।। সপ্তর্ষি বিশ্বাস ।।
১।
তিনি বলিলেন: ‘আলো হউক’।
আলো হইল।
তিনি বলিলেন ‘আচ্ছে দিন আসুক’।
আচ্ছে দিন আসিল।
দিন গিয়া
রাত্রি হইল।
রাত্রি আটটা
বাজিল। কাহারা যেন আসিয়া ডাক দিল।
ডাক দিল
তাহাদের যাহারা ‘আচ্ছে দিন’, ‘বুড়ে
দিন’ এর ভরসা ছাড়াই প্রজন্মের পরে প্রজন্ম কাটাইয়া দিয়াছে
মাছি হইয়া। মেছো হইয়া যাহারা "কত নদী ঘাটে
ঘুরিয়াছে, পুকুরের পানা শ্যালা — আঁশটে গায়ের ঘ্রাণ গায়ে গিয়েছে জড়ায়ে। –এই সব স্বাদ –এ সব পেয়েছে তারা — বাতাসের মতন অবাধ। বয়েছে
জীবন" – ‘আচ্ছে দিন’, ‘বুড়ে
দিন’ এর ভরসা ছাড়াই। এইবার ‘আচ্ছে দিন’
এ, রাত্রি আটটায়
"যেখানে
রুপালি জ্যোৎস্না ভিজিতেছে শরের ভিতর,যেখানে অনেক
মশা বানায়েছে তাহাদের ঘর; ... যে-নদীর জল বাবলা
হোগলা কাশে শুয়ে-শুয়ে দেখিছে কেবল
বিকেলের লাল মেঘ; নক্ষত্রের রাতের আঁধারে, ... অন্য সব আলো আর অন্ধকার এখানে ফুরালো" – এইখানে - অকস্মাৎ তারা "আচ্ছে দিন" এর ডাকে লাশ হয়ে গেলো।
বিকেলের লাল মেঘ; নক্ষত্রের রাতের আঁধারে, ... অন্য সব আলো আর অন্ধকার এখানে ফুরালো" – এইখানে - অকস্মাৎ তারা "আচ্ছে দিন" এর ডাকে লাশ হয়ে গেলো।
সারা গ্রাম তখন
নীরব।
২।
তিনি বলিলেন: ‘আলো হউক’।
আলো হইল।
তিনি বলিলেন ‘আচ্ছে দিন আসুক’।
আচ্ছে দিন আসিল।
তিনি বলিলেন ‘দাঙ্গা লাগুক’।
কিন্তু ...
কিন্তু, দাঙ্গা, লাগিল না।
এতাবৎ।
না'ত আসামী-বংগালে, না'ত হিন্দু-বাঙ্গালে!
তিনি চিন্তিত
হইলেন।
তিনি চিন্তিত
হইলেন, কেননা, এমত ঘটা নহে স্বাভাবিক। কেননা এমত ঘটেনাই ৬১ সালে, ঘটেনাই ৮০'র দশকে।
অতএব তিনি
গাহিলেন:
"আছো হেথা
যত আমির ও ওমরা,
আর যত বেটা
হোমরা-চোমরা -
বার্তা ভীষণ
শোনো হে তোমরা
শোন হে শোন হে
শোন হে তোমরা" ..।।
তিনি ‘জার্নালিস্ট’ বুলাইলেন। বলিলেন “ লেখো’ এই হত্যাকাণ্ডের কায়দার সহিত ‘আইএসাইএস’ এর হত্যা-কায়দার অকাট্য যোগাযোগ"।
বলিলেন, কেননা, ক্রমে, আইএসআইএস হইয়া, আল-কায়দা ধরিয়া "ইহা বাঙ্গালের কাণ্ড" পর্যন্ত পৌঁছিবার একটি পথ
করিয়া রাখা যে বড়ই প্রয়োজন। কে না জানে, যে, "আগে হাঁটলে চোরেও পথ পায়" আর তিনি তো, তাঁহারা তো ‘আচ্ছে দিন’এর পথিকৃৎ।
তিনি বলিলেন
"এই হত্যাকাণ্ডের কায়দার সহিত "আইএসাইএস" এর হত্যা-কায়দার অকাট্য
যোগাযোগ" এবং তাঁহারা, অর্থাৎ ‘জার্নালবাজ’ লিখিলেনও। লিখিলেন, কেননা, হুঁহুঁ বাবা, পেটের দায় বড় দায়। তাঁহারা "কাকে" গাহিলেন:
"শুণ্ডির
দিব পিণ্ডি চটকে
শত্রু নাশিব
স্কন্ধ মটকে
নিস্তার নাহি
কাহারো সটকে"।
তিনি কহিলেন:
"হল্লা চলেছে যুদ্ধে"!
কহিলেন:
"বন্দেমাত্..."
তখুনি থামিয়া, নিজ মুখাগ্রে তুড়ি দিয়া, আবার কহিলেন: "বন্দুকেই মাত্ করুম্"...
যাঁহাদের
ভাগ্যে "রাজকন্যা কম পড়িয়াছিল" -
যেহেতু মণিমালা
ও মুক্তামালা ভিন্ন আর ছিলনা রাজকন্যা, তাঁহাদের অনেকে হাঁকিলেন: "
একেক ভূত পঁচিশ লাখ রুপাইয়া"!!
সভাস্থ সক্কলে
বলিল "জয় হউক, জয় হউক"
একটি ভূত উঁকি
দিল। বলিল: " মিলিবে কি, আহা, এক সান্কি গরম ভাত? তবে মরিতেও রাজি"
নিন্দুকেরা
গাহিল: "রাজা করেন তম্বিতম্বা, মন্ত্রীমশাই কীসে কম বা"...
তথাপি, দাঙ্গা, বাধিল না, এতাবৎ।
বন্ধ্ পালিত
হইল শান্তিপূর্ণ।
‘আচ্ছে
দিন’ গিয়া রাত্রি হইল।
৩।
‘আচ্ছে
দিন’ গিয়া রাত্রি হইল।
এখন গান হইবে, ঘুমপাড়ানি গান।
গান হইবে “সোনা ঘুমালো, পাড়া জুড়াল”। গান হইবে ...
কী গান হইবে?
গান হইবে
" বাঙালি মরলো পাড়া জুড়ালো"?
গান হইবে
"হিন্দু মরলো পাড়া জুড়ালো"?
গান হইবে
" হিন্দু বাঙালি মরলো, পাড়া জুড়ালো"?
গান হইবে
"বাঙালি হিন্দু মরলো, পাড়া জুড়ালো"?
সভা বসিল।
প্রথমে জাতীয়
সঙ্গীত হইল। (পাঠক, এই পঙক্তিটি পাঠ করিবেন, অবশ্যই, দণ্ডায়মান হইয়া, নতুবা দণ্ডিত হইবেন।)
অতঃপর গৈরিক
কুশল বিনিময়।
অতঃপর ধ্যানে
তাঁহাকে আহ্বান করা হইল।
তিনি
আসিলেন।আসিলেন সূক্ষ্মদেহে।
কোড্ওয়ার্ড
জিজ্ঞাসিলেন তিনি।
সক্কলে একযোগে, এক নিঃশ্বাসে বলিল: "ঘুসপেটিয়া, ঘুসপেটিয়া"।
তিনি প্রীত হইলেন।
তিনি বলিলেন: "কী চাও?"
তাহারা বলিল: "প্রভু, কোন গানটি গাহিব?
" বাঙালি
মরলো পাড়া জুড়ালো"?
"হিন্দু
মরলো পাড়া জুড়ালো"?
" হিন্দু বাঙালি
মরলো, পাড়া জুড়ালো"?
"বাঙালি
হিন্দু মরলো, পাড়া জুড়ালো"?"
কোনটি"?
তিনি কহিলেন: "পরমাত্মা কেমন? যে দেখে যেমন"
-"প্রভু, খোলসা করুন, প্লিস্"
প্রভু খোলসা করিলেন।
পরদিন একই পত্রিকার এক স্থানের
সংস্করণ লিখিল:"বাঙালি মরলো পাড়া জুড়ালো"।
পরদিন একই পত্রিকার আর স্থানের
সংস্করণ লিখিল:"হিন্দু মরলো পাড়া জুড়ালো"।
অন্য স্থানের সংস্করণ লিখিল:"হিন্দু বাঙালি মরলো, পাড়া জুড়ালো"।
আরেক স্থানের সংস্করণ লিখিল:"বাঙালি হিন্দু মরলো, পাড়া জুড়ালো"।
প্রভুর প্রতিভা দর্শনে বিমুগ্ধ
ভক্তেরা, পুনরায়, আত্মহারা হইল।
নাচিল। গাহিল: "তু চীজ্ বড়ি হ্যায় মস্ত্ মস্ত্, তু চীজ বড়ি হ্যায়
মস্ত্" ...
৪।
আচ্ছে দিন।
আচ্ছে দিনের
আচ্ছা সকাল।
সকাল সাড়ে
সাতটা।
"প্রখ্যাত
রহস্যানুসন্ধানী দীপক চ্যাটার্জি ব্রেকফাস্ট শেষ করে কতকগুলো পুরোনো কেসের
ইনভেস্টিগেশনের ব্যাপারে ল্যাবরেটরিতে গিয়ে বসবে ভাবছিল এমন সময় টেলিফোনের আহ্বান
তার কাজে ব্যাঘাত ঘটাল।
-কে? - রিসিভারটা তুলে নিয়ে প্রশ্ন করে সে।"
-আমি। আমি
লালমোহন গাঙুলি বলছি"।
-বলুন।
-ইয়ে মানে, হন্ডুরাসে হাহাকার, মানে ওই আসামের ওই হরিবোলাস্ মাল্টিপল্ মার্ডারটা নিয়ে আপনার..."
-"আরে সে'তো একটা ওপেন এন্ড শাট্ কেস্। তা আপনার প্রদোষ মিত্র ক বলছেন?"
-"উনি তো
কিছু বলছেনই না মশাই। নিজের কোঠায় দোর দিয়ে শীর্ষাসনে আছেন গত তিন দিন ধরে..."
-"তা'ই বলুন। এটা তো এক্কেবারে জলের মতন ক্লিয়ার কেস্ মশাই। যারা সব বাঙালিকে মেরে
ফেলার হুমকি দিয়েছিলো তারাই এটা করেছে"
-"আমিও তো
তা'ই ভাবছিলাম। কিন্তু ..."
-"কিন্তু? এখানে 'কিন্তু'র কোনো স্পেস্ই
নেই মশাই"
-"না,না। সেকথা নয়। মানে, তপেশ, মানে সে একটা বাচ্চা ছেলে কি'না, ও বলছিল ..."
-"কী বলছিল?"
-"বলছিল, মানে, এনার্কিস্ট'রা বলছে, বিটা,গামা মানে 'আল্ফা',মানে, সব্বাই না'কি বিরাট বিরাট মহাপুরুষ, যুগপুরুষ, তাঁরা নাকি এমনটা..."
-"এনার্কিস্ট? সে আবার কী জিনিস মশাই?"
-"ইয়ে মানে, যাচ্ছিল, মনেকরা যাক তার নাম বগ্লা, গুহাটি। যাচ্ছিল ডে-সুপার'এ।
কিনারের সীটে
বসেছিল, মনেকরা যাক তার নাম খগলা, প্রতিবার বাসের চাকা গাড্ডায় ঢুকে রাম-ঝাঁকুনি ওঠামাত্র, সে, চিল্লিয়ে বলছিল: "হালা বালের সরকার, বালের ট্যাক্স, বালের রাস্তা..." যাত্রীরা ঘুরে তাকাচ্ছিল খগলার দিকে।
তাকাচ্ছিল, তবে, বার তিনেকের পর আর তাকায়ওনি। কেননা তারা নিচ্চয় বুঝে গিয়েছিল, যে, বাবু খগলা একজন ‘এনার্কিস্ট’। কেননা ‘এনার্কিস্ট’, সেই মানুষেরা যারা নিঃশর্ত ‘মুক্তিকামী’, প্রভুহীন, ঈশ্বরহীন, রাষ্ট্রহীন, পুরোহিতহীন। সর্বাগ্রে ‘রাষ্ট্রহীন’...
যেমন গেঈ-তেনো ব্রেইচি, যে তার নৈরাজ্যবাদী সহমর্মী, সহকর্মীদের দ্বারা লটারিতে নির্বাচিত হয়েছিল রাজা ১ম উমবের্তোকে হত্যা করার
নিমিত্ত এবং হত্যার অপরাধে জেলে যার মৃত্যু হয়েছিল ..." (উম্বের্তো একো'র "মিস্টিরিয়াস ফ্লেইম অফ্ কুইন লোয়ানা" উপন্যাসের একটি চরিত্রের
উক্তির অনুবাদ। একো'কে আনলাম, প্রথমত: কথাগুলি এখানে বলেছেন
সহজবোধ্য ভাবে। দ্বিতীয়ত: 'নেম' না 'ড্রপ্' করলে - তুমিতো ফ্লপ্)। সে'ও নৈরাজ্যবাদী আর এই
খগলা'ও নৈরাজ্যবাদী। অর্থাৎ আশা করা যায়, যদিও এতাবৎ কিছু করেনি, তবে, যেহেতু সে চলতি বাসে, প্রকাশ্যে সরকারের আদ্যশ্রাদ্ধ করতে সক্ষম, সুতরাং, কোনোদিন সে একটা কিছু করেই ছাড়বে।
এই সব খতরনাক্ 'এনার্কিস্ট'রা যখন বলছেন 'আল্ফা' মহান, সুতরাং, তপেশ বলছে, বাপু হে, পোঁ-গতি'র ধুয়ো ধরতে চাইলে "গর্ব্ সে বোলো আল্ফা
মহান হ্যায়, হামলোক ভি এনার্কিস্ট হায়'...
-" দূর
মশাই, সক্কাল সক্কাল দিলেন তো মেজাজটা বিগ্ড়ে। 'আল্ফা'ই মারুক আর বিটা-গামা যে'ই মারুক, তা'তে আমার-আপনার কী যায় আসে মশাই? আমার রাজ্যের কাজ পড়ে আছে। আপনার
তেরোশো চব্বিশ নম্বর নভেলটা ..."
-"ভাবছি
ওটার নাম দেবো 'তিনসুকিয়ায় তিরোধান' ..."
-" কী
জব্বর নাম! হাম্ কো রুলায়েগা কেয়া রে? যান যান, লিখে ফেলুন। আর ওইসব আল্ফা-বিটা-এনার্কি-ইয়ার্কি ছাড়ুন। পরে সাংবাদিক সম্মেলন
ডেকে শোক প্রকাশ আর ঘটনার তীব্র নিন্দা করে নেওয়া যাবে"।
রিসিভার নামিয়ে
রাখলো দীপক। কিন্তু পুরোনো কেসের ইনভেস্টিগেশনের ব্যাপারে আর মাথা ঘামাতে পারলো না।
মাথায় কী সব
হিজিবিজি ঘুরছে।
না, এ মোটেই একটা 'আচ্ছে দিন' এর 'মর্নিং' নয় আর 'মর্নিং শোজ্ দ্য ডে'। অতএব ...
৫।
জুম্।
জুউম্।
জুউউউউম।
জুউউউউউউউউউউউউউউউউউউউউউম্।
'জুম' চাষ নয়।
Zoom!!!
ক্যামেরার চোখ।
একটি শাদা
বোর্ড। তাতে আটকানো অনেকগুলি ফোটোগ্রাফ।
মুখের।
একটি মুখের উপর
জুম্। ক্যামেরা।
একটি হাত এগিয়ে
আসে। একটি ফোটোগ্রাফ্ খুলে নেয়।
ক্যামেরা দূরে
সড়ে আসে।
পাইপ মুখে
ব্যোমকেশ বক্সী।
দাঁড়ানো।
ক্যামেরা
আরেকটু পিছিয়ে এলে দেখাযায় একটি মাঝারি কোঠা। জানালা।একটি বড় টেবিল। টেবিলের একপাশে, জানালার দিকে, একটি চেয়ার। টেবিলের উল্টোদিকে আরো তিনটি চেয়ার। শূন্য। জানালায় দাঁড়ানো অজিত।
-"ব্যাপারটা
ক্রমশই জটিল হয়ে পড়ছে হে অজিত"।
ক্যামেরা ঘুরে
যায় ব্যোমকেশের মুখে।
"দেখো, বিটা-গামা-আল্ফা যেই করুক খুনগুলো তিনি চাইলে তা আটকাতে পারতেন। তর্কের
খাতিরে যদি ধরেও নিই যে আটকানো সম্ভব ছিলনা তাহলে অন্তত: তাদের ধরবার ব্যাপারে
তৎপর হলে ধরাও যেতো। তাও তিনি করেননি ..."
অফ্ ফোকাস
অজিত। অজিতের স্বর: "তবে একটা ভালো হচ্ছে এই" (অজিতের মুখ ফোকাসে আসে)
"যে, পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আছে। আর কোনো দাঙ্গা হাঙ্গামার খবর আসেনি..."
আবার ক্যামেরা
পিছিয়ে যায়। ব্যোমকেশ আস্তে আস্তে হেঁটে এসে দাঁড়ায় অজিতের কিনারে। জানলার
আরেকদিকে হেলান দিয়ে। দুজনের মুখ দেখাযায় স্যিলুয়েটে। মাঝখানে, জান্লা দিয়ে, খাসিয়া পাহাড়।
ব্যোমকেশ।
ভাবছি এটা আবার বড় ঝড়ঝাপ্টার আগের নিস্তব্ধতা নয়তো...'বাঙালি হিন্দু বিপন্ন' এই কথাটা যারা ছড়াচ্ছিল, নানাভাবে, একটা থিয়োরি হিসেবে, এই খুন যেন ওই থিয়োরিকেই এস্টাব্লিশ করতে করে দেখানো হলো..."
-" সম্ভব।
তাহলে তোমার কি মনেহয় আল্ফা-বিটা-গামা"
-"নাহ্।
ক্লিন চিট্ দেওয়া যাবেনা। তবে ওই যে বল্লাম, তাঁর কৃপাভিন্ন কিছুই সম্ভব নয়"
দুই সেকেন্ডের
নীরবতা। অজিত তাকায় ক্যামেরার দিকে। ব্যোমকেশ আবার বলতে শুরু করে: "এদিকে
খুনের হপ্তাখানেক আগে যাদের সঙ্গে তাঁর বন্ধ-বৈঠক হলো তারাই, বৈঠক সেরে এসেই, খুনোখুনির হুম্কি দিতে লাগলো প্রকাশ্যে। এরপর, যেদিনই রায় বেরোলো
কোর্টের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই এই মার্ডার। কেজানে ওই ক্লোজ্ বৈঠকে ঠিক কী কী আলোচনা
হয়েছিল তাঁর আর তাদের। আমার-"
"কাট্, কাট্,কাট্"! শোনাযায় রাগত হাহাকার।
-"কী
ব্যোমকেশবাবু, কী যাতা বলে যাচ্ছেন? এই পার্টটাতো স্ক্রিপ্টে নেই! আপনার তো মশাই এমনটা হওয়ার কথা না"
মৃদু হেসে
জানালার দিকের চেয়ারটিতে এসে বসে ব্যোমকেশ। নিভে যাওয়া পাইপটাকে টেবিলে রেখে নিজের
পাঞ্জাবীর পকেট থেকে বার করে আনে একটি বিঘৎ খানেকের চেয়ে সামান্য লম্বা কাঠিহেন
বস্তু। তারপর বলে: "এটা চেনেন মিস্টার গুপ্ত? এটা সেই শজারুর কাঁটা।
শজারুর কাঁটার সমস্ত প্ল্যানটা ছিল প্রায় নিখুঁত। 'প্রায়' কেন, ছিল সম্পূর্ণ নিখুঁতই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্ল্যানটা ভেস্তে গেলো কেননা আসল
টার্গেটের হৃদ্যন্ত্রটি যে প্রকৃতির কোনো অজানা জাদুতে ছিলনা তার স্বাভাবিক স্থানে, সেটা খুনির জানা ছিলোনা বলে। - এখানেও তাই ঘটলো মিস্টার গুপ্ত, তাঁর আশীর্বাদপুষ্ট, সে যে'ই হোক্, আল্ফা-বিটা-গামা কিংবা ভোঁদড়সেনা, এটা জানতোনা, যে, ১৯৬১ থেকে, ১৯৮০ থেকে সময় গিয়েছে চলে প্রায় চল্লিশ বছরের পার। তাই, যা'ই তুমি করোনাকো, দেখা আর হবেনা তো তোমার আমার ..."
ঠিক তক্ষুনি
শোনাযায় "হ্যান্ড্স্ আপ্ মিস্টার গুপ্তবেশী মগনলাল মেঘরাজ। তোমার খেল খতম।"
আসল মিস্টার
গুপ্ত'র সঙ্গে ঘরে ঢোকে ফেলুদা আর দীপক।
তিনি অতর্কিতে
অফ্ করে দেন বিদ্যুৎ সরবরাহের মূল সুইচ।
আচ্ছে দিন ঢেকে
দিয়ে নেমে আসে নিশ্ছিদ্র অন্ধকার।
শব্দ হয় বুম্।
বুউউম্।
বুউউউউউউউউউউউউউউউউম্।
সিনেমা হল্
থেকে ধীর পায়ে বাইরে বেড়িয়ে আসতে আসতে এলবার্ট পিন্টো বলে: “ফুল ফোটে? তাই বলো!! আমি ভাবি পটকা"।
পিন্টোর বাহুতে
হাত রেখে স্টেলা ডি কোস্টা বলে: যা বাব্বা! যা বোরিং একটা সিনেমা। আমি'ত ভয়ই পাচ্ছিলাম তুমি না আবার আগেরবারের মতো রেগেমেগে হলের ভিতরেই..."
পিন্টো হাসে।
বলে: নাহ্, এখন আর এসব দেখলে, শুনলে, রাগ হয়না কারণ এখন এটা জেনে গেছি যে কিছুতেই কিস্যু হয়না, হবেনা, হবার না..."
স্টেলা বলে:
এটাই ম্যাচিওরিটির লক্ষণ।
একটা সিগারেট
জ্বেলে, তাতে লম্বা একটা টান দিয়ে, তারপর কয়েকটা ধোঁয়ার রিং বাতাসে ছড়িয়ে দিয়ে
পিন্টো বলেঃ "আরে নাহ্, এটা আসলে লক্ষন আচ্ছে দিনের।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন