।। সেলিম মুস্তাফা ।।
( কবি
রামেশ্বর ভট্টাচার্যের কিছু কবিতা বিভিন্ন তারিখে আমি ফেসবুকে দিয়েছিলাম আগ্রহী
পাঠকদের জন্য । সেগুলোই আজ পোস্ট করার তারিখসহ হবহু এখানে তুলে দিলাম, সঙ্গে রয়ে গেল আমার সামান্য কথাগুলিও ।
)
রামেশ্বর ভট্টাচার্য । পরিচয় নিষ্প্রয়োজন ।
সকলেই চেনেন, ত্রিপুরায় আর
ত্রিপুরার বাইরেও । আমরা জানি কবি হিসেবে যে পরিচিতি, তা কখনো কখনো চাপা পড়ে গেছে তাঁর আরও বড় বড় অন্যান্য পরিচিতির
আড়ালে, যাকে উৎসাহিত করেছে
কবি হিসেবে তাঁর প্রচারবিমুখতা ও নিয়মিত না-লেখার আলস্য । এ পর্যন্ত যা লিখেছেন
তা-ও আমরা সকলে পড়িনি, গড্ডলিকায়
তাঁকে পাইনি বলে । নিঃসন্দেহে তা আমাদেরই বোকামি আর যে-কোন পাঠে আমাদের আলস্য ও
অনীহার কারণে ঘটেছে । তাঁকে না পড়লে সাতের দশকের সঙ্গে রাজধানী আগরতলার সম্পর্ক
খুঁজে পাবে না আজকের কাব্যচেতনা । কারণ কথার আড়ালে, শব্দের আড়ালে তিনি তখনই বপন করে গেছেন দুঃসাহস আর বিনির্মাণের
বীজ । আমরা কয়েকটি কবিতা পড়ব ।
দ্রৌপদী
রামেশ্বর ভট্টাচার্য
যতোই টেনেছি জল,
ভেতরে জমেছে স্মৃতি, নিরন্ন উৎসব
সংরাগে ধরেছি হাত,
কুম্ভরাশির নীরব অভিমান
নীল আরো জল, ঘন সঙ্গীতে রাত্রি হয়েছে নিবিড়, গূঢ়
তামরসে যতোই খুলেছি
দ্রৌপদীর শাড়ি
চেয়েছি সঙ্গম,
বীতরাগে দীর্ঘ হয়েছে রাত্রি
ক্লান্ত কৌরব,
দুঃসহ এই দুঃশাসন ।
১৭.০৫.২০১৮
রামেশ্বরকে আমরা ক’জন ভালোবেসে ডাকি ‘পণ্ডিত’ । সে শুধু হাসে । তাঁর হাসি সকলেরই চেনা । অর্থাৎ পরে সুযোগ
পেলেই মারবে । সে আমাদের সম্পদ । আজ আমরা তাঁর আরও দু-টি কবিতা পড়ব । দ্বিতীয়টি
হয়ত কোন বিশেষ ঘটনাকে মনে করিয়েও দিতে পারে । কবিতা কখনো ইতিহাসের চেয়েও স্মরণীয়
হয়ে ওঠে । মানুষের গান কখনো ব্যর্থ হতে পারে না ।
লজ্জা
রামেশ্বর ভট্টাচার্য
আমি লজ্জাকে ভেবেছি
সুসময় । আত্মহত্যার
বিন্দু বিন্দু ঘাম
লেগে আছে আমার চিবুকে
আমি নিষ্ঠাকে ভেবেছি
সুবিনয় । তোমার
বিশ্বস্ত হাত ঝুলে
আছে বিদায়বেলার রোদে
আমার প্রসারিত দু’বাহুর ফাঁকে এখন শূন্য
মহাকাশ । অগুণতি
নক্ষত্রের ভিড়ে আটকে
আছে পূর্বপুরুষের
ছিন্ন ভিন্ন হাত-মুণ্ডু-পা
সতীর দেহত্যাগের
অলৌকিক ছবির মতো ভেসে ওঠে
বাহান্ন পীঠ । আমি
স্বপ্ন দেখি আরো
লজ্জাহীন । নেমে আসছে
ছত্রী বাহিনী আকাশ
থেকে । সমতল পৃথিবীর
বিষাক্ত বীজাণু ছড়িয়ে
পড়ছে কোলাহলহীন শীতল
ছায়াপথে
ঘুম থেকে জেগে উঠে
দেখি, তুমি দাঁড়িয়ে আছো
মৃত্যুমুখী নীলাভ
লজ্জা
আমি প্রেমকে
ভেবেছিলাম নিরীশ্বর
আর, আত্মহননের বিন্দু বিন্দু ঘাম
লেগে আছে তোমার
চিবুকে
*******************
গান্ধী ময়দানের দিকে
রামেশ্বর ভট্টাচার্য
এক ঝাঁক গুলির শব্দে
থেমে থাকে না
মানুষের গান
একেকটি গুলির শব্দের
পর দীর্ঘ নীরবতা
তারপর আবার গুঞ্জন,
শুনশান ভেঙে
জেগে ওঠে তারা
উঠে দাঁড়ায়
হাঁটে, হাঁটতে থাকে
একটি মানুষ, আরেকটি মানুষ, এইভাবে
একশত, হাজার, লক্ষ মানুষের ভিড়
গান্ধী ময়দানের দিকে
হেঁটে যায়
ক্রমাগত সাতটি গুলির
পর দীর্ঘ নীরবতা
রাতের আকাশে
প্রহরী
সাতটি তারা স্থির ।
১৮.০৫.২০১৮
দু-দিন তাঁর কবিতা
পড়ার পর, কবি রামেশ্বর
ভট্টাচার্য সম্পর্কে আর কিছু বলা যে নিষ্প্রয়োজন, অন্তত নবীন পাঠক ও কবিদের কাছে, এ কথা বলাই বাহুল্য । তবু বলি, এ কবি এক আগুন সময়ের বিস্ফোরণ !
যুদ্ধ
রামেশ্বর ভট্টাচার্য
যে-কোন স্থান থেকেই
কোলাহল শুরু হতে পারে
সহজেই পরাজয় হবে এমন
মুদ্রা শিখে নিতে পারো
কুকুর-ভঙ্গিমায় ক্রমশ
লক্ষ্যবস্তুর কাছাকাছি চলে যাও
এবং প্রস্তুতকালীন এক
দীর্ঘ নীরবতা তুমি অনুভব করো
দেখো, স্বাভাবিক উত্তেজনায় থরথর কাঁপতে থাকবে
তোমার
আজন্মলালিত সংস্কার ও
শেকড়-বাকড়
অন্তর্গত ক্রোধ ও
বহ্নি
যুদ্ধ শেষে উচ্চাবচ
ধ্বনি হবে— ‘জয়’ । মানুষেরই জয় হয়
যুদ্ধ শেষে নীলধ্বজ
পতাকায় চিহ্নিত হয়, প্রকরণগত
এই সশস্ত্র কৌশল
**************
দ্বা সুপর্ণা
রামেশ্বর ভট্টাচার্য
১.
আমাদের শরীরের ভেতর
পাখির শব্দ শোনা যায়
একটি পাখি চন্দ্রাহত
হয়ে ফিরে আসে, বিজন
জলাশয়ের পাশে পাখিরা
বিমান অবতরণের
ভঙ্গিতে নামে,
আবার চলে যায় দূর সাইবেরিয়ার পাখি
এক জীবন থেকে অন্য
জীবনে পাখিদের অভিযান
আমাদের ভালো লাগে
পাখিরা উড়ে যায়,
উড়ে উড়ে যায় আরো গভীরে
হিরণ্ময় শরীরের ভেতর
পাখিদের পালক ভাসে
২.
আমাদের শরীরের ভেতর
একটি পাখির স্পর্ধা-শহীদ
শরীরের ভেতর দুইটি
পাখি
তিনটি
পাখি
হাজার
পাখির কলরব শোনা যায় ।
১৯.০৫.২০১৮
শুধু প্রাসঙ্গিক নয়,
ক্ষুরধারও বটে । প্রাসঙ্গিকতা তথা
পুনঃপাঠযোগ্যতা যেকোনো কবিতার একটা বড় গুণ, বা কখনো মনে হয় প্রাথমিক গুণ । দেখা যাক এবার আজকের পাঠ আর
প্রতিক্রিয়া । আমার নিজের পাঠাভ্যাস নিতান্তই তুচ্ছ, তাই বার বার সকলের সঙ্গে পড়তে বসি ।
স্নায়ুতান্ত্রিক
মৃত্যুর দিকে
রামেশ্বর ভট্টাচার্য
মানুষের মুখ ক্রমশ
নিচু স্বর
কথা বলে ষড়যন্ত্রের
দুঃস্বপ্ন দেখে কেউ,
ভালোবাসার
কথা বলে, মানুষের চোখ ক্রমশ
নিম্নগামী জলের কথা
ভাবে
মানুষের হাত ক্রমশ
মৃত্যুর
দিকে চলে যায় ।
অনিশ্চিত এক
নীল গহ্বরের কাছে
কতিপয় মানুষ
বসে থাকে চিরকাল
মাথার ওপরে ভেসে যায়
মেঘ
মেঘেরও ওপারে সাতটি
মৃত যুবক
উড়ে যায় নগর-সভ্যতার
দিকে আর
দেখে কতিপয় মানুষ
চিরকাল
বসে থাকে অনিশ্চিত এক
নীল গহ্বরের কাছে ।
***
*** ***
রতিবিলাপ জানে না
রামেশ্বর ভট্টাচার্য
রতিবিলাপ জানে না
নবোঢ়া বধূ
মাতৃক্রোড়ে প্রাচীন
সন্তান ঠিকঠাক খুঁজে
নেয় বিসর্গবিন্দু ।
প্রতিটি জ্যোৎস্নায়
জোয়ার রেখে যায়
পশ্চাতে ঝিনুক স্মৃতি,
সহবাসে যায় যদি
রিক্ত যামিনী,
পড়িয়া থাকে সেথা কন্ট্রাসেপ্টিভ
লুপ্ত উপমা শুধু
রতিবিলাপ জানে না
নবোঢ়া বধূ
স্নেহ থাকে শিয়রে
আড়াল ।
মায়ের মুখ ভাসে
প্রতিটি অঘ্রানে ।
খেলাচ্ছলে যদি দেখাও
অকুস্থল, ঈর্ষা জাগে
লোপামুদ্রার শরীরে গভীরতা আছে
এই বসন্তে মৃত্যু হবে
জেনেও
শিশুমুখে তুলে দেবে
স্তনবিন্দু
রতিবিলাপ জানে না তবু
অসহায় বধূ ।
***
*** ***
শহীদ মিনারের নিচে
রামেশ্বর ভট্টাচার্য
এবার কথার খই ফুটবে
মুখে
যুদ্ধ হবে মুখোমুখি
যুদ্ধে জয়ী হবে কেউ ।
সশস্ত্র উল্লাসে
বেজে উঠবে বিউগল্ ।
ধীরে ধীরে
পতাকার লাল রঙ আর
হাতুড়ি
কাস্তে সহ নেমে যাবে
গোধূলি ।
আলোর ফোয়ারায় ভাসবে
মিনার, শহীদের স্মৃতির পাদদেশে
ছড়িয়ে দেবে না কেউ
লাল গোলাপ
যখন যুদ্ধ হবে
মুখোমুখি
ঘুমে ভাসবে নীল রুমাল
মন খারাপ করে ফিরে
যাবে
সাইবেরিয়ার পাখি
যুদ্ধ হ’লে কথার খই ফোটাবে চতুর বুদ্ধিজীবী ।
২০.০৫.২০১৮
১৯৯৯ সালে বেরোয় তাঁর
‘উপদ্রুত বসন্তে’, আর ২০১৩ সালে ‘সাদাশালিকের
ঝাঁক’ কাব্যগ্রন্থ । আজ এই
দ্বিতীয়টি থেকে পড়ছি কয়েকটি কবিতা । খুব ভালো লাগছে আর উৎসাহ বোধ করছি বোদ্ধা
পাঠক/পাঠিকাদের সুন্দর আলোচনায় । আমি কবিতাগুলো এখানে পাঠ করার আগে কবির অনুমতি
নিইনি । তাই সংকোচ হচ্ছে, কে
জানে কবি কী ভাবছেন এই অনধিকার চর্চায় । কিছু ভাবলেও নিজেকে অপরাধী ভাববো না,
কারণ কবিতা পাঠের অধিকার সকলেরই রয়েছে ।
তাই না ?
তিতাসনামা-১
রামেশ্বর ভট্টাচার্য
‘তোমাকেই
চাই’ বলে কেউ গান করছে সারারাত,
তখনও তিতাসের জলে
ভাসেনি ভেলা
বেহুলার, শুধু পূর্ণিমার চাঁদ ঝুলে থাকে গহনা
নৌকার গায়ে
এই মেঠোপথে কে কার
অনুগামী
বোঝা কঠিন, আঁচলের প্রান্ত যে
কখন ভিজে গেছে জলে কে
জানে,
অথচ তোমাকে ছুঁতে
গেলেই
বাঁশঝাড় থেকে নেমে
আসে একঝাঁক কাকাতুয়া
***
*** ***
তিতাসনামা-৩
প্রগতি রোডের কাছে
এসে ‘প্রান্তর’
স্থির ফ্রেমে আটকে
রেখেছে কেউ,
যে তরুণ শিল্পী
এইমাত্র মাথা
উঁচু করে চলে গেল,
তার চোখে
ছিল হিজলবনের ছায়া,
তিতাস
সে দেখেনি কখনও,
জলরাশি
যে ছুঁয়েছে সীমানার
পাশে
তাকে পাহাড়ি তিপেরা
বলে ডাকে অনেকেই
একটি নৌকা খুব
তাড়াতাড়ি জল
কেটে চলে গেল,
আমার কথা কি শুনেছে,
কৃত্তিকা ?
***
*** ***
তিতাসনামা-৯
বাথটব থেকে উঠে এসে
জলকন্যা
গায়ে নীল নরম
তোয়ালে-আকাশ
যেভাবে লাফিয়ে নামে
জল-মাকড়সা,
ক্যানভাসে কিছু রং
এখনও দেবার বাকি
রেখা বা দীপালি ন্যুড
মডেল হতে পারবে কিনা
সে-কথা জলের ধারে বসে
ভাবছে কেউ
বালিতে ছবি আঁকছে
ঘুণপোকা
নদীর মতো আত্মভোলা সে
নয়, তবু
চকোরচকোরির প্রণয়
জেনেছিল তপন ও নলিনী
***
*** ***
তিতাসনামা-১১
তোমাকেই ভালোবাসি
তোমার চোখে মিশে আছে
ঘন টিয়া-রং
তোমাকেই ভালোবাসি
তোমার অনাবৃত বামদিকে
ফুটেছে শাপলা
তোমাকেই ভালোবাসি
তোমার নাভির চারদিক
ঘিরেছে কাঁচপোকা
তোমাকেই ভালোবাসি
তোমার জানুসংযোগে
নেমেছে বৃষ্টি
তোমার চীনাংশুক
ঢেকেছে লজ্জা
তোমাকেই ভালোবাসি
তিতাসের জলে এখনো
তুমি স্বচ্ছমীন
(বসন-ভূষণ
খুলে তুমি কি যেতে চাও
স্যামসাঙ টিভির ভেতর ?
‘কথা
বোলো নাকো ওই যুবকের সাথে’
ব্লেয়ার বা বুশ)
আমি তোমাকেই ভালোবাসি,
হে জলবালিকা
***
*** ***
জলডুবি
রামেশ্বর ভট্টাচার্য
১.
মজে যাওয়া নদীটির
অসাধারণ
দাপট দেখে চমকে
উঠেছিলাম, জল আর
কাদায় মাখামাখি করে
আমাদের নিরাপদ
উঠোনটি ডুবিয়ে
দিয়েছিল, জলোচ্ছ্বাসে
মানুষের ক্রোধ আর
হতাশা মিশে
থাকলে বিনির্মাণ তত্ত্বের কথা
ভুলে যাবে প্রবুদ্ধ
। চিত্রকল্পগুলি
এখন তালগাছের শীর্ষে
দোল
খাবে অবিরাম, জলে ডুবে যাবার
আগে বালিকাদের কাছে
সরল মোবাইল সন্দেশ
পাঠাব,
নুন, কাপড় বা চুম্বন যা খুশি
পাঠাও তাড়াতাড়ি
২.
হেজেমেজে গেলেও
আমাদের শহরের
প্রিয় কাটাখাল,
দেখো জেগে ওঠে,
জেগে উঠছে বারবার,
হলংসিকিতে
বৃষ্টি হলে জলজ যৌবনে
টলটল
মজে যাওয়া এই ছোটো
কাটাখাল
এবার মোবাইলে জেপিজি
ফাইলে
ছবি ভেসে যাবে,
জলমগ্ন হঠাৎ কলোনি ।
২১.০৫.২০১৮
এত দ্রুতপাঠে হয়তো
কবিতার কাছাকাছি যাওয়া যায়, তবে
একেবারে ভেতরমহলে ঢুকে যাওয়া আরও পাঠ যে দাবি করে, এতে কোন সন্দেহ নেই । আজ এই কবির পাঁচটি কবিতা পড়ে আপাতত বিরতি
।
শরীর জুড়ে নামছে
বৃষ্টি
রামেশ্বর ভট্টাচার্য
কাল ছিলে তুমি গোলাপি
আভায় মশগুল
আজ হলে তুমি
নীলাম্বরী আকাশ
বিদ্যুৎ ঝলকে হাসলে
তুমি লাজে
তবু দুঃখমীন ভরা
বুকের মাঝে
একদিন দেখো ভাঙবে
মনের ভুল ।
সাহসী হলে ছুঁয়েছ
তুমি কুন্তল
আকাশ থেকে নেমেছে
হিমানী চাঁদ
নাভিতলে ভরে আছে
মায়াবী গোপন জল
গর্ভবতীর বুকের ভেতর
হঠাৎ মেঘ, পরমাদ ।
শিয়রের কাছে ছিলেন
বসে কিছুক্ষণ
মনে হল সময় স্থির,
অনন্ত চিরকাল
বুকের ঘন চুলে কাটলে
ইলিবিলি
শরীর জুড়ে নামছে
বৃষ্টি, সন্ধে বা সকাল ।
কানাগলি খুঁজে পথ যে
হারায়
কোথায় ত্রিবেণী সঙ্গম
হামাগুড়ি দিয়ে পথ যে
মাড়ায়
হারিয়েছে সে সংযম ।
চকাস চুম্বনে মেলেছে
ডানা আকাশ শব্দময়
নীবার ধানে টইটুম্বুর
গর্ভ-হিরণ্ময় ।
কোথায় হবে যে দেখা,
বিন্দাস শান্ত প্রহর
একলা ঘরে শুনছি কথা,
বাৎসায়নের রীতি
আর, এক লহমায় খুলছে গায়ের চাদর
মন ভালো নেই, মন ভালো নেই, উদাস মতিগতি ।
এবার কলসি থেকে ছলকে
উঠে কৃষ্ণা গাভীর ক্ষীর
কন্দরসে ডুবছে যেন
জানুর গভীর
পরাঙ্মুখীর বুকে বাজে
পরকীয়া বাঁশি
উথালপাতাল হৃদয়-রাধা,
কৃষ্ণ যে ভাগচাষি ।
***
*** ***
হৃদয় জুড়ে
রামেশ্বর ভট্টাচার্য
যারা চেয়েছিল আগুন,
তাদের
ফিরিয়ে দিয়েছি সব
শীতল মার্বেল
যদি খেলাচ্ছলে খুলে
ফেলো সব আভরণ
তাহলে এসো ঝাঁপ দেই
রূপসায়রে
চাকমা বালিকা যদি
মাছরাঙা পাখি
হয়ে উড়ে যায় ভাংমুনের
দিকে, তবে
এলোমেলো জীবনে কী লাভ
? ছন্দপদ্যের
শাসনে নদী তো ফিরেই
যাবে মোহনায়
জীবনের টানে, শুধু কি মেঘের কাছে
মধুময় মন্দক্রান্তা
ভাসে ? শুক্লা
যামিনীরও একদিন তো
বিরাম আছে
রতির শেষে, দেখো অনন্ত যতিতে
তবু ম্রিয়মাণ যে,
তাকে জাগিয়ে দিতে
সব আগুন, হৃদয় জুড়ে জ্বেলেছো যোগমায়া ।
***
*** ***
অহল্যা
রামেশ্বর ভট্টাচার্য
তুলো বীজের মতো ছড়িয়ে
পড়ছে
যে মৃদু হাওয়ায়,
কানাকানি হলে
তার কথাও শোনা যায় ।
হিরণ্ময়
গর্ভ থেকে যে উঠে
এসেছে, তার হাতে
গুঁজে দাও স্বপ্নের
শোকগাথা ।
অনন্ত নক্ষত্রের পথে
হাঁটতে হাঁটতে
তোমার কাছ থেকে শুনে
নেবো ইদিপস ।
সে সিঁড়ি নেমে গেছে
কৃষ্ণপক্ষের
দিকে, সে-দিকে প্রতিরোধের ছায়া
ফেলেছে মণিপুরের
দ্রোহী রমণীরা
তুলোবীজের মতো ছড়িয়ে
পড়ছে
চারিদিকে, হে প্রেম, হে দ্রোহ
লোকটাক জলের গভীর
থেকে
উঠে আসছে সব মীনকেতন
।
***
*** ***
চরাচর
রামেশ্বর ভট্টাচার্য
একদিন নদীও সরে যাবে
বহুদূর
জেগে উঠবে চরাচর ।
একদল
মানুষ আরেক দলের দিকে
তাকিয়ে
তাক করে আছে রাইফেল,
মাঝখানে
উড়বে বিবর্ণ পতাকা,
এই বৃষ্টিহীন
রাতে জেগে দুই কবি,
তারা জানে
বর্ণমালার মেঘ নেমে
আসবে
মুহুরি নদীর তটে
মানুষের জটলা থেকে
নদীর
দূরত্ব ক্রমেই বাড়ছে
বিছানায় ফেলে গেছে
চুলের কাঁটা
আয়নায় লেগে আছে লাল
টিপ
এখানে নদী বা নারী
কাছাকাছি ছিল সারারাত
***
*** ***
মেধাবী বালকের স্বপ্ন
গদ্য
রামেশ্বর ভট্টাচার্য
তিতাসের পার থেকে যে
বালক অবাক
বিস্ময়ে ছুটে আসছে
পাহাড়ের দিকে,
রূপালি মাছের দিকে
তাকিয়ে বুঝে ফেলেছে
জলের ভেতর থেকেও মীন
কেবলি পিয়াসী হয়,
বুকের ভেতর ভালোবাসার
আগুন জ্বালিয়ে
রেখে জেগে থাকে
নিশিদিন, যে জাগে
আর জাগিয়ে রাখে,
ভালোবাসার তাঁকে,
জয়ী হয়
বা তর্কযুদ্ধে হেরে
যায়, শব্দশৈলীতে
শানিত করে নেয়
কবিতাকে, প্রেয়সীর নম্রনত
মুখের দিকে তাকিয়ে যে
শঙ্খচিলের স্বপ্ন দেখে
ভালোবাসো তাঁকে
এমন বিষণ্ণ দিনে শুধু
তাঁকেই ভালোবাসা যায়
তিতাসের পার থেকে
ছুটে এসে যে বালক
কলেজ লেকের জলে নীল
আকাশ দেখেছে ।*
*কবি
অনিল সরকারকে
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন