“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

মঙ্গলবার, ৮ আগস্ট, ২০১৭

রবীন্দ্র-মনন




~অর্পিতা আচার্য~

          যে কোন সৃষ্টির পেছনেই স্রষ্টার মনন,মেধা, আবেগ ও চিন্তাধারার প্রভাব অনস্বীকার্য । 'কবিরে খুঁজো না তার জীবন চরিতে ' এ কথা সব ক্ষেত্রে বোধ হয় সঠিক নয় । স্রষ্টা মন যখন অনর্গল তাঁর অনুভবকে বিবৃত করে কবিতা,ছবি,গল্প উপন্যাস বা অন্য যে কোন শিল্প সৃষ্টির আন্তরিক মাধ্যমে, তখন তার self অবশ্যই সম্পৃক্ত হয়ে যায় স্বতস্ফূর্ততার স্বাভাবিক অনুপ্রেরণায় । তাই বহুক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, কোন স্রষ্টার শিল্পকে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ধারাবাহিক বিশ্লেষণ করলে তাঁর জীবনের ওঠাপড়ার কিছু না কিছু ছায়া যেন পাওয়া যায় । অমূর্ত যেন মূর্ত হয়ে ওঠে কল্পনা থেকে জীবনে, সৃষ্টি থেকে অভিজ্ঞতায়, অস্ফুট উচ্চারণ থেকে স্পষ্ট জীবন কথায় ।
             রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির মাধ্যমে তাঁর মননকে অনুসন্ধানের প্রচেষ্টা বেশ কয়েকজন মনোবিদ করেছেন । কবির জীবনের ঘটনা প্রবাহকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় 'মৃত্যু ' ছিল তাঁর জীবনের এক নিয়ত অনুসরণকারী । ১৮৭৫ সালে যখন কবির মাতৃবিয়োগ হয় তখন তাঁর বয়স অত্যন্ত কম । মাতৃস্নেহ ক্ষুধাতুর এই নিঃসঙ্গ বালক ক্রমশ অভেদীকরণের মাধ্যমে প্রকৃতিকেই তাঁর মা হিসাবে মেনে নিয়েছিল । ১৮৮৪ সালে চব্বিশ বৎসর বয়সে তিনি হারালেন আর এক প্রিয়তমাকে - তাঁর নতুন বৌঠান কে । সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত সেই বয়সে এই আকস্মিক আঘাত তাঁর মধ্যে সৃষ্টি করেছিল অপরিমেয় এক শূন্যতা যা হয়তো সমগ্র জীবন দর্শনকেই আমূল প্রভাবিত করেছিল । জীবন ও মৃত্যুর যুগ্ম দোলাচলের এই দার্শনিক ধারণা সারা জীবন তাঁর সব সৃষ্টিতে প্রভাব ফেলেছে ।পরবর্তী সময় আরো কিছু মৃত্যু ( স্ত্রী -১৯০২, পিতা -১৯০৪,পুত্র -১৯০৩, কন্যা ১৯০৭ ও ১৯১৮) তাঁর এই দর্শনকে ক্রমশ reinforced করে গেছে । যখন কোন সম্পর্ক ভালবাসার সম্পৃক্ততায় জড়িয়ে যায় তখন ego তার সমস্ত শক্তি কে ঐ ভালবাসার বস্তুতে স্থিরীকৃত করে । আর যখন বস্তুর বিনাশ ঘটে, বা তার থেকে বহুদূরে চলে যায়,তখন ego নিজেকে ক্ষতির সম্মুখীন বলে মনে করে । Freud একে ‘loss of ego' বলে অভিহিত করেছেন । সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ego তার এই ক্ষতিকে মেনে নেয় । কিন্তু স্রষ্টা-মন অতিরিক্ত অবদমনের মাধ্যমে অভিযোজন করে,কারণ সৃষ্টিশীল মানুষের আবেগের তীব্রতা সাধারণের চাইতে অনেক          বেশি।পরবর্তী সময়ে Sublimation বা উন্নীতকরণের মাধ্যমে এই অবদমিত আবেগ পথ খুঁজে পায়, নদীর স্রোতের মত সৃষ্টির স্রোতে ভেসে যায় ধরণী তল।রবীন্দ্র নাথও সম্ভবত তাঁর আবেগপ্রবণ মন নিয়ে এই ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন।এই ক্ষতি তাঁকে দিয়েছে নতুন প্রেরণা,তাঁর লিবিডোকে তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন অসংখ্য সৃষ্টির মধ্যে । এক পরিণত মন নিয়ে তিনি অভিযোজন করেছেন তাঁর পরিপার্শ্বের সঙ্গে ।
            রবীন্দ্রনাথের আঁকা ছবিগুলিকে অনেকেই তাঁর অবচেতনার বহিঃপ্রকাশের সবচেয়ে বড় প্রকাশস্থল মনে করেন । রবীন্দ্র সাহিত্যজগত এক আলোকিত আনন্দময় জগত।আর তাঁর ছবির জগত যেন এর উল্টোটাই । নিরানন্দ আর অন্ধকার। সাহিত্যের জগতে তিনি যেন সুন্দরের উপাসক,আর চিত্রকলায়? এক রূঢ়তা,কুশ্রীতা,বিষাদ,অপ্রসন্নতা ।
             এই প্রসঙ্গে সোমনাথ বন্দোপাধ্যায় বলেছেন, রবীন্দ্রচিত্র সম্পর্কে জনশ্রুতি হল " অনুশীলিত শোভনতার বিরুদ্ধে বহুদিন সঞ্চিত একটা দ্রোহ ভাব একান্তে প্রচ্ছন্ন ছিল মনের গহনে -অবচেতনায় ; অবদমিত সেই সংবেদ তীব্রতার মাত্রাধিক্যহেতু চেতনমনের পাহারা এড়িয়ে বেড়িয়ে পড়েছে অকস্মাৎ, ঠিক যেমন কঠিন শিলাস্তরের আবরণ ভিন্ন করে আগ্নেয়গিরির আভ্যন্তর দাহ সহসা বেরিয়ে আসে ঊর্ধ্বে।উৎক্ষিপ্ত ধূমকুণ্ডলী, আগ্নেয়ভস্ম আর উদ্গীরিত গলন্ত লাভার আকারে।’
         রবীন্দ্রনাথ নিজে বলেছেন, 'আমার সমস্ত ছবিই কেমন বিষাদ মাখা'। অনেক ছবির মুখাবয়বে রহস্যঘেরা তমসা আচ্ছন্ন বিষণ্ণ গম্ভীর দৃষ্টি।'ছবি আঁকতে গেলেই বৌঠানের কথা মনে পড়ে - রবীন্দ্রনাথ কোথাও এই ধরনের মন্তব্য করেছেন -উক্তি সোমেন্দ্রনাথের। আসলে ছবি আঁকা ছিল তাঁর একান্ত প্রিয় কাজ, নিজস্ব কাজ । ছবি আঁকার সময় যেন তর সইত না । অফুরন্ত ছবি অস্থির ভাবে এঁকে যেতেন। অবনীন্দ্রনাথের কথায়, "রবি কাকার ছবি তো নয় যেন ..ভলকানিক ব্যাপার এক একটা । না বেরিয়ে এসে উপায় নেই।”  হয়তো জীবনব্যাপী বিধিদত্ত নানা অশান্তির ফলশ্রুতিতে বিদীর্ণ অবদমিত অবচেতন এর বহিঃপ্রকাশ এভাবেই ঘটেছে তাঁর জীবনে। অধ্যাপিকা অমিতা মিত্রের ভাষায়,"কবির সুদীর্ঘ জীবন চক্রপথে বহু খ্যাতি, বহু যশ, মান সম্ভ্রমের অন্তরালে যে কত দুঃখ, আঘাত, বেদনা, অপমান পুঞ্জীভূত হয়েছিল তা দেখলে স্তম্ভিত হতে হয়।” অসীম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সংযুক্ত এক বিষাদ ভারাক্রান্ত নিঃসঙ্গতা তাঁকে তাই তাড়া করেছে অবিরাম ।
           আধুনিক প্রখ্যাত সমালোচক Partha Mitter রবীন্দ্রনাথের এই স্বতঃস্ফূর্ত অঙ্কনকে ফ্রয়েডীয় Psychoanalysis দিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন এবং বলেছেন কোন চেতনমনের পদ্ধতিগত পথ ধরে নয়, কবির শৈশবকালীন আকাঙ্খার পরিপূর্তি রূপেই ছবিগুলি এসেছে। শান্তিনিকেতন থেকে ইন্দিরাদেবীকে লেখা চিঠিতে কবি নিজেই বলেছেন ছুটির দিনে ঘরের এককোণে বসে শুধু আঁকতেই তাঁর ইচ্ছা করে,লিখতে নয়। প্রতিমা দেবীর কাছে লেখা চিঠিতেও একই ইচ্ছে তিনি ব্যক্ত করেছেন। সাম্প্রতিক এক গবেষণাপত্রে রাজদীপ কোনার বলেছেন " Tagore's act of painting can well be called the ultimate act of defiance; the act of rebelling against limitations posed by ones own self, thereby opening oneself to the infinite potential of genius which always has the capability to generate new...A being whose competition does not reside in his external 'other' but his 'internal' other..."
            রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাজের মনোসমীক্ষণমূলক পর্যালোচনা আমরা নানাসময় পেয়েছি। বিখ্যাত বিভিন্ন বিশ্লেষণের মধ্যে রয়েছে রঙিন হালদার (১৯২৪,২৮,৩১), সরসীলাল সরকার (১৯২৬,২৭,২৮,৩৭,৪১),অমলশংকর রায় (১৯৭৩) এবং সিতাংশু রায়ের (১৯৭৯,৯৬)এর কাজ ।
সম্ভবত রবীন্দ্রনাথ নিজে মনোসমীক্ষণ সম্বন্ধে জ্ঞাত হয়েছিলেন ১৯১৫ সালে । সেই বছরই প্রথম কালিদাস নাগের সঙ্গে কথোপকথন এর সময় কবি মনোবিকলন, অবচেতন এইসব অর্থবহ শব্দ ব্যবহার করেছিলেন। শ্রী নাগের বক্তব্য অনুসারে চতুরঙ্গ উপন্যাসে শচীশ,দামিনী ও শ্রীবিলাসের সম্পর্ক সম্বন্ধে আলোচনায় কবি এ ধারণা ব্যক্ত করেন ।
              সিগমুণ্ড ফ্রয়েড (১৮৫৬-১৯৩৯) এবং রবীন্দ্রনাথ (১৮৬১-১৯৪১) সমসাময়িক হওয়ায় দুজনেই নিশ্চয়ই দুজনকে জানতেন । তাঁদের সাধারণ বন্ধু ছিলেন আলবার্ট আইনস্টাইন,রোম্যাঁ রোলা, থমাস মান প্রমুখ । কিন্তু ১৯১৬ এর আগে দুজনের দেখা হয় নি এবং সেই দেখা হওয়ার পেছনে মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশ ও তাঁর স্ত্রী নির্মলকুমারী মহলানবীশ । ১৯২৬ সালের পঁচিশে অক্টোবর ভিয়েনাতে কবি ফ্রয়েডকে চায়ের নেমন্তন্নে ডেকেছিলেন।ভিয়েনার হোটেল ইম্পেরিয়ালে সেদিন সন্ধ্যায় অন্তত আরো চারজন এই দুজনের সাক্ষাত্কারের সাক্ষী ছিলেন।তাঁরা হলেন মহলানবীশ দম্পতি,ফ্রয়েড কন্যা তথা পরবর্তীকালে প্রখ্যাত NeoFreudian আনা ফ্রয়েড ও শ্রীমতি মার্থা ফ্রয়েড । প্রশান্ত মহলানবীশই ফ্রয়েড ও কবির একমাত্র যুগ্ম ছবিটি তুলেছিলেন । কবির সঙ্গে সাক্ষাত্কার এর কয়েকদিন পরেই ফ্রয়েড এই সাক্ষাত্কার সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন Anna Von Vest এর কাছে লেখা এক চিঠিতে (১৯২৬, ১৪ নভেম্বর):
              'Tagore invited us to pay him a visit on 25th october. We found him ailing and tired, but he is a wonderful sight, he really looks like we imagined the lord God looks like, but only 10,000 years olser than Michelangelo painted him in the Sistine'.
             রবীন্দ্রনাথ অবশ্য ফ্রয়েড এর সঙ্গে সাক্ষাত্কার নিয়ে কখনো কিছু লেখেন নি । সেদিনের কথোপকথনের কোন রেকর্ড নেই। রবীন্দ্রনাথ নিজে Psychoanalysis নিয়ে সবসময় সহমত পোষণ করেন নি । একজন ব্যক্তির সম্পূর্ণ ভিন্ন মনোজগত আর একজন ব্যক্তি বুঝতে পারবেন কিনা এ বিষয়ে কবির অত্যন্ত সন্দেহ ছিল । স্বপ্নতত্ত্বের বৈজ্ঞানিক উপযোগিতা নিয়ে তিনি দ্বিধা প্রকাশ করেছিলেন । ফ্রয়েডকৃত শৈশবকালীন যৌনতার ধারণাটিও কবি মানতে অপারগ ছিলেন। ১৯২৭ সালের বিভিন্ন চিঠি ও লেখায় (কাদম্বিনী দত্তকে লেখা, ঊনত্রিশ মে.১৯২৭) কবি মনোসমীক্ষণ নিয়ে তাঁর উষ্মা প্রকাশ করেন। Indian Psychoanalytic Society র প্রেসিডেন্ট শ্রী গিরীন্দ্রশেখর বসু কবির এই ধারণার বিপরীতে প্রবাসী পত্রিকায় এক দীর্ঘ চিঠি লেখেন । সেই চিঠি সম্পর্কে কবি নিজেও অবশ্যই অবহিত ছিলেন, সন্দেহ নেই ।
          সম্ভবত ১৯৩৮-৩৯ সাল থেকে কবি নিজে যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে ফ্রয়েড এর লেখা পড়তে শুরু করেন। সেই আগ্রহের পিছনে কবির এক অত্যন্ত প্রিয়জন -অমিয় চক্রবর্তীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। Oxford এ থাকাকালীন অমিয় চক্রবর্তী নিজে যখন কবিতা লেখা শুরু করেন, তখন তিনি মার্ক্সীয় ও ফ্রয়েডীয় চিন্তা ভাবনায় অনুপ্রাণিত ছিলেন এবং এ সময় তাঁরই প্রভাবে কবি নিজেও অনুভব করেন ফ্রয়েড, অ্যাডলার,ইয়ুঙ্গ এর মতবাদ কে সঠিক ভাবে জানার ।
           বিশ্বভারতীর অধ্যাপক নন্দলাল সেনগুপ্ত,যিনি রবীন্দ্রনাথের বহু লেখার সম্পাদনার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন, ১৯৩৭থেকে ১৯৩৯ কবিকে অত্যন্ত কাছের থেকে দেখেছেন।তিনি লিখেছেন যে শেষের দিকে কবির বিজ্ঞান নিয়ে আগ্রহ ছিল প্রচুর।অনেক Experimental Psychologyর বই তিনি পড়তেন। Freud, Adler, Jung এর বই পড়তে তিনি স্বচক্ষে দেখেছেন। এই পঠন কবি চিত্তে যে নতুন ধারণার উন্মেষ ঘটিয়েছিল তার প্রকাশ আমরা দেখি অমিয় চক্রবর্তীর লেখা 'চেতন স্যাকরা 'কবিতা পুনরায় পাঠের পর কবির প্রতিক্রিয়া দেখে । বাইশে অক্টোবর ১৯৩৯ সালে অমিয় চক্রবর্তীর কাছে লেখা চিঠিতে কবি বর্ণনা করছেন কীভাবে অবদমিত ঘটনা লেখকের অবচেতনকে প্রভাবিত করে এবং সাহিত্যে তার প্রতিফলন ঘটে । হয়তো ফ্রয়েডীও সমীক্ষণবাদ পাঠের অনুপ্রেরণা তাঁকে ভিতর থেকে অনুপ্রাণিত করেছিল । উল্লেখ্য,তেইশ সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ সালে ফ্রয়েড এর মৃত্যু হয় এবং এর একমাসের মধ্যেই এই চিঠি লিখিত হয় । ১৯৩৯সালেই মংপু তে থাকাকালীন কবি একধরনের experiment করেছিলেন --- যা ভাল লাগে কোন বাধা না দিয়ে লিখে যাওয়া -- কখনো বা অর্থহীন ছড়ার আকারে । পরে অবশ্য নিছক পাগলামি বলে এ পদ্ধতি ত্যাগ করেন । কিন্তু মনোবিকলন ও মনোসমীক্ষণ এর তত্ত্বের প্রভাব কবির ওপর অনস্বীকার্য হয়ে উঠেছিল একথা আমরা সহজেই বুঝতে পারি যখন জীবনের শেষের দিকে লেখা সাহিত্য পর্যালোচনা করি চোখের বালি, রোগশয্যায়,আরোগ্য, ল্যাবরেটরির মত লেখায় যে জটিল মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ কবি করেছেন,তা পরিশীলিত মনস্তাত্ত্বিক জ্ঞানের বহিঃপ্রকাশ । বিভিন্ন চরিত্রের জটিলতাকে গভীর মনস্তত্ত্ব বোধের উপলব্ধি দিয়ে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন ।
            শেষ করতে চাই একথা বলে, সমুদ্রের অতল গভীরতাকে পরিমাপ করার কোন ক্ষমতাই উপকূলে সমাকীর্ণ নুড়ি পাথরদের নেই । আর সমুদ্রেরও তল আছে, পাড় আছে । অতলস্পর্শী রবীন্দ্র -মননের পাড় খুঁজে বেড়ানোও ব্যর্থ চেষ্টা । কি জানি কোন পরশ পাথরের ছোঁয়ায় নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ ঘটেছিল, কি জানি কোন অপরিমেয় আঁখির অতৃপ্ত বাসনা প্ররোচিত করেছিল সেই আজানুলম্বিত বাহু দুটিকে রং তুলির খেলায় মেতে উঠতে । সেই মননকে স্পর্শ করার ছদ্ম পাণ্ডিত্য প্রকৃতপক্ষে মূর্খতা । কবির ভাষায় তাই শেষ করি --
কে জানে কার মুখের ছবি কোথার থেকে ভেসে 
ঠেকল অনাহুত আমার তুলির ডগায় এসে 
সাইকোঅ্যানালিসিস মতে ইহার পরিচয় 
পণ্ডিতেরা জানেন স্পষ্ট আমার জানা নয় ।



কোন মন্তব্য নেই: