“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

সোমবার, ২৬ জুলাই, ২০২১

যে ক'টা দিন পৃথিবীতে ।। নবম পর্ব

 

।। মিফতাহ উদ-দ্বীন।।

।। ।। 

 


কাল কয়টায় যাচ্ছ বাবা? রাত্তিরে খাবার টেবিলে বসেই আব্বা শুধালেন। দেখলাম, এখানে বাবা দু'জন। আনিস আর আরিফ। আব্বা কাকে উদ্দেশ্য করে বললেন জানতে আফসানার দিকে তাকাতেই দেখলাম আফসানা আনিসের দিকে ইশারা করছে। আমি কিছুটা অপ্রস্তুতের মত কী বলব বুঝার আগেই আব্বা বললেন, সকালের দিকে চলে যেও। বিকেলের দিকে তো আবার কার্ফু টার্ফু লেগে যাবে। যা দিনকাল, কখন কী হয়? আমার একমুহূর্তের মতন মনে হল আমরা যেন শ্রীনগরে আছি, আর নাদিয়াদের ঘর জম্মুতে। পুলিশের টহল, চেকপোস্টকত হাঙামা। পর মুহুর্তে মনে হল ঠিকই তো, আসাম এখন কাশ্মীর থেকে কম কীসে! পুরো দেশটাই আজ  কাশ্মীর যেন একসময় পত্রপত্রিকায় তাঁদের অবস্থা দেখতাম এখন নিজ চোখে সে দেখছি সারাক্ষণ। লকডাউন আর এস পি নামক গেম শো'য়ে ইচ্ছে মতো যাকে তাকে হেনস্থা করা হচ্ছে, লাঠি পেটাচ্ছে। 

 

আমার এই হঠাৎ করে দায়িত্বশীল চিন্তিত নাগরিক হওয়াটাকে থামাল নাদিয়ার একটা অদায়িত্বশীল কাণ্ড! মাছ ভাজা দিতে গিয়ে ইলিশের গরম তেল আঙুলে ঢেলে দিল। দোষটা ঠিক তাঁর নয়, আমিই ভাতের মাঝে আঙুল ঢুকিয়ে "এস্যাম, দ্য নিউ কাশ্মীর, প্রোক্ল্যেমেশন ইন ডিজগাইজ" রচনা করছিলাম মনে মনে। ইশশ!-- বলে চিৎকার করতেই নাদিয়া ভয় পেয়ে গেল যেন! মা অভয় দিয়ে বললেন, কিছু না, সে একটু বেশি- রিয়েক্ট করে। 

আমি বেচারার মত মুখ করে তেল দিয়ে বেশ মগ্ন হয়ে ভাতে। মাছের তেল আমার সর্বকালের সেরা খাবার, আর ইলিশের তেল হলে তো আর  কথাই নেই। আব্বা বেয়াই বেয়াইনকে এস্প্যাশ্যাল আপ্পায়ন করবেন বলেই সুনামগঞ্জের খালুকে দিয়ে সিলেট এগ্রো মারফৎ আনিয়েছিলেন প্রায় সাত কিলো ইলিশ! খালু খালা কেউ আসেননি বিয়েতে, এসেছে শুধু রৌনক আর ইলিশ

 

- নাসির চাচা কে বলবো কী? আরিফ ভাত শেষ করে বলল! আমি 'বলে দিস' বলে উঠতে যাব তখন- নাদিয়া বলল, তরকারি নিলেন না! মা হেসে বললেন, মাছ ভাজা আর তেল হলে আর  কিছুই লাগে না ওর, এক  ভাড়া ভাত খেতে পারে! নাদিয়া হাসল। সঙ্গে আফসানা, আব্বা ও। 

 

- কাল কয়টায় বেরুব?

- তুমি বলো!

- আহা, আপনিই বলেন না। 

- হুমম, আচ্ছা আমি যে এখন তুমি তুমি করে কথা বলি, কিন্তু তুমি এখনো আপনি করে বল..!

- তো?

- কেমন কেমন লাগে না? তুমি ছোট আমি বড় টাইপ। তার চেয়ে বরং তুমি তুমি করে কথা বল

- পারব না!

- আহা, আমার ভাল্লাগে না। একটা দূরত্ব থেকে যায় যেন

নাদিয়া একটু মুচকি হেসে কাছ ঘেঁষে বসে বলল, এই নিন দূরত্ব মিটে গেছে! আমার মায়া হল। একটা দুষ্টুমির আঁচ পেতেই নাদিয়া বলে উঠল, আপা... অথচ রুমটা বন্ধ। 

মুখ বাঁকিয়ে তাঁর দিকে দেখতেই যেন লজ্জায় লাল হয়ে গেল সে। 

- দশটা হলে কেমন হয়?

- ইশ, এতো তাড়াতাড়ি, নাস্তা শেষ করতে করতেই তো দশটা বেজে যায়। তারপর কত কাজ! গোসল টোসল

- কাল আগ ফজর  গোসল করছ! ঝামেলা মিটে গেল

নাদিয়া কথাটায় একটা তীব্র অশ্লীলতার গন্ধ পেল যেন, নাক কুঁচকাল

- আচ্ছা, আমার গল্প ভাল্লাগে না কবিতা

- গল্প

- আর  কবিতা?

- কবিতা তো লিখতে দেখি নাই। 

- আহা, কবিতা মানে ওই ছড়া লিমেরিক গুলোর কথা বলছি!

- নাসির কে?

আমি আমার আজ পর্যন্ত কোনো লেখায় নাসির বলে কারুর উল্লেখ করেছি মনে পড়ছে না! আমি একটু বেশি- অবাক হয়ে বললাম, নাসির? কে নাসির?

- আমি কী জানি, আরিফ ভাই বললেন, নাসির না কোন চাচার কথা

- কোথাকার কী? আমি তো বলি, আমি কবিতার কথা বলছি, তুমি কোত্থেকে নাসির পেলে

- আসলে কাল কীভাবে যাব তো, সে নিয়ে ভাবছিলাম

বুঝলাম যে আমি আর জোর করে এভাবে তারিফ উগলাতে পারব না, আমার সাহিত্য আমার কাছেই থাক!

- নাসির আমাদের গ্রামের এক  চাচা, যার গাড়িতে আমরা কুটুম্ব পাকাই। 

পাকাই শুনে সে হাসল, তার হাসি দেখে আমারও হাসি পেল। কাল শশুরবাড়ি যাচ্ছি কথাটা হাসিতে আরেকটু সস মিশিয়ে দিল যেন

 

ক্রমশঃ 

 

#যেকটাদিনপৃথিবীতে

 

কোন মন্তব্য নেই: