(তমালশেখর দে লেখাটি ফেসবুকে পোষ্ট করেছিলেন। পূর্বোত্তরের সাহিত্যের একটি প্রেরণাদায়ক কিন্তু প্রান্তিক সংবাদ। তথ্যের গুরুত্ব উপলব্ধি করে এখানে সংরক্ষিত করে রাখলাম।... +Rajesh Chandra Debnath )
⧭⧭⧭⧭
⧭⧭⧭⧭
লিটিল ম্যাগাজিন ব্যাপকতা পেতে শুরু করে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ এবং বিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগ থেকে আমেরিকা, ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সে, ইমেজিস্ট, সিম্বলিজম, প্রভৃতি আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। ‘লিটিল’ শব্দটি আকার,প্রচার বা সীমিত পৃষ্ঠা সংখ্যা অর্থে প্রযুক্ত নয়। এখানে লিটিল শব্দটি পুঁজিগত অর্থে প্রযুক্ত। ‘লিটিল’- কথা’টির সাথে ‘বিগ’ কথা-টিও চলে আসে। আসলে এখানে ‘বিগ’ শব্দটি একটি প্রাতিষ্ঠানিক ভূমিকা গ্রহণ করে। এদের পুঁজি বিশাল। ক্যাপিটালিস্ট মনোভাব নিয়ে আধা সামন্ততান্ত্রিক দৃষ্টিতে সাহিত্য সংস্কৃতিকে এরা পোষণ করে।
ধর্মনগর, ত্রিপুরার পথের পাশে |
লিটিল ম্যাগাজিনের জন্ম হয় তখনই –
১। যখন সমমনস্ক ভাবনার কিছু যুবক নিজেদের কথাকে বলার মাধ্যম খুঁজে২। যখন নিজেকে প্রকাশ করার অভিব্যক্তি খুঁজে পায়৩। যখন বিশেষ কোনো বক্তব্যকে তুলে ধরবে স্থির করে৪। যখন স্বাধীনভাবে সাহিত্যের পরীক্ষানিরীক্ষা করতে ইচ্ছুক৫। যখন ‘কিছু একটা করতে হবে’ ভেবে নেওয়া ও মাধ্যম খোঁজা,৬। যখন আর দুই বা তিন বা চারজন কবি, লেখক, নাট্যকার বা সমালোচক একত্রিত হন,৭। যখন অপরিকল্পিতভাবে দুম করে কিছু লেখা জোগাড় করে প্রেসে দিয়ে আসা হয়,৮। যখন বড় কাগজের বিপরীতে অবস্থান করে; যে কথা বড় কাগজ ছাপতে সাহস করে না তা লিখতে প্রয়াসী হয়,৯। যখন কোনো পরিকল্পনাই থাকে না আগের মুহূর্তে ,১০। যখন যন্ত্রণা-কষ্ট বাড়তে থাকে মানসিক,১১। যখন কষ্ট-যন্ত্রণা কম থাকে মানসিক ।
ধর্মনগর, ত্রিপুরার পথের পাশে |
‘প্রসঙ্গ লিটল ম্যাগাজিন’ – লিটিল ম্যাগাজিনের গবেষক-সংরক্ষক সন্দীপ দত্ত। শিলং উত্তর-পূর্ব লিটল ম্যাগাজিন উৎসবে দেখা হয়েছিল একবার । আমি ‘দাঁড়াও!’ নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তিনি দেখে অবাক হয়ে আমার কাছে এলেন, জানতে চাইলেন, এটা কি ? আমি বললাম – ‘ স্যর ‘দাঁড়াও!’ একটি পথ-কবিতাপত্র’। কিছুটা অবাক হয়ে বললেন, আমার জানা মতে বাংলা সাহিত্যে এটা প্রথম ফ্ল্যাক্স কবিতাপত্র। তারপর অনেকক্ষণ কথা হল।ডকুমেন্ট হিসেবে আমার ছবি নিলেন পত্রিকাসহ।জানতে চাইলেন, কিভাবে মাথায় এল এই পরিকল্পনা ? বললাম, হাতে হাতে কবিতা গুঁজে দেওয়ার পরও যখন দেখলাম, কেউ কবিতা পড়ে না। কিছুদিন পর দেখা হলে, যখন জানতে চাই, কাকু বা দাদা কবিতাটা কেমন হয়েছিল ? তখন কোন উত্তর পেতাম না। তখন খুব দুঃখ হত। ওপর দিকে শহরভর্তি না-চাইলেও পড়তে হয়, ‘যৌন সমস্যা? ভয় নেই। অতিসত্তর চলে আসুন ।‘ কিংবা ‘গোপনে মদ ছাড়ান !’ কিংবা ‘প্রেমে অসফল? বান্ধবীকে খুশি করতে পারছেন না ? স্ত্রী নেই বশে?’ পাঁচ ঘণ্টায় সমাধান ! না-হলে টাকা ফেরত! কিংবা লিঙ্গবর্ধক!
ধর্মনগর, ত্রিপুরার পথের পাশে |
মে,১৫ শিলঙে ৫ম উত্তর পূর্বাঞ্চল লিটিল ম্যাগাজিন সম্মেলনে |
আজ ৭ বছর পর আমাদের অভিজ্ঞতা আনন্দের। আমারা পথে গান এবং পথ-কবিতা পাঠের আসর করেছি। কবি সন্তোষ রায়, কবি সেলিম মুস্তাফা, কবি সমর চক্রবর্তী , পুরো ‘জলজ’ কবিতাপত্রের পরিবার ছিলেন। ছিলেন পথচারী।তারপর আমরা রক ব্যান্ড গানের অনুষ্ঠান করি ধর্মনগরের কয়েকজনকে আমন্ত্রণমূলকভাবে একত্রিত করে।একবার ২১শে ফেব্রুয়ারি কি একটা কারণে রাজ্যভিত্তিক ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল একটি রাজনৈতিক দল।সরকার পক্ষ বাংলাদেশ সীমান্তে অনুষ্ঠান সেরে ফেলে। তখন আমরা প্রশাসনের কোন অনুমতি না-নিয়েই রাস্তা জুড়ে ‘দাঁড়াও!’-এর পক্ষ থেকে কবিতা পাঠ, গান , আবৃত্তি করি দিনভর। বাংলাদেশের দাবিতে আমি ও প্রাণজয় – ‘ হৃদয়ে একঝাঁক প্রতিবাদ নিয়ে আমরাও বসে আছি শাহবাগ তোমার পাশে’ এই ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম।
সব থেকে বড় কথা আমরা আমাদের উদ্দেশ্যে সফল হয়েছি। এখন কবিতাপত্র বের হতে দেরি হলে, পাঠক তাড়া দেন।-- ‘তোমারা দেখি ই-বার দেরি করি লাইরায় ! করো ।’ তখন খুব ভালো লাগে। আমার এটা থেকে প্রেরণা নিয়ে কবি- প্রকাশক গোবিন্দ ধর কুমারঘাট 'বাংলা ভাষা' নামে একটি পথ কবিতাপত্র করেন। একটি সংখ্যা পর আর বের করেনি। কৈলাশহর থেকে কবি বিশ্বজিৎ দেবের প্রেরণায় কবি শুভদীপ দেব ‘পথের পাঁচালী’ পথ কবিতাপত্র বের করে দুটো সংখ্যা বের করে থেমে যায়।
আমি মধ্যে এককভাবে কবিতার ওয়ালিং করা শুরু করেছিলাম – ‘ডাস্টবিন’ নাম দিয়ে। স্লোগানের কনসেপ্ট থেকে আইডিয়া নিয়ে করেছিলাম। এতে বিভিন্ন কবির এক লাইন বা দু’লাইন লেখা হত। যাতে আরও তাড়াতাড়ি যত্রতত্র কবিতা নিয়ে ঢুকে পড়া যায়। কবি সমর চক্রবর্তীর ‘জীবন বড় নেশা হে ’ এই লাইন ব্যবহার করে বেশ সাড়া এবং এই লাইনকে সাধারণের কাছাকাছি আনতে সফল হয়েছিলাম। এই কবিতার ওয়ালিং আইডিয়া’টা খুব সম্ভাবনাময় । আমি নিজে ওয়ালিং পারি না, আর শ্রমজীবী শিল্পীকে দিয়ে করানো বেশ টাকার ব্যাপার । আর যে কবি ওয়ালিং পারেন , তিনি উৎসাহিত হলেন না। তাই থেমে যাই। তবে এই মাধ্যমটায় আমি কাজ করবো। খুব রেসপন্স মিলে। আরও সহজে কবিতা নিয়ে পৌঁছা যায়।দেখা যাক আগামীতে যদি পারি আবার করবো।আপনারাও করতে পারেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন