“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

বৃহস্পতিবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৭

রাত্রি সুর ভুলে যাক

।। রাত্রি সুর ভুলে যাক ।।
(C)Image:ছবি















।। অভীক কুমার দে ।।
.
আঁধারে দাঁড়িয়ে কবিতার স্বরূপ খোঁজে কবি।
.
দমবন্ধ রাত আর ভেতর কালোয় কবিতাজীবন থেমে গেলে
ধুলোজমা পাতায় অগণিত কবির লাশ,
যেখানে দিনরাত সময়ের বাদুড়বাজি।
.
বন্ধ ঘরে অজস্র গোপনীয়তা জানি, তবু
গ্রীষ্মঘুমের মতোই জমে ওঠে যুক্তি- তর্ক, ছন্দ, আবেগ,
মেরু- মেরু বিরোধ তখন বাইরে ভেতরে...
.
কোন এক ভোরের আলোয় ভরে উঠুক গ্রন্থাগার,
তারপর আর বন্ধ দরজা নয়
বরং ঝরঝরে বর্ণের উষ্ণ শরীর রাত্রি সুর ভুলে যাক...

শুধু গল্প নয়...


।।শৈলেন দাস।।

(C)Image:ছবি

            নিজের স্বজনদের গিরগিটির মত রঙ বদল করতে দেখে মারাত্মকভাবে হতাশ হয়েছে সতীশ। সামাজিক মুক্তির লড়াই করতে নেমেছিল যাদের সাথে, একটা পর্যায় অতিক্রম করতে না করতেই এক লাফে বহুদূর এগিয়ে যাওয়ার প্রলোভনে পড়ে তারা সতীশকে অনুগত্যের প্রসাদ গ্রহণের জন্য পীড়াপীড়ি করতে লাগল। সে রাজি না হওয়ায় অনেকটা জোরাজুরি করার মত উপক্রম হতে দেখে তাদের সংশ্রব ত্যাগ করেছে সতীশ। বলা ভাল অনেকটা পালিয়ে এসেছে সে। ভোরের আলোয় সদরঘাট সেতুতে দাঁড়িয়ে কুয়াশা জড়ানো বড়াইলের দৃশ্য দেখতে দেখতে এইসব কথাই ভাবছিল সতীশ এবং মনে মনে প্রতিজ্ঞা করছিল আর কখনো পিছনে ফিরে তাকাবেনা। ঠিক তখনই পিছন থেকে একজন  বলল- দাদা, সকাল সকাল এখানে কী করছেন একা দাঁড়িয়ে? ঘুরে দাঁড়াল সতীশ। যে লোকটি পিছন থেকে ডাকল তাকে তার এক পা খোঁড়া। সূর্যের প্রথম আলোর মতই উজ্জ্বল হাসিমুখ করে তাকিয়ে আছে সতীশের দিকে। সতীশ তাকে চিনে। তার নাম সুখেন্দ্র। মিউনিসিপাল অফিসের সামনে কলার দোকান তার। মাঝেমাঝে সতীশ কলা কিনতে যায় তার দোকানে। বড়াইলের মনোরম দৃশ্য আর এলোমেলো ভাবনায় মগ্ন থাকায় সতীশ খেয়াল করেনি কখন সুখেন্দ্র তার পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে। শীতের সকালে সেতুতে দ্বিতীয় আর কাউকে দেখা যাচ্ছেনা। সে সুখেন্দ্রকে জিজ্ঞেস করল - কোথায় যাচ্ছ তুমি? এখন তো দোকান খোলার সময় না। মাল আনতে বাইরে যাচ্ছ কি? সতীশের প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে সুখেন্দ্র বলল- আজ আর এখানে দাঁড়াবেন না দাদা, বাড়ী চলে যান। আমি এখন এখানেই থাকব। সতীশ আর কথা বাড়াল না। এমনিতেই আজ একটু বেশি সময় কাটিয়েছে এখানে। পাশে রাখা মোটরসাইকেল স্টার্ট দিয়ে মাথা নেড়ে বিদায় জানাল সুখেন্দ্রকে।
       সারাদিন আজ দখল গেছে একটু বেশিই। কর্মক্ষেত্রে ছোটখাটো ভুল কখনো এমন বড় সমস্যার সৃষ্টি করে যা আদতে কোন সমস্যাই না কিন্তু ভোগায় অনেক। সতীশের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। ভুলের সংশোধন করতে করতে আজ আর ফুরসত মেলেনি একদম তাই এখন তিনসন্ধ্যায় চোখ বুলাতে হচ্ছে খবরের কাগজের পাতায়। অন্যদিন এই কাজটি কর্মক্ষেত্রে কাজের ফাঁকেই সেরে ফেলত সে। বিশেষ কোন খবর নেই প্রথম পাতায়, যা আছে তা সবই জানা। ব্যক্তি বিশেষের উত্থান হয়েছে প্রত্যাশার চেয়ে অধিক; হাওয়ায় তছনছ হয়ে গেছে শতবর্ষের পুরনো জমি। রং বদলাচ্ছে এবার শিক্ষারও ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে শেষ কলামের তিন নম্বর সংবাদের হেডিং দেখে ভয়ে শিরদাঁড়া খাঁড়া হয়ে গেছে সতীশের। 'ট্রাকের চাকায় পিষ্ট পঙ্গু কলা বিক্রেতা' শিরোনামে বিস্তারিত যে খবর তা দুদিন আগের ঘটনা। তাহলে সুখেন্দ্র
কীভাবে সকালে  কথা বলল তার সঙ্গে?  ভাবতেই গায়ের লোম গুলি খাড়া হয়ে গেল সতীশের।

মঙ্গলবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৭

চাপটা চ্যাংড়ামি নয়

।।রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ।।
















ক্তস্বল্পতা চোখের ভ্রমটা লজ্জাকর।
৩৩ টুকরো জীবাশ্ম জীবনের
চাপটা চ্যাংড়ামি নয়।
সূক্ষ্ম আড়ালের সংকর পরিকল্পনা।
শহরের ঘাম শুকিয়ে আসে
সরকারি ছায়ায় বৃক্ষরা জিরোয়,
সাহিত্যের গলিতে লুডো খেলে
নিজেকে সান্ত্বনা দেয় মঞ্চের শবাসনে।
বটের গোড়ালিতে জল ঢেলে কাতরাচ্ছেন
যে সব কচি আলোর ব্যাপারীরা
তারা দিবাস্বপ্নের বীজগণিত মেলাতে মেলাতে
দৃশ্যের বাইরে বুনে দেওয়া হচ্ছে
 
হাজার বছরের ৬ টি
 রহস্যপাঠ।

আমি সাধারণ মানুষ

।। সুমন পাটারী ।।
(C)Image:ছবি













মি এ পাড়ার সাধারণ মানুষ,
বড় শহর থেকে উপনদীর শাখা ছড়ার মতো রাস্তা এসেছে,
এসেছে সেলাই মেশিন, দমকল ও কীটনাশক,
সাইকেল করে বাজারে যাই
কেনা বেচা হয়, তিন বেলা খেতে পারি।
এখন ভালো আছি বেশ।
কখনো এমন ছিলো--
ছোট বোন ছোট বলে ওর কাপড় লাগতো না,
বড় বোন বড় বলে ওর ক্ষুধা হতো না,
চার জন সন্তান বলে শেষের দুজনের অন্নপ্রাশনের শুভ অনুষ্ঠান হয়নি,
বাবা অসুস্থ বলে আত্মীয়রা ভুলে গেছে আমাদের গ্রামের রাস্তা,
লক্ষীছাড়া পলি নিয়ে চলে গেছে পড়শির ক্ষেতে--
আলু দিনের ক্লান্ত মুখে সস্তার ব্যাকারি বিস্কুট--
আহা হাসিতে লাফিয়ে উঠতো শ্রমের পাওনা,
সেখান থেকে বিশ বছর পর
আজ বোনের জন্মদিন, ধুমধাম করে পালন হলো, প্রথম বার,
খুব হেসেছে সে,
বাবাকে কাঁদতে দেখিনি খুব কাতরতায়,
আজ কেঁদে উঠলো চোখ,
সে জল দেখে মনে হলো এখন বেশ ভালো আছি।
এভাবেই একটু একটু কর জড়ো করি জীবন
এভাবেই একটু একটু সঞ্চয় করি চোখের জল,
খুশির এক দিনে কেঁদে নেবো বলে।
আমি এভাবেই বড় হয়েছি, আমার সাধারণ প্রজন্মও হবে,
এভাবেই থাকবো আমরা সাধারণ,
এই দেশ ও দেশের বৃহৎ সংবিধানের
অসংখ্য আইন ততোটা প্রভাব ফেলছেনা এই জীবনে।
কারণ এর মাঝে আইন ভেঙে কেউ আমাকে খুন করলে
দেশ আমার পাশে বিচারের নামে একজীবন সময় কেড়ে নেওয়া ছাড়া
আর কিছুই দেবে না।


@ সুমন পাটারী

রবিবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৭

খালি তে খোলা শরীর


।। অভীক কুমার দে ।।



(C)Image:ছবি

























.
খালি তে খোলা শরীর আকাশের গাঁ।
চাঁদের পিছে পিছে তারাদের ভিড়,
আমিও ভাবি শেষবেলায়
একটু সাজগোজ
রঙিন হবে স্বপ্ন,
রঙিন আলোয় আকাশ ছোঁবো
ছায়াপথ মুছে দেবো;
ধোঁয়া ধোঁয়া মায়াজাল ছিঁড়ে
তারাদলের ভিড় হবে ফাঁকা আকাশে
চাঁদের আগেই...
অথচ নীলমায়ায় সন্ধ্যা নামে,
রঙিন স্বপ্ন ধূসর হয় এবং মেঘলা আলাপ।
.
খালি তে খোলা শরীর আকাশের গাঁ
তারার ফাঁকে ফাঁকা আকাশ নয়,
আকাশটাই ফাঁকা তারায় এক শূন্যস্থান।

শনিবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৭

শবের ঘরে আড্ডা


   ।।       রফিক উদ্দিন লস্কর       ।।

(C)Image: ছবি









দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখি পাহাড়ের চূড়া
জমেছে ধবল সাদা মেঘরাশি,
শীতের বসত সেথায় আকাশের মিলন
বরফ গলা জল পড়ছে খসি।
রৌদ্রদগ্ধ হিমেরঘরে মেলছে দুটি পাখা
নেমেছে গড়ে গড়ে নিম্নদেশে,
স্লেজে চড়ে দুই পা মুড়ে যাত্রা স্বপনপুর
দু'বাহু মেলে ছিন্নমস্তা বেশে।
রোদের মুখে রোষের বেশে ছন্নছাড়া সে
আপন বসত দিয়া বিসর্জন,
দূর দেশেরই সর্বজনায় অঙ্গে দিলো ঠাঁই
করে সাধ্যমতো আপ্যায়ন।
 
শ্বেতবসনে কফিন মাঝে দূরদূরান্তে পাড়ি
শবের ঘরে আড্ডা জমায়,
সর্বশেষ হাওয়ার সাথে শেষ ঠিকানা তার
মরণকালেও ভয় না পায়।
২৬/০৮/২০১৭ইং
নিতাইনগর,হাইলাকান্দি (আসাম-ভারত)

শকুনের ডানার শব্দ

।। অভীক কুমার দে ।।
(C)Image:ছবি
















.
সেদিন মাঝরাতে অনেক চিৎকার করে বলেছিলাম--
অন্ত্রের ভেতর গণসংযোগ নেই,
তন্ত্রে- মন্ত্রে যন্ত্র জুটবে;
কেউ শোনেনি, কেউ শোনোনি !
.
কেউ কাঠি ঠুকে ঠুকে এগিয়ে গেলে
সবার অজান্তেই মরারক্ত বেরিয়েছে
রাজরক্তের শিরা বেয়ে...
চট্টগ্রামে যখন অবুঝ খুশি
কলকাতার ছাঁদ থেকে চাঁদ ডুবেছে,
তারপর একটানা শকুনের ডানার শব্দ...
সেদিন মাঝরাতে অনেক চিৎকার করেছিলাম,
কেউ শোনেনি, কেউ শোনোনি !
.
শকুনেরা আগেও ছিল এখনও আছে,
বাইরে ভেতরে অনেক রক্ত ঝরে যাবার পর
রক্তজালিকায় রক্তশূন্যতা এখন,
প্রতিদিন নতুন প্যাকেট ঝোলানো হয় গ্রন্থ পাঠের পর...

শুক্রবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৭

বনলতা মৃত ছায়া

চিহ্ন

রজনীগন্ধার মালা

(C)Image:ছবি
।। শিবানী দে।। 
মা ছবি হয়ে গেছে অনেকদিন । মার ছবিতে রজনীগন্ধার মালা ঝোলাই বচ্ছরকার সেই দিনটিতে । জিয়ন্তে মা কখনো রজনীগন্ধা দেখেনি । আমাদের বাড়ির চারধারের ছোট বাগানে লঙ্কা বেগুনের সঙ্গে ছিল টগর বেলি গন্ধরাজ শিউলি চাঁপা  রজনীগন্ধা ওই তল্লাটেই পাওয়া যেত না, তখন ফুলের দোকানও ছিলনা  পুজোপার্বণে নিজেদের ও প্রতিবেশীদের বাগানের ফুল দিয়েই কাজ চলে যেত। 

মা-ই কিন্তু ছোটবেলায় আমাদের রজনীগন্ধার নাম বলেছিল । প্রাইমারি স্কুলে সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন হত---পাঁচটা গন্ধযুক্ত ফুলের নাম কর, আর তার উত্তরে মা আমাদের শিখিয়েছিল বেলি টগর গন্ধরাজ চাঁপা রজনীগন্ধা । শিউলি বা জুঁই ফুলের নাম বললেও হত, কিন্তু মা যেন চাইত আমরা রজনীগন্ধা নামটা অবশ্যই বলি । নামটা অবশ্য আমারও খুব ভাল লাগত, অন্যান্য ফুলের নামের তুলনায় বেশী মিষ্টি, বেশি অভিজাত । শিউলি টগর জুঁই পাশের বাড়ির মেয়ে, রজনীগন্ধা যেন দূরের রাজকন্যা । মা আমাদের বলেছিল যে রজনীগন্ধা আমাদের আশেপাশে কেন, গোটা জেলায় কোথাও হয় না । তখন আমি ভেবেছিলাম, আমাদের এই শেয়ালডাকা জলা-টিলা-জঙ্গলের দেশ, গরুছাগলচরা মাঠ,  রাখাল-চাষাচলা মাটির রাস্তা, বাঁশ-মাটি-খড়ের ঘর এর মধ্যে এত মিষ্টি নামের ফুলটা হতেই পারে না । ওইফুল যেখানে হয়, সেটা নিশ্চয়ই অন্যরকম, ছবিতে সুন্দর দেশ যেমন দেখায়, তেমনি সুন্দর জায়গায় । মা-ও  রজনীগন্ধা দেখেনি । কিন্তু মার ফুলটা দেখার খুব ইচ্ছে ছিল, বুঝতাম  বিজ্ঞান বইতে ছবি ছিল, আমাদেরও দেখিয়েছিল  ছোট কল্কের ধরণের ফুল । ছবি দেখে আমার তেমন মন ভরেনি, কিন্তু ভেবে নিয়েছিলাম, আসল ফুল ছবির চাইতে অনেক বেশি সুন্দর হবে । কিন্তু  রজনীগন্ধার গাছ কেমন হয়, ফুল ঘণ্টা বা গন্ধরাজের মত এককভাবে, না অতসীর মত মঞ্জরী হয়ে, না করবীর মত থোকা থোকা ফোটে, তা মা বা আমরা কেউ জানতাম না । মা আমাদের সব সময়েই বলত, তোমরা বড় হও, লেখাপড়া শিখে মানুষ হও, কত কিছু নতুন দেখতে পাবে, কত নতুন জায়গায় যেতে পাবে, কত ভাল ভাল জিনিষ খেতে পাবে। আমি কল্পনা করতাম, বড় হলে আরো অনেক কিছুর সাথে রজনীগন্ধা কোথায় ফোটে সেখানে যাব, মাকেও সঙ্গে নিয়ে দেখাব। মা বলত, তখন বাগানে রজনীগন্ধার গাছ লাগাবে ।

মা-ই  আমাদের ছোট বাগানে ফুলগাছ গুলোর যত্ন করত । দরকারমত জল দিত, গাছের গোঁড়ায় সার মাটি দিত, আগাছা হলে তুলে ফেলত ।মায়ের যত্নে সতেজ সবুজ গাছগুলো ফুলেফুলে ভরে উঠত । রোজ ভোরবেলা সেই ফুলবাগান থেকে পুজোর ফুল তোলা ছিল মার প্রথম কাজ । তারপর ঘরের বাসিকাজ সেরে চান করে রান্নাঘরে ঢুকত । চা করে বাবাকে দিয়ে একটুখানি নিজেও খেত । তারপর আমাদের চান করতে যেতে তাড়া লাগাত । ভাতে ডালের পুঁটুলি ফেলে দিয়ে আমাদের জন্য ভাত চড়াত মা, হয়ে গেলে পুটুলি খুলে সেদ্ধ ডালে তেল নুন কাঁচালঙ্কা মেখে সেই দিয়ে ভাত খেতে দিত। ডাল না হলে আলু ঝিঙ্গে ঢ্যাঁড়স ভাতেও চলত। এই দিয়েই খেয়ে আমরা হুড়মুড়িয়ে স্কুলে যেতাম ।

মাকে সারাদিন বসতে দেখতাম না। সকাল থেকে কাজ, দুপুরে রান্নাখাবার পর বড়জোর পনেরো মিনিট আধঘণ্টার বিশ্রাম । তারপর কুয়ো থেকে জল তোলা, গাছের যত্ন, বিকেলের গোছগাছ, ছেঁড়াফাটা সেলাই, তারপর সন্ধ্যে দিয়ে আমাদের পড়তে বসানো, তারপর রাতের রান্না ।

তারপর একসময় কাজ করতে করতে নিজেকে খইয়ে খইয়ে মার স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়েছিল আমরা তখন নিজেদের জীবন জীবিকা নিয়ে ব্যস্ত। মাকে আর রজনীগন্ধার গাছ দেখানো হল না, মায়ের বাগানে রজনীগন্ধার গাছ লাগানো হল না  মাও আর শেষের দিকে বলত না, আরো অনেক ইচ্ছের মত অপূর্ণই থেকে গেল । তাই যখন চিকিৎসার জন্য শহরে আনার পর মা মারা গেল, তার সাধের কথা মনে রেখে রজনীগন্ধার মালা দিয়ে খাট সাজিয়ে দিয়েছিলাম । এবং তার পরেও বছর বছর মার মৃত্যুদিনে ছবিতে রজনীগন্ধার মালা ঝোলাই

কত বছর পরে ট্রেনে যেতে যেতে আমি দেখলাম বড় বড় রজনীগন্ধার খেত ধানজমির মাঝখানে, রেল লাইনের ধারে  খেতের ধারে ধারে লাইন করা গাঁদার গাছ, মাঝেমাঝে জবার গাছও। তবু কেমন যেন ছাড়াছাড়া, সব মিলিয়েও মায়ের সেই ছোট বেল জুঁই চাঁপা শিউলির বাগানের মত ভাল লাগল না, কিসের যেন অভাব দেখলাম, ফুলের খেত ন্যাড়া করে ফুল, কুঁড়ি কেটে কেটে তোলা হচ্ছে  কুঁড়িতেই ফুলগুলো তোলা হচ্ছে, বোঝাই করা হচ্ছে গাড়ি, বাজারে যাবে

 ভাগ্যিস মা ফুলের খেত দেখেনি । দেখলে তার মোটেই ভালো লাগত না । মা তো বাগান দেখতে চেয়েছিল


আকাশের নিচে গল্প

আকাশের নিচে গল্প
অভীক কুমার দে
.
কোন মিশরীয় গল্প শোনায় অলকা বাতাস--
নীলনদের সুরেলা বাঁশি বেজে উঠে যখন
তখন জলকেলির তালে মায়াময় তারা জাগে।
অথচ বাছাবাছা শব্দ জড়ো হলে অবচেতনায়
ঘোষ অঘোষ বর্ণের ঠেলাঠেলি আর
শুনে শুনেই ঘুমিয়ে পড়ে নাগরিক।
.
বিস্তীর্ণ ঘুমনগরীর দরজা বন্ধ হবার আগে
চোখের দু'পাতার ফাঁকে দৃষ্টি ছোট হয়,
ছোট দৃষ্টি আর ছোট দৃষ্টির মাঝে ঝিমঝিম তারা,
দৃষ্টির বিন্দুতে গল্পের দৃশ্য ছোট হতে হতেই
মুছে যায় কোন সভ্যতার ইতিহাস...
.
ঘুম ভাঙলেই গল্প বদলায়,
ঘুমের নীলনদ জেগে থাকা দিনের আকাশের নিচে
কোন মেঘসভায় আলো আসে না সূর্যের;
গল্প শোনাতে এলে নীল
নীল থাকে না কিছুই,
অতিরঞ্জিত বিলাপ অথবা বিলাসিতায়
ভেঙে যায় নাগরিকের নাগরি...

প্রদত্ত বিবৃতি...

।। রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ ।।
(C)Image:ছবি























বিরহ : মুখাগ্নি
১ম রাশির এক ফালি রশ্মি
নিয়ে
চাঁদের প্রান্তীয় পদ=ছায়ার মধ্যপদ
ভদ্রতা > নরম ভাত থেকে
মফস্বল রকমফের পথে পথে গুঁজে (সমস্ত ক্ষুধা)
আলমারিতে চাপা পাক্ষিক যন্ত্রণা!!!

বৃহস্পতিবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৭

সমবাহু প্রথা

সংগ্রাম

(C)Image:ছবি


















।। অভীক কুমার দে ।। 
.
এক
.......
চারঘন্টায় আধসেদ্ধ ভাত অথবা চাল ভীষণ খুশি, 
খুশিতেই লাফালাফি ভোঁতা গালের থালায়;
পালানো যাবে...
.
আগুনের পর আগুন জ্বালে চারঘন্টায় আধসেদ্ধ ভাত অথবা চাল
টপকে গেছে বহুবার বহুদূর বহুদিনে আগে,
অথচ প্রতিটি লাশ নামানোর পরও সেই দড়ি 

ঝুলে থাকে আরও আরও গলার অপেক্ষায়...
.
লুটেরাদের গুদামে থেকে থেকে যৌবন গেছে,
ঘরের ফুটোপথে পোড়ারঙের পৃথিবী দেখে দেখে
লাল হয়ে যাওয়া চালের শরীরে ব্যথা নেই।
.
দুই
.......
কাদা- কাঁদা উনুনের পাশ দিয়ে যে মিছিল রোজ এগিয়ে আসে
ঐ লাইনে একতা দেখি,
দেখি-- 

খাবার পেয়েও শ্রমের ভাগাভাগি জানে,
শৃঙ্খলা জানে,
জানে শেকল- কৌশল;
থালা থেকে টপকে যাওয়া ভাত অনায়াসে সমান সমানে...



যখন ৩৩ বছর ...

।। রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ ।।
(C)Image:ছবি










১/২ জীবন জ্যাম পেরিয়ে
সাদা পাতায় খুঁটছি ✍( নীরবতা )
জ্যামি শেষ রাতে
গাঙচিল দেশে চলছে নীল বিজ্ঞাপন

বিবর্তন

 ।। শিবানী দে।।
(C)Image:ছবি














গ্নিপিণ্ড থেকে বস্তুপিণ্ড হবার দিকে এগোচ্ছে পৃথিবী 
মাঝখানে তোমার নিয়মে তুমি এনেছিলে জল,
সৃষ্টি করেছিলে পর্বত, অরণ্য, ধাপে ধাপে এনেছিলে জীবন,
শেষ ধাপে বড় যত্ন করে এনেছিলে মানুষ । হে প্রকৃতি,
দেখে তোমার বড় অহংকার হয়েছিল ---
অতুলনীয় সৃষ্টি তোমার, তার গরবে ছিলে গরবিনী ।
সেই সৃষ্টিই হল কাল, তোমার অহংকারের কাল ।
ধ্বংস করল অরণ্য, সে গড়ল অট্টালিকা,
অরণ্যচারীরাও তো তোমার সৃষ্টি ছিল,
তাদের বাসস্থান কেড়ে নিল ।
ভাঙ্গল পাহাড়, বানাল রাস্তা, উঠল পাহাড়ের সর্বোচ্চে
তোমাকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে,  ক্ষমতার দম্ভে
পাড়ি দিল আকাশে, ছড়িয়ে দিল নভস্থলে বিষবাষ্প
নষ্ট হল শ্বাসবায়ু, নষ্ট হল  প্রাণদায়ী বৃষ্টি।
সাগর করছে তোলপাড়, জলচারীদের প্রাণসংশয়----
আরো চাই আরো, ক্ষুধার শেষ নেই,
মাটির গভীর থেকে তুলে আনছে খনিজ, জমি করছে তছনছ,
তবুও লোভের শেষ নেই ।
তাই তুমি আন প্রলয় ঝঞ্ঝা, আন মেঘ ভাঙ্গা বৃষ্টির বন্যা,
ভাঙ্গা পাহাড় আরো ভেঙ্গে দিয়ে কাদা মাটির প্লাবনে বুজিয়ে দিচ্ছ
এই উদ্ধত সভ্যতার চিহ্ন ।
ধীরে ধীরে বস্তুপিণ্ডাকার করতে চলছ এই পৃথিবীকে,
এই অতিপ্রাণতায় কিলবিল, ধুসর হতে থাকা পৃথিবীকে ।
প্রকৃতি, তোমার কাজ তুমি করছ, কে জানে আবার কী গড়বে ।








বুধবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৭

২য় শ্রেণী

।। রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ ।।

(c)Image:ছবি














বালিকার দৃশ্যের আকার $$$
(a+b+c) 2 - 2(ab+bc+ca)
সূত্র নিয়েই বিছানায় চলছে
২য় শ্রেণী চুম্বন

হৃদয়ের হাহাকার


      ।।      রফিক উদ্দিন লস্কর     ।।

(C)Image:ছবি












মনি করে একদিন ঠিকই সে চলে যাবে
আর আসবেনা হয়তো ফিরে,
দূর থেকে দূরে আরোও বহুদূরে ........
 
যন্ত্রণাময় তিক্ত এই জীবন-নদীর তীরে।
অযত্নে পড়ে রবে সব আশা ভালোবাসা
নীরবে শূন্যে করবে হাহাকার।
মনপাখি উড়বে সেদিন সপ্তাকাশের মাঝে
 
সব বাধা শৃঙ্খল ভাঙবে তার।
এক'পা দু'পা করে সে একদিন হেঁটে যাবে
তার সাধের মেঠো পথটি ধরে,
সাক্ষী রেখে ঐ নীলাকাশ, চন্দ্র-সূর্য-তারা
সব বাধা বিঘ্নতা উপেক্ষা করে।
কোন এক উদাস দুপুরে নির্জনতার মাঝে
উড়াতে পারে সে মাঠের ধূলা,
মায়াবনে লাফালাফি শাখা থেকে শাখায়
 
বিহঙ্গ যে উদাস নীড়-ভোলা।
বহু কাঙ্ক্ষিত মুক্তি আনন্দ ফুটবে চোখেমুখে
কণ্ঠে ধরবে নতুন কোন সুর,
উড়বে ডানা মেলে বিশাল আকাশের মাঝে
 
কালরাত্রি পরে সোনালি ভোর।
সত্যি চলে যাবে দূরে বহু দূরে অন্য কোথাও
যেখানে খুঁজেও কেউ পাবে না,
মিশে যাবে অচেনা অজানায় এক নবস্থানে
 
ভালোবাসার বন্ধন মনে রবে না।
----

২৩/০৮/২০১৭ইং
নিতাইনগর,হাইলাকান্দি (আসাম-ভারত)

কালের ঝঞ্ঝা

।। সিক্তা বিশ্বাস ।।


(C)Image:ছবি












ধির আমি বধির তুমি
বধির দুনিয়াদারি ,
এই দুনিয়ার মজার খেলা
নিত্য জারিজুরি।
আজ যদি হয় যুগোপযোগী
কাল কবে তা অনুপযোগী
  !
আজ যে ধারা বাঁধনহারা,
কাল ছিল তা ছন্দহারা।
কালের
  ঝঞ্ঝা কালের  দায়
কে বা বিচার করে তায় !
হয় যদি সে বাঁধন
  ছাড়া
ধংসাবশেষের
  বেহিসেবি কারা !
বুভুক্ষুতে যে আজ
  দেশটি জোড়া  !
কে বিচারক ,তাঁর কিসের তাড়া !?
নয় কি দেশ ও দশের খামতি
  ?
বিচারেতেই আজ যত ক্লান্তি
  !



#ঝোড়োমেঘ  সংকলন # 
( সিক্তা বিশ্বাস )
শিলং -
  4 ,
১৭-০৪-১৭ ইং ।

মহা O

।। রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ ।।

(C)Image:ছবি
















##ক্রিজে তখন মহামারী
উঠোনে ♦♦ ফ্যানা##
৭০ রানের বয়স এড়িয়ে
গলির মুখে গুনা হচ্ছে %

মঙ্গলবার, ২২ আগস্ট, ২০১৭

ঘড়ি

।। অভীক কুমার দে ।। 
(C)Image:ছবি































.
মা'র ঘড়িটা যত্নে রেখেছি,
সেটাই যে আমার সব অলঙ্কার আর অহংকার।
আর কী ছিল ?
ছিল কি !
কিছুই তো মনে পড়ে না...
ছিল, একটা সাদা প্যান্ট,
স্কুল অথবা বাড়ির একটাই।
প্যান্টের চোখ ছিল দুটো,
সবার চোখে চোখ মেলাতেই সবার হাসি
আমার কান্না,
অথচ ঐ চোখে চোখ মেলাতেই পারিনি,
পেছনের চোখ পেছনেই থেকেছে...
মা বলতেন--
সমাজের ছোট চোখ তোর পেছনে,
তুই শুধু সমানে দেখ,
সামনে দেখ।
এই ধর আমার ঘড়ি,
এটাতে সময় ওঠে,
সময় দেখিস, সময় বুঝিস সময় মতো।
.
মা'র ঘড়িটা যত্নেই রেখেছি,
এখনও সময় ওঠে,
সময় দেখায় সমাজের ছোট চোখ...

তিনটি কবিতা

~~ সুমন পাটারী~~
(C)Image:ছবি















।। বাবার হাতে আমার হত্যা ।।

বাবা আমাকে বাড়ি করে দিয়েছে
পড়া লেখায় খারাপ বলে অনেক সঞ্চয় দিয়েছে।
তাই সে দিকে প্রথম
থেকেই ভাবতে শিখিনি,
একদিন বাবা অবসর নিলেন,
সারারাত জেগে সেদিন বাবাকে গালি দিয়েছি,
আমার জীবন নষ্ট করার অপবাদ ও--
কাঁধে না নিয়ে আঙুল দিলে
আজ হয়তো রোবট না হয়ে মানুষ হতাম
ডুবে ডুবে বেঁচে না থেকে সাঁতার দিতাম।
বস্তুত আমার বাবাই আমার অভিযোজন ক্ষমতা নষ্ট করে দিয়েছে,
আমার ভেতরের বিপ্লব কে খুন করেছে।

।। কবির সাথে আড্ডা ।।

বির সাথে সেদিন সন্ধ্যায় জম্পেশ আড্ডা হলো,
আড্ডার শুরুতে অনেক গুলি বিক্ষিপ্ত মালভূমি,
তিব্বতি ঘর, সাইবেরিয়ান বারান্দা,
আমাজন আর সাহারায় বেঁচে থাকার সংঘর্ষ।
কবির চোখ গুলি খুব সাধারণ ছিলো!
সাহস করে কবির শরীরে হাত বুলিয়ে দেখলাম
না বুক আছে না উদর,
শুধু একটি নগ্ন হৃদযন্ত্র, ভেতরে শব্দের বিদ্রোহ,
কবি সেটা আগলে ধরে রেখেছে দুহাতে।
আগুনচূড়া শান্ত হতে হতে একসময় দেখলাম
সন্ধ্যার তপোবন,
নিঃশব্দে চলা দামোদর,
বালুশীতল জ্যোৎস্নায় কবি বাজায় নির্জন রাখালের বাঁশি।
বিষাদের এক পরম তৃপ্তি সেদিন কবির কাছে পেয়েছিলাম। 

।। ভালোবাসি বলেই দূরত্ব চাই ।।

তোমাকে ভালোবাসা ছাড়া কী আর করতে পারি
শুধু ভালোবেসে যাওয়া ছাড়া কী করতে পারি,
আমি প্রেমিক বলেই হয়তো কথায় কথায় তলোয়ার অথবা মলম দুটোই হয়ে যাই,
কিন্তু এ আমাকে ব্যাখ্যা করে না,
তোমার জন্য যা আছে তা নিরাকার,
এর বর্ণনা প্রেম অথবা ঘৃণায় সম্ভব নয়,
রাগ অথবা ভালোবাসা বলে কোনো আলাদা সময় নেই
যখন একে অপর কে গালাগাল দিচ্ছি
তখনও জড়িয়ে ধরে আদরের ইচ্ছে হয়।
আরো চাই বলেই যা পাই তা পাই না,
তাই আমাদের এতো খুনসুটি,
এর মাঝেও খুব ভালোবাসি,
ভালোবাসি বলেই দূরত্ব চাই।

সোমবার, ২১ আগস্ট, ২০১৭

সাড়ে ৩

।। রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ ।।

(C)Image:ছবি























I)
মেঘের  XXX বারান্দায়
কটকটে সুপারি---> 69 মধ্য প্রশ্বাস
{ঠোঁটের পরিস্থিতি বিবর্তিত }
নদীর(১০ ÷ ৫) জল চুয়েছে!
পাড়াগাঁয়ে "আলো খন্ড ২" নিয়েই
পিঁপড়ে কাটছে@gmail.com

মৌনতার মৌ


।। অভীক কুমার দে ।।


(C)Image:ছবি















.
লোর নামে দু'চোখে জ্বালাময় রশ্মি আসে,
রশ্মির রেখাপথ ধরে ঝুলে থাকা
গত- আজ- কাল নিয়মিত গত এবং
জীবনের সহজাত মৌনতার মৌ...
একসময় রেখাপথে ধুলোমিছিল,
কত কী ছায়া ছবিময় !
ভাসাভাসা ছবি চোখে ভাসে,
ভাসায়...
মেঘ মেঘ শরীরে তখন মাটির খোঁজ এবং
 
তালগোল পাকিয়ে ভাগ হয় আলোছায়া।
.
কুঁচকানো ভ্রূ টপকে রাত নামলেই
দু'চোখের অচেনা ঘরে হাজার ক্ষত জীবাশ্মের...