(C) দৈনিক যুগশঙ্খ সংবাদ |
তিনসুকিয়াতে
১০ থেকে ১২ মে, ২০১৭ থেকে তিনদিনের "লোক (ফোক) উৎসব' হয়ে
গেল। আয়োজন করেছে ব্যতিক্রম সাংস্কৃতিক মঞ্চের নবগঠিত তিনসুকিয়া শাখা। উৎসবের দুই
ভাগে প্রথম এবং দ্বিতীয় দিনে দুই বেলা এবং তৃতীয় দিনে সকাল বেলা হয়েছে বাউল এবং
অন্যান্য লোকগানের কর্মশালা। হলো
দুর্গাবাড়ির ত্রিতলে নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের , তিনসুকিয়া শাখা কার্যালয়ে।
প্রশিক্ষণ দিলেন লক্ষণ দাস বৈরাগী, তপন
দাস বাউল এবং টিনা ঘোষাল মজুমদার। দুই
বেলাতে সব মিলিয়ে জনা তিরিশেক
প্রশিক্ষণার্থী তিনসুকিয়ার বিভিন্ন জায়গার থেকে যোগ দিয়েছেন। তার মধ্যে যেমন
রয়েছেন তিনসুকিয়ার বর্ষীয়ান সঙ্গীত শিক্ষিকা এবং সাংস্কৃতিক কর্মী গীতা দে,
তেমনি মার্ঘেরিটার সুপরিচিত কীর্তনিয়া
দেবদুলাল গোস্বামীও। এছাড়াও ছিলেন সৃষ্টি চক্রবর্তী, সুচয়িতা চক্রবর্তী, রাজশ্রী
দে, শ্বেতা দাস, পিয়ালি দাস বর্মন, পারমিতা
সাহা, অঙ্কিতা কর, পায়েল
ভট্টাচার্য, বৈশালী রায়, মঞ্জুষা চক্রবর্তী, প্রিয়াঞ্জনা পাল, স্মিতা শীল, সুগাতা
কর, অঙ্কিতা পাল, রূপা পাল, অর্ঘ্যজিৎ
চক্রবর্তী, শুক্লা দাস, উমা গঙ্গোপাধ্যায়, সুস্মিতা বরুয়া, অনিতা সাহা, লীলা
চক্রবর্তী, পৌষালি কর এবং
শতাব্দী গঙ্গোপাধ্যায়।
উৎসবের
মঞ্চটি উৎসর্গ করা হয়েছে সদ্য প্রয়াত শিল্পী কালিকাপ্রসাদের স্মরণে। প্রথম দিনে
সকালে প্রদীপ জ্বালিয়ে কর্মশালার সূচনা করেন তিনসুকিয়ার বিশিষ্ট সঙ্গীত এবং বাচিক
শিল্পী শঙ্কর গুপ্ত। পরে ব্যতিক্রম সাংস্কৃতিক মঞ্চের কর্মীরা একে একে তিন
প্রশিক্ষণার্থীকে ফুলাম গামোছা দিয়ে বরণ করে নেন। দুই বেলাই অধিবেশনের শুরুতে
মঞ্চের শিল্পীরা সমবেত কণ্ঠে একটি করে উদ্বোধনী লোকগান পরিবেশন করেন। স্রোতা
হিসেবেও দুই অধিবেশনেই বহু সঙ্গীত প্রেমী এবং শুভানুধ্যায়ীরা উপস্থিত ছিলেন। এদিনে
দুটি লোকগান প্রশিক্ষণার্থীদের শেখানো হয়, এবং
বাউল গান, বাউল দর্শন সম্পর্কেও
সংক্ষেপে দুচার কথা বলা হয়। লক্ষণ দাস বৈরাগী তাঁর বক্তব্যে বলেছিলেন, বাউল দর্শন এই কর্মশালাতে বোঝানো অসম্ভব
এবং সেসব শেখানোও তাঁদের উদ্দেশ্য নয়। কেননা বাউল একটি সাধন দর্শনের নাম, আর এখানে নিশ্চয় সেই সাধনা শিখতে কেউ
আসেন নি, এসেছেন গান শিখতে।
বাউল দর্শন গুরুমুখী বিদ্যা। এবং সেসব দীর্ঘদিনের গুরু শিষ্য সংসর্গেই আয়ত্ত করা
সম্ভব। টিনা ঘোষাল তাঁর বক্তব্যে বলেন,
লক্ষণ দাস বৈরাগী আর তপন দাস বাউল
হচ্ছেন সাধক বাউল। তাঁরা হচ্ছেন গানের আসল খনি। তাঁর ভূমিকাটি হচ্ছে সেসব নাগরিক
মধ্যবিত্ত স্রোতাদের আগ্রহের কথা মনে রেখে অন্য ‘মোড়কে’ পরিবেশন
করা। বিকেলের অধিবেশনের শেষে তিনজনেই
স্বাধীনভাবে দু চারটি গান গেয়ে শোনান।
১১
মে, ১৭ -- দ্বিতীয় দিনেও একই সময়ে অধিবেশন
শুরু হয়। এদিন দুটি নতুন গান ধরা হয়। এদিন সকালের অধিবেশনে স্রোতা হিসেবে উপস্থিত
ছিলেন ব্যতিক্রম সাংস্কৃতিক মঞ্চের শুভানুধ্যায়ী ডাঃ কীর্তি রঞ্জন দে, পুলেকেশ বসু, সুজয় রায়, সুশান্ত
কর প্রমুখ। বিকেলেও তেমনি আরো অনেকে এসে উপস্থিত হন। বিকেলের অধিবেশনের শেষে
সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য রাখেন মঞ্চের সম্পাদিকা শতাব্দী গাঙুলি , ছাড়াও সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন পথিক দেব,
সুজিত কুমার রায়, গীতা দে।
১২
মে , ১৭ সকাল কাটে জেলাগ্রন্থাগার মঞ্চে অনুশীলনের মধ্য
দিয়ে। বিকেলে সাড়ে পাঁচটা থেকে অনুষ্ঠান
শুরু হবার কথা ছিল যদিও সামান্য দেরিতে শুরু হয়। প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠান শুরু
করেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক এবং সমাজ কর্মী ডাঃ কীর্তি রঞ্জন দে। তাঁকে সহযোগিতা করেন
ব্যতিক্রম সাংস্কৃতিক মঞ্চের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি লেখক-সাহিত্য সমালোচক বাসব রায়,
অধ্যাপক সুশান্ত কর এবং বর্ষীয়ান সঙ্গীত
শিল্পী এবং সাংস্কৃতিক কর্মী গীতা দে। এরা একে একে সংক্ষেপে শুরুর বক্তব্য পেশ
করলে সঞ্জয় গুহ এবং প্রদীপ নাথের পরিচালনাতে উদ্বোধনী সঙ্গীতের একটি কোলাজ পরিবেশন
করে কিশোরী শিল্পী পৌষালি কর। ওর সঙ্গে দোহার দেয় অঙ্কিতা কর, অঙ্কিতা পাল, সুগাতা
কর এবং অর্ঘ্যজিৎ চক্রবর্তী। পরে রেশমি পালের পরিচালনায় লোক সঙ্গীতের সঙ্গে নৃত্য
পরিবেশন করে নৃত্যাঞ্জলি ডান্স একাডেমির শিল্পীরা। দুটি অসমিয়া গান গেয়ে শোনান
তিনসুকিয়ার বিশিষ্ট শিল্পী পূর্ণেন্দু দাস।
এর পরেই তিন আমন্ত্রিত শিল্পী তথা প্রশিক্ষণার্থীদের একে একে মঞ্চে আমন্ত্রণ জানিয়ে সংবর্ধনা জানানো হয়। দুই দিনে শেখানো গানগুলোর তিনটি একে একে গেয়ে শোনান প্রশিক্ষণার্থীরা। এর পরে প্রশিক্ষক শিল্পী টিনা ঘোষাল, তপন দাস বাউল এবং লক্ষণ দাস বৈরাগী বেশ
কিছু গানে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন। টিনা ঘোষাল
বাংলা, অসমিয়া, গোয়ালপাড়িয়া, সাদরি ইত্যাদি নানা ভাষাতে কয়েকটি গান গেয়ে একটা বৈচিত্র্যের
ছোঁয়া আনেন অনুষ্ঠানে। সব শেষে আবার প্রশিক্ষণার্থীদের সমবেত গানে এবং নাচে
অনুষ্ঠান শেষ হয় প্রায় রাত দশটায়। গোটা অনুষ্ঠানে যন্ত্রসঙ্গীতে সহযোগিতা করেন
শহরের বিশিষ্ট যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পী জয় বণিক, লাপি সিংহ, অমির
চক্রবর্তী এবং লালা।
পুরো
অনুষ্ঠান সুচারু রূপে সঞ্চালনা করেন সৌমেন বন্দ্যোপাধ্যায়।
~~~~~~~~~~~~০০০০০০০০০০০০০০~~~~~~~~~~~~~~~~~
একেবারে নিচে রইল কিছু ভিডিও। পরপর শুনে যেতে
পারেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন