।। সৌমিত্র সুমিত রায় ।।
ব্লগপোষ্টঃ +Rajesh Chandra Debnath
(C)Image:ছবি |
২৯
শহরের পিছনে ছোট জঙ্গলটি আজ হঠাৎ লক্ষ্য করলাম- সাফ;
স্তুপাকৃত বালু-সিমেন্ট, স্থূলকায় ঠিকাদার, জীর্ণ লেবার।
“শপিং মল উঠেগা” ওপারের পানওয়ালা বলল।
ঘর ফেরত দরজার ফাঁকে দুটি বিল ও একটি চিটি;
যাকে বুঝিয়েও বোঝাতে পারিনি মনের ক্যালকুলাস
সেই কলেজ বান্ধবীর ১৩ তারিখে বিয়ে।
একলা ঘরের কানফাটানো নিস্তব্ধতা ভাঙ্গলাম বোকাবাক্সের বকবকে;
নিয়ুজ চ্যানেলের মেনুতে শুধু স্পাইসি মিক্সড ডিশেস।
আন্দোলন এখন হাঁটে না পথে; সে আরাম করছে ফেসবুক ওয়ালে।
একলা ঘরে অক্সিজেনের অভাব, বাজার ঘেঁষা পায়চারি;
তীক্ষ্ণ দৃষ্টি পাল্লার কাঁটায়, উচ্ছৃঙ্খল যৌবন ফাস্টফুড স্টলে
ফ্লোরসেন্ট বাল্ব, নিওন বোর্ড; চাঁদটা ব্যাকডেটেড।
মুক্তিদ্রব্য পকেটস্থ; মাথায় আগামীকালের রণনীতি, অজস্র ভাবনার ধাঁধানো জট;
বালিশতলে এক কৃষ্ণগহ্বর- নামছি...নামছি...নামছি... থামছি না।
আঁধারঘরে জ্বলে শুধু কামাসক্ত সিগারেট জোনাকি।।
.......
.......
বিস্ফোরণ
হাজারবার মরেছি
আজ জীবিত হওয়ার আগে ।
বারুদকণা সংগ্রহ করছিলাম প্রথম হারের দিন থেকে, নিঃশব্দে ।
আজ আমার বিস্ফোরণের দিন,
চারিদিকে দেখো চেয়ে,
দেওয়ালে, মেঝে, ছাঁদে ।
শুধু আমি... শুধু আমি...
........
এডাল্ট্যারি
বৃদ্ধ অরণ্যে
তরুণী দাবানল।
সুধু ছাই...সুধু ছাই
.....
যখন ফিরবে আবার...
যত উঁচুতে উঠে হাতুড়ি,
যত দূরে যায় ধনুকের জ্যা
তত আঘাত হানে,
তত গভীরে করে ভেদ ।
তুমি চলে গেছো দূরে
তাই ভয় হয়
যখন ফিরবে আবার আমার অস্তিত্ব কে করবে চুরমার ।।
......
নিজস্ব সূর্য
বিশাল এক অর্ধনগ্ন হরডিং এর কঙ্কালে বসে দেখছিলাম শহরটাকে ।
কিভাবে অন্ধকারকে হারিয়েছি আমরা, ভেবে অবাক লাগে ।
আমরা সবাই এক নিজস্ব সূর্য নিয়ে চলি,
বোকা বানাই অন্ধকারকে ।
চাঁদের পাণ্ডুর গরিমাকে আমরা চূর্ণ করেছি ।
সময়-বিন্দু বাষ্পীভূত হচ্ছে অনর্গল
তাঁর আগে খাঁচা বন্দি করতে হবে স্বপ্নগুলোকে ।
তাই আমরা ছুটতে থাকি নিজস্ব সূর্যের আলোয়
বোকা বানাই অন্ধকারকে ।
কিছু হাইড্রোজেন কণাকে বন্দি করে কাঁচে
বোকা বানাই অন্ধকারকে ।
ভোর...সন্ধ্যা... অস্তিত্বহীন ।
শুধু আলো... চোখধাঁধানো ।
শুধু স্রোত... অসংখ্য ।
......
পেন্ডুলাম
তুমি কেন পেন্ডুলাম?
আশা-হতাশার নাগরদোলায় ঝুলছ...
শুধু দুলছ প্রতিনিয়ত ।
তুমার আছে ভরবেগ
তবু কেন এগোতে পারো না অনাবিষ্কৃত পথে?
এক কেন্দ্রের প্রেমিক তুমি, আজীবন ।
এক আমোদ-সুতায় বদ্ধ।
একবার দুঃসাহস করো,
ছিঁড়ে ফেলো সুতা ।
দেখবে তুমার ভরবেগ নিয়ে যায় তোমায় কোথায় ।
......
ফ্যান্টম
অবহেলিত ডাইরিতে পুঁতে রাখা মৃত প্রেমিক
যদি ফিরে আসে বছর কুড়ি পরে?
খাপ খাইয়ে নেওয়া জীবনটাকে পারবে খাপছাড়া করতে??
তুমি শুধু অনুভব করবে
এক ফ্যান্টমের উষ্ণ নিশ্বাস তোমার কাঁধে ।।
......
অস্ত্র- বিরতি
নিজেকে পাওয়ার জন্য আমি হারিয়েছি আমাকে,
অনেক যুদ্ধে... অনেক শান্তিতে।
আর প্রতিবার পেয়েছি অদ্ভুত অজানা ‘আমাকে’
সে বিস্মিত করেছে আমাকে অনেকবার।
......
কিছু হিসাব নিকাশ
আজ আর কি করে বাটবো তোমার সাথে?
যদি কথা দাও মিলবে আরেকবার...এইখানে,
আমি বেচবো আমার সম্পূর্ণ শূন্য জগৎ
তোমার সাথে কিছু একান্ত মুহূর্তের বিনিময়ে।
যদি কথা দাও আমায় লুকিয়ে রেখে ভিতর ঘরে,
তুমি ব্যস্ত থাকবে এই কোলাহলে।
আর যখন মিটবে সব হিসাব-নিকাশ
খাতা বন্ধ করে তুমি ফিরবে... এইখানে।
এইখানে...
যেখানে নেই কোনো অদৃশ্য পাঁচিল,
যেখানে ব্যভিচার আর ভালবাসায় মহাসাগর ফারাক।
কিন্তু আজ?
আজ আর কি করে...
......
চাঁদ
শহুরে রাস্তা ব্যস্ত ।
এই ব্যস্ততায় কেউ উপরে তাকায় না;
ছুটতে গেলে উপরে তাকানো নিষেধ ।
এই রাত্রিতে যদি ওরা উপরে তাকাত
তাহলে দেখতে পেতো
চাঁদটা কত উদাস ।
শহুরে আলোর ভিড়ে ও যেন এক প্রাচীন কবি
মোডারনিস্মের ঝড়ে যার কবিতাগুলি গেছে হেরে ।
সে বসে রয়েছে একা, অবহেলিত ও সঙ্গিহীন;
আমিওত একা, অবহেলিত ও সঙ্গিহীন...তাই ভাবছি
আজ ছাঁদে গিয়ে চাঁদটাকে সঙ্গ দেই।
আমার চাওয়ায় ভরে উঠুক ওর মন প্রেমে,
আর আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাক ওর জ্যোৎস্নায়।
আজ সারারাত ওর জ্যোৎস্নায় জ্বালিয়ে তুলি আমার নিভে যাওয়া মনটাকে।
প্রেম মধুরতমো...একান্তে।।
......
পাহাড় ও শহর
ভারী ভূমিস্খলনে চাপা পরে কতো অজানা নাম-
নাম যেগুলি আমার তোমার অসুবিধে হয় উচ্চারণ করতে।
র্যোমান্টিসিজমের চশমা পরে আমরা
শুধু তাকিয়ে থাকি উঁচুতে।
উঁচুতে, যেখানে সবুজ চুমু খায় নীল এর ঠোঁটে-
মেঘ-পরদা ঢাকে ওদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তগুলি।
ভারী ভূমিস্খলনে চাপা পরে ছোটো স্বপ্নের ছোটো কুঁড়ে ঘর।
ডেভেলপমেন্ট এর ক্ষুর চলতে থাকে অবিরল,
অবিরল বেরোতে থাকে পাহাড়ের লাল টাক ।
কুঁকড়ানো জঙ্গল অসভ্য, তাই উন্নয়নের চিরুনি চালিয়ে
আমরা ওদের পরিপাটি করে তুলছি।
ভারী ভূমিস্খলনে চাপা পরে অসভ্য নিরীহ জীবন।
শহর চায় পাহাড়ের হাওয়া ।
পাহাড় চায় শহরের চমক ।
দুই-ই অতৃপ্ত...
......
পোট্রেট
অভিমানে অনেকবার মুচেছি,
আবার ভালোবেসে এঁকেছি
সেইসব আধমেটা রয়ে যাওয়া দাগগুলি মিলিয়ে।
হয়ত তাই আজও হয়নি সম্পূর্ণ তুমার পোট্রেট।
.......
অমরত্ব
ঋক্ষমণ্ডলের চিহ্নে
ধ্রুবতারার খোঁজ।
শপিং মলের জানালায় চকচকে ‘অমরত্ব’;
প্রাইস ট্যাগ: মাত্র একটি মৃত্যু।।
জীবিতদশায় ভয় হতো;
দাহ করে এসে
আলমারিতে খুঁজবে,
আসল চেহারাগুলো ডাইরিচাঁপা
পড়ে দেখো...বুঝবে।।
.......
আমাদের কথাগুলো
হাওয়ায় ভাষা তুলো,
আমাদের অজস্র কথাগুলো,
শুধু উড়ে চলে এদিকে সেদিকে।
আমরা যতবার করি চেষ্টা
ততবার বিফল হই
কেন্দ্রবিন্দুতে ওদেরে ছুড়তে।
কখনো ভাবি,
আমাদের কথাগুলো যদি পাথর হতো,
এইসব কাঁচের কারাগার ভেঙে হয়ে যেতাম মুক্ত।
কখনো ভাবি,
আমাদের কথাগুলো যদি পাথর হতো
আমি ছুড়তাম এক একটা, উদ্যমে, তোমার সাগরে।
তুলো শুধু ভাসে, পাথর ডুবে যায় গভীরে...অন্তরে।
.........
ক্লী’শে
ফ্রি ভার্সে কাঁদো...হাইকু...লিরিকে আর গদ্যে
শুধু কাঁদতেই থাকো;
তোমার রিফিল ভরা লবণ-জল ও লাইসোজোম,
'এতো ছিঁচকাঁদুনে কেন তুমি কবি ?'
পাঞ্জাবির কোনায় মুছ চশমার ধুলোপর্দা,
বাস্তবের পেট টিপে দু ফোঁটা আই-ড্রপ ঢালো চোখের কোনায়,
আর ঐযে তোমার ভাঙ্গা হৃদয়, হাতে নিয়ে হাঁটো হাঠে,
ঢেকে রাখো যা কিছু দিয়ে ঢাকা যায়,
না হয় ইনফেকশন ছড়াবে পাড়ায় পাড়ায়।
ক্লী’শে দিয়ে দমবন্ধ করেছো যার, তাকে টেনে আনো রাস্তায়
দেখুক সে ভির কি ভাবে ঠেলে যায়, কি ভাবে কুকুরটা নিজের ঘায়ে চুলকায়।
'আর হ্যে...শুনো'
টি. আর. পি. বাড়িয়ো না একঘেয়েমি কবিতায়,
শুধু মাথাঝিম, বমিভাব, জং ধরা উপমার নাগরদোলায়
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন