।। সুপ্রদীপ দত্তরায়।।
ইকেবানা
মানেই পুষ্পশৈলী
ফুলকে
বাঁচিয়ে রাখার নাম ।
ইকেবানা
একবুক মুগ্ধতা
ইকেবানা
ভালোলাগার অন্য একটি নাম ।
প্রথম
যেদিন দেখি তাকে ভালবেসেছিলাম।
লোকে
তাকে কত নামেই ডাকে
নামের
সাথে আদিখ্যেতা নানান আদুরেপনা
আমি
তাঁকে নাম দিয়েছি শুধুই ইকেবানা ।
ভাবতে
পারেন নাম শুনে তার
কেমনতর
রমণী ,
সে
কি চীন দেশী নাকি
জাপানী,
নাকি
কলিকাতার কোন বনেদি পাড়ার বিত্তশালী কান্তা
আমার
ইকেবানা কিন্তু তেমনটি নয়, গ্রাম্য
মেয়ে
পলারপারের
খালপারেতে সৈকত কন্যা শান্তা।
আমি
ওকে ইকেবানা ডাকি
ও
দিয়েছে আমাকে আনন্দ নাম ।
আমি
সুমন্ত নাকি সবার জন্যে, একান্তে শান্তার
আনন্দ
একান্তই ওর, শুধুই
ইকেবানার ।
মাটির
ঘর, টালির চালি
নিকানো
একটা পরিচ্ছন্ন উঠোন
কোনে
নয়নতারা,
গাঁদা ফুলের ঝোপ
ঈশান
কোনে জোড়া চাঁপা গাছ
বছর
ভরা উঠোন জুড়ে তারই মিষ্টিবাস।
ইকেবানা, ভালবাসা
আমার, ওখানেই
ঠিকানা তার
প্রথম
থেকেই ওখানেতে, প্রতিদিন বারোমাস ।
যেদিন
প্রথম দেখা হলো, তখন সে কিশোরী
তখনও
সে ফুলের কুঁড়ি, একটি প্রতিশ্রুতি
বুকে
সবে ভাঁজ পড়েছে, যৌবনের মাত্র সূত্রপাত ।
বারুণী
মেলায় আলাপ আমাদের, সেটাই শুরুয়াত।
জীবনানন্দ
পড়েছি আমি , পড়েছি বনলতা সেন
রোমে
রোমে জেনেছি, তবু স্থির নিশ্চয়
আমারই
ইকেবানা বুঝি সুন্দরী শ্রেষ্ঠ হয় ।
চুল
তার নয় কোন অন্ধকার বিদিশার নিশা
মুখ
নয় শ্রাবস্তীর কারুকার্য
তবু
দিগন্তে রক্তিম আভায় যখন দেখেছি তাকে
মনে
হয়, স্বর্গ থেকে নেমে আসা অপ্সরা রমণী
এই
বুঝি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাস্কর্য ।
তখনও
সে চাঁপাকলি, তাতেই মুগ্ধতা
আমার
সাথে সেই প্রথম সখ্যতা
।
তারপর
চলা শুরু, যাত্রা জাদু দরজায়।
ঘন
ঘন দেখা হয়, নানা ঠিকানায়,
ভালোই
ছিলাম।
ভালবাসাকে
আমি ভালবেসেছিলাম।
পাখির
কুজন আহা , কি দারুণ মিষ্টি
ফুলে
ফুলে নানা গন্ধ স্রষ্টার
সৃষ্টি ,
আমি
জেনেছিলাম ।
পৃথিবীটা
সুন্দর,
গাছগুলো অদ্ভুত
আশেপাশে
যত প্রাণী, সব দেবদূত ।
অপরূপ
মায়াজালে আমি ডুবেছিলাম ।
তারপর
একদিন,
মাস দুই পর, বর্ষাতি সন্ধ্যায়
আমরা
বেড়াতে গেছি দুর নিরালায় ।
বর্ষার
ভাব ছিল,
তবু তখনও আসে নি
এমনটা
ঘটতে পারে কখনো ভাবিনি।
সবেতে
আমরা গিয়ে ডলু
তে পৌঁছেছি
দুপাশে
চা গাছ আর সম্মুখেতে দিঘী
একটু
বসেছি মাত্র হঠাৎই
বৃষ্টি
টুপটাপ, ঝমঝম,
একি অনাসৃষ্টি
চারপাশে
চা গাছ আর উপরে আকাশ
অসহায়
দুজন আমরা, শুধু দীর্ঘশ্বাস
দুরে
ঐ রাস্তা পাশে এক বটবৃক্ষ দাঁড়িয়ে
তারই
ছায়াতে আমরা গায়ে গা লাগিয়ে ।
ভিজে
গেছি দুজনেই, যাকে বলে কাক ভেজা
অবিশ্রাম
বৃষ্টিতে ঠাণ্ডাও লাগছে গায়ে
ভাবি
অসময়ে বেরোনোর এই বুঝি সাজা
পাশে
আমার ইকেবানা
ভেজা গায়ে কাঁপছে
ভয়ে
ভয়ে বললে, ভারি ভয় লাগছে।
আমি
বলি, ভয় কি? আমি তো আছি।
ভরসা
দিই বটে , থামলেই বাঁচি ।
চারপাশে
অন্ধকার,
বৃষ্টি পড়ছে
ঝিঁঝিঁ
পোকা ঘরে বসা, কোলা ব্যাঙ ডাকছে।
বৃষ্টি
পড়ছেই,
থামবার আশা নেই
ভরসার
ছলে ওকে,
কাছে আমি টেনে নিই।
ইকেবানা
কাঁপছে থরথর, থরথর
বুকে
ওকে চেপে বলি কিসে তোর এত ডর
যত
ওকে চেপে ধরি, আরো আরো ইচ্ছে জাগে
তখনই
বুঝি কবি, কেন এত বৃষ্টি মাগে।
বারুদে
আগুন জ্বলে , সেকি এক উত্তেজনা
নারী
শরীর এত কোমল ? স্বপ্ন নাকি কল্পনা?
বুকেতে
ইকেবানা আমার, অনাস্বাদিত ঘোরে,
অসাবধানে
ধরে রাখি, একটু বোধহয় জোরে।
আমারই
বা দোষ কি, শরীর মানে না
সারা
শরীর ছেয়ে গেছে নিষিদ্ধ কামনা
রক্তে
যে কিসের স্রোত, এতো উত্তাপ ধরে ?
কি
মনে হতেই আমি, ছাড়ি হালকা করে,
অনিচ্ছায়, অজান্তে,
তবে সে
এক নিষিদ্ধ আনন্দ
ঠোঁটে
তার ঠোঁট রাখি, ভালবাসার নিবন্ধ ।
তারপর
দিন কুড়ি আর
দেখা নেই
জ্বরে
আমি বেঘোর প্রায়, বিছানাতে রই
মনে
সূক্ষ্ম অভিমান, একবারও এলো না
যদি
কিছু ঘটে যায়, যদি আমি বাঁচি না?
আমি
তার কেউ নই ? একবারও ভাবলে না ?
খবর
তো নেওয়া যায়, নাই এলো বাড়িতে
বাড়িটা
চেনে কি ও-- ? ফোনে তো নেওয়া যায়-- ।
ফোন
কি এসেছিল --? না: কল লিস্টে-নাম নেই!
কি
এমন ঘটে গেল, বলা নেই, কথা নেই ?
ইকেবানা
তুমি জানো না সত্যিটা----
তোমার
জন্য আমি হিমালয়
চষেছি
হিমবাহ
থেকে এনেছি হিমকমল
আমি
সাগর কেটে মুক্তো এনেছি
মৃগনাভি
বিন্ধ্যাচল।
আমি
বাতাসের বুকে গান লিখেছি
বৃষ্টির
পায়ে ছন্দ,
আমি
বর্ষাতে ফুলদোল খেলেছি
এনেছি
বেলি,
আকন্দ ।
চাঁদকে
বলেছি ঘুমিও না তুমি,
আমার
এই জনারণ্যে
ভয়
পেতে পারে, আমার ইকেবানা
একটু
আলোর জন্যে।
ইকেবানা, আমার
ইকেবানা
প্লিজ, একটিবার এসো
মাথায়
আমার হাত ছুঁয়ে দাও
শিওর
পাশে বসো।
এভাবেই
কাটছিল দিন, ভারি
উচাটন
তখনি
জানতে পারি, এমন অঘটন
কাগজে
ছবি তার,
নিচে ছোট্ট লেখা
,
ফিরে
এসো শান্তা মা---ইতি অনুলেখা ।
স্কুল
থেকে ফিরছিল, বৃষ্টিতে ভিজেছে
সেই
থেকে জ্বর তার বাজে ভাবে ধরেছে
কেউ
বলে ম্যানিনজাইটিস, কেউ বলে অন্য
গ্রাম
গঞ্জে চিকিৎসা কি? সবটাই
জঘন্য ।
শেষ
দুটো দিন শুধু ভুলভাল বলছিল,
ভিতরে
ভীষণ কষ্ট, দুচোখে জল
মাঝে
মাঝে বলছিল, আনন্দকে বল ।
আনন্দকে
খুঁজছিলে তুমি? তোমার
আনন্দকে?
আমি
তো জানতাম না ইকেবানা,
কেউ
বলে নি আমাকে ।
একবার
যদি বলতে সুমন্তকে ডাকো--।
আমাকে
যে আনন্দ ডাকো, কেউ তো জানে না ।
বিশ্বাস
করো ইকেবানা,
আমার
তো জ্বর ছিল, কিছুই জানিনা ,
কেউ
বলেনি আমায় ---!
নইলে
তোমার এই দুঃসময়ে --।
অন্তত শেষ দেখাটা
যদি -হায়---।
আজ
তোমার জন্মদিন ইকেবানা --
তাকিয়ে
দেখো আমাতে,
এই
শুভ্রকেশী অকৃতদার আনন্দকে
জীবনের
শেষ প্রান্তে এসেও তোমারই প্রতীক্ষায়।
লোকে
বলে আমার ভ্রম, তুমি নেই
আমি
বলি, তুমি আছো এই আমাতেই ।
আমার
দেহে মনে এখনো তোমারই স্পর্শ পাই
চোখ
বুজলেই আমি তোমাকে দেখতে চাই ।
আমি
জানি তুমি আসবে ইকেবানা
তুমি
আসবে সেই সন্ধিক্ষণে
হাত
দুটো বাড়িয়ে ধরবো দুজনাতে ---।
আমি
আর ইকেবানা
আমি
যে তোমারই প্রতীক্ষাতে ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন