।। সুমন পাটারী ।।
(C)Image:ছবি |
প্রসঙ্গত
দিনো কামপানা( ইতালীর দিকপাল কবি) "পকেটে একটি কবিতার বই নিয়ে ইহুদি মায়ের
কিশোর ছেলে বেরিয়ে পড়েছিলেন পৃথিবীতে। বিংশ শতকের সবে শুরু। কি খুঁজতে বেড়িয়েছিলেন
কে জানে,
কিন্তু পেয়েছেন শুধু দরিদ্র হতাশা আর মাথার অসুখ, দেশ ছেড়ে ছন্নছাড়ার মতো ঘুরেছেন ইউরোপের সর্বত্র, দক্ষিণ
আমেরিকায়। ছুরি কাঁচি শান দেওয়ার কাজ থেকে শুরু করে করেছেন ইঞ্জিনের কয়লা ঠেলার কাজ
লিফ্টম্যানের কাজ, জাহাজের ডেক পরিষ্কারের কাজ, ইত্যাদি। সুস্থ মস্তিষ্কের লোক মনে করতেন না অনেকে ওনাকে। সাতবার পাগলা
গারদে গিয়েছেন, এসেছেন। প্রথম মহাযুদ্ধের সময়ে তার একটি চটি
বই 'অরফিওসের গান' ইতালীর সাহিত্যে
প্রবল আলোড়ন এনে দিয়েছিলো( সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর অনুবাদ থেকে তোলা) এখানে দেখা
যায় ইতিহাস কামপানার কর্ম কে মনে রেখেছেন ও যথার্থ সম্মান দিয়েছেন, কি পরেছেন কি খেয়েছেন কোথাও কি বেশ্যাগলিতে গিয়েছেন কিনা উল্লেখ নেই।
ইতিহাস তা মনে রাখে না। এগুলি মনে রাখার বিষয় নয়। মাথা উঁচু করে যে কোনো কাজের
মধ্যে বেঁচে থাকাই মানব ধর্ম। খাদ্য প্রাণীর প্রথম ধর্ম, আড়ম্বর
নয়। খাদ্যের জন্য যেকোনো কাজ( খুন চুরি ডাকাতি ছাড়া) সম্মানের। এই যে কামপানার এতো
নিম্নশ্রেণি বৈতনিক কাজ এগুলোই ওনাকে আজ সম্মানিত করে তুলেছে। বিদগ্ধ করে তুলেছে।
আমরা ভারতীয় বুর্জোয়া-সমাজ প্রজন্ম( আমরা কোনো প্রজন্ম নই,-- প্রদীপ চৌধুরীর মতে, ওনার সমর্থনে সামান্য আলোচনায়
পরে আসবো) সামান্য কালির অক্ষর লাগিয়ে জীবন ধারণের জন্য মাটির কাজ কে অশিক্ষিত কাজ
মনে করি( কারণ যাদের শিক্ষা নেই এরা এসব করে) যদিও কাজের জন্যই শিক্ষা। শিক্ষা
কাজকে আরো সুন্দর করে তোলে শ্রম খাদ্যকে আরো সুস্বাদু করে তোলে। যারা ভাবছে আমি
পড়ালেখা করে চাষ করব কিনা কিংবা পান দোকান মুদি দোকান নিয়ে বসব কিনা, তাদের শিক্ষা ব্যর্থ( পড়ালেখা প্রযুক্তি ও অগ্রগতির জন্য, অগ্রগতি যে কোনো কিছু থেকে করা যায় এক কাজ থেকে অন্য কাজে এগোনো যায় থেমে
গলে চলে না, নিজের ভিতর অক্ষরের প্রবাহ সচল রাখতে হয় যারা
বলে সময় ও পারিবারিক দায় আমাকে বই থেকে দূর করে রেখেছে তারা বাহানা করে, তাদের শিক্ষা ছিলো যান্ত্রিক, স্বার্থপরতায় ভরা ও
কোনো ভাবে একটি চাকরি পেয়ে জীবননৌকা পার করে নেওয়ার)। সময়ের ব্যাবহার মানুষের হাতে,
জ্ঞানের নেশা মানুষকে সংযমী ও দুরন্ত করে তোলে।
যদি
কিছুর দুঃখ থেকে থাকে তা হলো নীরবতা, ধান ক্ষেতের বাতাসে পড়ন্ত
বিকেলে একা বসা, মন হারিয়েই যায় প্রথমে ধান সবুজ স্বপ্নে
এরপর শব্দে। শব্দ অর্থাৎ কথা, কথা একধরণের করাত, এতো সংগোপনে এতো গভীরে কাটে জীবন ফুরিয়ে যায় শুকায় না।
এই
আঘাত পাওয়া সবার থাকে কোথাও না কোথাও, বেশীরভাগ ক্ষেত্রে
বয়ঃসন্ধি। এই কাল টা মারাত্মক রকম সময়। মা বাবার জাঁতাকল থেকে কিছুটা আকাশ দেখতে
পায় আর হরমোনের প্রভাব বেশ সুড়সুড়ি যোগায়, এখানেই আত্মসমর্পণ
করে যায় বেশীরভাগ। অন্যকে নিন্দা করতে করতে কখন আমরা অন্যরা হয়ে যাই জানি না। এবার
আসে চুরির পালা, আঠারো থেকে একুশ, কথায়
কথায় গরম হয়ে যায় আর নিজের দোষ ঢাকে এভাবেই। মা বাবা ও বোঝে কিন্তু হয়তো চুপ থাকে
কখনো কখনো।
আমাদের
যা হয় তা হলো দুঃখ, তা সম্পর্ক থেকে পাই। কর্ম মহান কর্মে দুঃখ পাবার
কিছু নেই। দুঃখ সম্পর্ক আনে। সম্পর্ক শুরু হয় প্রধানত জন্মের আগে থেকেই, এই স্নেহের সম্পর্ক গুলো আমরা ততোটা গভীর ভাবে নিতে শিখিনা বয়ঃসন্ধি
পর্যন্ত( এই সম্পর্ক গুলো আমরা উপহারে পাই)। যতদিন না আমরা নিজে কোনো সম্পর্ক তৈরি
করি। (আমি সম্পর্কের দিকে যেতে চাইছি।) ছেলেরা প্রথমে না বুঝেই যে কোনো মেয়েকে
নিয়েই আবেগে মেতে যাই, মেয়ে হলেই হয়, নারীশরীর
যেন ঐশ্বরিক কিছু। টান থাকে প্রচণ্ড, তবে শরীরের নয়।
ভালোবাসাকে জানার তীব্র আকাঙ্ক্ষা। আঠার বছরে একটা ছেলে কখনোই শরীর ব্যাবহারের কথা
ভাবে না, শরীর ব্যাবহার কথাটাই ঠিক নয়,(পরে আসব এ কথায়) সমবয়সী
ছেলে মেয়ের থেকে দুর্বল হয়। মেয়ে নিজেকে ধরে রেখে প্রথম সময়ে অনেকটা পাগল করে দিতে
জানে, অথবা অনিচ্ছাকৃত, পারিবারিক
সমস্যা যা ছেলে বুঝতেই চায় না, চেষ্টা ও করে না, সমস্যা বোঝা দূর তখন ওর মন সন্দেহের আলোকবর্ষ পথ ভ্রমণ করে বসে। যা একদম
অর্থহীন। বোকা ছেলেমন শুধু তার সাথে চায়। এই যে অস্থিরতা তা একসময় মেয়ের মনে
বিরক্তি আনে। একদুমাস বড়জোড় ছ-মাসের বেশী চলে না, তবু ওটা
প্রথম স্টেজের চূড়ান্ত শিক্ষা। এর পর ধীরে ধীরে মন থেকে সরে মগজের ব্যাবহার শুরু
হয় ছেলেদের, এ ফাঁকে ত্রিশ জনে দুজন পড়ালেখা উত্তম চালিয়ে
যায়( জীবনে শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সামান্য বুঝে) আর দুজন যারা এসবে তেমন স্মার্ট না
তারাও ক্লাসে এগিয়ে নিজের সাময়িক জয়ের ডঙ্কা বাজায়( পড়া লেখা এই দুজনের কাছে শুধু
পিতামাতা নামে রাক্ষুসে দম্পতিকে খুশি রাখার জন্য।) বাকি ছাব্বিশ জনে পনেরো জন
মধ্যবিত্ত ছাত্র, এরা চালাক হয়ে যায় নিজস্ব একটা দুনিয়া তৈরি
করতে থাকে আর বাকি এগারো জন নিয়তির পাঁঠার মতো চলে। এরা অনেকটা দক্ষিণ ভারতীয়
সিনেমার মতো-- মারামারি আর জোকারের এন্ট্রি কখন কী কারণে হয় তা বলা যায় না, যেকোনো বস্তাপচা কারণ হতে
পারে। অদ্ভুত ভাবে এরা উনিশে পা দিয়ে নিজেকে সমকালীন দাদা প্রকাশ করতে চায় আর আমি
দেখেছি এতে এরা গৌরব বোধ করে, কেন তা হয়তো একপ্রকার আদি
রসায়ন যা মানুষকে শ্রেষ্ঠ হওয়ার বালসুলভ বিপরীত লোভ গ্রাস করে। এরা নিজেও জানে না
কিসের গরম দেখায়-- ব্যাস আধিপত্য বিস্তার করতে চায়। অনেকটা বনের বাঘ দেখে এসে
নিজেকে সিংহ ভাবা ও বাহুবলের দাপটে স্ত্রীলিঙ্গে আধিপত্য জমানোর মতো।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন