।। শিবানী ভট্টাচার্য দে ।।
কত বছরের বসবাস
হলে নাগরিক হয়?
কয়টা প্রজন্ম হলে
গত ?
এক জন্মেই দেশ
ভেঙ্গে তিন রাষ্ট্র গড়ে,
অপেক্ষায় আছে আরো
কত ।
নিত্য ভাঙ্গা রাজ্য, উপরাজ্য, কৃষ্টি, গোষ্ঠী---
খন্ড খণ্ড পরিচয়ে
কীভাবে ‘নিজস্ব’
বলে আগলাও তুমি সীমা
এতটা প্রত্যয়ে?
সংখ্যার কি এত জোর? তোমার সীমার
এধারে এখন আছে যারা,
কখনো কি ছিল না
ওধারে, অথবা তোমার
পূর্বপূর্ব
নারীপুরুষেরা ?
খাদ্য আশ্রয়ের
জীবিকার প্রয়োজনে,
জীবনের শান্তির
আশ্বাসে,
লোভের হাতছানি
কিংবা ক্রোধী আগ্রাসনে
মানুষ চলেছে দেশে
দেশে
নীরব সরব
প্রব্রাজনে চিরবহমান কালে---
ইতিহাস কি সব কিছু
বলে?
প্রব্রজিত নিয়ে
আসে নতুন উৎসাহ,
দেশ ভরে নতুন ফসলে।
কীভাবে অস্বীকার
করে আগতের অবদান,
অধিকার করছ হরণ?
কিছু বেশিদিন ধরে
বসত তোমার এইখানে,
শুধু এইটুকুই কারণ!
অন্যায়ে রচেছ আইন
তোমার ভূমির অহংকারে
হাতিয়ার হয়েছে
উগ্রতা ।
বাঁচবার অধিকার
ছিনিয়ে নেবার যত ছল
হিংসাই বলবে শেষ
কথা?
কত প্রাণ নষ্ট হলে
তোমাদের খুলবে চেতনা?
সরকারি, স্ব-উদ্যোগে কাজ,
কয় প্রজন্মের জন্ম
মৃত্যু, কিছুই যথেষ্ট নয়,
শংসাপত্র অর্থহীন
আজ!
মানুষ কখনও নয়
উইপোকা, ইঁদুর, কুকুর।
হীনম্মন্যতার দাও
গাল।
মনে রেখো তোমাদের
কর্মফল-পরিণামে
গোকুলে বাড়ছে
মহাকাল।
~~০০~~
এন আর সি
হাতে অস্ত্র, ক্ষমতা আমার সকলই মজুত,
ছলে বলে সংখ্যা নিয়ে পেশীও মজবুত।
ভিন্রাজ্যে কি জবরদস্তির কাঁটাতারের পার
বা এ প্রদেশটায়ই জন্ম তোদের বাপের মার
দরকারি সব তথ্য তোদের। অন্যরকম বোল
অন্যরকম আচার ব্যাভার তোদের যত গোল।
নাহয় তোমরা বন কেটেছ কয়েকপুরুষ ধরে,
নদীচরে ফলিয়েছ ধান বন্যা ধসে লড়ে
চাবাগানের তোলা পাতায় দেশের উপার্জন,
ব্যবসা দোকান করে দিচ্ছ দিনের জোগান---
সেসব নাহয় হল, কিন্তু নও তো খিলঞ্জিয়া,
তোমরা শুধু কুলি, বঙ্গালি, তোমরা হলে মিয়া।
নাগরিক হবে না তুমি, খাটতে পার, খাট।
ইচ্ছে হলে রাখব, না হয় বলব, এখন ফোট।
প্রতিবাদ আর প্রতিরোধে ধরবে নাকো জল,
দাগিয়ে দেব ডি-ভোটার, ডিটেনশনে চল।
আমাদের সমান অধিকার চাইছ, সাহস কী!
মোক্ষম পথ পেয়েছি এবার, লাগু এন আর সি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন