।। অশোকানন্দ রায়বর্ধন।।
সুখের আখড়া দুখের ঝুপড়ি জুড়ে কুটিরশিল্পে তন্ময়তৎপর আলোজীবনসফর ৷
ভোরের দোয়েল জানে পুব আকাশের রঙের আড়াল ৷ ক্রমাগত দিগন্তজীবনে লঙমার্চ এগোয় ৷
আগুনের গিরিপথ ডিঙোতে ডিঙোতে আলোর জ্যামিতি ছড়িয়ে যায় কাশবিতান ৷ ঘাসফুল আর
সোনালি শস্যসংলাপ ৷ সৈকত জুড়ে শাণিত অস্ত্র শুয়ে ৷ রক্ত মরে কালো পিচ ৷ বিদ্ধ
আত্মারা সেখানে ডুকরে কাঁদে ৷ অপরিচিত সানাই করুণ হয় ৷ কোজাগরী চাঁদের আলো অচেতন
হয়ে আসে ৷ মেঘের কুচকাওয়াজের ভেতর রাত নামে গভীর খাদে ৷ সোনাঝুরি গাছের তলায় ঝরে
পড়া হলুদ ফুল রঙ হারায় ৷ পূর্বজ পথিকেরাও লৌকিক দার্ঢ্যে আঁধারের পথে এগিয়ে গেছেন
নির্জন বাতিরেখা ধরে ৷ গর্জন তুলেছে মিছিল যুদ্ধসঙ্গীতে ৷ আলোর কোটরে লুকোনো
কামনা-আনন্দ, হাসি-আহ্লাদ অশ্রু মুছে যায় ৷ ছুঁয়ে যায় জয়নাদ
৷ ভেজা নির্জনতার মণ্ডলে আনন্দাশ্রুতে ভরে যায় সুবর্ণকলস ৷
(C)Image:ছবি |
যে
নরম আলো দিয়ে ভোরের সূচনা তার ভেতর অবগাহনের রোমাঞ্চে জ্বলে ওঠে আগুন ৷ তার
আগ্রাসী ধোঁয়ায় আর্তরব ওঠে ৷ দগ্ধ ময়ূরের পেখম খুলে পড়ে যায় জতুগৃহে ৷ প্রবহমান
সহজিয়া গানের পাশে পাশে সহস্র লাশ ভেসে যায় ধর্মাতুর বাতাসে ৷ মায়াভরা সেই গান আর
শবের ছবি চতুর মিডিয়াপার্সন ছেপে দেয় ভোরের কাগজে ৷ ধর্মলুন্ঠনে কপর্দকশূন্য হয়ে
যায় ইতিহাসের অহংকার ৷ সভ্যতার সমৃদ্ধ ঘরানা ৷ হাজারো পরিজনের কান্নার নির্বাক
স্লোগানগুলো পেশাদার সেলফিতে ভরে যায় ৷ গড়াতে গড়াতে মসৃণ হয়ে যাওয়া নুড়িগুলো
দাম্ভিক দালানে গেঁথে প্রাসাদ বানায় কেউ কেউ ৷ কেউ বা স্বপ্নের খোঁজ করে
ফেরিওয়ালাদের কাছে ৷ মনোহারী বিপননে রাজনীতির পসার বাড়ে ৷ কার্তিকের মুণ্ডিত মাঠে
সন্ধ্যাবাতি জ্বালিয়ে আসে পূর্বজ পুরুষের কোনো জ্ঞাতিবউ ৷ কোমল শিখার সাথি
ছায়ামোহনায় প্রাণের স্বপ্ন নিয়ে আঁচলে সন্ততির সুখ বেঁধে নেয় ৷ মিটি মিটি হাসে ঝরা
ধানকণা ৷ এজন্যেই তার নির্জনবসত ৷ এজন্যেই অঙ্কুরপ্রয়াস ৷
অমোঘ
আলোকে আরাধনা করে অনুর্বর মাঠেও বেঁচে ওঠে জন্মবীজ ৷ হেমন্তরাতের কুয়াশাচিহ্ন চুমু
খায় সৃজনের ইজেলে ৷ সবাই তো জীবনপ্রয়াসী ৷ জনজাতির শান্ত পল্লীপথে একাকী হাঁটেন তথাগত ৷
প্রান্তরের সিঁথান ঘেঁষে জলসত্র অপেক্ষায় থাকে ৷ দূরদিগন্তমোড়ের অলৌকিক ভয় চলে
যায় বানপ্রস্থে ৷ তবুও কোনো কোনো সূর্য আসে ভয়ের জ্যাকেট পরে ৷ মায়াহরিণের টানে
হরিয়ানায় পাচার হয়ে যায় প্রত্যন্তবালিকা ৷ ভাস্কর্যনারীর নিষ্পাপ মুখমণ্ডলে ছড়িয়ে
পড়ে স্বপ্নটুটা হাহাকার ৷ কেন মাঝে মাঝে বিষাদে ভরে ওঠে জনভূমি? জাত আর ধর্মপরিচয়ে সর্বনাশ?
বসুমাতার বিভাজন? বিমর্ষকন্ঠে একতারার সুর
নিয়ে হননকোলাহল সরাতে প্রয়াসী অন্ধপাখি ৷ তার বিষণ্ণ প্রার্থনায় শান্তিসুগন্ধ
ছড়ায় ইকোলিরিক ৷করুণালহরী পাতালে পরতে জেগে থাকা জ্বালানীভাণ্ডার ৷ পরোক্ষে ধরে
রাখে জীবনাবহ ৷ অন্ধকারের শ্লোক মুছে ফেলে দৈবহাত শুরু করে আলোর আরতি ৷ নিখাদ
ভালোবাসা মেরুপ্রান্ত অবধি ছড়িয়ে যাবার ঈপ্সায় ধর্মশ্লোকের বিপন্নতাকে জড়িয়ে ধরে
৷ আলোর কলসে অরণ্যজল তুলে রাখার সৃজনপ্রেরণায় বিশুদ্ধস্নান ভুবনবন জুড়ে ৷
বর্ষণসিক্ত আলো আসে নিকোনো উঠোনে ৷ মুছে যায় অকল্যাণসর্বস্বতা ৷ মৃত্তিকার
শীতলপাটিতে জেগে ওঠে শুদ্ধ আলোকবয়ন ৷
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন