।। শিবানী দে।।
২৫শে সেপ্টেম্বর, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিন।কাল থেকে শুরু এবছরের
দুর্গাপুজো। যে
উৎসব নারীশক্তির উদ্বোধন বলেও সূচিত হয়, তার প্রাক্কালে এই দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নারীবাদী পুরুষকে স্মরণ করা বোধ হয়
অপ্রাসঙ্গিক হবেনা।রবীন্দ্রনাথ তাঁর সম্বন্ধে বলেছিলেন, ‘৪০ কোটি ভারতবাসীর
মধ্যে একমাত্র পুরুষ’। অন্যকথায় বলতে গেলে, যে পুরুষ নারীর প্রতি সহমর্মী হয়, অনর্থক পৌরুষ জাহির করা থেকে বিরত থাকে, করুণাভরা মন নিয়ে আপামর সকলকে বিবেচনা করে, অথচ দৃঢ়চিত্ত, অন্যায়ের সঙ্গে আপোসহীন, কোনো প্রলোভনেই অটল, আদর্শের প্রতি অবিচল, সে-ই প্রকৃত পুরুষবাচ্য, এবং বিদ্যাসাগরচরিত্রে এই সব কটি বৈশিষ্ট্যই বর্তমান ছিল । প্রচণ্ড নারীবিরোধী
রক্ষণশীল সমাজ থেকে উঠে এসে সমাজের প্রচলিত ভাবধারার বিপরীতে গিয়ে তিনি যে ভাবে
নারীর অবস্থার উন্নয়নের জন্য লড়াই করেছিলেন, তা এককথায় নজিরবিহীন। নারীর প্রতি বিদ্যাসাগরের শ্রদ্ধা বায়বীয় ছিল না, সম্পূর্ণ দৃঢ় বাস্তব
ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। নারীর ভালবাসা এবং দয়া সকল পুরুষই জীবনে কোনো না কোনো
সময় পায়, কিন্তু সেটাকে পাওনা ভেবে নিয়ে তার প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা বেশিরভাগ পুরুষের মধ্যেই দেখা যায়না।বিদ্যাসাগর তাঁর ছেলেবেলায় তাঁর মা ছাড়াও যেসব নারীর স্নেহভালবাসা পেয়েছিলেন, তাদের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ
থেকেছেন, পরবর্তী জীবনে এই প্রভাবই তাঁকে নারীদের অবস্থার উন্নতিকল্পে রাস্তা দেখিয়েছে
। তাঁর বাবা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ও প্রথম জীবনে প্রায় অনাহারে একদিন যখন কলকাতার রাস্তায় ঘুরছিলেন,এক অনাত্মীয় নারী তার
মুখের দিকে চেয়ে বুঝেছিলেন যে তিনি ক্ষুধার্ত।মুড়িমুড়কির দোকানী ঐ মহিলা তখন
ঠাকুরদাসকে ডেকে মুড়িমুড়কি ও দইয়ের ফলার তো খাইয়েছিলেনই, পরে তার দারিদ্র্যের কাহিনি শুনে, যখনই খাবার জুটবে না, তখনই যেন তার দোকানে এসে খেয়ে যান--- এই আশ্বাস দিয়েছিলেন। বাবার জীবনের এই গল্পও বিদ্যাসাগরকে প্রভাবিত করেছিল। পিতৃজীবনীতে তিনি লিখেছেন, এই ব্যক্তি পুরুষ হলে কখনই ঠাকুরদাসের দুঃখে দুঃখিত হয়ে এভাবে সাহায্য করতেন
না ।
ছাত্রজীবন শেষ হলে সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপক এবং একই সঙ্গে বিদ্যালয় পরিদর্শকের
পদে থেকে বিদ্যাসাগর দেশে শিক্ষা বিস্তারের জন্য অনেক স্কুল খুলেছিলেন,পাঠ্যপুস্তক লিখেছিলেন, কারণ তখন পাঠ্যপুস্তক
ছিলই না বললে চলে।শিক্ষাক্ষেত্রে ইংরাজি ও মাতৃভাষার প্রবর্তন করেছিলেন,সংস্কৃত শিক্ষায় শুধুমাত্র ব্রাহ্মণের অধিকার তুলে দিয়ে সমাজের অন্যান্য
বর্গের জন্যও বিদ্যার দ্বার খুলে দিয়েছিলেন। তিনি বুঝেছিলেন,মেয়েদের বিদ্যাশিক্ষা না হলে তাদের অবস্থা তথা সমাজের উন্নতি হবে না।তাই মিশনারিদের সহযোগিতায় মেয়েদের স্কুল খুলেছিলেন,দেশি ধনীবর্গের মধ্যে
যারা তাঁর অনুকূল ছিলেন,তাদের উৎসাহিত করেছিলেন মেয়েদের স্কুল খুলতে।নিজে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের
অনুরোধ করেছিলেন মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে।রক্ষণশীল সমাজকে প্রভাবিত করতে মেয়েস্কুলের
গাড়ির গায়ে লিখা থাকত মনুসংহিতার উদ্ধৃতি, ‘কন্যাপ্যেব শিক্ষণীয়া পালনীয়া প্রযত্নতঃ’ কন্যাকেও যত্ন করে শিক্ষা দিতে হবে, পালন করতে হবে।
অসহায় মেয়েদের জন্য
বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা বুঝেছিলেন,তাদের জন্য সূচীশিল্প শেখানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন।‘নারী শিক্ষা ভাণ্ডার’ নামে একটি তহবিলও এই
উদ্দেশ্যে খুলেছিলেন।নারীশিক্ষার উদ্যোগ নেবার জন্য সমাজ তাঁকে কম হেনস্থা করে নি। মেয়েরা পড়াশোনা করলে চরিত্রহীন হবে, সমাজ উচ্ছন্নে যাবে এই
রব তুলে তারা তাঁর উপর শারীরিক আঘাত করার জন্যও ষড়যন্ত্র করেছিল।কিন্তু বিদ্যাসাগর
দমবার পাত্র ছিলেন না। হিন্দুর পরস্পরবিরোধী নানা শাস্ত্র ঘেঁটে স্ত্রীশিক্ষার
পক্ষে,বিধবা বিবাহের পক্ষে,বহুবিবাহের বিপক্ষে শাস্ত্রবচন উদ্ধৃত করে সেই সময়কার সমাজপতি রক্ষণশীল
পণ্ডিতসমাজকে প্রমাণ দেখিয়েছিলেন যে তারা যে গেল গেল রব তুলেছেন, তা সম্পূর্ণ মনগড়া। তাঁর বিরুদ্ধে
পণ্ডিতসমাজ একজোট হয়ে বিরোধিতা মূলক যেসমস্ত কথা বলছিলেন বা লিখেছিলেন,বিদ্যাসাগর শাণিত
যুক্তিতে, কখনো বা তীক্ষ্ণ ব্যঙ্গে, তাদের পরাজিত করে নিজের লক্ষ্যে এগিয়েছিলেন।
বিধবাবিবাহ প্রসঙ্গে
তিনি এক জায়গায় লিখেছেন---স্ত্রী মরিলে কিংবা বন্ধ্যা প্রভৃতি স্থির হইলে পুরুষের
পক্ষে যেমন পুনরায় বিবাহ করিবার অনুজ্ঞা আছে, পুরুষ মরিলে অথবা ক্লীব প্রভৃতি স্থির হইলে স্ত্রীর পক্ষেও সেইরূপ পুনরায়
বিবাহ করিবার অনুজ্ঞা আছে ।…শাস্ত্রকারেরা এসকল বিষয়ে স্ত্রী ও পুরুষের পক্ষে সমান ব্যবস্থাই করিয়াছেন।কিন্তু
দুর্ভাগ্যক্রমে,পুরুষজাতির অনবধানতাদোষে স্ত্রীজাতি নিতান্ত অপদস্থা হইয়া রহিয়াছে। ভারতবর্ষের
ইদানীন্তন স্ত্রীলোকদের দুরবস্থা দেখিলে হৃদয় বিদীর্ণ হইয়া যায়। স্ত্রীজাতিকে
সমাদরে ও সুখে রাখার প্রথা প্রায় রহিত হইয়া গিয়াছে।ক্রমে ক্রমে এতদূর পর্যন্ত
উঠিয়াছে যে অনেকানেক বিজ্ঞ মহাশয়েরা স্ত্রীজাতিকে সুখে ও স্বচ্ছন্দে রাখা মূঢ়তার
লক্ষণ বিবেচনা করেন। --- (বিধবাবিবাহ দ্বিতীয় পুস্তক ২৩-বিবাহিতস্ত্রীবিবাহ)
বিধবা, বিশেষ করে বালবিধবাদের অবস্থা সেই সময় ছিল শোচনীয়। তাদের পুনর্বিবাহের অনুমতি
তো দূরস্থান, অত্যন্ত কঠোর ব্রহ্মচর্য পালন করতে হত। বিদ্যাসাগর স্পষ্টভাষায় এইসব নারীদের
দুরবস্থার কথা লিখেছেন, মেয়েদের ও যে শরীরের চাহিদা আছে, সেকথা কথাও ইশারা ইঙ্গিতে না বলে একেবারে চাঁছাছোলা ভাষায় ব্যক্ত করেছেন, সেই সময়ের প্রেক্ষিতে
যা একরকম অকল্পনীয় ছিল ---- তোমরা মনে কর, পতিবিয়োগ হইলেই স্ত্রীজাতির শরীর পাষাণময় হইয়া যায়; দুঃখ আর দুঃখ বলিয়া বোধ
হয় না;দুর্জয় রিপুবর্গ এককালে নির্মূল হইয়া যায়।কিন্তু তোমাদের এই সিদ্ধান্ত যে
নিতান্তই ভ্রান্তিমূলক,পদে পদে তাহার উদাহরণ প্রাপ্ত হইতেছ। …যে দেশের পুরুষজাতির দয়া নাই, ধর্ম নাই, ন্যায়-অন্যায় বিচার নাই, হিতাহিত বোধ নাই, সদসদবিবেচনা নাই, কেবল লৌকিকরক্ষাই
প্রধান কর্ম ও পরম ধর্ম, আর যেন সে দেশে হতভাগা অবলাজাতি জন্মগ্রহণ না করে।--- (বিধবাবিবাহ দ্বিতীয়
পুস্তক, উপসংহার)
পুরুষ নিজের কামপ্রবৃত্তিকে দমন করেনা, অসহায়তার সুযোগে শ্লীলতাহানি, ধর্ষণ করে চরিত্রহীনতার দোষটি ধর্ষিতার উপর চাপিয়ে দিতে বাধে না।(একালেও অবশ্য
তার ব্যতিক্রম নেই)। সেই সময়কালে এই ভাবে কত বালবিধবা আত্মীয়, পরিচিত পুরুষদ্বারা
ধর্ষিত হয়ে গর্ভবতী হয়ে পড়ত, তার পরিণতিতে ভ্রূণহত্যা হত এবং অনেক ক্ষেত্রেই মেয়েটিকে গৃহচ্যুত হয়ে দেহব্যবসায়ে নামতে হত।নারীর দুরবস্থার কারণ যে পুরুষের অমানবিকতা, সহানুভূতিহীনতা, ভণ্ডামি ও স্বার্থপরতা, বিদ্যাসাগর তার উল্লেখ
করে তীব্রভাষায় পুরুষসমাজের নিন্দা করেছেন...এ দেশের পুরুষজাতির পায়ে কোটি কোটি
দণ্ডবৎ।তাঁহারা স্ত্রীলোকের পরকাল খাইবার আসল ওস্তাদ। স্ত্রীলোক, স্বভাবত: সাতিশয়
লজ্জাশীল; অন্তঃকরণে দুরভিলাষের উদয় হইলেও লজ্জার খাতিরে মুখ ফুটিয়া বলিতে পারেন না।তাঁহারা, স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়া
ধর্মভ্রষ্ট হইয়াছেন,এমন দৃষ্টান্ত অতিবিরল।কিন্তু,নিরতিশয় আক্ষেপের বিষয় এই,পুরুষজাতির প্রবর্তনাপরতন্ত্র হইয়া,একবার অপথে পদার্পণ করিলে,লজ্জাভঙ্গ হইয়া যায়; … সবিশেষ অভিনিবেশসহকারে,অনুসন্ধান ও অনুধাবন করিয়া দেখিলে,ভয়ানক স্বার্থপর পুরুষজাতির দুষ্প্রবৃত্তির আতিশয্যই স্ত্রীলোকের চরিত্রদোষের
মূল কারণ বলিয়া স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় ।--- (ব্রজবিলাস, পঞ্চম উল্লাস)
মেয়েদের দুরবস্থার মূলে আরেকটি বড় কারণ ছিল,পুরুষের বহুবিবাহ।বিশেষ করে তখনকার কুলীন ব্রাহ্মণ ও কায়স্থ
সমাজে বহুবিবাহের প্রচলন ছিল।কুলীনের মেয়েদের বিয়ের পর বাপের বাড়িতেই থাকতে হত, কারণ বহুবিবাহকারী
স্বামীর বাড়িতে এতগুলো স্ত্রীর স্থান সঙ্কুলান অসম্ভব,আর স্ত্রীর বাপের দেওয়া
পণই ছিল কুলীন পুরুষের একমাত্র আয়।বিয়ে করাই ছিল তার পেশা।কোনো কারণে বাপের বাড়িতে
অবস্থা খারাপ হলে কিংবা কেউ না থাকলে কুলীন মেয়েটিকে তার সন্তানসমেত পথে বসতে হত।
স্বামী বা তার পরিবার তাদের কোনো দায় নিত না।তাই বিধবাবিবাহ আইন পাশ হবার পর
বিদ্যাসাগর বহুবিবাহ রদ করার জন্য চেষ্টা করছিলেন। তিনি লিখেছেন---স্ত্রীজাতি
অপেক্ষাকৃত দুর্বল ও সামাজিকনিয়মদোষে পুরুষজাতির নিতান্ত অধীন।এই দুর্বলতা ও
অধীনতা নিবন্ধন তাঁহারা পুরুষজাতির নিকট অবনত ও অপদস্থা হইয়া কালহরণ করিতেছেন।প্রভূতাপন্ন
প্রবল পুরুষজাতি,যদৃচ্ছাপ্রবৃত্ত হইয়া অত্যাচার ও অন্যায়াচরণ করিয়া থাকেন, তাঁহারা নিতান্ত
নিরুপায় হইয়া সেই সমস্ত সহ্য করিয়া জীবনযাত্রা সমাধান করেন।পৃথিবীর প্রায়
সর্বদেশেই স্ত্রীজাতির প্রায় ঈদৃশী অবস্থা। কিন্তু এই হতভাগ্য দেশে, পুরুষজাতির নৃশংসতা, স্বার্থপরতা, অবিমৃষ্যকারিতা প্রভৃতি
দোষের আতিশয্যবশতঃ স্ত্রীজাতির যে অবস্থা ঘটিয়াছে,তাহা কুত্রাপি লক্ষিত হয় না। … তন্মধ্যে বহুবিবাহপ্রথা এক্ষণে সর্বাপেক্ষা অধিকতর অনিষ্টকর
হইয়া উঠিয়াছে। (~~বহুবিবাহ রহিত হওয়া উচিত কি না এতদবিষয়ক প্রস্তাব—ভূমিকা)
বিদ্যাসাগর সরকারকে চাপ দিয়ে বিধবাবিবাহ আইন পাশ করিয়েই ক্ষান্ত হন নি।তিনি
নিজে দাঁড়িয়ে নিজের খরচে অনেক বিধবার বিয়ে দিয়েছিলেন,নিজের পরিচিত, শিক্ষিত অনেককে
বিধবাবিবাহ করতে উৎসাহিত করেছিলেন। তাঁর নিজের ছেলে যখন বিধবা ভবসুন্দরীকে বিয়ে
করতে চাইল, তাঁর নিজের পরিবার থেকেই আপত্তি উঠেছিল।বিদ্যাসাগর আপস না করে ছেলে নারায়ণের
বিয়ে বিধবা কন্যার সঙ্গেই দিয়েছিলেন।
আজীবন আপসহীন,সংগ্রামী এই পুরুষসিংহ না জন্মালে এদেশের মেয়েদের আরো কতকাল পিছিয়ে থাকতে হত
কে জানে।আজকাল দেখা যায় কেউকেউ বিদ্যাসাগরের সমালোচনা করেন,তাঁর পত্নী দীনময়ী দেবী
ছিলেন নিরক্ষর, বিদ্যাসাগর তাঁকে সাক্ষর করার জন্য চেষ্টা করেন নি।আরেকটা অভিযোগ শোনা যায়, বিদ্যাসাগর শুধু
উচ্চবর্ণের মেয়েদের উন্নতির জন্যই কাজ করেছেন। জবাবে যে কথাটি বলা চলে, দীনময়ী দেবী মূলত:
গ্রামের বাড়িতে বাস করতেন, বিদ্যাসাগরের কর্মক্ষেত্র ছিল কলকাতা। দীনময়ী দেবীর আগ্রহ সম্পর্কে খুব বেশি
জানা যায় না। সেই মধ্যউনবিংশ শতকের প্রেক্ষিতে,শহরের
অবিবাহিত মেয়েদেরই শিক্ষার ব্যবস্থা করা প্রচণ্ড দুঃসাধ্য ছিল।একজন গ্রামের
বিবাহিতা নারী,তার স্বামীর আগ্রহ
সত্ত্বেও তার গ্রামস্থ পরিজনের বাধা ঠেলে পড়াশোনায় কতটুকুই বা আগ্রহী হতে পারতেন,যখন
সেখানে নারীশিক্ষার কোনো পরিবেশই ছিলনা!
দ্বিতীয় অভিযোগের উত্তরে বলা যেতে পারে, বিদ্যাসাগর যে সমাজ থেকে উঠেছিলেন, প্রথম সেই সমাজের সংস্কারের চেষ্টা করেছিলেন, এবং সেটাই স্বাভাবিক। তা করতে গিয়ে তাকে যে পরিমাণ দীর্ঘ, ব্যয়সাপেক্ষ ও কঠিন
লড়াই করতে হয়েছিল,তা শুধু তাঁর মত অদম্য মনোভাবের চরিত্র বলেই সম্ভব হয়েছিল। একাধারে শিক্ষক, পরিদর্শক, ভাষাসংস্কারক, লেখক, সমাজসংস্কারক, ব্যবসায়ী---(তাঁর নিজস্ব
ছাপাখানা ছিল----সমাজ-হিতৈষণার কাজে তিনি ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েছিলেন, তাই অর্থের প্রয়োজনে তা বন্ধক ও রাখতে হয়েছিল একসময়)----অনেক
ক্ষেত্রেই বিদ্যাসাগরের ভূমিকা ছিল পথপ্রদর্শকের । দ্বিতীয়ত:, সমাজের নিম্নবর্ণের
মধ্যে নারীদের অবস্থা উচ্চবর্ণের চাইতে কথঞ্চিৎ ভাল ছিল।
একটি নারীশিক্ষার স্কুল পরিদর্শন করতে
গিয়ে তিনি একবার ঘোড়ার গাড়ি থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর ভাবে হন, কাজ করতে থাকলেও সেই আঘাত থেকে আর
সম্পূর্ণ সুস্থ হন নি। ৭০ বৎসরের জীবনের শেষ তেরো বৎসর তাঁর সেই আঘাতজনিত শারীরিক
কষ্টে কাটে, ও শেষপর্যন্ত তাতেই মৃত্যু হয়। দীর্ঘদিন সুস্থ অবস্থায় বেঁচে থাকলে হয়তো আরো
কিছু লড়াই তিনি করে যেতে পারতেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন