনুনয় বিনয় পর্ব । এরই মাঝে সেই মোটা
মহিলার কলতলায় জল নিয়ে ঝগড়া – কথার কচকচানি ছিল নাটকের relief point । মোটা মহিলার অভিনয়ে ছিল চিঙ্কি। গোটা নাটকটি আঞ্চলিক ভাষায়
সিলেটীতে হলেও চিঙ্কি ঢাকাইয়া
কথা ব্যবহার করেছে, এবং এই নাটকের এই অংশটি বেশ মজাদার লেগেছে। একজন পাতি নেতা গোছের লোক এরপর ঘরে এল, ছেলের
খোঁজে, মা খুব
বিরক্ত হলেন, বললেন
ঘরে নেই, উনি বললেন ওকে পাঠিয়ে দেবেন আমার কাছে, সামনেই
ইলেকশন, একটা চাকরী এবার দিয়েই দেব। মা বললেন আর লাগবেনা, ও
আপনার ওখানে আর যাবে না, কথোপকথনে
বোঝা গেল, এই পাতি নেতা, একটা
চাকরী দেবার লোভ দেখিয়ে ছেলেকে দিয়ে অনেক চেলাগিরি
করিয়েছে, এসবে আর মা ও ছেলে ভুলতে রাজি নয়, মা
বলে দিলেন ছেলে বাড়ি নেই, সময় পেলে যাবে। আজকের প্রেক্ষাপটে, এই অঞ্চল তথা গোটা ভারতের রাজনীতি মানেই যে পাতিগুণ্ডাদের খবরদারি
ও সমাজের খেটে খাওয়া মানুষের স্বপ্নের ফেরিওয়ালা
হয়ে ওদের কি ভাবে সামাজিক অবক্ষয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়, এই
নাটকে তার একটা প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তোলার সার্থক প্রয়াস
করা হয়েছে। নেতার চরিত্রে ছিলেন, প্রদীপ
পাল।
মেয়ে রান্নাঘরে
চলে গেল, মাও টুকটাক কাজের পর আবার সেলাই করতে বসে পড়ল। ঠিক এমন সময় বাইরে থেকে দরজায় ‘টকটক’ করে আওয়াজ শোনা গেল। একজন দীর্ঘকায় সাদা ধবধবে
ধুতি ও পাঞ্জাবি পরনে , গালে সাদা লম্বা দাড়ি, হাতে
ছাতা ও একটি ব্যাগ সহ একজন লোক বাড়ির কর্তার
ছোটবেলার নাম জিজ্ঞেস করলেন, বাড়ি আছেন কি না
তাও জিজ্ঞেস করলেন। মা চিনতে পারলেন না, বললেন বাড়ি নেই। তিনি বললেন, “আমি
অনেক দূর থেকে এসেছি , তুমি আমাকে চিনবে না।” ভেতরে আসার অনুমতি নিয়ে ভেতরে এলেন, বললেন
উনি দূর সম্পর্কের পাড়াতুতো ভাই বাংলাদেশ থেকে এসেছেন, শুধু
দেখা করতে, একটি বিশেষ কাজে। তারপরই জল খেয়ে, পুরো
ঘর দেখে ... “ইস অলা
বাড়িত থাকেনি... হায়রে হায়” ইত্যাদি নানা মন্তব্যে উনি establish করলেন, যে উনি বাড়ির কর্তার একজন ছোটবেলার
পরিচিত ,শুভাকাঙ্ক্ষী ও আত্মীয় । তবুও
মা উনাকে চিনতে পারলেন না, যেহেতু এই ব্যক্তির সম্বন্ধে স্বামীর
থেকে কোনদিনই কোন কিছু জানতে পারেন নি।
ভদ্রতার খাতিরে ও মধ্যবিত্ত আতিথেয়তা সুলভ আচরণে উনাকে
বসতে বললেন, জল ও চা দিলেন। ভদ্রলোকও সুদূর বাংলাদেশ
থেকে আসার জন্য বাড়ির কর্তার সাথে দেখা করতেই
আসা, ও দেখা করে যাবেন তাই বসে অপেক্ষা
করলেন, ফাঁকে হাত মুখ ধুয়ে জল ও চা খেলেন। ছেলে বাড়িতে ফিরে একজন অচেনা
লোক এভাবে ঘরে বসা দেখে মা এর থেকে বিস্তারিত জেনে বিরক্ত হল। মাকে মৃদু ধমক দিয়ে এভাবে অচেনা মানুষকে ঘরে বসতে দেওয়ায় যারপরনাই
বিরক্ত হল। মা বললেন, “তোর বাবার দেশের
বাড়িত থিকা আইছে, কেমনে না করি ক চাইন” ।
উনি অপেক্ষা করতে করতে উচাটন করতে শুরু
করলেন, কেন গৃহকর্তা আসছেন না, কত দেরি হবে, বাংলাদেশে কোথায় বাড়ি ছিল, এখন কী রকম আছে, সব গল্প মেয়ের সাথে
একটু আধটু করছিলেন। অবশেষে কর্তা অটো চালক
ক্লান্ত বিধ্বস্ত শরীরে ঘরে ফিরলেন। এসেই উনাকে দেখে
চিনতে পারলেন না কিছুতেই।
উনি নিজেই সব পরিচয় দিলেন। মনে
করানোর চেষ্টা করালেন। কুশিয়ারার ওপারে, বিস্তীর্ণ ধানের মাঠ, সবুজ
ধানের গাছের হাওয়ায় গা দোলানো স্মৃতি, পাশে
বয়ে যাওয়া ছোট ঝর্নার ধারা, সেই মহীরুহ
ইত্যাদি বিভিন্ন ছোটবেলার ঘটনার বিবরণ এক অন্য পরিবেশের সূচনা করেছিল। দেশ ভাগের আগের ভিটে, ধানের মাঠ, উঠোন
সব কিছু আবছা মনে করতে পারলেও বাংলাদেশ থেকে আগত লোকটিকে তবুও
কর্তা চিনতে পারলেন না, শত চেষ্টার পরও
পারলেন না। সেই ভদ্রলোক বললেন,
... “ তখন তুই কত ছুট, কেমনে
তোর মন থাকব, এরকম আমাদেরও হয়” ।
যা হোক কেন উনার আগমন, এ
ব্যাপারে উনি কর্তার সাথে
কথা বলবার জন্য বাকি সবাইকে ডেকে নিলেন। এখানেই নাটকের গতি পরিবর্তন হল। ব্যাগ থেকে একটি দলিলের জেরক্স কপি বের করলেন। বললেন বাংলাদেশ
সরকার একটি নতুন আইন প্রণয়ন করেছে, যাদের
কাছে উপযুক্ত নথিপত্র, দলিল ইত্যাদি আছে, যারা
দেশ ভাগের সময় নিজেদের সম্পত্তি ফেলে এসেছিলেন, এখন গিয়ে উপযুক্ত
দলিল দস্তাবেজের সাহায্যে বাংলাদেশে বিক্রি
করতে পারবে, বাংলাদেশ সরকার এ ব্যাপারে
সাহায্য করবে। কর্তার বক্তব্য “
তে আমি কিতা করতাম, আমার
কাছে তো কুনু কাগজ পত্র আছে করিয়া মন পড়ের না” ।
সেই লোকটি বলল, “তুই ভালা করইয়া খুজাইয়া
দেখ। যদি থাকে তে আমি তোরে সব ব্যবস্থা করিয়া দিমু। তুই চিন্তা করিস না, অও খবর খান দেওয়ার লাগিয়াও অত দূর থনে
আইছি, আইচ্ছা”। দলিলের জেরক্স
কপি কর্তার হাতে দিয়ে উনি যাবার উদ্যোগ নিলেন। উনি নিজে ওখানকার সরকারী দপ্তর থেকে দলিলটির সমস্ত বিবরণ ও বিধি বুঝিয়ে দিয়ে
বললেন, “ একবার
দেশ আওয়া লাগব, আরও
একবার দেশও গিয়া নিজের ভিটা মাটি বিক্রি করিয়া আইবে, হাসিনা সরকারে
সাহায্য করব”। আমার মনে পড়ল, কয়েকদিন
আগে পত্রিকাতে আমিও এমনই খবর যেন পড়েছিলাম। টান টান হয়ে
নাটকটি উপভোগ করছিলাম, নাটকের গতি লক্ষ্য
করার মত ছিল, এক পলকের জন্যও মঞ্চ থেকে চোখ হঠানোর মন
করছিল না, মনে হচ্ছিল
ছন্দ পতন হয়ে যাবে। এই দৃশ্যতে বাংলাদেশ থেকে আগত লোকের চরিত্রে অভিনয়ে ছিলেন জয়ন্ত বিকাশ পুরকায়স্থ (পার্থ নামেই বেশি পরিচিত) এবং এখানেই আবার এই লোকের মাধ্যমে সবাই আবার এক অন্য স্বপ্নের আবেশের ঘোরে
চলে গেল। বাবা আবার ভিটে দর্শন করার স্বপ্ন, নিজের
ফেলে আসা শৈশব এর স্মৃতি রোমন্থনে ডুবে গেলেন, ছেলে
ওই জায়গা বিক্রি করে আবার নিজের পায়ে শক্ত ভাবে দাঁড়ানোর স্বপ্ন, একটি
ভালো মাথা গোঁজার ঠাই করে নেওয়ার অভিলাষার স্বপ্ন , মা আবার একটু শান্তিতে স্বামী ছেলে মেয়েকে নিয়ে সুখের সংসার করার
স্বপ্ন। সাথে আমিও আমার স্মৃতির অতলে যত স্বপ্ন দেখেছিলাম
তার ছায়াগুলিকে দেখতে পেলাম মনে হল। নাটকের pick point বলা যায় এই দৃশ্যটিকে। সবাইকে যেন এক নতুন আশার আলো দেখাতেই এই লোকটির আগমন অকস্মাৎ । অনেক অনুরোধ করা স্বত্বেও
ভদ্রলোক উঠে পড়লেন প্রস্থানের জন্য। বললেন এখন গিয়েই
করিমগঞ্জের বাসে চড়ে যাবেন তারপর করিমগঞ্জ থেকে সোজা
বাংলাদেশ। পুরো নাটকটি আমাদের রোজকার চাওয়া-পাওয়া, দুঃখ- কষ্ট, আশা
ও আনন্দের এক পাঁচ মেশালি ডালমুটের মত, সব কিছুতেই এক চেনা স্বাদ অথচ নতুন আস্বাদন মেশানো। বেরোবার
সময় দরজার মুখে হঠাৎ ভদ্রলোকের মাথায় হাত ও চীৎকার- “ আমার
কি সর্বনাশ হই গেল , ইসস... অখন আমি কিতা করি...” ইত্যাদি উক্তি সবাইকে বিস্মিত করল এবং
একটু পরেই এই বিলাপের কারণ
খোলসা হল। উনি আসার সময় কেউ বা কারা
উনার পকেট মেরে দিয়েছে, পকেটে প্রায় ১৫ হাজারের
মত টাকা ছিল। উনি এখন কী করবেন, কী
ভাবে বাংলাদেশে যাবেন! ইত্যাদি ইত্যাদি জল্পনা কল্পনা করতে
করতে, ছেলে বলল,
“ঠিক আছে চিন্তা করবে না কেউ, আমি উনাকে বাসে উঠিয়ে দিয়ে আসছি।” বলেই দুজনেই বেরিয়ে
গেল। একটু পরে ছেলে ঘরে ফিরে এল, এবং মাকে দিয়ে ফোন করে মামাকে ঘরে
আসার অনুরোধ জানালো। মামা আবার এতদঞ্চলের বিশিষ্ট উকিল। উনি
কাগজ দেখলে ভাল মন্দ বুঝতে পারবেন,
তাই উনার পরামর্শ নেওয়া হল। উকিলের ভূমিকায়
একদম সঠিক চরিত্রায়ন শ্রী
শুভ্রাংশু শেখর দত্ত। উনি এলেন এবং সেই কাগজের জেরক্স কপি সাথে নিয়ে নিলেন এবং সত্যতা যাচাই করে জানাবেন বলে বেরিয়ে গেলেন। পরে ফোন এর মাধ্যমে দলিলটি
আসল বলে খবর দিলেন, ও বাংলাদেশ রওয়ানা দেওয়ার জন্য
প্রস্তুতি নিতে বললেন। সবাই খুব খুশি, এই
খুশিতে বাবা আবার এক বন্ধুকে নিয়ে ঘরে একটু
কারণ সুধা পান করতে বসে গেলেন। মেয়েকে বললেন,
--“ মা রে আজকে আমারে একটু মনের সুখে খাইতে দে,
বউত দিন পরে আইজ মনটা বড় খুশি,” ।
মেয়ে না করতে গিয়েও খুশির হাওয়ার দোলায় বাবাকে একটু ছুট দিয়েই দিল। একটু পরেই বাইরে খুব
হট্টগোল শোনা গেল, এবং প্রায় দৌড়ে দুটো
ছেলে ওদের ঘরের ভেতরে ঢুকে জিগ্যেস করতে লাগল একজন মানুষের
সম্বন্ধে, যার বিবরণ ওই বাংলাদেশী লোকটার সাথে
অনেক মিলে যাচ্ছিল। অবশেষে জানা গেলো ওই লোকটা ঠগ
। এরকম আরও কয়েকটি পরিবারে এই সব কাহিনি
বানিয়ে অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ছেলেটি প্রায় কাঁদোকাঁদো অবস্থা। এতসময় কাউকে বলেনি, আজ যে জরুরি কাজে গিয়েছিল, ওখানে
১৭ হাজার টাকা পাওনা আদায় হয়েছে। লোকটিকে সাহায্য করার জন্য
প্রায় পুরো টাকাটাই লোকটার পকেটে ঢুকিয়ে দিয়ে দিয়েছিল
। সবাই আবার বড় আশাহত হয়ে পড়ল, সবার স্বপ্নগুলো যেন মুখ থুবড়ে পড়ল। বিশেষত বাবা খুবই ভেঙ্গে পড়লেন, সব
দোষ গিয়ে পড়ল মায়ের উপর, কেন অচেনা ভদ্রলোককে ঘরে ঢুকতে দিলেন, ছেলেও
মাকে বকাঝকা করতে শুরু করল। ওই সবার ঘরে যা হয় আর
কি – যত দোষ নন্দ ঘোষ, মা যত বোঝানোর চেষ্টা
করেন “আরে আমি কিতা করতাম, তুমি তাইনও তো আছলাও।” কোন
লাভ নেই। শেষমেষ বাবা ও
ছেলের কথায় সব দোষ মায়েরই এবং এই নিয়ে
দুজনেই মাকে তুলোধোনা করলেন, মা ওদের সাথে
কথায় না পেরে চীৎকার চেঁচামেচিতে মনে হচ্ছিল, সত্যি যেন ঘরে ঝগড়া লেগে গেছে। বাবার আশাহত মন, ভেঙ্গে পড়া, কেন
শুধু শুধু আবার নতুন আশায় বুক বাঁধলেন আবার কী
করে এই ভাঙ্গা মন নিয়ে চলা শুরু করবেন, উনার আর ভালো লাগছিল না, খুব মুষড়ে পড়ে ছিলেন। ছেলেও আজ টাকাটা
পেয়ে মনে মনে ভেবেছিল, কেটারিং এর ব্যবসায় এই টাকাটা লাগিয়ে ভাল ভাবে বাঁচার চেষ্টা, একটা ভালো ঘর, নাহ হল না , আবার
আরও কিছু দিন কষ্ট করতে হবে থিতু হতে, একটা বিষণ্ণতার ছায়া সবাইকে ছেয়ে ফেলেছিল। এই ফাঁকে মেয়েটির হঠাৎ মা কে
উচ্চস্বরে ডাকল...“ দেখো দেখো আমার চারা
গাছ পাতা দিছে” । ছেলেটি বলল, “থ ফালাইয়া তোর চারা গাছ ইটা, কবের
থনে ও জল দিরে, কিচ্ছু হই তো না।” তখন
মেয়েটি সেই ছোট টবের চারা গাছটি নিয়ে মঞ্চের পাশে নিয়ে
আসে ও সবাই কে কচি পাতার
সত্যতা দেখায়,নতুন
ভাবে বাঁচার কথা শোনায়। বলে, “কেন
আমরা অন্যের দেখানো স্বপ্নে বিভোর হয়ে যাবো, আমাদের
স্বপ্নের ছোট ছোট চারা গাছ গুলিতে অনবরত নিয়ম করে জল
দিতে হবে, একটু একটু করে, তবেই
একদিন হঠাৎ আমরা কচি পাতা দেখতে পাব, সেই পাতা আরও বড় হবে, গাছকে
সাহায্য করবে পুষ্টি যোগাতে, আমাদের কিন্তু নিয়ম করে পরিচর্যা করে যেতেই হবে।” নাট্যকারের
যে মূল বক্তব্য স্পষ্ট ভাবে, শেষ অংশে
মেয়ের কথায় উঠে এসেছে। আমরা স্বপ্ন দেখবো ছোট ছোট, আর
সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য নিজেরাই চেষ্টা করব, অন্য
কারও সাহায্য ছাড়া, কারণ জীবনে short cut রাস্তায় স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয় না। আমরা কী স্বপ্ন দেখবো,
কী করে পূরণ করব, তা
আমাদেরকেই ভাবতে হবে, অন্যের প্ররোচনায় পা দেব না,একটি
স্বপ্ন ভেঙ্গে গেলে আবার স্বপ্ন দেখব, কারণ
স্বপ্ন দেখা মানেই বেঁচে থাকার প্রেরণা, এই
শপথ নিয়ে নতুন স্বপ্ন নিয়ে আবার জীবনে বাঁচার জন্য মঞ্চে সবাই মিলে নিজেদের স্বপ্নের মায়ায় রাঙিয়ে দিল।
নাটকটি যত ভাল লেগেছে দেখতে, ততটা
ভাল করে আমি আপনাদের লিখে বোঝাতে পারিনি তা আমি বুঝতে পারছি, কিন্তু উপস্থাপনার সারল্যে, সাবলীলতায়,ভাষা
ও ভাবের গাম্ভীর্যে নাটকটি ছিল একটি নদীর স্রোতের
ছবির মত, একই ভাবে বয়ে চলেছিল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। এবং এই নাটক আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছিল আমার ছোট ছোট স্বপ্নের
কথা , এবং সেই স্বপ্ন গুলোর জন্য
আমার কষ্ট ও ভাল লাগার কথা, যা এখন শুধু স্মৃতি। একটা গান ছোট বেলায় রেডিও তে শুনতাম। কী গান, জানি
না , ছবির গান কি তাও জানি না, তবে
প্রথম কয়েকটা লাইন ভুলতে পারিনি আজও...... “স্বপ্ন আমার হারিয়ে গেছে... স্মৃতি টুকু বেঁচে আছে...” । নাটক
শেষ হওয়ার পর ও আচ্ছন্ন হয়ে ছিলাম, অনেকক্ষণ, ভেবে
ছিলাম এসেই নাটকটির বিবরণ আপনাদের সাথে ভাগ করার জন্য
লিখে নেব, কিন্তু তা হয়ে উঠেনি এতদিন। লক্ষণ ঘটক
বাবুর “দিদি লেখা কই”
বারকয়েক মেসেজ আমাকে
আবার boost up করল আমার ভাবনাকে, আমার
স্বপ্নের স্মৃতিটিকে। নাটকের সাথে আমার
অনেক কিছু মনে পড়ে গেল, ভাগ
করে নিলাম আপনাদের সাথে, ভাল
লাগবে কি না জানি, তবু এই ভাগ করে নেওয়াটাই আমার অনেক বড় পাওয়া, নিজেকে ফিরে দেখা, যদি
আপনারাও আমার মত আপনাদের স্বপ্নের স্মৃতি কোঠায় পা দেন, আমার
আবেগ , আমার আবেশ আপনাদেরও ছুঁয়ে যাবে। মৌসুমি
ভৌমিকের গাওয়া আমার খুব প্রিয় একটি গানের লাইনগুলি মনে পড়ছে... “আমি দুচোখের গা বেয়ে শূন্যতা দেখি
শুধু...রাত ঘুমে আমি কোন স্বপ্ন দেখিনা ...তাই স্বপ্ন দেখবো
বলে আমি দুহাত মেলেছি...তাই তোমাদের কাছে আমি দুচোখ পেতেছি......”
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন