“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

সোমবার, ২৬ জুলাই, ২০২১

যে ক'টা দিন পৃথিবীতে ৷৷ পঞ্চম পর্ব

 ।। মিফতাহ উদ-দ্বীন ।।

।। ৫।। 

 

(C)Image:ছবি

প্যান্ডেলের বাহারি পর্দাগুলো ভোরের হাওয়া পেয়ে যেন একেবারে সতেজ হয়ে উঠেছে। কাল রাতে কেমন নিথর ছিল। মনে হচ্ছিল জোর করে কেউ তাঁদের লটকে রেখেছে। অথচ এখন কেমন দুলে দুলে উঠছে। কাল রাতে আমিই তাঁদের বলেছিলাম একটু খোলামেলা রাখতে, যাতে বাতাস আসা যাওয়া করতে পারে। বেশি সাজাতে গিয়ে অনেক সময় প্যান্ডেলের ভেতরটা সাফোকেটেড মনে হয়। মানুষজন ডেকে তাঁদের এভাবে দম বন্ধ পরিবেশে যতই ভালো খাবার দাও, তাঁদের ভালো লাগবে না। আর আমার ও বিরাট অপছন্দ এমন সাফোকেটিভ প্যান্ডেল। 

 

আব্বা মসজিদে এখনও। আমি প্যান্ডেলের প্রবেশ পথের পর্দা গুলোর সাথে খেলছি। ভোরের স্নিগ্ধ মনোরম আবহাওয়ায় ঢেউ খেলা পাতলা নেটের পর্দাগুলো আমার চোখে মুখে সুড়সুড়ি দিচ্ছে যেন। আমার ইচ্ছে করছে না ঘরে যেতে এ মুহূর্তে! তাছাড়া কাল রাতের অসমাপ্ত কথাগুলো হঠাৎ করে মনে পড়ায় রোমাঞ্চের কলস যেন কানায় কানায়। বেয়ে পড়বে পড়বে অবস্থা। ভোর সকালের এই উথালপাতাল হাওয়া আর তাতে পর্দার ঢেউ খেলা, সব মিলিয়ে একটা আলাদা পরিবেশ যেন। এমন-ই সময় হঠাৎ সাদা সালোয়ার-কামিজ পরিহিতা মিস নাদিয়া কুরেশির আমার দিকে আগমন। এ যেন "১৯৪২ঃ এ লাভ স্টোরির" মনীষা কৈরালা! আমার এমন উদ্ভট অথচ ভাল্লাগা কল্পনায় তাঁর একটা আকস্মিক প্রশ্ন পুরো মুহূর্তটা কে এক ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে গেল যেন!

 

-- আমি এখানে কিছুক্ষণ থাকতে পারি?

-- হ্যাঁ হ্যাঁ ; বলেই দেখলাম আশপাশে আর কেউ আছেন কি।

-- কী করছিলেন?

-- কে, আমি? 

সে তাঁর মাথাটা বাঁকিয়ে এমন ভাবে দেখল যেন এটা একটা প্রশ্ন হল! 

-- না, মানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম সব কিছু ঠিকঠাক আছে কি না, আজ আমার শ্বশুর বাড়ির লোকজন আসবেন!

-- কই আমি তো দেখছি এখানে একজন প্রেমিক টাইপ মানুষ পর্দাগুলোর সাথে খেলছে সেই কখন থেকে, কখনও হাত দুটো মেলে ধরছে, তো কখনও বন্ধ করে হাঁ করে তাকিয়ে আছে! বিচিত্র সব অঙ্গভঙ্গি! 

এবার আমি সত্যি সত্যিই লজ্জা পেলাম। মাথা নিচু করতেই সে হাত ধরে বলল, 

-- চলেন দেখে আসি। আপনার শ্বশুরবাড়ির লোকজন আসবেন আর আমি দেখব না, কেমন আয়োজন, সে কি হয়? আফটার অল আমার স্বামীর শ্বশুরবাড়ির লোক!!

নাদিয়ার এই স্পন্টেনিয়াস হিউমার আমাকে পাগল করে তুলবে যেন। এ তো দেখছি আমার ওস্তাদ! ভাবলাম এই সময়টা ওকে বেকায়দায় ফেলার একটা মোক্ষম সুযোগ। আমি সহজে হারতে পারি না!

-- তিস্তা পড়ার পর থেকে, কী হয়েছে?

সে শুনেও না শোনার ভান করে যাচ্ছে। আমি পেছনে পেছনে হাঁটছি, আমার হাতটা এখনো তাঁর হাতেই। 

-- আচ্ছা খাবার যায়গাটায় মোট ক'টা টেবিল লাগানো হবে?

-- জানি না!

-- জানি না মানে? 

-- ত্রিশটার মতন হবে হয় তো!

-- তার মানে চারজন করে হলে মোট একশ বিশ জন!

-- অংকে দেখি বেশ ভালো আপনি। 

-- আপনি না তুমি!

 

আব্বা মসজিদে থেকে ফিরছেন দেখা যাচ্ছে। নাদিয়া চলে গেলো ঘরে। আমিও পেছনে পেছনে তাঁকে অনুসরণ করলাম। 

 

ক্রমশ: 

 

#যেকটাদিনপৃথিবীতে

 

কোন মন্তব্য নেই: