“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

সোমবার, ২৬ জুলাই, ২০২১

যে ক'টা দিন পৃথিবীতে ৷৷ একাদশ পর্ব

 ।। মিফতাহ উদ-দ্বীন।।

।। ১১।। 

 


থায় কথায় সারাটা পথ কেমনে কাটল টেরই পেলাম না যেন!  নাদিয়াদের বাড়ির পথে নামতেই মাথায় যেন বাজ ভেঙে পড়ল! 

-- সর্বনাশ! 

-- নাদিয়া আর নাসির চাচা দু'জনই চমকালেন! নাদিয়া হাত দিয়ে আমার হাতটা চেপে ধরে ইশারায় বলল, কী হয়েছে? আর নাসির চাচা ও কিছুটা তাজ্জব হলেন! 

-- কী হল চাচা? 

-- মিঠাই!! মিঠাই চাচা, মিঠাই, মিঠাই কিনতে ভুলে গেছি! "জীবনে প্রথমবার শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছি, খালি হাতে!" কোটেশনের কথাগুলো মনে মনেই বলছি আর ভাবছি এখান থেকে গাড়ি ঘোরাবো না নাদিয়াকে নামিয়ে দিয়ে কোনও একটা কাজের বাহানা করে মিঠাই আনতে চলে যাব। নাদিয়া আশ্চর্য রকমের চুপ করে আমার দিকে হা করে তাকিয়েই বাইরে তাকিয়ে রইল। নাসির চাচাও ততক্ষণে গাড়ি অফ করে বসে আছেন। নাদিয়ার চুপ করে বাইরে তাকিয়ে থাকা আর নাসির চাচার গাড়ি বন্ধ করে বসে থাকাটা যেন আমায় একটা চরম অসহায় প্রাণীর কাতারে দাঁড় করাল! আমি হতাশার মত এদিক ওদিক দেখতেই চোখে পড়ল সামনের সীটের উপরের কাঁচে নাসির চাচার মুখ টেপা হাসি। আমি এবার নাদিয়ার মুখটা ধরে ফেরাতেই নাদিয়া হেসে দিল। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে নাসির চাচা বললেন, "আরিফ চাচা আসার সময়েই ডিকিতে সব তুলে রেখেছেন!’ আর এদিকে নাদিয়া চুপে চুপে বলেই যাচ্ছে, "মা ঠিকই বলেছেন, এই ছেলেটা ভুলক্কড়। তাই কাল রাতেই আরিফ ভাইকে বলে সব আনিয়ে রেখেছেন!’ 

-- কী লক্কড়?

-- আপনি তো ভুল ধরবেনই! কে কী বলল, কীভাবে বলল, আপনি তো সেগুলো নিয়েই থাকেন! 

নাদিয়ার এই হঠাৎ রেগে যাওয়াটায় আমি তাঁদের দু'জনে মিলে আমায় ‘বকরা' বানানোর ব্যাপারটা না চাইতেও মনে মনে ছেড়ে দিতে হল। 

 

শ্বশুর মশাইয়ের সুখের সীমা নাই যেন! আমাদের দেখে কী করবেন, কোথায় বসাবেন, কেমনে বসাবেন, সে নিয়েই অত্যধিক ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন মনে হল। আমি পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক করবার ছলে বললাম, "আপনি বসেন আব্বা, আমরা বসছি।’  নাদিয়া গাড়ি থেকে নেমেই ভেতরে হাওয়া হল বুঝা গেল না। আমি নাসির চাচাকে ইশারা করতেই নাসির চাচা ডিকি খুলে মিষ্টির বাক্সগুলো একে একে নামিয়ে এনে রুমে ঢোকালেন। আমাদের দেখে আরেকজন মধ্যবয়স্ক ব্যক্তিও দেখলাম এগিয়ে আসতে। আমাদের সাথে মোসাহফা করে সোফার এক কোণায় এসে বসলেন। 

 

-- আমি আলিমের বড় ভাই! মানে তোমার চাচা শ্বশুর! 

আলিমের বড় ভাইয়ের পর একটা পজ ছিল, আর আমার চোখ আর কপালে "হু ইজ আলিম’ প্রশ্নটা একটা হিজিবিজি রেখা আঁকছিল খানিক সময়ের জন্য, সেটা ধরতে পেরেই বোধহয়, পজ দিয়ে পরের অংশটা পুরো করলেন, কে জানে? আমি ভুলেই গেছিলাম আমার শ্বশুরের নাম আলিম উদ্দিন। এবার মনে মনেই রিপিট করলাম, আমার শাশুড়ির নাম ওলিমা বেগম! পরে আবার যাতে কোন খটকায় না পড়ি। 

-- আলিম তো দুই হাজার দুই সালেই বাড়ি ফিরল আমাদের সোনামণিটা কে নিয়ে,  তাঁর আগে এতকাল একা এই বাড়িটায় ছিলাম। পড়াশোনা,  চাকরি বাকরি এমন জিনিস যা মানুষকে তাঁর জন্মভিটা থেকে দূর করে রাখে! এ কেমন ব্যাপার, বল?

আমি এই ইমোশন মেশানো দার্শনিক ব্যাপারটায় কীভাবে নিজেকে উত্থাপন করব ভাবতেই ভাবতেই ভেতর থেকে আপ্যায়নের মিছিল শুরু হল ছোট বড় হরেক সাইজের ট্রেতে করে। 

 

ক্রমশ: 

 

#যেকটাদিনপৃথিবীতে

 

কোন মন্তব্য নেই: