“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

বৃহস্পতিবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৭

লক্ষ্মীমন্ত মেয়ে

।। চিরশ্রী দেবনাথ।।

     
(C)Image:ছবি
   
মি একটি মেয়েকে জানি, জন্মের আগেই বাবাকে হারিয়েছিল সে, তাপহীন দুধ ঠোঁটে তার বড়ো হওয়া কেউ আটকাতে পারেনি তবু। মা মারা গেলো বয়ঃসন্ধিতে। মামার বাড়ি। সাধারণ স্কুলের কয়েক ক্লাশ  পড়াশোনা, দিনে দু তিনবার অলক্ষ্মী গালি তাকে অজান্তে শক্ত জমি বানাচ্ছিল, যেন এখানে শালবীথি হবে কোনদিন, কোনও ভরা পূর্ণিমায়। বিয়ে হয়ে গেলো। খুব তাড়াতাড়ি। মামা মামী বাঁচলেন। বড়োসড়ো সংসারে, অনেক মানুষ, বাঁচার লড়াই। আবার মৃত্যু। এবার আরো সাদা, ফটফটে খটখটে রংহীন কোজাগরী। থেকে যেতে হলো এখানেই, যাবার জায়গা নেই বলে। দুটো বলিষ্ঠ মেয়েলি হাত আঁকড়ে ধরল আরোও কিছু অসহায় মানুষকে, দুইখানা চুরি কবেই ভেঙেছে। এবার সমবায় সমিতি, রোদে পুড়তে পুড়তে মাছ চাষ। টগবগিয়ে মাছ ছোটে পুকুরে, আরোও মেয়ে,  প্রসাধনে কাদা, পাঁক, জলের ঘাস অমসৃণ চুলে আটকানো, ঝকঝকে পয়সা আসছে অবশেষে, বাঁচার রাস্তা, রূপোলী মাছ লক্ষ্মীপুজোর থালে, দাঁত ঠিকরে চাঁদের হাসি, পরিবার আরো বড়ো হয়েছে,আশেপাশের দু গ্রাম চার গ্রাম, সময় নেই, দৌড়ুতে হয় যখন তখন, কত মেয়ে ডালপালার মতো জড়িয়ে ধরছে রোদে পোড়া জলে ভেজা বটগাছের মতো মেয়েটিকে, কপাল চিড়ে বড় হওয়া জ্যোৎস্না সিঁথিতে সারি সারি লক্ষ্মীর পা, দুটো উন্মুক্ত খোলা হাত যেন চার ফসলী ক্ষেত, কী বড়ো ফাঁকা কপাল, গভীর দীঘি সারি সারি, ডুব দিয়ে মাছ আনছে তুলে ধোঁয়া ভাত, কটা চোখ জন্ম থেকেই, একদম অলক্ষুণে যাকে বলে,কী  আশ্চর্য কটা চোখ যেন ভরা তাম্রপাত্র, শ্রমে, মাছে, স্নেহে, অন্নে ভরা, লক্ষ্মীমন্ত মেয়ে নীল জলে দাঁড়িয়ো, দুধসাদা ঘন চাঁদে স্নান করাবো, তোমাকে পুজো দিতে রাতের পর রাত আলো জ্বেলে আছি ...
.

কোন মন্তব্য নেই: