।। সুমন পাটারী ।।
ব্লগপোষ্টঃ +Rajesh Chandra Debnath
(C)Image:ছবি |
স্বভাবে চঞ্চল হরিপ্রসাদের মুখে জন্মগত সোনার চামচ।
শহরতলির উপকণ্ঠে মস্ত বনেদী বাড়ি, টেক্সটাইল,
রঙের বিশাল ব্যবসা তার। কিছুটা বাবার দান কিছুটা নিজে করেছে। যেমন করেছে বাড়িটি
সংস্কার, মার্বেল পাথর বসিয়েছে। নতুন বর্ধিত বারান্দা ফুল বাগান আর একটি অদ্ভুত
সুন্দর বিষ্ণু স্থাপন করেন উঠানে। মন্দিরটির জন্য আর বেশি জায়গা বেঁচে
নেই উঠানে, রোদ ও কম আসে,
তাতে কী? কৃত্রিম আলো বাতাস সব এখন তার বগলে দাবা।
কিঞ্চিৎ সময়ের বিলাসী হরিপ্রসাদ ঠাকুরে লীন থাকে
রুটিন মাফিক, তথাকথিত হিন্দি ধারাবাহিকের
মতো তাঁর ভারি আভূষণের ঢলন্ত বয়সের স্ত্রী শ্রীময়ী
সারা দিনে সময় করে দফায় দফায়
বসে থাকে হাত
জোড় করে, ঠাকুর ঘরে--- তাদের একমাত্র ছেলে বিরাজ্যে পড়ে--- তার মঙ্গলার্থে।
প্রাত্যহিক নিময়ে ভোর হয়,সকালের কাজ-কর্মগুলো একজন লোক এসে করে
দিয়ে রান্না বান্না করে দিয়ে যায়। হরিরামের স্ত্রী স্নান করে পুজো দিয়ে স্বামীকে প্রসাদ আর
পাঁচবাতির আগুন ছোঁয়াবে বলে ঘরে এসে চোখ যজ্ঞকুণ্ড। “কী হে তুমি এখোনো উঠোনি! কাল রাত কোথায় ছিলে? কী করছিলে এতো রাত? কখন
এসে ঘুমালে?” বলতে বলতে চিৎকারে
চলে গেছেন অজান্তেই। হরি প্রসাদ পাল্টা আক্রমণে, “একদিন
দেরি হলে এমন করো কেন যে আকাশ ভেঙে পড়েছে।
কী আর অশুদ্ধ হয়ে যায়! তোমার ঠাকুরের যাবতীয় সরঞ্জাম আর দামী ফলমূল হরিসেবা, এই সেবা সেই সেবা এসবের পয়সা কামাচ্ছিলাম এতো রাত!” “হায় হায়! এতদিনের সাধনা আমার নষ্ট করে দিলো রে! সব জলে গেলো রে! ঠাকুরেকে খোঁটা দিলো রে!” বলতে বলতে ঠাকুর ঘরে ছুটে গিয়ে ভীষণ আকুতিতে ক্ষমা চাইতে লাগলো। বাইরে থেকে হরিপ্রসাদ চিৎকার করে বলছে, “অনেক হলো নাটক! তোমার ঠাকুরের রেশনপাতি কমাতে হবে।” এবার বিলাপে কেঁদে উঠলো তার স্ত্রী। তোয়াক্কা না করে সে স্নানে চলে গেলো। সাওয়ারের তলায় দাঁড়িয়ে অনেকটা খুশি অনুভব করছেন ঠাকুর বিদ্রোহ করে। সেদিন থেকে একপা দূরত্ব যেন বেড়ে গেলো দুজনের। হরিপ্রসাদ ব্যবসায় মনযোগ বাড়ালো।
কী আর অশুদ্ধ হয়ে যায়! তোমার ঠাকুরের যাবতীয় সরঞ্জাম আর দামী ফলমূল হরিসেবা, এই সেবা সেই সেবা এসবের পয়সা কামাচ্ছিলাম এতো রাত!” “হায় হায়! এতদিনের সাধনা আমার নষ্ট করে দিলো রে! সব জলে গেলো রে! ঠাকুরেকে খোঁটা দিলো রে!” বলতে বলতে ঠাকুর ঘরে ছুটে গিয়ে ভীষণ আকুতিতে ক্ষমা চাইতে লাগলো। বাইরে থেকে হরিপ্রসাদ চিৎকার করে বলছে, “অনেক হলো নাটক! তোমার ঠাকুরের রেশনপাতি কমাতে হবে।” এবার বিলাপে কেঁদে উঠলো তার স্ত্রী। তোয়াক্কা না করে সে স্নানে চলে গেলো। সাওয়ারের তলায় দাঁড়িয়ে অনেকটা খুশি অনুভব করছেন ঠাকুর বিদ্রোহ করে। সেদিন থেকে একপা দূরত্ব যেন বেড়ে গেলো দুজনের। হরিপ্রসাদ ব্যবসায় মনযোগ বাড়ালো।
কয়েকদিন পর সকাল সকাল দোকানে বসে হরিপ্রসাদ,
এককাপ লিকার আর ঠোঁটে চারমিনার। ভাগনেটি
উপস্থিত। মামা বলে সামনে এসে দাঁড়ালো। সরকার নতুন নিয়ম করেছে। বিএড করতে হবে। সরকারি
ভাবে বেশি ছাত্রের সুবিধা নেই।
করতে হবে। তাই বেসরকারি। চড়া দাম। টাকার খেলা। তাই সাহায্য চাই। নতুন একটা দোকান ভিটে
কিনলেন। ব্যাঙ্কের
লোন আছে। কর্মচারী বেতন। সম মিলিয়ে অনেকটা খালি এখন সে। কী করে ভাগনেকে নিষেধ করে। অন্তত হাজার পঁচিশেক টাকা যে দিতেই হয়। এসব
ভাবছে। ঋণ করে
আগেই তো দোকান ভিটে নিলো। জায়গা নেই আর ঋণের। হঠাৎ মনে এলো ঘরে হাজার বিশেক টাকা আছে। “শুন!
এক কাজ কর। তুই আর্জি কর। কাল সকালে এসে নিয়ে যাস টাকা। আপাতত বিশ হাজার।”
রাতে বাড়ি ফিরল হরিপ্রসাদ। আজ তার স্ত্রী অনেকটা
খোলামেলা ও সহজাত মনে হচ্ছে অনেক দিনের রাগের পর। এর পর সাদরে ডাইনিং এ আমন্ত্রণ। রাতের খাবার,
হরি বেসিন থেকে হাত ধুয়ে এসে উপুড় করা থালাটা ঠিক করতে
করতে, “বেশ খুশি খুশি
লাগছে? কেমন হলো নন্দলালের বাড়ির হরিসেবা কীর্তন?”। স্ত্রী ভাত দিচ্ছে। “সে আর বলতে! এত সুন্দর যেন সাক্ষাৎ গৌর নেচে
নেচে হরির নাম বাতাসে লুটাচ্ছে। আহা!
কি গলা কি তাল তাদের কীর্তন
দলটা নাকি নদীয়া থেকে আগত। আরো কিছু দিন থাকবে এখানে।আমি
ওদের বলে এসেছি
একদিন আমাদের বাড়িতে গাইতেই হবে। অনেক বলাবলি করে শেষে নন্দলালদা বলায় রাজি হলো। ওনারা
আগামী পরশুদিন কীর্তন করবে আমাদের বাড়ি, কতো
সৌভাগ্য আমাদের!” “টাকা কোথা থেকে দেবে আর কতো?” “নয় হাজার টাকা,
তিন ঘণ্টা কীর্তন। আমি ওদের বলেছি সবাইকে ধুতি পাঞ্জাবি আর খাওয়ানোর ব্যবস্থা করবো।” “কিন্তু
টাকা কোথা
থেকে? আজ বিটু এসেছিলো,
বিএড করতে চায়। হাজার বিশেক টাকা চাইলো।
ঘরে যা
আছে তা তাকে দেবো এসব এখন বাদ।”
লাফদিয়ে উঠে গেলো শ্রীময়ী টেবিল থেকে, “না না! এসব হবে না ওদেরটা ওদের দেখতে দাও। আমরা কি সবার ঋণ নিয়ে রেখেছি? না, এসব হবে না এমনিতে আমাদের বেহাল সমস্যা। অনেক ঋণ। তাইতো এই
পূজা দিতে চাইছি।
না, হবে না আমি কথা দিয়েছি ঠাকুরদের।” “আমিও
কথা দিয়েছি ভাগনেকে।” “ওতে মহাভারত অশুদ্ধ হবে না। ওদের অন্য দিকে
দেখতে বলো। আমি মানুষের জন্য হরিসেবা খুলে রাখিনি।”
আগামী দিন সকালে বিটু এলোনা। পরদিন হরিসেবা হলো কীর্তন হলো। দামি ধুতি
পাঞ্জাবি এলো। গান হলো।
খাওয়া হলো। এক কোনে
হরিনাম এক কোনে গ্লাসে বাজলো লাল জল।
সকালে বিটু এলো। মামাকে দোকানে
পেলো না। বাড়ি এসে জানলো মামা ক'দিনের
জন্য বাইরে গেছে ব্যবসার
কাজে। ফিরতে একমাস লাগতে পারে। আর এ ব্যাপারে শ্রীময়ীকে কিছু বলে যায়নি। অম্লান হাসিতে
বিটু ফিরে এলো।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন