“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

বুধবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৮

মৃত্যুদন্ড

।। সুপ্রদীপ দত্তরায়।।

(C)Image:ছবি









ই যে শুনছো বাহাদুর সরকার, 
তোমায় নমস্কার । অবশেষে ভাঙলো তবে ঘুম !
আমাদের ধারণাটা ছিল  ভিন্ন , 
রাজপুরীতে যখন যারাই গেছে 
চোখে সবার সদাই তন্দ্রা নিঝুম ।
তবুও ভালো, তোমার সকাল হলো
আর যারা সব ছিল, তাদের ধন্যি মানি , 
নামলে পথে আহা দুঃখ উথলে ওঠে
অন্য সময়ে বাসর ঘরের রাণী।
আমরা সবাই  সজাগ থাকি রাজ্য জুড়ে জাগি 
কখন ওরা তেড়ে আসে, সদর কপাট ভাঙ্গি।
সরকার বাহাদুর, তুমি জানো না 
আমাদের ভীষণ ভয়। কেন যেন মনে হয়, 
দুর্বলের ঘরে কেন কন্যা জন্ম লয়।
আনাচে কানাচে লুকিয়ে থাকা হায়নার দলে
নখের আঁচড় কাটে আহ্লাদ ছলে। আমরা পারি না , 
পারি না প্রতিবাদ করতে  শুধুমাত্র ভয়ে 
লোক লজ্জার , পারিবারিক সম্মানে
আর ----; আর আর্থিক দুর্বলতার কারণে ।
তাই বলি, তুমি যোগ্য  সাবাসি পাবার 
তুমি তবুও ভাবছো আমাদের জন্য 
আর যে যারা ছিল, সাতটি দশক গেল 
ভাবনা তাদের পাহাড় প্রমাণ জমা
এখন সেসব হিমঘরেতে পাচার ।
চেয়ে দেখো ঘর ঘরেতে খবর গেছে পৌঁছে, 
এবার থেকে মুখোশধারীরা যারা 
মৃত্যু ভয়েতে তাদের ঘুমটি কাবার । 
তুমি সত্যি সত্যি যোগ্য সাবাসি  পাবার ।
সরকার, একটা প্রশ্ন ছিল আমার, 
নাবালিকা ধর্ষণেতে মৃত্যুদণ্ড শাস্তি 
সাবালিকা ধর্ষণেতে কি হয় প্রতিকার ?
যদি অপরাধ এক হয়, তবে শাস্তি সমান
বিবেকের বিচারেতে এইতো বিধান ।
দুর্জনে বলে নাকি  নীতির শিকার 
জানি না নীতি কিনা সময়ের বিকার
তুমি চাইলেই হতে পারে ন্যায় সুবিচার ।
সরকার, অপরাধ নিও না আমার 
সর্বজনে জানে, এটা অমোঘ সত্য 
ধর্ষক যারা হয়, তারা বিকারগ্রস্ত, 
তারা ড্রাগস নেয়, মানসিক রোগী ।
চিকিৎসা তাদের জন্য খুবই প্রয়োজন।
সাজা তার হওয়া চাই কঠিন বটে
মৃত্যুদণ্ড নয়, সে অনেক কারণ ।
তুমি কি জানো সরকার সমীক্ষা কি বলে ?
শিশু ধর্ষণের এযাবৎ অপরাধী যারা 
অনেকেই হয় তাদের পরিবারে দাদা ,
কিংবা মামা, কাকা, প্রতিবেশী জ্যাঠা ।
প্রতিদিন কোণে  কোণে যে ধর্ষণ চলছে
কতটুকু জানি তার, কতজন বলছে ।
লজ্জা, মান, ভয় আর পারিবারিক চাপ
সাথে এবার জুড়ে গেল মৃত্যু অভিশাপ ।
মৃত্যুদণ্ড যদি হয় ধর্ষণে চূড়ান্ত সাজা
বহু পাপ থেকে যাবে অন্ধকারে চাপা ।
তাই একবার ভাবো । ভাববার বিষয়
সাথে আছে দুইমাস খুবই স্বল্প সময়
তাড়াহুড়ো বিচারেতে যদি হয় ভুল? 
শাস্তি কেন ? যেন অপরাধী জানতে পারে 
বুঝতে পারে, অনুশোচনাতে জ্বলতে পারে, 
সুস্থ মনে বলতে পারে , যা করেছি ভুল ।
আমরা তাই চাই নিরাপত্তা, অপরাধীর শাস্তি 
মৃত্যুদণ্ড দিতে পারে ক্ষণিকের স্বস্তি 
স্থায়ী সমাধান নয়। তাই ভাববার বিষয় ।
শাস্তি চাই, শাস্তি হোক, কঠিনতম শাস্তি 
এমন শাস্তি হওয়া চাই , শুধরে যায় বস্তি।
তবে মৃত্যুদণ্ডে নয়। সরকার বাহাদুর 
সভ্য দেশে মৃত্যুদণ্ড মানবতা পরিপন্থী ।




কোন মন্তব্য নেই: