“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

সোমবার, ২৯ মে, ২০১৭

অপাংশু দেবনাথ এর ৫৮ টি দ্বিপদী

 

।।  অপাংশু দেবনাথ ।। 

ব্লগ পোষ্টঃ +Rajesh Chandra Debnath  

(C)Image:ছবি


 










প্রভা

আরও দু:খ নিয়ে এসো, ছত্রাকারে  ভাঙলে সভা।
একান্ত দূরে চেয়ে থাকি,বক্রাকারে জ্বলে প্রভা।

ভাণ্ড

রঙিন ভাণ্ড একদিন, অন্ধকারে ডুববে জেনো
এই অভিযোগে বলো তবে ভূষিত করলে কেনো?

স্বপ্ন

এমন করিয়া কতো আর বাক্যবাণে তুলবে ঝড়
প্রতিবার আমি প্রদীপটা আগলে বাঁধি স্বপ্নঘর।

কুসুম

কুসুম তোলো একা তুমি বন্দরে সে নাবিক জাগে,
তাহার কথাতো ভাবো নাই কখনো এই সোহাগি রাগে।

সঙ

মধ্যখানে যে শূন্যতা তা তোমারই সৃষ্টি রঙ,
আর কতো বলো নিজেরই বিষাদ রঙে সাজবে সঙ!

চিঠি

দরোজা খুলিয়া যখনই দাঁড়াই একা বৃষ্টি নামে,
উঠোনে প্লাবন তুমি কি এ পাঠালে চিঠি জলোখামে?

শূন্যতা

উদোম পায়েতে নামি নীচে জল নেইতো একটি ফোঁটা
শাখায় শাখায় জেগে আছে ক্লান্ত দেহে রিক্ত বোঁটা।

তন্দ্রা

রাত্রি হলেই অসুস্থ, বিষণ্ণতা পালক ঝাড়ে
আমি কেবলই একাকী এ স্বপ্ন আঁকি তন্দ্রা বাড়ে।

পারদ

সিপাহিজলায় ছায়া কমে, লালমাটির পথটি ধরে,
আলোর মমতা ছুঁয়ে আছো, পারদ হাসে পাতার ঘরে।
অহম

চড়া দামে কিনি সুখ সখা,তোমারে বলি সকল কথা,
অহম পোড়াতে নাই পারি, তুমি ভাঙলে কি সব প্রথা?

ঢেউ

বিবাদে বিনয় বাড়ে, খুলে দেখে করতল কেউ,
কিছুই নেই সঞ্চিত অবশেষে অশ্রুচিহ্ন ঢেউ।

কাঁটা

খুব বেশী ঝুঁকে গেলে লিগামেন্টে টান পড়ে জানি,
জেনেশুনে ফুল তুলি, হাতে এসে কাঁটা হয় রানি।

পরাগ

ফুল ও কণ্টক তার মধ্যখানে গরল ও সুগন্ধিতে ভ্রমর আসে,
মৌমাছি কম্পিত পাখায় ধরে রাখে সময় সন্ধিতে পরাগ ভাসে।

লিপি

শব্দকে সত্য মেনেই বিশ্বাসে নদী অঙ্কন করি বুকে,
তুমি তাতে ছিপ ফেলে ব্রহ্মলিপি লিখো স্বপ্নলোকে।

পাখি

শিমূলরঙা ভুল উড়িয়েছি আকাশে তুমি তাতে ছুঁলে,
অমনি ওড়লো নি:শব্দপাখা মেলে হৃদপাখিটি দোলে।

ছায়া

পরম আভা আমাকে জড়ায়।
অবিকল হিমশৈল ফুঁড়ে আসা উজ্জ্বল ছায়া ছড়ায়।

নদী

সন্ধ্যায় পাহাড়ে পরাগরেণু ঝরাও,
নেমে এসে ভোরে নদী হও সমুদ্রে গড়াও।

অন্তর্বাহির

কিছুতেই কিছু হবার নয় তার,
অন্তর বাহির ঈশ্বরময় যার।

যজ্ঞ

সব জ্বালানি মজুত রেখো,
যজ্ঞ সাজাতে হবে একদিন দেখো।
বিষাদ

বা-দিকে যে চিকন বিষাদ ভেতরে ভেতরে চিবিয়ে সে,
বন্ধ দরোজার খিলিঘরে অহোরাত বেঁধে রাখে শেষে।

প্রেমিক

বিবাহের মরসুমে শূন্য মাঠে বিরহ কঙ্কণ বাজে,
নাড়া তুলে বিকল্পবিকেলে ভিনগাঁয়ের প্রেমিকেরা সাজে।

অবসাদ

পথে হেঁটে যেতে দেখি ওড়ে আঁচল কার নদী গহ্বরে,
পাখি ঠোঁটে সেই রাত্রির নীরব অবসাদ মন্তরে।

উপনিষদ

মন আমার তোমার সাথে বিন্দু বিন্দু কুয়াশা কঠিন,
জল ছুঁয়ে ধোঁয়া ধোঁয়া-ভোর কেন যে উপনিষদ রঙিন।

ঘোর

চিৎমুদ্রায় জাগি বিছানায়  জাগে পূর্ণচন্দ্র ভোরে।
আলো ফেলে ধীরে যেন আমি আহত হই চাঁদলাগা ঘোরে।

পণ্য

নিজেকে বিজ্ঞাপিত করিনি কখনোই
বিজ্ঞাপন আমাকেই পণ্য করে তুলে।

মনোপাখা

পথে এসে সব কুয়াশারা আজকাল পেখম মেলে বসে,
আলো জ্বালি মনোপাখা এসে আমাকেই জড়ায় নীরবে।

মন্ত্র

অবস্থান জেনে নিয়ে সন্ধ্যাতারা জ্বালে কেউ,
দেশান্তরে ছড়ায় সে ভালোলাগা মন্ত্ররূপে।

নির্মাণপুষ্প

ধুলো ধোঁয়া ছুঁয়ে হাঁটে এতো এতো চলমান অদ্ভুত সব পা।
আমি সে চরণ খুঁজি যাতে স্পর্ধায় রাখা যাবে নির্মাণপুষ্প।

পক্ষিমন

হৃদয় কাটা সমাপ্ত হলে  নির্বাক দাঁড়িয়ে থাকে সাক্ষী,
সেই জানে এই পক্ষিমন নির্মম আলো দেখেছে কতো।
বেঘর

মিহিমায়া ও মন্ত্রের দিকে গড়াতে গড়াতে আজ মাটির নিকটে।
দূরগামী গতি পাশে জল, পলল প্রার্থনা জাগায়ে সে কেমন বেঘর---

সময়

আম্রমুকুল ঝরে, হাওয়া কথা বলে কর্ণে, মনে
একদিন অমৃত হবে এই ঝড়ের সময় জানে।

শব্দউষ্ণতা

নিজেরই দেহ-উত্তাপে উষ্ণ করি শরীরের শীতলতম অংশ।
অতপর গুনগুন শুনি কারা যেন পল্লবিত হয় রোজ  শব্দউষ্ণতা ছড়িয়ে।

ডিঙি

মন আমার সরোবরে ডুবসাঁতারে জাগে,
স্বপ্নগুলো উড়িয়ে দিয়ে ডিঙি ভাসাই জলে।

স্পর্শ

কতদিন গাইলে গান সুর ঠিক লাগে কণ্ঠে
সকল অনুভব সংগীত হয় একবার তুমি ছুঁলে।

চইলঘুড়ি

কাজ ফুরিয়ে গেলে মৃত্তিকা তার বুকে টেনে নেবে একদিন
মানুষের কর্মসমাপন শেষে চইলঘুড়ি তুমি অপশব্দ-বিন্যাসে।

দহন

আমাকেই মৃত্যুদণ্ড দিই, যদি পাপ মনে করো,
আমৃত্যু তবে ওই দহন  বহন করি হৃদয়ে।

ফাগুন

আগুন থেমে গেলে আমি নিষ্প্রাণ
প্রদাহ ফুরালে জানি তুমি ফাগুন।

ঠাঁই

ডুবে যাই যদি হাত পেতে রেখো তুমি,
ওই দু বাহুতেই নিতে চাই চরম ঠাঁই।

প্রদাহ

কোথায় অসুখ হলে মেদিনী কাঁপে, একমাত্র তুমিই জানো।
আমিতো সকল তিয়াসে,তোমার কাছেই মেলে ধরি প্রদাহ।
ধ্যান

মত্তবনহস্তি তাণ্ডব করে পাহাড়ে,অথচ পাহাড় স্থির।
সে জানে তার চূড়াতেই ধ্যানস্থ হয় গোধূলি ও ভোর।

সত্যদর্শন

অকারণ ফোঁস করলে  বিষ নির্গত হয়,
বটঝুড়িসম সত্যনিদর্শন কতোটা কার ।

পাপহীন

দিল্লী দরবার থেকে গেদুমিঞা মসজিদ
জানি মানুষের পৃথিবী নিষ্পাপ নগরী নয়।

গমন

যদি কেউ ছক করে ফাঁদ পাতে দুপুরে, তুমি তবে,
মনে রেখো, একদিন যাবেতো সকলেই, বটতলা শ্মশানে।

সত্যতা

মাঝরাতে নিজেকেই ফালা ফালা করে যাই,
মানুষের মুখে মুখে সত্যটা খুঁজি তাই।

তাবিজ

অকারণ আলো জ্বলে ভোররাত শেষ হলে ,
নদীজলে ধুয়ে নিও তাবিজটা সত্যের।

পাখা

শিমূলরঙা ভুল উড়িয়েছি আকাশে।
তুমি তাতে ছুঁলে,অমনি ওড়লো নি:শব্দপাখা মেলে।

ছায়া

পরম আভা আমাকে জড়ায়।
অবিকল হিমশৈল ফুঁড়ে আসা উজ্জ্বল ছায়া।

গুমড়ামুখো

একদিন জঙ্গলে নিজস্বীকে তুলতে গিয়েছিলাম
ক্লিক শেষে এতো সিরিয়াস দেখাবে ভাবিনি আমি।

তান্ত্রিক

আমৃত্যু ব্রতপালনে কেরিকাটা পথ আমাদের,
ধুলো ওড়ার আগেই জল ছিটিয়ে দিও তান্ত্রিক।
কারুবীজ

দু:খের কারুবীজ অশ্রু হলে নির্জনপথে পাথর কুড়াই
অস্পষ্ট আলোমুখী হয়ে ছায়া ছায়া নিজেকে ফুরাই।

দেহচন্দন

রুটিন টাঙিয়ে জানান দেয়া হয় কবে শীতকাল, কবে ছুটির ঘণ্টা
এ মন ঠিকই টের পায় শীতপাতা ঝরে কেনো,কাঁপে কেনো দেহচন্দন।

অনন্তবীজ

আমাকে উপেক্ষা করে কতটাদূর এগোবে বলো?
আমি তো অনন্তবীজ স্বর্গের নাভি চুম্বন করি।

নিয়নবাতি

ভালোবেসে নত হতে শিখলোনা ওরে কেউ,
অহমেরে সাজিয়েছে নিয়ন বাতির ঢেউ।

সুখ

অকারণ অপমানে আয়নায় অদেখা মুখ।
পরাণের কথা কেউ জেনেছে কি পেয়ে সুখ।?

মৃত্তিকা

তাপ ঝরিয়ে মেঘ, ডানা মেলে আকাশে,
শাণিত তীরসম ঘামবিন্দু রাখে বুকে মৃত্তিকা সে।

রবীন্দ্রনাথ

তুমি আমার জেন্দাবেস্তা,তুমি বাইবেল কোরান;
তুমি আমার ভালোবাসা, তুমি গীতা পুরাণ।
                        
নববর্ষ

নতুন বছর কি আর পেলাম বলতে পারো নতুন করে?
সেই পুরোনো তুলসীতলা, ধুলো গায়ে পুষ্প ঝরে।

গ্রহণ

আকাশে লট্কানো চাঁদভাণ্ড ভেঙে গলে পড়ছে ঘোলা মায়ামদ
ক্লান্ত উঠোনে বৃক্ষরা ছলম খুলে রাখে,উলঙ্গ দেহে মাখে  গ্রহণ।

কোন মন্তব্য নেই: