“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ত্রয়োদশ সংখ্যা ‘উজান’ উন্মোচন অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত হলেন অসমিয়া শিশু সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কারে ভূষিত কবি-নাট্যকার হরেন্দ্রনাথ বরঠাকুর

।। সুশান্ত কর এবং বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।।

তিনসুকিয়া থেকে প্রকাশিত বাংলা ছোট পত্রিকা ‘উজান’-এর ত্রয়োদশ সংখ্যার উন্মোচন হলো গত ১৯শে সেপ্টেম্বর, শুভ মহালয়ার দিনে -- স্থানীয় ফ্যান্টাসি ওয়ার্ল্ডের প্রেক্ষাগৃহে। সাহিত্য ও সংস্কৃতির মেলবন্ধনে উদযাপিত এদিনের অনুষ্ঠান ছিল মূলত তিন পর্বে বিন্যস্ত। জীবন কৃষ্ণ সরকারের পরিচালনাতে উজানের শিল্পীদের পরিবেশিত শুভ কর্মপথেএই উদ্বোধনী রবীন্দ্র সঙ্গীত দিয়ে সভা শুরু হয়
প্রথমেই স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন উজান সাহিত্য গোষ্ঠীর সভাপতি শ্রী সুজয় রায়। প্রথম পর্ব ছিল সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। সম্প্রতি অসমিয়া ভাষার জন্য সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন বিখ্যাত শিশু সাহিত্যিক তথা উজান সাহিত্য গোষ্ঠীর উপদেষ্টা শ্রী হরেন্দ্রনাথ বরঠাকুর। এদিনের অনুষ্ঠানের শুরুতেই তাঁকে মানপত্র, চাদর, সঁফুরা ও বই-পত্র দিয়ে সংবর্ধনা জানানো হয় গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে। এই পর্বে শ্রী বরঠাকুরের সাহিত্য কর্মের সঙ্গে শ্রোতা-দর্শকদের পরিচয় করিয়ে দেন গোষ্ঠীর অপর উপদেষ্টা অধ্যাপক সুশান্ত কর। সেই সঙ্গে তাঁরশিশুনাট সমগ্রের একটি সংক্ষিপ্ত নান্দনিক আলোচনা করেন দশটি নাটকের সংকলন এই বইটি বছর তিনেক আগে প্রশান্ত শর্মার সম্পাদনাতে প্রকাশ করেছিল শিবসাগরেরনাট্যপীঠ প্রকাশন  মূলত এই বইয়ের উপরে নির্ভর করেই সাহিত্য আকাদেমির নজরে পড়ে শ্রী বরঠাকুরের কর্মরাজি দশটি নাটকের মধ্যে আটটিই রূপক নাটক কিন্তু আধুনিক শৈশব জীবনের বাস্তব সংকটগুলোকেই চিত্রিত করেছেন নগরায়ণ, প্রকৃতির দূষণ, দারিদ্র্যে বিপন্ন শিশুর জীবনের যন্ত্রণা, ক্ষোভের এবং কিছুবা বিদ্রোহের নাটক এগুলো তিনি বলেন, ‘রজার দেউলের মতো নাটক বাংলা ভাষাতেও যত বেশি হবে, ততই আসামের বাংলা নাটকও সমৃদ্ধ হবে
(২৬শে সেপ্টেম্বর, ১৭ যুগশঙ্খে ৬এর পাতাতে)
এরপর তাঁর প্রদত্ত ভাষণে শ্রী হরেন্দ্রনাথ বরঠাকুর ‘উজান’-এর সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের সম্পর্কের স্মৃতিচারণার পাশাপাশি নিজের সাহিত্যিক জীবনের বিভিন্ন অনুভব আন্তরিক ভাবে ভাগ করে নেন সবার সঙ্গে। তাঁর সৃষ্ট সাহিত্য কর্ম নিয়ে আলোচনার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সুশান্ত করকে। শ্রী বরঠাকুর শিশুদের জন্যে সাহিত্যের , নাটকের দরকার নিয়ে তথা নিজের শিশু সাহিত্যের প্রেরণার উৎস নিয়ে এক তত্ত্বগধুর বক্তৃতা করেন তিনি বলেন, প্রতিভাবান বলে কোনো মানুষ আলাদা হয়ে জন্মায় না মানুষমাত্রেই প্রতিভাবান এবং স্রষ্টা অনুকূল পরিবেশে কারো প্রতিভা প্রকাশিত হয়, কারো বা অবদমিতই থেকে যায় শিশুদের সেই পরিবেশ দেয়াটা জরুরি এবং দায়বোধ থেকেই তিনি শিশু সাহিত্যে নিবেদিত প্রাণ হয়ে উঠেছিলেন তিনি বলেন, শিশুরা তাই শেখে বড়রা যা শেখান তাদের  ভাগ্য বিশ্বাসী করবার চাইতে নিজের ভাগ্য গড়বার প্রেরণা দেয়া অতীব দরকার








অনুষ্ঠানের এই অংশে শ্রী বরঠাকুরকে ফ্যান্টাসি ওয়ার্ল্ডের পক্ষ থেকেও সংবর্ধনা জানানো হয়। প্রথম পর্বের সমগ্র সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন ত্রিদিব দত্ত
দ্বিতীয় পর্ব ছিল পত্রিকা উন্মোচনী অনুষ্ঠান। এই পর্বের সঞ্চালক ছিলেন উজান সাহিত্য গোষ্ঠীর পত্রিকা সম্পাদক বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। তিনি প্রথমেই সাহিত্যিক ও উপদেষ্টা শ্রী হরেন্দ্রনাথ বরঠাকুরকে সম্মান জানিয়ে বলেন যে তাঁর পুরস্কার প্রাপ্তির সংবাদে উজান সাহিত্য গোষ্ঠীর প্রত্যেক সদস্য-সদস্যা সম্মানিত ও গর্বিত বোধ করছেন। এরপর ‘উজান’ সাহিত্য পত্রিকার ত্রয়োদশ সংখ্যার শুভ উন্মোচন করেন শ্রী হরেন্দ্রনাথ বারঠাকুর। এসময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন গোষ্ঠীর সভাপতি সুজয় রায়, উপদেষ্টা সুশান্ত কর, নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের সর্বভারতীয় উপসভাপতি তথা বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক কর্মী ও সংগঠক ডা কীর্তিরঞ্জন দে, সঙ্গীত শিক্ষক নির্মলেন্দু চট্টোপাধ্যায় ও অভিজিত দত্ত এবং নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের তিনসুকিয়া শাখার সভাপতি শঙ্কর গুপ্ত।
           উন্মোচনের পরই পাঁচজন উজানের প্রথম লেখক নবীন এবং  প্রবীণ কবিদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় শ্রোতা-দর্শকদের সঙ্গে। এঁরা হলেন- প্রবীর বোস, শীলা দেব দে সরকার, নিবেদিতা রায়, গৌতম বরঠাকুর ও পূজা দাস।
     
মঞ্চে পত্রিকার বাণিজ্যিক বিক্রয়ের শুভারম্ভ করেন নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের উত্তর পূর্বাঞ্চল রাজ্য সমিতির সাধারণ সম্পাদক শুভাশিস চক্রবর্তী।
অনুষ্ঠানের এই অংশে গোষ্ঠীর উপসভাপতি প্রশান্ত ভট্টাচার্যের কবিতা সংকলন ‘প্রকাশ’ উন্মোচন করেন  সুজয় রায়।
     সঞ্চালকের ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে সমাপ্ত হয় দ্বিতীয় পর্বের উন্মোচনী অনুষ্ঠান।
         
                         আপনালোকে চাগে মোৰ নাটকৰ কথা একো নেজানিছিলে


                                 বটাৰ প্রয়োজন আছে
অনুষ্ঠানের তৃতীয় পর্বে গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক সম্পাদক জীবন কৃষ্ণ সরকারের পরিচালনাতে পরিবেশিত হয় এক মনোরম সঙ্গীতালেখ্যআগমনী সুরে শারদ বোধন উজানের সদস্য-সদস্যা ছাড়াও কিছু শুভানুধ্যায়ী শিল্পীও এতে অংশ গ্রহণ করেন স্তোত্রপাঠ করেন বিদ্যুৎ চক্রবর্তী সংলাপ এবং ভাষ্যপাঠে অংশ নেন ত্রিদিব দত্ত, মুনমুন চৌধুরী, বনশ্রী চৌধুরী কণ্ঠসঙ্গীতে অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা ছিলেন মুনমুন চৌধুরী, তুহিনা ভট্টাচার্য, বর্ণালি চৌধুরী, শীলা দেব দে সরকার, জিনিয়া চন্দ, সোলাঙ্কি চক্রবর্তী, সুচয়িতা চক্রবর্তী, স্নেহা মজুমদার, স্নেহা বড়ুয়া, সম্রাট মুখার্জি, শুভজিৎ চৌধুরী এবং অবশ্যই পরিচালক জীবন কৃষ্ণ সরকার নাচে অংশ নেয় দুই শিশু শিল্পী তনিশি রায়, মৌবনী মজুমদার নৃত্য পরিচালনা করেন যথাক্রমে কাজরি রায় এবং কেয়াকলি মজুমদার আবহ সঙ্গীতে ছিলেন বিজয় কুমার ডেকা তবলাতে রতন দেব এবং বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, হারমোনিয়ামে জীবন কৃষ্ণ সরকার, খঞ্জনিতে গোপাল মজুমদার, শঙ্খধ্বনিতে কাজরি রায় পুরো অনুষ্ঠানের মঞ্চসজ্জা, শব্দ এবং আলোক সজ্জার ব্যবস্থাপনাতে ছিলেন জীবেশ দেব
তিনসুকিয়া ছাড়াও ডিব্রুগড়, দুলিয়াজান, ডিগবয়, ডুমডুমা থেকে শতাধিক অতিথি অভ্যাগতে পরিপূর্ণ প্রেক্ষাগৃহে
       তিনপর্বে অনুষ্ঠিত এদিনের সমগ্র অনুষ্ঠানটির সার্বিক সঞ্চালনা করেন ত্রিদিব দত্ত

~~~০০০~~~


কোন মন্তব্য নেই: