।। শিবানী ভট্টাচার্য দে ।।
সপ্তাহখানেক
আগে লিপিকা ও প্রশান্তের ঝগড়া হয়েছিল । দাম্পত্যকলহ নতুন কিছু নয়, মাঝে
মাঝেই হয়, আবার মিটেও যায় । সাধারণ বিবাহিত দম্পতিদের থেকে
ওরা আলাদা কিছু নয় । তবে এবারের ব্যাপারটা বেশ সাংঘাতিক ।
বিছানায়
শুলেই বউয়ের শরীর চটকানো প্রশান্তের অভ্যাস । ঘুম ভাঙলে ভোরবেলাও বাদ যায় না ।
প্রশান্তের ধারণা, সঙ্গিনীর প্রতি প্রেম নিবেদনের এটাই মোক্ষম উপায় । এটা
স্বামীর অধিকারও । স্বামীর সব ত্রুটি বিচ্যুতি এই শারীরিক আদরেই মাফ হয়ে যায় ।
লিপিকা ও প্রশান্তের পনের বছরের বিবাহিত জীবনে সন্তানের জন্ম উপলক্ষে মাসখানেক ও
অফিসের কার্য উপলক্ষে কালে ভদ্রে বাড়িতে দু এক দিনের বাধ্যতামূলক অনুপস্থিতি
ব্যতিরেকে প্রশান্ত নিয়মিত এই কাজ করে আসছে ।
বিবাহিত
জীবনের প্রথমদিকে লিপিকা স্বামীর আদরটুকু উপভোগই করত । এখন অভ্যস্ত জীবনে ওর
শারীরিক ক্ষুধা অনেকটা স্তিমিত, মধ্যবয়স্কসুলভ মেয়েলি শারীরিক রোগবালাই ও
দেখা দিচ্ছে, সাংসারিক কাজের জন্য শারীরিক পরিশ্রম, নানা রকম দায়িত্বের জন্য মানসিক চাপ সবই বেড়েছে । এখন বিছানাতে পড়লে শরীর
বিশ্রাম চায় । প্রশান্ত সারাদিন অফিসে থাকে। যখন ঘরে ফেরে, তখন সে ঘরের কোন সমস্যা
কিংবা রোগ ব্যামোর কথা শুনতে চায় না । লিপিকাও তাকে যথাসম্ভব সমস্যা থেকে আড়াল করে
রাখে । তাই প্রশান্তের কাছে ঘর মানে শুধু আরাম ও সুখ, আর
স্ত্রী সেই সুখ ও আরামের জোগানদার । মাঝবয়সে এসে লিপিকা দেখে সে আর আগের মত সেই
ভূমিকা পালন করতে পারছে না । তাই সে প্রশান্তকে সংযত হতে বলে, কিন্তু মাঝবয়সি প্রশান্তের কাছে সংযম মানে পৌরুষের অবমাননা এবং স্বামীর
অধিকারের খর্বীকরন ।
আমার বউ, আমি
যখন ইচ্ছে, যেমন খুশি আদর করব, এতে কার
কী ? প্রথম প্রথম এভাবেই স্বামী হিসাবে নিজের প্রেমের অধিকার
ফলাতে চেষ্টা করে ।
তা তো
বুঝলাম, কিন্তু শরীরটা তো আর সব সময় ওই জন্য তৈরি থাকে না । বৌ তো
তোমারই থাকবে, কোথাও চলে যাচ্ছে না । একটু রয়ে সয়ে করো না ।
লিপিকা অবুঝ স্বামীকে বোঝায় । বয়স ও তো হচ্ছে ।
সেই জন্যই
তো বলি, হেসে নাও দুদিন বৈ তো নয় । আভি তো ম্যায় জোয়ান হুঁ ।
তুমি চাইলেই
তো সব দিন তোমার সঙ্গে ওইরকম সঙ্গত দিতে পারি না ।
তা হলে কে
চাইলে দিতে পারো ?
মোক্ষম
প্রশ্নে লিপিকার মুখ বন্ধ হয়ে যায় । প্রশান্ত লিপিকাকে জব্দ করে ওর মুখের দিকে
তাকায় । আজকাল তার মাঝে মাঝে সন্দেহ হয়, লিপিকা কি তাকে আর চাইছে না ?
শ্যামবর্ণ মাঝারি গড়ন সাধারণ
চেহারার পুরুষ প্রশান্ত দীর্ঘাঙ্গী সুন্দরী স্ত্রীর জন্য কখনো গর্বিত, কখনো
হীনমন্যতায় ভোগে । সম্পূর্ণ অধিকার হওয়া সত্ত্বেও অণুমাত্র প্রতিবন্ধকতায় রাজ্যপাট
বেদখল হবার ভয় তার মনে চাড়া দিয়ে ওঠে । তার অনেক অফিস-কলিগ মাঝে মাঝেই
পরকীয়ার গল্প করে, একঘেয়েমির হাত থেকে মুক্তি পেতে অন্য নারীর সঙ্গ খোঁজে । সেই
নারী ও হয়তো অন্য কারো বউ, অথবা স্বাধীন মেয়ে । লিপিকার ওকে
প্রত্যাখ্যান করার পেছনেও সে রকম কোনো কারণ নেই তো ? সে তো
সারাদিন বাড়ি থাকেনা, লিপিকা একাই থাকে । তাই বউ যেদিন বারণ
করে, প্রশান্ত সেদিন যেন আরো উত্তাল হয়ে ওঠে ।
একমাত্র
কন্যাসন্তান প্রাচীকে লিপিকা পাঁচবছর বয়সেই আলাদা বিছানা এবং দশ বছর বয়সে শোবার ঘর
আলাদা করে দিয়েছে । মেয়ে মাঝেমাঝে ভয় পার, তাই লিপিকা নিরাপদ সময়ে
বেডরুমের দরজা ভেজিয়ে রাখে ।
ক’দিন
ধরেই লিপিকার শরীর তেমন ভাল যাচ্ছিল না, ক্লান্তিবোধ হচ্ছিল,
ভোরবেলা একটা তন্দ্রাচ্ছন্ন অবসাদ কাটিয়ে সজাগ হতে সময় লাগছিল ।
সেদিনও তার ব্যতিক্রম ছিল না । রাতে শুতে যাবার সময়ে প্রশান্তকে বলেছিল, আজ আর ডিস্টার্ব করো না, একটু ভাল করে ঘুমোতে চাই ।
প্রশান্ত
অভিমানাহত গলায় বলল, আজকাল আমার আদর তোমার ডিস্টার্ব মনে হয় ?
তা নয়, লিপিকা
বলল, ক’দিন ধরেই বেশ টায়ার্ড লাগছে ।
ঘুমটা হচ্ছে না ঠিকমত । তাই বলছি আজকে ওসব থাক ।
শরীর খারাপ
লাগলে ডাক্তার দেখাও না কেন ?
ভাল করে
বিশ্রাম নিলে হয়তো শরীর ঠিক হয়ে যাবে । যদি না হয় তাহলে তো ডাক্তারের কাছে যেতেই হবে । ডাক্তারের কাছে যেতে সময় ও তো চাই ।
চলে যেও
কালই । আমার কথা ও একটু ভাববে তো ।
লিপিকা একটু
মনঃক্ষুণ্ণ হয় । ওর শরীরখারাপের কথায় প্রশান্ত নিজের অসুবিধেটুকুর কথাই ভাবল ।
প্রশান্ত
পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়ল । প্রাচীর পরীক্ষা অদূরেই, তাই সে খানিকটা রাত
জেগে পড়াশুনো করে । মেয়ে যদি কোনো কারণে ডাকে, তাই লিপিকা
দরজা ভেজিয়ে নিশ্চিন্তমনে শুয়ে পড়ল । ভোরবেলা আধোঘুমের মধ্যে সে টের পাচ্ছিল
প্রশান্ত তার রাতপোশাক আলগা করছে । কিন্তু তন্দ্রাজড়িত অবসন্ন শরীরে প্রশান্তকে
বাধা দেবার কিংবা তার আহ্বানে সাড়া দেবার সামর্থ্য কোনোটাই তার ছিলনা । বরং সে
আবার ঘুমিয়ে পড়েছিল ।
হঠাৎ খুট
করে আওয়াজ হতেই লিপিকার ঘুম ভেঙ্গে গেল । ধড়মড়িয়ে চোখ খুলে দেখে, সর্বনাশ
। খোলা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে প্রাচী । লিপিকার অবস্থা ? নাইটি
প্রায় কোমর অবধি তোলা, প্রশান্তের ভাঁজকরা হাঁটু তার উরুমূলে,
নাইটির বোতামও খোলা, প্রশান্তের হাত ওর বুকের
উপর । মুহূর্তের মধ্যে লিপিকা নিজেকে সামলে নিল ঠিকই, কিন্তু
মনে দুশ্চিন্তা রয়ে গেল, মেয়ে দেখেছে কিছু ? যদিও জানালার পর্দা টাঙ্গানো, ফুলছাপ মশারি খাটানো,
মেয়ে দৃষ্টিতে একটু খাটো, ও ঘুমচোখ, তাই স্পষ্ট কিছু হয়তো দেখেনি---- এই যা ভরসা । নিজেকে সামলে উঠে ওর দিকে
তাকাতেই প্রাচী আঙ্গুল দিয়ে ঘড়ির দিকে দেখাল---ছ’টা পনের
বাজে ।
লিপিকা
তড়িঘড়ি সামলে উঠে টয়লেটে ঢুকে চোখেমুখে জল দিয়ে বেরিয়ে এল । মেয়ের মুখের দিকে
তাকাল-----না, কোনো অস্বাভাবিকতা ফুটে ওঠেনি ওর নিষ্পাপ মুখে । নিজের কাজ
করছিল আপন মনে । তারপর স্নান করতে বাথরুমে ঢুকে গান করছিল রোজ যেমন করে । লিপিকা
আশ্বস্ত হল---হয়তো তেমন কিছু দেখেনি, হয়তো কিছু বুঝতে পারে
নি । কিন্তু ওর প্রচণ্ড রাগ উঠছিল প্রশান্তের উপর ----সে এত দায়িত্বজ্ঞানহীন কেন?
কেন নিজের শারীরিক চাহিদাকে এতটুকু সংযত করতে পারে না যার জন্য লিপিকাকে
এরকম বিব্রত অবস্থায় পড়তে হল ? রাগে, হতাশায় লিপিকার
মনে হয়, সে যদি কোন কারণ-বশত পাশে শুয়ে মরেও থাকে, তাহলেও সেই মরা শরীরের সঙ্গে যৌন খেলায় মগ্ন থেকে প্রশান্ত টেরটিও পাবে না
যে সে মরে গেছে ।
বেশি ভাবনার
অবকাশ নেই এখন । মনকে কোনও রকমে শান্ত করে লিপিকা । আটটায় প্রাচীর স্কুল, বেরোবে
সোয়া-সাতটায় । তার ব্রেকফাস্টের জন্য দুধ টোস্ট, দুপুরের
টিফিন সব রেডি করতে হবে । তারপর প্রশান্ত বেরোবে সাড়ে আটটায়, তার খাবার তৈরি করতে হবে । ঘরের বাকি কাজ শেষ করে স্নান করে দুটোয়
প্রাচীকে আনতে যেতে হবে । প্রশান্ত বাইক বের করল প্রাচীকে বাসে পৌছে দেবার জন্যে,
ওর স্কুল গাড়ি ধরতে বেশ খানিকটা রাস্তা এগিয়ে যেতে হয় ।বিকেলের দিকে
বাস থেকে নামলে লিপিকা তাকে বাড়ি নিয়ে আসে। সব কাজ স্বাভাবিক ছন্দে চলতে লাগল।
রাতে শোবার
সময় প্রশান্ত বলল, দরজা আটকে দিই, তুমি তো যে
রকম করে আজ ঘুমচ্ছিলে ।
লিপিকা এবার
রাগে ফেটে পড়ল । কোনোরকমে গলাটাকে খাটো করলেও সারাদিনের চেপে রাখা ক্ষোভ ও ক্রোধ
উগরে উঠল ।
আমি নিজে
থেকে করেছিলাম ? তোমার জন্যই তো এরকম হল । কতদিন বলেছি, মেয়ে
বড় হচ্ছে, এখন নিজেকে একটু সামলাও । তোমার কোনো আগড় নেই ।
কালকে শোবার সময়ই বলে দিয়েছিলাম যে আমাকে ডিস্টার্ব কোরও না । তাও তুমি ভোরবেলা
আমাকে এই রকম করে বিব্রত করলে । শরীর ভাল না থাকলেও তোমার শরীরের খিদে আমাকে যখন
তখন মিটাতেই হবে ! আমাকে লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে ফেললেও তোমার কিছু এসে যায় না ।
দায়িত্বজ্ঞান, কাণ্ডজ্ঞান এই আধবুড়ো বয়সেও তোমার হল না ।
তুমি ভীষণ স্বার্থপর ।
প্রশান্তের
হাত ঠেলে দিয়ে ডবল বেডে যতদূর সম্ভব মাঝখানে ফাঁক রেখে লিপিকা পেছন ফিরে শুয়ে পড়ল
।সে রাতে দুজনেরই ভাল করে ঘুম হল না । নিশ্চিন্তে ঘুমোনোর জন্য প্রতিবাদ করে উল্টে
মাথা গরম করে লিপিকা আজ ঘুমোতে পারল না । প্রশান্ত ঘুমোতে পারল না স্ত্রীর
প্রত্যাখ্যানের গ্লানি ও অভ্যাসের জবরদস্তি বদলের ফলে ।
প্রথম
দু-তিনদিন তো লিপিকার প্রশান্তের মুখ দেখতেও ইচ্ছে করেনি । খুব প্রয়োজন হলে দু-
একটা কথা, বেশিরভাগই ভাববাচ্যে ।দুতিন দিন পর দুজনেই একে অন্যের নজর
এড়িয়ে আড়চোখে তাকায়, কিন্তু কথা বলেনা । শোবার পর লিপিকার
অবশ্য কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুম এসে যায়, প্রশান্ত ও এপাশ ওপাশ
করতে করতে কোনো একসময় ঘুমিয়ে পড়ে --- সবই অভ্যাসের ফল । শোবার সময় লিপিকা বুঝতে
পারে প্রশান্ত ওর কাছে আসার জন্য উন্মুখ । তার নিজের ও প্রশান্তের দিকে সরবার
ইচ্ছে করে না যে তা নয়, কিন্তু সে নিজেকে শক্তভাবে দমন করে
বিছানার ফাঁকটুকু বজায় রাখে । প্রশান্তকে সে এতদিনে ভালই চেনে । একবার প্রশ্রয়
দিলেই মাথায় চড়ে বসবে । লিপিকাকে এরকম বিষম অবস্থায় ফেলে তার মনে তো কোন অনুতাপ
নেইই, উলটে নিজের কাজের দায়ভার ওরই উপর চাপিয়েছে । স্ত্রীর
শরীরকে ভোগ করার অধিকার সে পুরোমাত্রায় নেবে, কিন্তু তাকে
অসম্ভ্রম থেকে রক্ষা করতে দায়িত্ব নেবার কোনো মানসিকতা তার নেই । তাই জেনেবুঝেই
লিপিকা প্রশান্তকে কষ্ট দেয়, তার মনে হয় প্রশান্তের শিক্ষা
হওয়াই উচিত, তাতে যদি সে অন্যের অনুভূতি বুঝতে পারে ।
আট দিন কেটে
গেল এভাবেই । তার পরের রাতে শোবার সময় প্রশান্ত লিপিকার হাত ধরল । মুখে কিছু না
বললেও সেই ছোঁয়ায় ছিল মার্জনা ভিক্ষার অনুরোধ । লিপিকা আর হাত সরিয়ে দিতে পারল না
। বাধা না পেয়ে প্রশান্ত স্ত্রীকে বুকের উপর টেনে নিল । লিপিকাও সমস্ত সংযম উড়িয়ে
দিয়ে স্বামীকে জড়িয়ে ধরল । আর প্রশান্তের সমস্ত পৌরুষের বাঁধ ভেঙ্গে চোখ গলে ধারা
নামল, লিপিকার সমস্ত রাগ, সমস্ত অভিমান সেই ধারায় ভেসে গেল
। এত অসহায়, লিপিকার উপর, তার শরীরের
উপর এত নির্ভরশীল---- প্রায় শিশুর মত । লিপিকার শরীরের গন্ধ ওকে এখনো উতলা করে,
স্পর্শে পাগল করে । প্রিয়তমকে ব্যথা দেবার অনুতাপে লিপিকার বুক
মোচড়ে উঠল । আলিঙ্গনে, চুম্বনে সব দুঃখ, সব চোখের জল মুছিয়ে
নিজেকে নিঃশেষে সঁপে দিতে দিতে লিপিকার ফুলশয্যার রাতের কথা মনে পড়ছিল । দুজনে
দুজনের স্পর্শের নিবিড়তা উপভোগ করতে করতে কখন গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে গেল ।
সকালবেলা
নিয়মমাফিক জীবনযাপন শুরু হয়ে গেল । প্রাচী স্কুলে, প্রশান্ত অফিসে গিয়েছে ;
দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে থাকলেও আগের রাতের আবেশ লিপিকাকে যেন জড়িয়ে
রেখেছিল । বারে বারেই প্রশান্তের কামনাকাতর মুখখানি মনে পড়ে বুকটা মোচড় দিয়ে উঠছিল
।পূর্বরাগের পর্বেও লিপিকা প্রশান্তের কথা এত ভাবে নি, স্পর্শের
পুলক শরীরে এত দীর্ঘায়িত হয় নি । সে কি আবার নতুন করে প্রেমে পড়ল ! সারাক্ষণ তার
শুধুই মনে পড়ছিল, কখন সে আবার প্রশান্তকে দেখবে, তাকে নিবিড় করে পাবে ।
সন্ধ্যাবেলা
প্রশান্ত যথাসময়ে কাজ সেরে ঘরে ফিরল । চা-টা খেয়ে বিশ্রাম নিয়ে মেয়ের সঙ্গে কথা বলল, স্ত্রীর
সঙ্গে ও অল্পস্বল্প । লিপিকা অধীর
আগ্রহে প্রতীক্ষা করছিল শয়নের নিভৃত সময়টুকুর জন্য । ওরা সাধারণত রাত এগারোটার আগে
শুতে যায় না । প্রাচী রাত দশটা অবধি পড়ে, পড়াশুনো শেষ হলে বাবা-মায়ের
সঙ্গে সারাদিনের জমানো গল্প করে । তারপর সবাই টিভি দেখতে দেখতে একসঙ্গে খায় ।
সকালবেলার কিছুটা প্রস্তুতি সেরে শুতে শুতে রাত এগারোটা হয়েই যায় । আজকে ঘড়িটা যেন
এগারোটা বাজতেও দেরি করছে । তবে লিপিকা লক্ষ্য করছিল, সবকিছুর
মধ্যেও প্রশান্ত যেন কিছুটা নিরুত্তাপ । সেটা কি কালকে রাতে নিজেকে বেশি প্রকাশ
করে ফেলায় ?
প্রতীক্ষিত সময় এল । অধীর আগ্রহে লিপিকা আজ শয্যায় কোন ফাঁক না রেখেই প্রশান্তের পাশে শুল । লিপিকাই আজ প্রশান্তের হাতে হাত রাখল । পরিবর্তে হাতে একটু চাপের বেশি আর কোনো সাড়া প্রশান্তের দিক থেকে পাওয়া গেল না । লিপিকাই নিজের থেকে দু একটা কথা বলল, প্রশান্তও দুএকবার জবাব দিল, নিতান্তই মামুলি দায়সারা । ধীরে ধীরে তার কথা ঘুমজড়ানো হয়ে গেল, শ্বাসপ্রশ্বাস দীর্ঘতর, একসময় ওপাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়ল ।
লিপিকা বুঝতে পারল প্রশান্তের অনেক দিনের চাহিদার
কালকেই পরিসমাপ্তি ঘটেছে । তার ওই চোখের জলের মধ্যে লিপিকার শরীরের স্পর্শ-গন্ধের
জন্য কোন আকুলতা ছিল না । ছিল শুধু নিজের উদ্গত কামপ্রবৃত্তিকে চরিতার্থ করতে না
পারার হতাশা ও খেদ । লিপিকার আত্মসমর্পণের সঙ্গে সঙ্গেই তা মিটে গেছে । অধিকার
কায়েম হয়ে গেছে, এর মধ্যে ওর জন্য প্রশান্তের শরীরী-অশরীরী কোনোরকম প্রেমের
কোনো স্থান নেই। বরং এই
প্রত্যাখ্যানের মধ্য দিয়ে আহত পৌরুষের প্রতিশোধ নেবার পালা শুরু হল ।
লিপিকা আর
ভাবল না । অনেক রাত হয়েছে, ভোরবেলা
উঠতে হবে । দীর্ঘশ্বাস ফেলে পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল ।
~~~
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন