“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

মঙ্গলবার, ১৩ জুলাই, ২০২১

অনুভবের রঙ

।।  ,,,  ইকবাল॥

 

(C)Image:ছবি

   সুর আর রাগ নিয়ে যারা সাধনা করেন, তাঁদের কাছে এক একটি প্রহরের রয়েছে এক একটি বিশেষত্ব। কোন প্রহরে কোন রাগ লহরির উচ্চাঙ্গ ছোঁয়া হৃদয় ছুঁয়ে যায়, সেই অনুসারে তাঁরা সুর-সাধনা করে থাকেন। 

   আমার ভাবনায় অনুভবেরও রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন সমসাময়িক রঙ বা বর্ণ। এক এক সময়ে এক একটি অনুভব মনোজগতে এক একটি রঙ ধারণ করে থাকে। কেউ তা বিলীন করে দেয় কেবল অনুভবের সাম্রাজ্যে। কেউ আবার তার প্রকাশ ঘটায় নিজের অভিব্যক্তির মাধ্যমে। 

   কবিতার জগতে যারা বিচরণ বা পরিভ্রমণ করে থাকেন, নিশ্চিতভাবে তাঁরা নিজেদের অনুভবের রঙকে কালি-কলমের মাধ্যমে রাঙিয়ে তুলতে সক্ষম হন। 

   অনুভবের রঙ কখনো হয় রামধনুর সপ্তরঙে মোড়া। আবার কখনও তা ভীষণ ফিকে, রঙ-বিবর্জিত অতল কৃষ্ণকায়। এই যেমন শিশুর বাৎসল্য মাখা হাসির মধ্যে রয়েছে এক চিরন্তন পাটলবর্ণ, তেমনি মা-বাবার পরিতৃপ্তির চাহনিতে বিরাজ করে এক নৈসর্গিক পরিতৃপ্তির চিরসবুজ অভিব্যক্তি। 

   এভাবে জীবনের ধাপে ধাপে আমাদের উপলব্ধি আর অনুভবে পরিব্যপ্ত হয় আবেগের ভিন্ন ভিন্ন রঙের ধারা। সুখানুভূতির প্রকাশ সাধারণত উজ্জ্বল উজ্জীবিত হলেও, বেদনার অনুভূতির মধ্যে মিশ্রণ ঘটে সবচাইতে চমকদার জ্বলজ্বলে দীপ্তি! 

   বেদনাবিধুর চিত্ত সর্বসমক্ষে প্রচার করতে চায়না বা পারেনা তার বাস্তব উপলব্ধিকে পরিচ্ছন্নভাবে তুলে ধরতে। জনতার বিদ্রূপ নিয়ে তার যতটা ভয়, তার চাইতে কষ্টদায়ক হয়ে উঠে দাঁত কেলানো কৃত্রিম অনুকম্পা! তাছাড়া, ডুবন্ত প্রাণী যেমন খড়কুটোয় ভর করেও আত্মরক্ষার প্রয়াসে শেষ মুহূর্তেও ব্রতী থাকে, তেমনি বেদনার ভারে বিব বিরহবিধুর চিত্তেরও ক্লেশ-ক্লিষ্ট প্রয়াস রয় সাধারণ্যে নিজেকে চিত্ত সুখ সম্ভারে সমৃদ্ধ এক সাবলীল প্রজাতি হিসেবে উপস্থাপন করতে। উপলব্ধির এই আটপৌরে প্রয়াসের মধ্যে তাই মিশ্রণ ঘটে রামধনু ছাড়িয়ে বিশ্বচরাচরে যত প্রকারের যত রঙিন ফানুস! 

   কিন্তু ওই যে, প্রবল বর্ষণের মাঝে আট লাখের গাড়ির মধ্যে একবিন্দু পানিও প্রবেশ যদিও করতে না পারে, পরিমণ্ডলের ছোঁয়া স্বতঃস্ফূর্তভাবে গ্লাসের ভেতরে এতোটাই উপলব্ধ হয় যে, ভেতরের সেই অশ্রুকণা ভেতরে ভেতরে সামলে না নিলে জীবনপথে এগিয়ে চলা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। 

   সত্যিই জীবনের রঙ বড্ড অম্লমধুর ! 

                      

                       ‌হাফলং, ডিমা হাসাও॥

 

কোন মন্তব্য নেই: