“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

বৃহস্পতিবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৭

শুধু গল্প নয়...


।।শৈলেন দাস।।

(C)Image:ছবি

            নিজের স্বজনদের গিরগিটির মত রঙ বদল করতে দেখে মারাত্মকভাবে হতাশ হয়েছে সতীশ। সামাজিক মুক্তির লড়াই করতে নেমেছিল যাদের সাথে, একটা পর্যায় অতিক্রম করতে না করতেই এক লাফে বহুদূর এগিয়ে যাওয়ার প্রলোভনে পড়ে তারা সতীশকে অনুগত্যের প্রসাদ গ্রহণের জন্য পীড়াপীড়ি করতে লাগল। সে রাজি না হওয়ায় অনেকটা জোরাজুরি করার মত উপক্রম হতে দেখে তাদের সংশ্রব ত্যাগ করেছে সতীশ। বলা ভাল অনেকটা পালিয়ে এসেছে সে। ভোরের আলোয় সদরঘাট সেতুতে দাঁড়িয়ে কুয়াশা জড়ানো বড়াইলের দৃশ্য দেখতে দেখতে এইসব কথাই ভাবছিল সতীশ এবং মনে মনে প্রতিজ্ঞা করছিল আর কখনো পিছনে ফিরে তাকাবেনা। ঠিক তখনই পিছন থেকে একজন  বলল- দাদা, সকাল সকাল এখানে কী করছেন একা দাঁড়িয়ে? ঘুরে দাঁড়াল সতীশ। যে লোকটি পিছন থেকে ডাকল তাকে তার এক পা খোঁড়া। সূর্যের প্রথম আলোর মতই উজ্জ্বল হাসিমুখ করে তাকিয়ে আছে সতীশের দিকে। সতীশ তাকে চিনে। তার নাম সুখেন্দ্র। মিউনিসিপাল অফিসের সামনে কলার দোকান তার। মাঝেমাঝে সতীশ কলা কিনতে যায় তার দোকানে। বড়াইলের মনোরম দৃশ্য আর এলোমেলো ভাবনায় মগ্ন থাকায় সতীশ খেয়াল করেনি কখন সুখেন্দ্র তার পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে। শীতের সকালে সেতুতে দ্বিতীয় আর কাউকে দেখা যাচ্ছেনা। সে সুখেন্দ্রকে জিজ্ঞেস করল - কোথায় যাচ্ছ তুমি? এখন তো দোকান খোলার সময় না। মাল আনতে বাইরে যাচ্ছ কি? সতীশের প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে সুখেন্দ্র বলল- আজ আর এখানে দাঁড়াবেন না দাদা, বাড়ী চলে যান। আমি এখন এখানেই থাকব। সতীশ আর কথা বাড়াল না। এমনিতেই আজ একটু বেশি সময় কাটিয়েছে এখানে। পাশে রাখা মোটরসাইকেল স্টার্ট দিয়ে মাথা নেড়ে বিদায় জানাল সুখেন্দ্রকে।
       সারাদিন আজ দখল গেছে একটু বেশিই। কর্মক্ষেত্রে ছোটখাটো ভুল কখনো এমন বড় সমস্যার সৃষ্টি করে যা আদতে কোন সমস্যাই না কিন্তু ভোগায় অনেক। সতীশের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। ভুলের সংশোধন করতে করতে আজ আর ফুরসত মেলেনি একদম তাই এখন তিনসন্ধ্যায় চোখ বুলাতে হচ্ছে খবরের কাগজের পাতায়। অন্যদিন এই কাজটি কর্মক্ষেত্রে কাজের ফাঁকেই সেরে ফেলত সে। বিশেষ কোন খবর নেই প্রথম পাতায়, যা আছে তা সবই জানা। ব্যক্তি বিশেষের উত্থান হয়েছে প্রত্যাশার চেয়ে অধিক; হাওয়ায় তছনছ হয়ে গেছে শতবর্ষের পুরনো জমি। রং বদলাচ্ছে এবার শিক্ষারও ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে শেষ কলামের তিন নম্বর সংবাদের হেডিং দেখে ভয়ে শিরদাঁড়া খাঁড়া হয়ে গেছে সতীশের। 'ট্রাকের চাকায় পিষ্ট পঙ্গু কলা বিক্রেতা' শিরোনামে বিস্তারিত যে খবর তা দুদিন আগের ঘটনা। তাহলে সুখেন্দ্র
কীভাবে সকালে  কথা বলল তার সঙ্গে?  ভাবতেই গায়ের লোম গুলি খাড়া হয়ে গেল সতীশের।

কোন মন্তব্য নেই: