(এই কবিতাগুলো ফেসবুক থেকে সংগ্রহ করেছেন ঈশানের পুঞ্জমেঘের সদস্যা শাশ্বতী ভট্টাচার্য। তিনি ব্লগে নেই। তাঁর ইচ্ছে ১১ সেপ্টেম্বর কালিকার জন্মদিনে এগুলো একত্র পাঠযোগ্য করেই তাঁকে সম্মান জানাক ঈশানের পুঞ্জমেঘ। তাঁর হয়ে আমরা কবিতাগুলো এখানে সংরক্ষিত করলাম। ৪১টি কবিতা আছে, ২৮জন কবি। তার মধ্যে শেষটি ইংরেজিতে। কবিতাগুলোর কপিরাইট সংশ্লিষ্ট লেখক লেখিকাদের; এগুলো মুদ্রণ বা বিতরণের জন্য নিজ দায়িত্বে অনুমতি সংগ্রহ করতে হবে। ---সঞ্চালক, ঈশানের পুঞ্জমেঘ )
~যাদের যে কবিতা রয়েছে~
প্রসাদী ০ দেবেশ ঠাকুর
পানি’র গান ০ শ্রীজাত
মাটির শ্লোক ০ শ্রীজাত
কোমল ০ শ্রীজাত
অন্ধ ০ শ্রীজাত
চোখ ০ শ্রীজাত
পর্যটক ০ শ্রীজাত
পলাশ ০ শ্রীজাত
মেলা ০ শ্রীজাত
সব ০ শ্রীজাত
তারা ০ শ্রীজাত
পাঞ্জরের গান ০ শ্রীজাত
শেষ চিঠি ০ অমিতাভ দেব চৌধুরী
নিয়তির পরিহাস ০ সিক্তা বিশ্বাস
কালিকাপ্রসাদ ০ চৈতন্য ফকির
জীবন মাঝি ০ অশোকানন্দ রায়বর্ধন
কালিকা প্রয়াণ ০ জ্যোতিষ কুমার দেব
অর্পণ ০ অমরেশ দেবনাথ
হে ঈশ্বর ......০ নিরুপম শর্মা চৌধুরী
কালিকা'র দোতারা ০ শতরূপা সান্যাল
পবিত্র শোক ০ শতরূপা সান্যাল
কাল দোল পূর্ণিমা ০ শতরূপা সান্যাল
পথিক ০ মহুয়া সেনগুপ্ত
রঙের ছড়া আত্মহারা ০ অপাংশু দেবনাথ
কালিকা ও কামাল ভেসে যায় ০বিশ্বজিৎ সাহা
প্রসঙ্গ নিরুদ্দেশ ০ মহাদেব সাহা
প্রিয় কালিকা ০ অপরাজিতা কোনার
মনফকিরা হারালে কোনখানে ০ মৃন্ময়
চক্রবর্তী
হৃদমাঝারে ০ স্বপন সমাদ্দার
কালিকা প্রসাদকে ০ সঞ্জীব দে
কালিকাদা ০ বিষ্ণু ঠাকুর
গান সমাবেশ ০ সোমরঞ্জন মুখার্জি
বড় রিক্ত করে গেলে ০ কপোতাক্ষী
ব্রহ্মচারী চক্রবর্তী
সত্যিই চলে গেলে ০ সুমন দাস।
কালিকাপ্রসাদ ০ গৌতম দত্ত
ঠিকানাটা অচিনপুর ০ নিরুপম শর্মা চৌধুরী
নেই ০ একা একা
আকাশের নীল তারা ০ নীহার দাস
হৃদমাঝারে ০ স্বপন সমাদ্দার
কালিকা প্রসাদ স্মরণে ০ সুজিত পাল
The Mystic Minstrel !!!! ০ Paromita Das
প্রসাদী
দেবেশ ঠাকুর
হঠাৎ কেন আগুন পাখি ফাগুন বেলায় থামালো গান?
কোন নিষাদের বিষাদ তীরে
বিদ্ধ হল সুরের বাগান!
ভাসছে জলে একতারা কার
স্তব্ধ হল বসন্ত-বাহার
আগমনী ছেড়ে প্রসাদ হঠাৎ কেন গাইল ভাসান!
উঠোন জুড়ে ছড়িয়ে আছে সারিঙ্গা খোল ধামসা মাদল
লাউ এর মাচায় সা-রে-মা-পা
দেশ বাজালো অকাল বাদল
মাঠে ঘাটে কোন পাগলের
সুর পাওয়া যায় আমের বোলে
আশাবরী গেয়ে বাউল কোজাগরী রাত্রি জাগান
গঙ্গা বরাক পদ্মা আঁকেন যামিনী রায় মগ্ন তুলি
সেই জলেরই অতল বিষে কালিন্দী হয় নয়ানজুলি
এমনি নদেয় কাঁদিয়ে হিয়া
ঘর ছেড়েছেন শ্রী হট্টিয়া
প্রসাদ বলে ডুবকি বোলে,
'যাচ্ছি আমি, আপনি আগান’।
পানি’র গান
শ্রীজাত
সুজন গেল কোন পারে, তার কোন গেরামে
বাস
হালভাঙা মন আটক করে, ভাসে না মান্দাস
দুইচোখে যে ধারা, তারে বাতাস করে
ছল –
‘জলের ওপর পানি, না পানির ওপর জল’
আসমান আন্ধার হইল, অন্ধ দিনমান
এই অকালে বন্ধ হইল কোন ফকিরের জান
তাল রাখে কোন বেআক্কেলে খমক টলোমল
‘জলের ওপর পানি, না পানির ওপর জল’
দশদিনের এই দুনিয়া তার দুইদিনের এই শোক
চুল ভেজাবে সময়-গোসল, ভুলবে জানি লোক
কেবল ভাবি কোন হিসাবি কোথায় নাড়ে কল
‘জলের ওপর পানি, না পানির ওপর জল’
ছলাং দিলা কোন গাঙে, আজ উড়ান দিলা কই
রইল পিছে দিন-দুনিয়া, সাতজনমের সই
এমন ভাবে না যাইও যার পাই না খুঁজে তল
‘জলের ওপর পানি, না পানির ওপর জল’
আবার লইও জনম তুমি আবার কোরো সাথ
এক মরণে হয় না খতম পীর-ফকিরের জাত
কাড়বে কী তার জীবনে যার দোতারা সম্বল
‘জলের ওপর পানি, না পানির ওপর জল’
মাটির শ্লোক
শ্রীজাত
ফুলের গন্ধ ভাল্লাগে না। কাদের বাড়ি সাজায় শোক?
গান ফিরেছে মাটির কাছে। মৃত্যু কেবল মিথ্যে হোক।
পিছু নিচ্ছে হরিধ্বনি। তোমার হরি করিম শা’...
চোখের পাতায় ঘুম নেমেছে, হাতের পাতায়
অবজ্ঞা
তোমার মধ্যে মাটিই ছিল। মাটির দোহা, মাটির শ্লোক –
গান ফিরেছে মাটির কাছে। মৃত্যু কেবল মিথ্যে হোক।
হাসতে হাসি বেমানানের, এই নগরের
ফকিরসাঁই
সাথ সঙ্গত রইল পড়ে, ঠাণ্ডা হাতেই
সাধ মেটাই।
চুপের পরে আর কী কথা... ধূপের ধোঁয়া জ্বালায় চোখ...
গান ফিরেছে মাটির কাছে। মৃত্যু কেবল মিথ্যে হোক।
আর ক’টা দিন থাকলে
হতো। চড়ুইভাতি’র সময় শেষ,
দোতারা যায় আকাশপানে, সেই যেখানে
গানের দেশ...
সবাই আগুন পেরিয়ে এলাম। সবাই তোমার গানের লোক।
গান ফিরেছে মাটির কাছে। মৃত্যু কেবল মিথ্যে হোক।
কোমল
শ্রীজাত
চার দেয়ালের মধ্যে দস্যিপনা করে যাচ্ছে
ডানা ভাঁজ করে রাখা পরী।
তিনটে দাঁত পড়ে গেছে, অথচ কী
নিষ্ঠাভরে
চকোলেট খাচ্ছে অনর্গল
বাইরে তখন বৃষ্টি। ভেতরে তখনও বুকজল।
স্কুলের ড্রয়িং খাতা খুলে ও দেখাচ্ছে ততক্ষণে
পাহাড়-নৌকোর দল, রং করা হয়নি
একটাও।
ওর এলোমেলো চুলে হাত রেখে খুঁজে পাই
বেলুন, আলপিন, সুতো, জরি...
এমন দৃশ্যের সামনে অসহায় আমি যে কী করি...
হে জীবন, তুমি দেখে যাও –
কেমন মৃত্যুর বুকে ছোট্ট দু’পা ফেলে উড়ছে
কোমল ঋষভ, আশাবরী...
অন্ধ
শ্রীজাত
হঠাৎ সবার কাছে খুব ভাল হয়ে গেছ তুমি।
যাদের ভেতরে ভর্তি অসূয়ার কাঁটাগাছ, যাদের ভেতরে মরুভূমি –
তারা খুব দুঃখ পাচ্ছে আজ।
কুমিরের কান্না দিয়ে তৈরি এই শিল্পের সমাজ
সেজে উঠছে রজনীগন্ধায়।
যতদূর ফুল থাকে, শোক শুধু ততদূরই
যায়।
তারপর আবার দৌড়, এ ওকে, সে তাকে মারা
প্রাণপণে টিকিয়ে রাখা উপস্থিতি, হাজিরা, চেয়ার...
এসবের বহু দূরে অসামান্য গান গাইছে অন্ধ যে-ভিখিরি
তাকে খুঁজে সঙ্গে ক’রে এ-শহরে কে
আনবে আর?
চোখ
শ্রীজাত
‘যে-কোনও দরকারে
কিন্তু বোলো’
নিজের গলার স্বর নিজেরই অচেনা মনে হল।
বাড়িতে স্রোতের মতো লোক আসা-যাওয়া। তারই মাঝে
গুছিয়েও রাখতে হচ্ছে, যেসব কাগজ লাগে
কাজে
দরজার বাইরে শুধু ছাতা আর চটি সমাহার
এক জোড়া চটিই শুধু কোনও দিন ফিরবে না আর।
ভেজা চিবুকের নীচে আমি ঠিক দেখতে পাচ্ছি
জেদভর্তি কঠিন চোয়াল
হেরে যেতে যেতে যেতে প্রতি মুহূর্তের এই জেতা
চলে তো এসেছি বাড়ি চিনে।
বসেও থেকেছি বহুক্ষণ।
শোকের আবহে এসে আমরা সকলেই অভিনেতা।
কথা বলে গেছি আর উত্তরও দিয়েছি। শুধু
তোমার চোখের দিকে তাকাতে পারিনি, ঋতচেতা
পর্যটক
শ্রীজাত
কোনও কোনও মৃত্যু থেকে বেরোতে সময় লেগে যায়।
অনেক বছর পর বাইরে এসে দেখি, কেউ নেই।
পাড়ার সমস্ত বাড়ি ঢেকে দিয়ে জঙ্গল উঠেছে।
কাঁটাগাছে ঘষা লেগে লেগে
বয়স, কিছুটা ক্লান্ত, একটু দূরে শুয়ে আছে ওই।
সব গান নিয়ে গেছে পাখিদের দল।
একা সন্ধে নেমে আসছে ফের...
এ সমস্ত দেখে শুনে আবার মৃত্যুর মধ্যে ঢুকে পড়ি।
এবারে নিজের।
পলাশ
শ্রীজাত
মাটিতে রঙিন ধুলো, রঙে ঢেকে যাচ্ছে
মুখচোখ –
উৎসবের সামনে এসে শান্ত হল ক’দিনের শোক।
তারও তো ধকল গেছে, অসময়ে এই মৃত্যু
বয়ে বয়ে ফেরা
আজ তাকে ঘিরে ধ’রে রং খেলছে
ছেলেরা, মেয়েরা...
দূর থেকে শোক ব’লে চিনতে পারছে
না কেউ।
আবিরে আকাশ অন্ধকার।
শুধু বিচ্ছেদের দাগ আজও লেগে আছে তার ঠোঁটে...
এরকম হোলি খেলা কখনও দ্যাখেনি লোকে আর-
তোমার হাসির রঙে সমস্ত পলাশ ফুটে ওঠে!
মেলা
শ্রীজাত
জীবন আজব খেলনা। প্রতিদিন হাতে হাতে ঘোরে।
কখন কার হাত থেকে পড়ে গিয়ে ভেঙে যাবে,
আমরা তা জানি না।
শুধু জানি পরিচিতিবিনা
আগুনও স্বীকার করে নেয় না কাউকেই।
এই যে ভাবছি আজ তুমি নেই,
এই যে বৃষ্টি নেমে আসছে মিছিমিছি বসন্তের ভোরে,
এ সবই তো খেলা।
তোমাকে ডেকেছে জানি, ফকিরের মেলা
একজন পড়শি তাই কম পড়ল আমাদের আরশিনগরে
আমরা দাঁড়িয়ে দেখছি এইপার থেকে,
ওই তুমি চলে যাচ্ছ আগুন মাড়িয়ে, একা, আলখাল্লা প’রে...
সব
শ্রীজাত
এখন সমস্ত কথা মনে পড়বে বারবার
কবে কবে দেখা হয়েছিল
কোথায় আড্ডার ফাঁকে কোন কথা বলে উঠেছিলে,
পর পর মনে পড়বে সব।
কোত্থেকে কুড়িয়ে আনা কোন গান, নতুন বাজনা
কোন মাসে কাদের উৎসব
যখনই হয়েছে দেখা, বলেছ কিছু না
কিছু
ক’টাদিন মনে পড়বে
সব।
তারপর ভুলতে ভুলতে এগোব সবাই।
কেবল বুকের মধ্যে শুয়ে থেকে তাড়া করবে
তোমার ওই ফুলে ঢাকা শব।
তারা
শ্রীজাত
বাবা আকাশের তারা হয়ে গেছে। আশাবরী জানে।
সে তাই জানলার বাইরে ভাসিয়ে দিয়েছে তার গান
যেখানে বাবা-ই তার শ্রোতা।
অদ্ভুত শহর ছুটছে বাইরে যেন আরও এক শহরের পানে
বাকিটা লড়াই। সত্যি। জীবনের সঙ্গে সমঝোতা।
সে ছোট, সে এতকিছু এখনও
বোঝে না।
তার হাতের ছোঁয়া লেগে প্রাণ ফিরে পেতে চায় ছাই
অসীম এখানে স্তব্ধ। অনন্ত এখানে বাক্যহারা।
শুধু মনে হয় তার হাত ধরে ছাতে উঠে একবার দেখাই –
রাতের আকাশ জুড়ে আস্তে আস্তে ফুটে উঠছে একতারা, দোতারা...
পাঞ্জরের গান
শ্রীজাত
গাইলা কী গান অসময়ের পাঞ্জরে পাঞ্জরে রে
গাইলা কী গান অসময়ের পাঞ্জরে
তাতে সাজনদারে কপাল সাজায়
কোন বিহনে যাবে রাজায়
আর বাজনদারে
ও তার বাজনদারে বাজনা বাজায় ঝাঞ্ঝরে ঝাঞ্ঝরে রে
গাইলা কী গান অসময়ের পাঞ্জরে পাঞ্জরে রে
গাইলা কী গান অসময়ের পাঞ্জরে
#
পিঞ্জরে আর টিকল না মন, আগুন দিল ডাক
তার ফাগুন যখন এমনি এল রাজ্য পড়ে থাক
যার গা পুড়ে যায়
ও যার গা পুড়ে যায় ক্যামনে শীতল আন-জ্বরে আন-জ্বরে রে
গাইলা কী গান অসময়ের পাঞ্জরে পাঞ্জরে রে
গাইলা কী গান অসময়ের পাঞ্জরে
#
এই দেখিলাম পাশেই আছে এই দেখিলাম নাই
তার পিছন পিছন কবর গেলাম, এখন কোথায় যাই
তাই গাছ পুঁতেছি
ও সাঁই গাছ পুঁতেছি এমন যাতে গান ঝরে গান ঝরে রে
গাইলা কী গান অসময়ের পাঞ্জরে পাঞ্জরে রে
গাইলা কী গান অসময়ের পাঞ্জরে
শেষ চিঠি
অমিতাভ দেব চৌধুরী
আলোকিত ওই রাজধানী
তাকে দেয় রাজার সম্মান ।
আমি তাকে দিইনি কিছুই
আমি তার মায়ের সমান ।
ক্ষুধায় দিয়েছি অন্ন শুধু
পিপাসায় বাক্যহারা জল
বলেছি: রে ননীচোর, শোন
আমার যে আঁচল সম্বল ।
এ আঁচল যেখানেই পাবি,
জানবি তা নিজ দেশ তোর ।
যে দেশের সুরে রাই জাগে
তার গানে তোরও হোক ভোর ।
সেই ছেলে ফিরল না ঘরে
ফিরে এল তার পাওয়া মান ।
পারিনি আঁচলে ঢাকতে তাকে ।
দুঃখে, লিখি এই চিঠিখান
।
নিয়তির পরিহাস
সিক্তা বিশ্বাস
তোমার প্রাণের দোতারা যে তাকিয়ে আছে আকাশ পানে !!
এতদিন সে তোমার সাথে ভুবন ভরাতো গানে গানে !!
তোমার হাতের একটু স্পর্শ এইটুকু তার কেবল চাওয়া !!
ছিলনাতো এমন কথা হঠাৎ করে ফেলে যাওয়া !!
আশা ছিল আরও কিছু মাটির সুরে ভরিয়ে দেওয়া !!
সাথী হারার গোপন ব্যথা !! কি করে সে কাটাবে তা !!
কাঁদছে মানুষ কাঁদছে মাটি ,কোথায় পায় আজ সে সুর খাঁটি!!
পল্লি যে আজ ভাসছে দোলায় !! নিয়তির এই কঠোর খেলায় !!
# ঝোড়োমেঘ
কালিকাপ্রসাদ
চৈতন্য ফকির
সারা গায় মাটি লাগিয়ে মাটির কাছে গেলে
শেষ সকালেও মাটির সাথে কথা কিসের ছেলে?
গানের কাছে মাটি লেপে মাটির গান গাইলে
লোক গানের ঝাঁপির ভেতর এত মাটি দিলে।
দরাজ গলায় মাটির গানে মাটির সুর তুলে
সারা শহর কাঁপিয়ে দিয়ে দোহার তালে তালে।
জীবন মাঝি
অশোকানন্দ রায়বর্ধন
গানের ভুবন চষে গেছ নবীন বাউল গানের লোক,
গানেই হবে তোমায় প্রণাম গানেই হবে তোমার শোক ৷
তোমার হাতের মন্দিরাটা বোল তুলেছে মাটির গানে,
তোমার হাতের দোতারাতে সাঁই ফকিরের শব্দ আনে ৷
তোমার যে এক স্বপ্ন ছিল ছড়িয়ে যাবে বাংলা গানে,
হৃদমাঝারে রাখব ধরে ছেড়ে দেবার নেইকো মানে ৷
গানের ফিরি করতে করতে পেরিয়ে গেলে পথের সীমা,
গ্রামের দোয়েল ঠোঁটে তুলতে গ্রাম্য গানের মধুরিমা ৷
কাজ যে অনেক বাকি তোমার অসীমান্তিক গানের হাটে,
সে কেন যায় এই অবেলায় গানেই যার দিবস কাটে ?
দিন না যেতেই সন্ধ্যে হল কোন বাউলের কারসাজি,
অসময়ে নোঙর তুলল ভাটিয়ালির জীবনমাঝি ৷
বিচ্ছেদগানে দোহার দিচ্ছে তোমার যতো স্বজনগণ,
গানেই হবে তোমার পূজা গানেই হবে তোমায় স্মরণ ৷
কালিকা প্রয়াণ
জ্যোতিষ
কুমার দেব
ছেঁটে ফেলা বাংলার ঈশানে
ফাটা ঢোল খানি সমানে
বেজে গেছিল মেঠো গানে
দোতারার সুর পুরে মনে
দোহার দিয়েছিল বিশ্বমানে
ফেটে গেল হ্ঠাৎ সে ঢোল
তার ছিঁড়ে গেল দোতারার
তার সপ্তমে বিষাদের রাগিণী
হাহাকার কেবল মুদারার
স্মৃতির সায়রে অবগাহনে
অর্পণ
অমরেশ দেবনাথ
চিতার আগুন যখন জ্বলে শ্মশান ঘাটে শেষ নিয়তির চরম বিধানে,
তখন কাঁদে এ পৃথিবী শূন্যতারই হাহাকারে চরম রোদনে বন্ধ চোখেতেও ,
জীবনজ্যোতি মিশে সে যে অসীম প্রকাশের অরুণ আলোয়, শেষের শিখাতে,
রয়ে যায় সকলই বাকি সংসারের ঐ কর্মযজ্ঞে, তবু নিভে বাতি কার সমীরে!
কোথায় আর থাকে শূন্য; হৃদয়কুঞ্জ, জীবন প্রবাহের অসীম স্যন্দনেতে!
ছবির রঙ কেমনে যায় নীরবে বদলে একই মঞ্চে, অন্য ভূষণে অন্য চরিত্রে,
তবু আসে স্মৃতি হয়ে ক্ষণে ক্ষণে বিষাদ জাগিয়ে, নিবিড় রোদনে বুকে,
হারানো ঐ ফাগুন সমীর, স্মৃতির পটে
বেদন দিয়ে, জ্বালায় বাতি
প্রেমাগ্নিতে।
শেষের সেই চিতার অগ্নি, নিভে কি কখনো
শান্তি ফোঁটায় পূর্ণ দহন শেষে?
কে যে তবে চিহ্নহীন এ জগতের অভিনয়ে, যতই দাগী, অনাচারী কলঙ্কদাগে,
তারও কোন হয়ত আলো; রয়েছে সুপ্ত; অজানা ডালের পলাশেতে গোপন বসন্তে,
আর যে দিয়েছে এত রঙ, রঙের কালিতে, সুরের আবিরে হৃদয় খুলে অঞ্জলিতে,
সে কালিকা থাকুক অমর, বেদনার এই
মরমদাহে চিরনতুনের অমৃত স্বাদে,
চিতার সে শেষের আগুন জ্বলেই থাকুক বিরহানলে, কালির ছাইয়ের প্রেম বিভূতিতে,
প্রেমের এই নিবিড় অর্ঘ্য হউক নিবেদন স্মৃতির আড়ালে জনমধরে অর্পণেতে।
হে ঈশ্বর ......
নিরুপম শর্মা চৌধুরী
স্তূপীকৃত ফুল, পুষ্প মালিকা•••
সব ঠেলে ফেলে উঠে আসো
আমাদের প্রাণ-প্রিয় 'কালিকা'
তোমার 'দোহার'-এ দোহার দেব আমরা ••••••
নন্দিত করেছ যাকে, সেই 'বরাক ভূমি '
তার প্রতিজনই ঋণী ...
যারা চিনেনি তোমায় •••••• থাক্ না ,
আমরা তো চিনি
হে ঈশ্বর !
ফিরিয়ে দাও ওকে ......!
আমরা এই মৃত্যু -
'"মানছি না,
মানব না••••".....
কালিকা'র দোতারা
শতরূপা
সান্যাল
নয়ানজুলিতে পড়ে আছে দোতারাটা
খমকটা দেখ বিহ্বল হতবাক
ছেলেটা হঠাৎ পাখি হয়ে উড়ে গেছে
হয়তো আকাশ পাঠিয়েছে শেষ ডাক !
ছেলেটাকে খোঁজে ব্যাকুল বাংলাদেশ
ছেলেটাকে খোঁজে লক্ষ লক্ষ লোক
ক্ষোভে রাগে শোকে থরথরো কলকাতা
কে মোছাবে আজ দোতারার ভিজে চোখ ?
পবিত্র শোক
শতরূপা সান্যাল
অকাল বৃষ্টি ধুয়ে দিতে চায়
আমাদের তাজা শোক
পবিত্র সেই আগুন নেভেনা
জেগে থাকে অপলক।
রং মাখানোর পূর্ণিমা থাক
মেঘের আড়ালে আজ
রিক্ত প্রাণের শুভ্র বসন
এনেছেন ঋতুরাজ !!
কাল দোল পূর্ণিমা
শতরূপা সান্যাল
এত বড় চাঁদ এত ঝিঁঝিঁ ডাকা রাতে
দূর থেকে আসা ট্রেনের বাঁশিতে
না গাওয়া গানেরা কাঁদে....
কাল তো এখানে বসন্ত উৎসব
উড়বে আবীর , ভরবে বাতাসে
মানুষের কলরব!
ঝিঁঝিঁ ডাকা এই অপরূপ জ্যোৎস্নায়
কেন মনে হল নিঝুম গাছেরা
ভিজে গেছে কান্নায় ?
পথিক
মহুয়া সেনগুপ্ত
মাথার ওপর রাতের সাদা আকাশ
ফুটে আছে অসংখ্য কালো-ফুটকি তারা
নীচে এক অলোকসামান্য পথ
দিগন্তে গিয়ে মিশেছে নিখুঁত।
সেই পথে একা পথচারী-
ঝাঁকড়া চুল, পাঞ্জাবি, কাঁধে ঝোলা
আপন মনে মাথা দুলিয়ে গান করতে করতে
তালি দেন নিপুণ ঠমকে।
জমাট বাতাস তাঁর মেঠো সুরে
নদী হয়ে ওঠে। আর ঝুলি থেকে
গানেরা উড়ে গিয়ে কেউ গাছ, কেউ ফুল,
কেউ বা পাখি হয়ে যায়।
অবিনশ্বর প্রাণ থাকে আনন্দে ভরে
অশৌচহীন, কোনো এক
সমান্তরাল বিশ্বে
ঘরের ভেতর ঘর, আরশিনগরে।
রঙের ছড়া আত্মহারা
অপাংশু দেবনাথ
অন্ধকারে কি রঙ আছে? দু:খ রঙের আলতা!
আমি কেবল যাই ভুলে যাই ছিলো কতো সালটা!
ভুলেরও কি রঙ আছে ভাই! নবরঙের আখড়া?
রঙ খেলিনা দিইনা তো রঙ হোকনা সে চুল ঝাঁকড়া।
ঝাঁকড়া চুলে এলো ভুলে মধ্যদিনের ফুলকি;
দরজা আটা খুব করে আজ একা হলে ভুল কি!
কি হবে আর না যদি আজ রঙ মাখিনা মুখে?
কেউ আমাকে দেবে না রঙ জানে রাঙা লোকে।
লোকে ভরা জগৎ আমার তবু খুঁজি লোককে,
আকাশে আজ রঙ ছড়ানো দেখ্ বলেছি চোখকে।
ঘুরে ফিরে এ চোখ আমার কোন্ রঙেতে রাঙে;
কেউ জানেনা জানো তুমি গান গেয়ে যায় ডাঙে।
কি গান সে গায় বৃষ্টি ভিজে কোন্ দিবসের কান্না!
হাঁড়ি পাতিল সব সাজানো পরিপাটি রান্না।
কি রঙ মাখো সকল মুখে সূর্য থেকে এনে;
মুখ দেখিনা চোখ দেখিনা এত্তোটা দিন ক্যানে?
মনে মনে রঙ দিয়েছি পারো যদি বুঝতে;
থাকবো বসে দুহাতে রঙ হবে না আর খুঁজতে।
হৃদয় আমার তোমার রঙে চির কালই রাঙা;
যদি পারো ছুঁয়ে দেখো জলায় কিংবা ডাঙা।
কালিকা ও কামাল ভেসে যায়
বিশ্বজিৎ
সাহা
বরাকে একের পর এক
শোক মিছিল!!
কালিকা , কামাল ভেসে যায়,
চোখের বন্যায়।
বাঙালির রক্ত আজ তাঁর জন্য কাঁদে,
প্রসাদের গবেষণা,
হারিয়ে যাওয়া লোক সংস্কৃতি,
জীবন পেয়েছিলো
মঞ্চের ছন্দে।
শোকের গন্ধে,
আজ নীরব গ্রামবাংলা ও
শহর ।
বরাকের লোকজীবন বাংলা সংস্কৃতি,
চড়ক, ধামাইল
হাসন, লালন ও গাজনের
গানে
প্রসাদের অন্তর।
জীবনভর অমর রাখবে সবাই।
তোমার এই কাজে!
দোহার থেমে থাকবেনা,
রাজীব ও সৌম্যদের হাতে
এগিয়ে যাবে আমার বিশ্বাস।
দোহার আবার প্রাণ পাক
বিশ্ববঙ্গের কাছে।
প্রসঙ্গ নিরুদ্দেশ
মহাদেব সাহা
“ বিষাদ ছুঁয়েছে
আজ, মন ভালো নেই,
মন ভালো নেই;
ফাঁকা রাস্তা, শূন্য বারান্দা
সারাদিন ডাকি সাড়া নেই,
একবার ফিরেও চায় না কেউ
পথ ভুলকরে চলে যায়, এদিকে আসে না
আমি কি সহস্র সহস্র বর্ষ এভাবে
তাকিয়ে থাকবো শূন্যতার দিকে?”
প্রিয় কালিকা
অপরাজিতা কোনার
একটা আস্ত সূর্য
তার বুকের ভেতর, গনগনে
একটা আস্তানা গেড়েছিল কিনা !
সেই দ্যুতিময় জ্যোতির্বাতাই,
তার রংচঙে কোট -কাফতানের
সুতোয়, সুতোয় আলোর
বিনুনি বেয়ে, শিরা -উপশিরা পথ
বেয়ে,
গলা, ঠোঁট, চোখ দিয়ে
সোনা রোদ্দুর হয়ে নামতো!
আর সেই সূক্ষ্ম রশ্মি - ছুঁচ!
ভরপুর শিহরণ গেঁথে দিতো লোকে।
গান তো পাখির মতো !
উড়ে যায়,বহু - বহু দূরে
যায়,
সুর হয়ে, সুরে গিয়ে মেশে।
চোখের আড়ালে গিয়ে
কায়া তার না জানি কোন
ছায়াপথে মিশে গেল!
কোনও খোঁজ না পাওয়ার দেশে!
যারা তার ভোর হতে দেখেছিল!
সে...ই ভোরে ছিলো যারা তার সাথে,
যাদের, যাদের সাথ, আর দুই হাত ছিলো
শহুরে ভিড়ের মাঝে, ধুলো, বালু, কাদা নিয়ে
নিরলস ধ্যান করে চলা সেই মেঠো -মানবের হাতে।
তারাও জানেনি কেউ,
এইভাবে ছেড়ে যাবে হাত,
নিভে যাবে আলো...
আঁধার তো দেখেছি সবাই, তবেকেউ,
সকাল দেখিনি এতো কালো!
কেন তবে ভরদুপুরে সূয্যি গেল পাটে!
সাঁঝেরও ছিলো অনেক বাকি,
দিন ফুরায় নি বেলা,
কাজও ছিলো অনেক বাকি,
কাজ পড়ে আছে মেলা।
চুরি হয়ে গেছে সূর্য এখন
দারুণ অন্ধকার,
মনখারাপের অজুহাত খাটো,
বাঁচাতে ও হবে যেভাবেই হোক,
উপায় ও তো নেই আর!
সবেরই একটা শেষ ও তো হয়,
এরও শেষ আছে জানি,
শুধু বাকিটুকু পথ হামাগুড়ি টেনে
পৌঁছাতে হবে আরো।
সেদিন একটা নতুন ভোরেতে
আবারও কি তুমি নব কোনও রূপে
এদেশ ফিরতে পারো?
মনফকিরা হারালে কোনখানে
মৃন্ময়
চক্রবর্তী
সবাই যখন ফিরল ঘরে রাত্রি আসে রাত্রি সরে
তোমার কেন হলই না আর ফেরা,
সরল দুটো চোখের সাথে সরলহাসি হাত মেলাতে
সহজধুলো হল কি শেষ ডেরা?
বহুদিনের বাংলামাটি ছন্দসুরের বিরল ঘাঁটি
আবার খুঁজে চেনালে প্রাণপণ
রাধারমণ শাহনুরের দিলদোতারা ফিরল সুরের
অপারবাংলা লালনে আচমন
সবাই অনাদরের ঝিনুক চাইলে খুলে মুক্তো চিনুক
দোহারি হোক হাছন রাজার গানে
তারপরে কী এমন হল সারিন্দাটির তার ছিঁড়িল
মনফকিরা হারালে কোনখানে?
হৃদমাঝারে
স্বপন সমাদ্দার
এই দৃশ্য দেখব ব'লে, ছিলাম নাকি তৈরি ?
কোন খেয়ালে হারিয়ে গেলে ? -- সব কে ভেবে বৈরী?
ফিরবে , আশাবরী'র ডাকে ? সে যে ভীষণ কাঁদছে !
ঋতচেতা'র শূন্য চোখে , শোক মানে না বাঁধ যে !!
#
' দোহার ' ছেড়ে , কাদের দলে গানের খেয়া বাইছ ?
কোন ভুবনে , দু'হাত তুলে '' হৃদ-মাঝারে '' গাইছ ?
লোক-গানের প্রাণ-ভোমরা , কোথায় গেলে , গাইতে ?
তারা-ই হ'ল প্রিয় , ' দোহার '- আশাবরী'র চাইতে ??
কালিকা প্রসাদকে
সঞ্জীব দে
লোক শিল্পী, শিল্পী তুমি অমর
কালিকা প্রসাদ
স্তব্ধ গোটা বাংলা আজি দিলে তীব্র বিষাদ।
মধ্যাহ্নে ঝড়ে গেলে, দুই বাংলায় অঝোর
শ্রাবণ
সুরের আকাশে দিলে লোক গানের উচ্চ আসন।
বিস্মৃতির গুহা হতে মাটির গানে ফুল ফুটালে
গানে গানে সুরের মাধুরী দিয়ে মন ভরালে।
একি সময়? মধ্য গগনে, হ্যায় ! অকাল প্রয়াণ
অমর লোক শিল্পী তোমার প্রণাম শুধু প্রণাম।
কালিকাদা
বিষ্ণু ঠাকুর
দিন মজুরের দল, যারা
কাঠ ফাটা রোদে কাজ করে
বর্ষা যাদের মাথায় ভাঙে
দিনের শেষে ঘেমে নেয়ে একশা
দু’হাত পেতে দিনের
মজুরিটা নিয়ে
পায়ে পায়ে বাজার, শুকনো মাছ
চাল, তেল, নুন হাতে, ঠোঁটে
জ্বলছে বিড়ি; গলা ছেড়ে
গান , পা চলছে -গান
গাইছে
বাড়ি এগিয়ে আসছে
তারা তোমার বিহনে গান ছেড়েছে
তারা আজ নীরব,
তারা আজ গরীব, আনন্দহীন
কোন এক গ্রাম, যেখানে কালিদা
তাঁর দোহার নেই; একটি ছবি
শুধু ডেকে যায়, তাহলে এবার
যাই, যাই আর যাই আর
যাই।
গান সমাবেশ
সোমরঞ্জন মুখার্জি
এমন করে কাঁদিনি অনেক দিন
এমন করে কষ্ট কি দিতে আছে ।
মন বলছে প্রতিটি দিন রাতে
এমন সত্য হারুক মিথ্যের কাছে।
গান সমাবেশ ডাক দিয়েছিলে তুমি
কথা দিচ্ছি এবার ব্রিগেড জুড়ে
আমার গিটার তোমার একতারা হবে
মিছিল সেদিন ভরে যাবে সুরে সুরে ।
সেদিন তুমি অমন করেই হেসো
দুকলি না হয় গেয়ে উঠো আনমনে
জানব।তোমার দোহার মাঝে
আছ তুমি আমাদের মনেপ্রাণে।।
বড় রিক্ত করে গেলে
কপোতাক্ষী ব্রহ্মচারী চক্রবর্তী
বড় রিক্ত করে গেলে হে মানব!
কোন সে মাটির টানে,
কোন রূপে,কোন গানে,
পেয়েছ কি দেখা? যার খোঁজে
আশৈশব-
স্বপ্ন বুনে গেছ, আর করে গেছ
আকুল-আহ্বান...
হৃদয়-মাঝারে শুধু অশ্রু হয়ে ঝরে সেই লীলায়িত গান!
বড় রিক্ত করে গেলে হে মানব!
মনের মানুষ আজ, পেয়ে গেছে মাটি,গান
আর যা পাবার ছিল-- সব!
টঙ্কার বাজে তার, একতারার ছিলায়-
হোক তবে, হোক কলরব!
সত্যিই চলে গেলে
সুমন দাস।
তুমি কি সত্যিই চলে গেলে,
না ফেরার ওই দেশে।
আসবে না আর মোদের মাঝে,
আবার ভালোবেসে।।
নিয়তি তোমাকে কেড়ে নিল,
আজকের সকালে।
সকলের প্রিয় কালিকা দাদা,
হঠাৎ চলে গেলে।।
জন্ম নিয়েছিলে ঈশান বাংলা,
মায়ের কোলে।
সুরের মূর্ছনায় তুমি মহান,
জগৎ মাতালে।।
লোকসঙ্গীত ছিল যে তোমার,
ধ্যান ও জ্ঞান।
গান শুনিয়ে লক্ষ জনের যে,
জুড়াইলে প্রাণ।।
তোমার জন্য আমরা সকলেই,
ব্যথায় কাতর আজ।
পরপারে তুমি ভালো থাকবে,
স্মৃতিতে করবে বিরাজ।।
বসন্তটাও আজকের দিনটিতে,
হয়ে গেল ম্লান।
মনটা মোদের করছেনা বিশ্বাস,
তোমার প্রয়াণ।।
নামটি তোমার থাকবে যে লেখা,
ইতিহাসের পাতায়।
আজিকে প্রণাম জনাই হে মহান,
আমি গো তোমায়।।
কালিকাপ্রসাদ
গৌতম দত্ত
‘ভিতরে বাহিরে
অন্তরে অন্তরে...’
কেন এঁকে দিলে ধানমাঠ গান
আর সেই ঘরে ফেরা পাখি—।
কতো কিছু রয়ে গেল বাকি।
লাব্ডুব শব্দের আগে ধুতুরা’র ফুলকথা।
কতো কিছু জানা হ’ল, কতো কিছু –
বয়ে চলা ডুব্ ডুব্ সুর
সজনের ফুল আর পলাশনুপূর
সারা গ্রামে পাড়াঘোরা সে এক দুপুর।
দোতারা’র খুব ভারী হয়
বুঝি –
কখনো সখনো ?
আকাশ তো উজ্জ্বল
ছিল যে তখনো।
চৈতি আকাশ তার সবটুকু দিয়ে
বসন্ত এনেছিল সব কিছু নিয়ে
পছন্দ হ’ল নাকো তবু ?
বৃষ্টি চেয়েছিলে বুঝি
সকালের রোদে।
তাই বুঝি একা একা
নির্মম বোধে
খুঁজে নিতে যাওয়া ও-পাড়া’র স্বাদ।
আদর আহ্লাদ—
এ জীবন পারেনি কি দিতে ?
তবু কেন, খুঁজে পেতে
পরম সন্ধান—।
জীবনের গান –, পেতে চেয়েছিলে
সবখানি নিয়ে
বুকে জমা সবটুকু শিশিরে ভরিয়ে
বাঙলার কোনা থেকে দূরে ভল্গায়।
শ্যেন্, পারে মিশে যেতে
কীর্তনখোলায়
সুরে সুরে ভেসে শুধু…।
কতো জানা বাকি ছিল আমাদের !
বেহুলা কি শুনেছিল কোনো সুর -
মৃত স্বামী’টিকে পাশে নিয়ে
কলা’র ভেলায় ?
কিম্বা,
ধলেশ্বরী নদীটার পাশে পাশে
কোন সুর খেলা করে যায় ?
কে জানাবে আর – !
কে জানাবে কোন এক অজ গাঁ’য়ে
কোন এক অজানা ফকির গান গেয়ে যায় !
বড় তাড়া ছিল নাকি ?
আমাদের ফেলে
কতো দিনে যাবে চলে
পরম যাত্রায় ?
মুখে হাসি মায়াভরা। এমন মায়ায়—
কেন তবে ছুঁয়ে দিলে বুড়ি ?
কেন দিলে এনে ঝুরি ঝুরি
সোনালি রঙিন গান
তালপাতা ছুঁয়ে ছেনে—।
ঘাসে ঘাসে থেকো তুমি
থেকো তুমি রাতে’র শিশিরে।
বকুলে’র গন্ধে থেকো
থেকো তুমি রোদের গভীরে।
মন থেকে মনে থেকো
সুর থেকে সুরে
আজন্ম লালিত স্বপ্ন বয়ে যাক্
যমুনা গভীরে।
ঠিকানাটা অচিনপুর
নিরুপম শর্মা চৌধুরী ।
সেদিন কীজানি যে কেমন করে
স্বপ্নঘোরে হঠাৎ করে, পৌঁছে গেলাম
জলপরি দের - ' অচিনপুর ' !
সময়টা ঠিক নেই মনে আর
হয়তো তখন রাতদুপুর ।
তন্দ্রাঘোরে শুনতে পেলাম-খুব চেনা এক গানের সুর
দেখি চেয়ে -সামনে এ কী!আমাদেরই কালিকা ;
তান ধরেছে ওর সাথে আজ সহস্র জল-বালিকা•••
নতুন গান, নতুন দেশ -আমিই
কেবল মুগ্ধ শ্রোতা;
হঠাৎ করে থামিয়ে গান, বলল আমায়
কালিকা'দা
কেমন আছিস্! এদিকে আয় ••••••
আরও যত ঠুনকো কথা ;
বেবাক আমি! এ কী বিস্ময় .....!
যতই দেখি চারদিকে, সব এখানে
কালিকাময়•••
ধ্যান ভেঙে কালিকা'দা বলল আমায়-
কী দেখিস্ রে অমন করে !
ওটা আমার আরেকটা ঘর,আমার নতুন গানের
দেশ
তোদের কাছে হয়তো দূর, এই ঠিকানা
-অচিনপুর ••
মৃত্তিকাহীন এই দেশেতে, আছি রে বেশ
জলের ঢেউয়ে ছড়িয়ে দিয়ে
সারাটিক্ষণ গানের রেশ ••••
মাটির ঢেলা গড়বে না কেউ,হেথা-হোথা নিয়ম
করে
জন্ম-মৃত্যু, হিসেব-নিকেশ অচল
পয়সা -অচিনপুরে
তোদের কাছে মৃত্যু যেটা, আমার কাছে
বাহানা সে ;
মৃত্যু কী রে আছে আদৌ-ভালোবাসার!সত্যি বলনা!
অবশেষে এদেশ শেষে- হয়তো আবার
দেব পাড়ি-ফুলের দেশ, কিংবা অচিন
-মেঘের দেশ!
ঘুরব আমি এভাবেই -- বিশ্ব-জগৎ-ত্রিভুবন
জগৎ টাকে জুড়বো একা,নাম দেব তার-'গান ভুবন'।
বাউলের তো কাজই এটা; স্থায়ী নয় রে
দেহ-মন•••
হয়তো আবার ঘুরেফিরে , ফিরব আবার -
মাটির টানে, মাটির দেশ !
চিনবে কেউ হয়তো তখন
থাকবে গায়ে নতুন বেশ••••
হাজার বছর পরে কোনো মাটির দাওয়া,জলসাঘরে
চিনবি না তুই জানি তখন,দেখিস্ ঠিক চিনব
তোকে
ভালো থাকিস্ তোরা সবাই
আমিও ভালো, বেশ আছি রে
এই ঠিকানায় - অচিনপুরে ••••••
নেই
একা একা *
আগাছায় ঢাকা বাগানে চাঁদের নূর
সন্ধে নামলে ছায়ারা হাওয়ায় দোলে
ভাঙা দোতারায় রয়ে গেছে কিছু সুর
গানের মানুষ ঘর ছেড়ে গেছে বলে
এন্টেনা থেকে উড়ছে হাওয়ায় ঘুড়ি
চিলেকোঠা যেন বিষণ্ণ এক মেয়ে
কতখানি সুতো কাটল চাঁদের বুড়ি
কান্না রয়েছে কতটা আকাশ ছেয়ে
নৌকো ভিড়েছে ঘাটে, তবু মাঝি নেই
ভাটিয়ালি শুধু ছোটো ছোটো ঢেউ তোলে
সিঁড়িতে কোথাও ভবঘুরে কাঁদবেই
গানের মানুষ ঘাট ছেড়ে গেছে বলে
কিছু মনে থাকা রয়ে যায় আলনাতে
কিছু স্মৃতি বয়ে বেড়ায় গলির মোড়
হাতে হাত নেই, দারুণ জ্যোৎস্না
রাতে
তবুও বেহাগ দুচোখে লাগায় ঘোর
দিগন্ত জুড়ে হাজার তারার মালা
লালন মাজারে প্রদীপ উঠেছে জ্বলে
ভুবনডাঙায় শেষ ফাগুনের পালা
গানের মানুষ মাঠ ছেড়ে গেছে বলে
(* Facebook Username 'একা একা')
আকাশের নীল তারা
নীহার দাস
এখন তুমি গান শোনাও ওপারে
আমি এপারে একতারা শুনি ...
কতো বন্ধু তোমার গানে চোখে জল আনে
আমার বুকে বয়ে যায় নদী ।
বরাক বেয়ে যে গান এসেছিলো
গঙ্গাবুকে আজ সে ফকির
আরও কিছু দেবার কথা ছিলো তোমার
আরও গান
আরও প্রাণ
একতারাটা নিয়ে এসো ফকির
শুনিয়ে যেয়ো মাটির গান
কিছু না দিতে পারলেও
একবিন্দু চোখের জল তো দিতে পারি !
হৃদমাঝারে
স্বপন সমাদ্দার
এই দৃশ্য দেখব ব'লে, ছিলাম নাকি তৈরি ?
কোন খেয়ালে হারিয়ে গেলে ? -- সব কে ভেবে বৈরী
?
ফিরবে , আশাবরী'র ডাকে ? সে যে ভীষণ কাঁদছে !
ঋতচেতা'র শূন্য চোখে , শোক মানে না বাঁধ যে !!
#
' দোহার ' ছেড়ে , কাদের দলে গানের খেয়া বাইছ ?
কোন ভুবনে , দু'হাত তুলে '' হৃদ-মাঝারে '' গাইছ ?
লোক-গানের প্রাণ-ভোমরা , কোথায় গেলে , গাইতে ?
তারা-ই হ'ল প্রিয় , ' দোহার '- আশাবরী'র চাইতে ??
কালিকা প্রসাদ স্মরণে
সুজিত পাল
কবিতার আকাশে আজ
সবিতা ডুব দিয়েছে।
তমসাচ্ছন্ন আকাশে,
কবিতা খুঁজে বেড়াচ্ছে
ছন্দ লয় তাল।।
ঈশানকোণে আজ
কালান্তরে প্রসাদ।
জিকির বুক চাপড়াচ্ছে,
বাদল আজ স্কুল-পালানো বখাটে।
ভাওয়াইয়ার বৈঠা
আজ চড়ের বুকে খুঁজছে... প্রসাদ।
সায়াহ্নে ঝড়ের গর্জন
গাজনের তাল মাতাল,
সিদ্ধির বুকভরা দমেও নেই মত্ততা।।
ওঝার চামর আজ কাক-ভেজা।।
কমলা ধামাইলের সঙ্গছাড়া।।
পাল্কির জির্ণদাঁড় ভেঙ্গে খান খান,
বউনাচের বধূবরণ কুলো-তত্ত্ব
পড়ে আছে ওই ঈশানে।।
ভাটিয়ালির উজানে আজ
দুঃস্বপ্নের চড় জেগে উঠেছে।।
ঢোলের বোলে আজ
বাক্ বাকুম..
টাকঢূম টাকঢুম আজ অহি-নকুল।।
কীর্তনের সুর আজ
বলোহরি হরিবোল।।
বিহুর মেজিতে
কে যেনো মুখাগ্নি করেদিলো।।
কবিয়াল মুখে আজ যষ্টিমধু,
ভাঙ্গা গলায় আজ মেজাজের ছন্দপতন।।
খুঁজছে সবাই...
খুঁজছি সবাই...
প্রসাদ প্রসাদ প্রসাদ
ভাই আমার...
ফিরে আয়নারে...
ধিক্ কবিত্ব... সবাকপটের
The Mystic
Minstrel !!!!
Paromita Das
He comes, comes
the mystic
minstrel,
singing his
baul songs,
Oblivious to
the world around!
Wrapped in
saffron tatters,
His precious '
rudraksh mala'
Round his neck,
Deep set eyes
with certain aloofness
Underlined with
dark kohl,
Black n grey
beard of neglect
Growing down
his chin!
His shoulder
carries his world
In a ragged
satchel,
He moves on,
from eyes to eyes,
Ears to ears,
Walking,
dancing on his bare path,
Swayed away by
his vacant look
Fixed on a
distant star!
His vocal tone
floats in the air
smoothly, as an
eagle,
Rising high,
dipping low
in a soulful
baritone...
His finger
pulls at the string
of his 'ektara'
his body's
obvious response
in an
undulating rhythm!
He strides
forward, on and on
with folks
following in a trance,
as ' the Pied
Piper of Hamlyn'...
Yet, he remains
nonchalant!
He bears no
name,
No family, no
home.
He rests
beneath the trees at night
and, accepts
the meagre offerings!
He moves on
again,
As a free
flowing mountain river,
To reach his
steely goal,
Who awaits him,
may be,
At the extreme
end of the horizon...
He hurries,
He has no time
to spare
As he has to
reach before his 'dusk'
To find his
long desired divine love,
His ' moner
manush’!!!!!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন