“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

সোমবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৮

চাঁদের কাহিনী

।। অভীক কুমার দে ।।

(C)Image:ছবি









রতের ঘরে কাশের এমন ভালোবাসা দেখে জলদস্যুটা সহ্য করতে পারেনি। রাবণের মতোই ছলনা করে তিতলি সেজে ধ্বংস করতে উঠেপড়ে লেগেছিল। যতদিন পশমের নরম ছোঁয়া বাতাসে মেলে ধরেছে কাশফুল, ততদিন পিছু ছাড়েনি। লক্ষ্মণরেখার মতো ঋতুর সীমানাকে তছনছ করে দিয়েছে সে। চাঁদকেও পাঁজাকোলা করে লুকিয়ে রেখেছিল কোথাও। তবুও শান্ত হয়নি, পুরো আকাশ জুড়ে মেঘের মায়া।

এমন অদ্ভুত আচরণ দেখে ভিতু শিউলিরা অসময়ে ঝরে গিয়ে মাটির বুকে মুখ লুকিয়ে চোখ বুজে দিন কাটাচ্ছিল। দিনের সূর্য তখন রামের মতোই অসহায়। 

একসময় শরতের সব সৌন্দর্য ফিকে হয়ে যাচ্ছে দেখে মাঠে নামে হেমন্ত। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলে শরৎ মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে আসে এবং এত ঝড়ঝাপটার পর ক্লান্ত শরীর গুছিয়ে নিয়েছে ঘরে। 

হেমন্ত সব শক্তি কাজে লাগাতেই পরাজিত হয় তিতলি, তবু শরতের এমন লণ্ডভণ্ড শরীর দেখে আকাশের বুকে এখনও ভীষণ ব্যথা। নীলচোখের কুয়াশা ঝরা থামতেই চায় না। এমন অসহ্য ব্যথা ভুলে আকাশ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি অনেকদিন। 

এভাবে দিন কেটে যাবার পর আজ সারাদিন আকাশের কোথাও একখণ্ড মেঘ দেখা যায়নি। খুব ভোরে আকাশের ভেজা চোখ মুছে দিয়ে সূর্যটা রোদের ডানা মেলে ধরেছে। রোদের গুঁড়ো লেগে ঝলমলে হয়ে উঠেছে আকাশের ঘর। কদিন আগে তিতলির একঘেয়েমি ওড়াউড়িতে যে বিতৃষ্ণা জমেছিল মনে, তার বিন্দুমাত্র রেশ নেই আর।

সারাদিনের ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে সন্ধ্যায় যখন মিষ্টি চাঁদের আলো জ্বেলেছে ঘরে, তখন ভাবনায় সাদা মেঘের ওড়াউড়ি। খণ্ডখণ্ড আবেগ এসে জড়ো হচ্ছে বুকে। পুরো আকাশে মেঘ একযোগে খুঁটিয়ে দেখছে চাঁদের শরীর। এই অবাঞ্ছিত আচরণ দেখে মনের আলো কালো হতে থাকে।

তারপর পুরো আকাশ জুড়ে রাতের গল্প, মাঝে মেঘের মরুভূমি, আর তাতে চাঁদের আত্মহত্যা। সীতার মতোই আকাশমাটিতে নিশ্চুপ চাঁদের কাহিনী।


কোন মন্তব্য নেই: