“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

সোমবার, ২৬ জুলাই, ২০২১

যে ক'টা দিন পৃথিবীতে ৷৷ অষ্টম পর্ব

।। মিফতাহ উদ-দ্বীন।। 

 

।। ৮।। 

 

(C)wanitaaad.com

গেল লকডাউনের সারাটা সময় ফেসবুক করেই কাটিয়েছিলাম। তিস্তার জন্ম তখন-ই। স্কুল বন্ধ থাকায় কোনও কাজ ছিল না। ভাতটাত খেয়েই বসে পড়তাম ফেসবুক নিয়ে। আর হঠাৎ করেই একদিন কিভাবে তিস্তা লিখতে শুরু করেছিলাম ঠিক মনে নেই। একটা পাহাড়ি স্টেশনে চাকরির সুবাদে গিয়ে তিস্তার সাথে দেখা, তারপর প্রেমের শুরু। পুরোটাই কাল্পনিক ছিল আর ছিল ছন্দে। আমার এমন উদ্ভট কর্মে আমি নিজে ও মাঝে মাঝে বিরক্ত হই। তবু লিখে যাচ্ছিলাম, একটা ভালোলাগা কাজ করছিল। কেউ কেউ সেটাকে "শেষের কবিতা"র মত বলছিল কমেন্টে, ব্যাপারটা মনে বেশ উৎসাহ জাগিয়েছিল।আর সে-ই তিস্তা -ই কি না এবারের লকডাউনে আমাকে নাদিয়া উপহার দিল? একেবারে জলজ্যান্ত একটা মেয়ে, আমার বউ, যে ধীরে ধীরে আমার প্রেমিকা হচ্ছে আর আমি তার প্রেমিক। এক অদ্ভুত ভালোলাগায় মনটা ভরে উঠল। এমন প্রেম যেখানে গোনাহের লেশমাত্র নেই। প্রতিটা মুহূর্ত সওয়াবের। নাদিয়াকে তিস্তা দিল না আল্লাহ দিলেন, ভাবতে ভাবতেই দেখি নাদিয়া রুমে এসে ঢুকছে। তিস্তা কে হাওয়ায় ভাসিয়ে চির বিদায় জানিয়েই বললাম...

 

- তা, মিস নাদিয়া বেগম, কী খবর? 

- বেগম? 

নাদিয়া মাথা নিচু করে চোখ দু'টো বড় করে উপরে তুলে চমকাল যেন? 

- হ্যাঁ, বেগম ই তো! তুমি তো আমার বেগম জান! আর আমি তোমার বাদশাহ! 

- ওহ, তাহলে ‘মিয়া' বলেন, আপনি মিয়া আর আমি বেগম।

- মিয়া হলে তো বিবি হবে, মিয়া-বিবি! 

- নাহ, বেগম ঠিক আছে, মিয়া-বেগম! 

- নাহ, বাদশাহ-বেগম ঠিক আছে! 

 

একপর্যায়ে দু'জনই হেসে উঠলাম। নামের কনফুশ্যনটা তুলতে গিয়ে শেষে মিয়া বিবির লড়াইয়ে রূপান্তরটা খারাপ মনে হল না। তাছাড়া আমি কীভাবে জিজ্ঞেস -ই বা করতে পারি, তুমি কুরেশি কেন? এটা তো এ দেশীয় টাইটেল নয়! ভেতরের কুয়াশাটাকে আর আমলে না নিয়ে বললাম...

 

- আচ্ছা, তিস্তা পড়ার পর কী হয়েছিলো? 

- কিছু না!

- আহা, বল না! 

নাদিয়া চুপ করে আছে, কোনও রিয়েকশনই নেই।

- আচ্ছা, ঠিক আছে, তুমি আমাকে কবে থেকে ফলো করছ? 

- ফলো করছি? ফলো করছি মানে? 

সে একটু রেগে গেলে যেন এবার! আমি আমার কথার ধরণটা বুঝলাম একটু বেশি-ই কেমন যেন হয়ে গেছে, তা-ই সঙ্গে সঙ্গেই বললাম, 

- না, মানে ওই যে বললে না, আমার লেখা ফেসবুকে পড়, তা-ই জানতে চাচ্ছিলাম আর কি, বুঝো না ভেতরে ভেতরে একটা কৌতূহল থেকেই যায়, তাছাড়া সে-ই মেয়েটিই এখন আমার...

- এখন আমার কী?

- এখন আমার বিবি, সরি বেগম, আমার বেগম জান, আমার বউ! 

এবার সে হেসে ফেলল! 

- কলেজ থেকে। 

- হুম, তারপর? 

- তারপর আর কী?

- আহা, বল না!

- সুমনাই একদিন কলেজে দেখাল আপনার একটা গল্প, কী জানি কী নাম ছিল সেটার, চেন্নাই থাকাকালীন। পড়ে ভালো লেগেছিল, ফলো করে রেখেছিলাম, সে-ই থেকেই পড়া হয়। 

- আর তিস্তা? 

- কে তিস্তা? আমি চিনি না কোনও তিস্তা, বলেই উঠে চলে গেল। একটু লজ্জা পেল যেন।

আমি অংক মেলালাম, কীভাবে, কেন সেদিন সকালের "শোব, না শোব না’ খেলায় হঠাৎ সুমনার আগমন ঘটেছিল! 

আহ, মেয়েরা! 

 

ক্রমশ: 

 

#যেকটাদিনপৃথিবীতে

 

কোন মন্তব্য নেই: