।। সুমন পাটারী ।।
(C)Image:ছবি |
চাষি
বলেই সারাদিন ছুটতে হয়, নিম্নবিত্ত শ্রেণী থেকে সামান্য উপরে অনেকটা জোড় করে
মধ্যবিত্ত শ্রেণীতে নাম রাখার মতো পরিবার আমার, একদিন এমন
ছিলো ভাতের প্রচণ্ড অভাব, প্রাণপণ চেষ্টা করেও যখন বাবা
বিছানা থেকে উঠতে পারেনি তখন হাত পা ছেড়ে দিয়ে ওনাকে কাঁদতে দেখেছি দরজার আড়াল
থেকে। সামনে যাইনা পাছে আরো কষ্ট পায়। সেখান থেকে কোমর বেঁধে উঠে দাঁড়িয়েছি। আজ অভাব নেই
অনন্ত নিত্য জীবন ধারণের। তিন বোন প্রতিষ্ঠিত সংসারের মালিক। সুখেই আছে। বাবাকে
একসময় জিজ্ঞেস করেছিলাম স্বার্থপরের মতো আমরা গরীব এতো বেচা বিক্রি করে ধার দেনা
করে আপনি বোনদের বিয়ে দিচ্ছেন আমি তো কানা হয়ে যাবো। বাবা বললেন বাবার ঘরে ওদের
সুখ দিতে পারিনি তাই পরবর্তী জীবনে ওদের সুখের ঠিকানা কিনে দিয়েছি। ওদের আর অভাব
এক জিনিস তাড়াবে না। তুই আপাদমস্তক আমার ছেলে তুই চলে যেতে পারবি। আর জীবনের জন্য
বোকা পুরুষরা সুখ সঞ্চয় করে। বাঁচতে থাক বেঁচে থাকার প্রবল বিশ্বাসে। ওনার প্রতি আমার
শ্রদ্ধা খুব বেড়ে গিয়েছিলো। এবং নিজের প্রতি ও।
রাত, এই
শব্দটা শুধু শব্দ অথবা বারোঘন্টার একটা সময় নয়। এখানে আমি আমার থেকে বেরিয়ে আমার
মধ্যে বাঁচি। একটা ভুল করেছি, ভুল কিনা জানিনা, আমি আজও ভুল মানিনা। সেই ২০০৮ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত হন্য ছিলাম। কখনো রাত হলে ভাবতাম যে কখনো আমি সামান্য
রেগে থাকলে একশোবার কল করে দিতো পরদিন ভাড়াবাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে যেতো সে এখন
অন্য কারো বিছানায়। এই স্বপ্নটা আমার ছিলো। এই যে আগুন টা জ্বলে যেতো তা আমাকে
লিখতে বাধ্য করেছিলো। লিখে লিখে সমস্ত রোগ সারিয়ে নিয়েছি। তবু একটা ব্যথা যা যত্নে
লালন করি সবসময়।
লিখতে
এসে নিজেকে অন্যভাবে চিনেছি। শ্রদ্ধেয়া মধুমিতা নাথ। বিশেষ কিছু কখনো বলিনি তেমন
কথাও হয়নি কবিতা পড়ে দুয়েকদিন দিদির মতো এমন কিছু কথা বলেছিলে যা আমার জীবন বদলে
দিয়েছিলো। কি সেই কথাগুলো তাও জানিনা শুধু জানতাম বছর দুয়েক আগে ভিতরে আগুন লালন
করা একটি বখাটে ছেলে আজ অনেকটাই শান্ত। সামনাসামনি মাত্র একবার ১০ মিনিট কথা বলেছি ফোনে মনে হয় না কখনো বলেছি। ম্যাসেজে বিরক্ত করেছি একমাসে একঘণ্টা। এতো সহজাত
জীবনের বোধ ওনার। আমার এই জীবন কালে দিদি একটা কথা ভুলবো না। "তোর কথা লোকে
কতদিন শুনবে? লোকের কথা বল নিজে হালকা হবি"।
জীবনের
সমস্ত আয়োজন থেকে দূরে সরে গিয়ে নিজেকে কবিতার জন্য খুঁজতে চাইছি, এক
অন্য স্বত্বা যা আমাকে আমার চোখে সম্মানিত করে তুলবে যা আমাকে চরম সত্যের মুখোমুখি
এনে দাঁড় করাবে। যেদিন আমি মন থেকে এটা মেনে নিতে পারবো সত্যি আমি একা দুখী নই একা
প্রেমহীন নই একা সংঘর্ষে নেই একা ক্ষুধাকাতর যুবক নই একা সাংসারিক দৈনন্দিন কষ্টে
নেই। আমি আমার মতো একটি মানুষ খুঁজছি। এই যে নিজেকে উলঙ্গ করে এতো কথা আমি পাঠকের
সামনে তুলে ধরেছি-- কোনো সহানুভূতি চাই? একদম না তবু বলতে হয়
না হলে হয়তো কোথাও মরে যাবো ভিতরে যাকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের
সমালোচনা করা ছাড়া কোনোও ওষুধ নেই আমার মতো মনরোগীদের। আমরা সব জানি সব বুঝি তবু
বাস্তববিমুখ ভণ্ড, অথচ চূড়ান্ত বাস্তবতায় নিজেকে আমের পোকার
মতো একটু একটু করে খাই, হয়তো
কোথাও গোপনে স্বপ্নের খোঁজে স্বপ্নের মানুষের খোঁজে, সুখের
খোঁজে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন