“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

বৃহস্পতিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৮

বিপ্লব

।। সুপ্রদীপ দত্তরায়।। 














ম্যালা বিপ্লব বিপ্লব করিস না তো
বিপ্লব কি কারো হাতের খেলনা ?
ওসব কথায় রক্ত গরম হয় না আমার
 
ওটা
  তো আর রাস্তার টেপহীন সাপ্লাই কল না।
তোদের দূরত্ব আর দৌরাত্ম্য এখন সবার জানা
কঠিন কঠিন শব্দগুলোতে পান্তাভাতও জোটে না।
বিপ্লব এখন ঘরে ঘরে নয়, ঠাণ্ডা ভাড়ে,
 
চায়ের আড্ডায় কিংবা মুড়ির ঠোঙায়
কাটা পিয়াজ আর ভেজা আলুসিদ্ধতে
অযত্নে মিইয়ে যাওয়া মুখরোচক খাবার
 
ফাস্ট ফুডের জমানায় যা একদম চলে না।
কিন্তু এমনটা ছিল না, বিশ্বাস কর্,
আমাদের নিজেদের চোখে দেখা---।
একটা দিন ছিল যখন মনে আস্থা ছিল,
 
বুকে প্রত্যয় আর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল
 
মুঠোহাত ঊর্ধ্বে তুলে বলা যেতো
বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক ।
আজকাল মনে সেই জোর নেই
নামটাতেই
  মুডটা খারাপ হয়ে যায়, 
একটা বিড়ি ধরা দেখি খুড়ো------।
একটুকু বিশ্রাম দেই এই মনটায়।
মাঝে মাঝে জানতে ইচ্ছে করে ,  
কি ভাবিস বলতো তোরা ,
 
বিপ্লব কি কারো হাতের মোয়া ?
যে কেউ নিয়ে
  বসে থাকবে তোদেরই জন্যে।
সাজানো থাকবে আলমারির থাকগুলায়
 
তুই আসবি জামাই বাবাজি গোল গোল পায়।
তুলে নিয়ে যাবি
  তোর পছন্দ অনুযায়ী, 
এমনটা কখনো হয়? কখনোই নয়।
বিপ্লব আসলে একটা প্রক্রিয়া , বিশ্বাস
 
একটা কল্যাণকারী স্বপ্নের জয়।
একটা কঠিন অনুশীলন শেষে
 
আগ্নেয়গিরির আগ্নেয়োৎপাতে কঠিন বিস্ময়।
 
বিপ্লব কোন অলীক কল্পনা বা,
 
অসম্ভব কিছু নয় , তপস্যার অন্য নাম।
তিলে তিলে যত্ন করে তৈরি করা ক্ষেত্র ।
প্রতিটি অন্তরে যে ভিসুভিয়াস জাগ্রত
 
তাকে স্থাপন করে হোমকুণ্ডে, পবিত্রতায়,
 
নিজেকে নিজের
  আত্ম বলিদান ।
বিপ্লব জেনে রাখিস সত্যি অর্থে
আত্মত্যাগের অপর একটি
  নাম ।
তোদের তথাকথিত নেতাদের মত
 
আখের গোছানো লবিবাজীর লড়াই
আর কাঁদা ছেটানোর রাজনীতি নয়।
আন্দোলনের নামে মানবিক অবক্ষয়।
আখেরে ক্ষতিটা হয়েছে কাদের ? ওদের তো নয়,
 
ওরা তো
  হাড্ডি চোষা, সিঁদুরে আলতা পা।
সাপের পাঁচ পা দেখা জন প্রতিনিধি সব
বিসর্জনের বাজারে দিব্যি আনন্দ
  স্বরূপা।
ক্ষতি যা হয়েছে সব আমাদের,
 
আমাদের মত শ্রমজীবী মানুষের
 
আমাদের জন্য বলার মত
  কেউ রইল না আর ।
টাকার দাম কমছে, পেট্রোডিজেলে বাড়ছে
রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি জলের দরে বিকছে
কল কারখানা বন্ধ হচ্ছে, তাতে কার কি ,
মঞ্চ কাঁপানো ভাষণবাজী
তো কমছে না ।
মানুষ এখন পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে সস্তা পণ্য,
 
সবক্ষেত্রে হাট বাজারে
  উচিত দামও পাচ্ছে  না ।
প্রতিবাদে আকাশটা যখন
 
ফেটে চৌচির হওয়া প্রয়োজন
 
ঘরে ঘরে চায়ের কাপে তখন আচ্ছে দিনের ভাষণ ।
অবাক, অবাক কাণ্ড! গা জ্বালা করা সম্ভাষণ!
 
তৃণমূল নিয়ে ভাবছে ভাবিস ? সুরাহা ?
 
কোন সমস্যার সমাধান?
  ধুর দূরদেশ !
সত্যি সেলুকাস, কি বিচিত্র এই দেশ
 
তারপরও বলিস তোরা বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক ।
হাসালি। বেশ তবে তাই হোক, বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক ।
আর জয় হোক তোদের ---,
না, সাম্যবাদে বিশ্বাস থাকার জন্য নয়,
জয় হোক তোদের ঐসব নেতাতে থাকা আস্থায়
দিনের আলোতে যারা জনদরদী সাজে,
 
আঁধারে রঙ পাল্টায় ।



কোন মন্তব্য নেই: