“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

মঙ্গলবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৮

প্রাতঃভ্রমণ

।। সুপ্রদীপ দত্তরায় ।।

(C)Image:ছবি








কালবেলা প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়েছিলাম
আজকাল এই এক নতুন ফ্যাশন
 
সারাদিন যারা দু'পা হেঁটে বেড়ান না
সকালবেলা তাদেরই স্বাস্থ্য চর্চায় হন্টন ।
আমিও বেরোই, নইলে দেখি কী করে।
বেতোবুড়ো, মালতীমাসী, কালিকেষ্টদা
ঝক্কুদি, মন্টিআন্টি, সুকুমার, ঘন্টাদা
সবাই মিলে একটা বিচিত্র সমাহার ।
উদ্দেশ্য একটাই স্বাস্থ্য উদ্ধার
 
সাথে প্রমোদবিহার।
ছেলে ছোকরারা যে বের হয় না , তা নয় ।
কারো হয়তো বা ভোর বেলা টিউশন থাকে ,
 
কেউ বা এই চান্সেই প্রেম সারে ফাঁকে ।
আজকাল টিউশনেরও
  মা বাপ নেই
ভোর পাঁচটা ? হ্যাঁ হতে পারে শুরু,
 
কারো আবার শুরু হয় রাত আটটা,
 
এতে যদি অসুবিধা কারো বা হয়,
 
চুপিচুপি বলি , কিছু যায় আসে না ।
বাজার এখানে এখন
  প্রচণ্ড চড়া, 
গণেশের কল্যাণে ভাঁড়ার
  ভরা ।
আমি বেড়োই সকালবেলা সে
  অন্য কারণ, 
সকাল সকালবেলা চিনি ছাড়া চা,
 
সাথে গিন্নীর কড়কড়ে কথা
মুডটা কী করে ঠিক রাখি বলুন
  ? 
অভ্যেস, বুঝলেন, ভোরবেলা পেয়ে যায় তেষ্টা ।
নেহাতই বাধ্য হয়ে আমার এই প্রচেষ্টা ।
দেবদূত পয়েন্টে, চিনি দিয়ে চা ,
 
সাথে বিস্কুট,
  নোনতা বা কুত্তা , 
ব্যাস হয়ে গেল, দিলখুশ মনখুশ
 
একেবারে চাঙ্গা ।
তবে আজ যা ঘটলো, বা-বাঃ, বিভীষিকা ।
 
এরপর সকালে, অনেক হয়েছে শিক্ষা
 
আমি আর না।
মোড়ের চা দোকানে বসে, মুডে চা খাচ্ছি,
 
মোদির ভাবনা নিয়ে, খুব খাবি খাচ্ছি।
কিছুদূরে চন্দন, কিছু বিস্কুট নিয়ে
 
বেশ কটা কুক্কুর, তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে ।
একটু একটু করে ও ছুড়ে ছুড়ে দিচ্ছে
 
তাই নিয়ে কী কাণ্ড , কেলেঙ্কারি কিচ্ছে ।
কেউ দেখছে, কেউ মজা লুটেছে ।
আমিও ছিলাম, হঠাৎই কী হলো,
 
চন্দনের পিছনটাতে দৃষ্টি গেল,
 
দেখি একটা কুকুর, না ঠিক কুকুর না, চন্দন দাঁড়ানো
মুখটা চন্দনের, দেহটা অবিকল কুকুরের বসানো
 
কেউ কিছু ছু
ড়ে দিচ্ছে, তাতেই তার লাফানো ।
রুটিটা দিচ্ছে কে, লোকটা তো খুব চেনা ।
ওমা, সেওতো কুকুরই হয়, কারো বা কারো কেনা।
চোখটাকে ভালো করে রগ
ড়ে দেখি
যা দেখছি , সত্যি তো, নাকি সবটাই ফাঁকি।
নিজের চোখকে ঠিক বিশ্বাস হয় না, আশ্চর্য,
 
এমনও কি হতে পারে ? কেলেঙ্কারি লজ্জা ।
দেখি চারপাশে যত সব লোকজন ছিল
 
আসলে লোক কোথায়? যারা আছে সবাই
তো
এক একটা জলজ্যান্ত সারমেয় বাচ্চা ।
কোনোটি আফগান সাউন্ড, কোনোটি সেফার্ড
কোনটি এয়ারডেল আবার , কোনোটি পিনশার।
কেউ কর্মী কুকুর, কেউ হয় শিকারি
 
কেউ বা নেড়ি কুকুর, একেবারেই ভিখিরি ।
চমকে উঠি, ওমা একী কাণ্ড , ওই যে কুকুরটা,
 
খুব , খুবই চেনা লোক, অফিসের বস হয়
আহারে বেচারা, কী দাপট অফিসে
 
তার এমন হাল হল, অন্যায় অবশ্যই ।
আরে এই যে কুকুরটা চেনা চেনা লাগছে,
ওটা তো কর্মী কুকুর, অনেকটা
  তাপসদা, 
শিকারিটি তবে কি আমাদের সুস্মিতা ।
ওই যে পরিমল ঘেউ ঘেউ করছে ,
 
আর বুঝি রক্ষে নেই, ভয় ভয় লাগছে ।
হঠাৎই ভিড়ের মাঝে দেখি তাকিয়ে,
 
গোরা চুপটি করে লেজখানি গুটিয়ে ।
গম্ভীর মুখে কে শঙ্কর ? নাকি ত্রিবেণীদা
ওইতো আমার মেয়ে, আমিনুল, ওয়াহিদা ।
হায় হায়, করছে কী? রাস্তার মাঝটায়
 
এত বড় মেয়েটির হামাগুড়ি খাপ খায় ?
লোকগুলো স্যরি, কুকুরগুলো কেমন যেন
 
হাভাতে, হিংসুটে । কেউ দেখতে ভালো,
 
কেউবা ভীষণ রাগী, হিংস্র, বিদঘুটে ।
হঠাৎই কি মনে হতেই চোখ পড়ে নিজেতে,
চমকে তাকিয়েছি ,লাগে আঘাতটা পিলেতে ।
জীবনে যা ভাবিনি এমনটাই ঘটছে
আমাকে কুকুর ভেবে নেড়িটা ডাকছে।
লোম নয়, চুল যেন, হাতে পায়ে বুকেতে
চারপায়ে দাঁড়িয়ে আমি,
  মুখখানি মাটিতে ।
জিভটা ঝুলে গেছে, কানগুলো খাড়া
হাঁটতে পারছি কই, শুধু শুধু ছোটা
ওমা, ওটা কীরে পেছনে ? আগে ছিল গ্যাজ
 
বেড়ে বেড়ে ওইটাই, এখন সে ল্যাজ ।
নিজের চেহারা কি বুঝতে ঠিক পারছি না,
 
আয়নাও নেই কাছে, খুঁজে খুঁজে পাচ্ছি না ।
এরই মধ্যে কী নিয়ে যে লেগে গেছে ঝগড়া
 
ঘেউঘেউ, কেউকেউ, কেউ দেয় বাগড়া
 
কুকুরের লড়াইটা বোঝেন তো সবাই
কোন মতে লেজ ফেলে পালাই পালাই ।
হে অন্তর্যামী, বহু সাধনার ফল, এই মানবজীবন , 
কুকুর সাদৃশ্য নয় । যদি সামর্থ্য থাকে
দাও মানবের মত সত্যি অর্থে বাঁচার অধিকার ,
 
দাও সঠিক সম্মানবোধ, সহমর্মিতা বিচার ।
এই নিরর্থক স্বার্থের সংঘাত আর
 
দম্ভের লড়াই এ আমি ক্লান্ত , পরিশ্রান্ত ।
হে বিধাতা আমাকে মুক্তি দাও
আমি যে মুক্তি চাই।


কোন মন্তব্য নেই: