“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

বৃহস্পতিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৮

গুচ্ছ কবিতা

সুমন পাটারী


(C)Image:ছবি











।। কুকুর কথা ।।

মাদের গ্রামে
হাতেগোনা কিছু মহাজন আছেন
একজন মহাজনের দেখলাম
একটা কুকুর আছে।
মহাজন তার নাম রেখেছে ভারত।
সারাদিন লাথি মারে, থুতু মারে,
সময় মতো ঢপের পূজাও করে।
আশ্চর্য কুকুর মহাজনের পায়ে পায়েই ঘুরে।

।। মদ মাংস ও সংবিধান ।।

ড় হতে হতে নরম শাবকরা শিখলো
বনে নতুন পুরানো শিকারির আনাগোনা চলে সব সময়
তাঁরা আসে, তাঁবু গাড়ায়,
বন্দুক ও কার্তুজ নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে
পরস্পরের কাঁচা ঘা কুকুরের মতো চেটে
পশু দম্পতিরা আবার ফিরে এসেছে
বিলাপবহুল তাদের সামাজিক সংসারে
যেকোনো সময় কাটাপড়ার ত্রাস,
ছেঁড়া মাংস, চামড়া আর দুধের বাট
বনের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে পড়েছে।
তাদের ছায়ায় প্রেমিক প্রেমিকা কিভাবে চুমু খায়?
যেখানে গাছ হত্যার প্রতিবাদ করে না বন্য সমাজ
জলচুরি সহ্য করে নিচ্ছে মৎসপুরুষ।
এই মাংসপণ্য ও কসাইর চিরসবুজ বর্ষাবনে
তরুণ তরুণীর মাংস নিংড়ে মদে মেশাবে।
তারপর পায়ের উপর পা তুলে গোল করে বসে খাবে।
একটি যুবকের লাশ রাস্তায় পড়ে আছে
একটি মেয়ের অন্তর্বাস শিকারির পালিত কুকুর ছিঁড়ে খাচ্ছে
প্রতিবাদ না হারানো পেন্সিলের নষ্টালজিয়া--
বনসম্প্রদায়, কোনটা করে বোঝা যায় না।
সংবিধানের অস্তিত্ব সেই বনদেবতার মতো
যার দেখা নেই তবুও আশায় আনত
 
ভৌতিক হিজল গাছে লাল সালু বেঁধে
প্রার্থনাই করে যাচ্ছে অবোলা পশুপ্রজন্ম।

।। বসন্তদাগ ।।

কিছু কিছু অসুখ আছে
আলো ভয় পায়
তাদের মুখস্থ চালচলন, অন্ধকারে
রোজদিন ওৎ পেতে বসে থাকে
বৃদ্ধ বাঘের থাবা নিয়ে।
নক্ষত্রের ভৌতিক আলোয়।
তন্দ্রালু শিশু মতো
ভুল ইতিহাস পড়ি অমনযোগে
অনেক বয়স হয়েছে,
মলম মেখে তুলে নিয়েছি দাগ
এখন শরীরে ক্ষত নেই,
ক্ষতের ভিতর ডিগবাজি খায় বিপন্ন চেতনা।
প্রতি মধ্যরাতে বাস্তববিমুখ ভণ্ড হয়ে যাই
অন্ধকারে স্পষ্ট হয়ে উঠে কিছু বসন্তদাগ।

।। শেষের ভাষণ ।।

নহত্যার প্রতিবাদ করেনি বন্যসমাজ,
কেশ ফেলে সিংহ সেজেছে বেড়াল
আকাশ হারিয়ে পাখিরা চলে গেছে জলে
পাখি হারিয়ে গাছেরা হয়েছে কয়লা।
ইচ্ছে-চাষের প্রতিবাদ করেনি মেঠোজীব,
ছায়া হারানোর প্রতিবাদ করেনি পথিক
নাব্যতা হ্রাসের প্রতিবাদ করেনি মাছের দল।
কেউ কবিতা পড়েনি,
কোনো প্রতিবাদ কেউ করেনি
ট্রাফিক পুলিসের মতো রাস্তায় দাঁড়িয়ে দেখি
একটি ছাগপুরুষ সারাদিন গোবরমাখা ঘাস খায়
আর দেখে এভাবেই একদিন
সমাজ মাদারি ও বানরে বিভক্ত হয়ে যায়।

।। বহুবচনের তেজস্ক্রিয় প্রভাব ।।

কটি কবিতার শেষের দিকে কবি রণজিৎ দাশ লিখেছেন
" পাখিদের ডানা ঝাপটানো বন্ধ হলে
বাতাসের সাথে কালো লংক্লথের যুদ্ধ শুরু হয়"
এরপর অন্য কবিতার দিকে যেতে যেতে আমি
ছাত্র হয়ে গেলাম।
ঘরময় ফটিকছড়ার চা বাগান,
বন্ধু, বন্ধুর প্রেমিকা, তাঁর মনিপুরি বান্ধবী,
এসব এসে পড়লো কোত্থেকে জানিনা।
গ্রামের বাড়ি থেকে বলেছিলো বাইরের মাংস স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক।
ভয়কে জয় করা কোনো কঠিন কাজ নয় কারণ
আমরা যারা প্রচুর বই পড়েছি তারা জানি
আগেকার দিনে মদ খাইয়ে অস্ত্রপাচার করা হতো।।
আজ এতদিন পর কবি রণজিৎ দাশ এলেন চা বাগানে
পুরানো দামী মদ নিয়ে,
সাথে এনেছেন প্রত্ন সিগারেট ও কালবৈশাখী
আমার কালো লংক্লথ কেটে কেটে
এখন এক দরজি শীতের কম্বল বানায়।
আর এক প্রাজ্ঞ কবি লিখতে থাকে বহুবচনের তেজস্ক্রিয় প্রভাব।



কোন মন্তব্য নেই: