এখন রাত ন'টা! রুমের ভেতর আমি আর নতুন বউ। বিয়ে বাড়ি বলে বেশি রাত করা চলবে না, আব্বার কড়া নির্দেশ, যে ভাবে এতকাল চলে আসছে সে ভাবেই এশার পরপরই ঘুমাতে যেতে হবে। দু রাকা'ত নফল পড়ে বসে আছি, বউ এখনো সেজদায়। কে কোথায় ঘুমাবেন সে নিয়ে একটা হালকা আলাপ কানে ভেসে আসছে বাইরে থেকে। আমি দুচোখ বন্ধ করে দেয়াল ঘড়িটার কাঁটার শব্দ ত্রিশ অব্ধি গুনে চোখ খুলে দেখি বউ এখনো সেজদায়। একটা ভয় যেন পেতে শুরু করলাম এই বেলা। সে কি আসলেই সেজদায়, না ঘুমিয়ে পড়লো, না বেহুঁশ টেঁহুশ হয়ে গেলো, এই চিন্তায় সোফা ছেড়ে উঠতেই সামনে রাখা টেবিলের কোণায় হাঁটু'টা লেগে বেশ বিশ্রী একটা আঘাত পেলাম। যন্ত্রণাটা চেপেছি সত্য কিন্তু কপালের ভাঁজ টা রয়েই গেলো যেন।
"আপনার কি মাথা ব্যথা করছে?' তে যেন একটা ভিরমি খেলাম। আর অবাক ও। প্রথম কথা! জীবনের অনিবার্য কুশীলবের সাথে প্রথম সংলাপ।
আমার সংলাপটা কী হবে এই বার, সেটা ভাবতে মন দেবো দেবো করছি কিন্তু একটা খটকা যেন পেয়ে বসলো আবারও। ও তো সেজদায় ছিল, আর এতো জলদি শহুদ, দরুদ, দোয়া সব করে ফেললো, না-কি হিন্দি সিনেমার মুসলিম ভিলেনের মত সেজদা থেকে উঠেই সোজা সালাম ফেরাল, না-কি আমার চোটের শব্দে নামাজ ভেঙে ফেললো! শেষের অপশন টা ভাবতেই একটা রোমাঞ্চ অনুভব করলাম সারা শরীরে যেন, সেই রোমাঞ্চের আঁচ লাগলো হাঁটুতে ও, কপালের ভাঁজটাকে ইস্ত্রির মত সোজা করে বললাম, "নাম...'
"ওহ, সেটা শুধুই সেজদা ছিলো, সকালে সেজদার আয়াত পড়েছিলাম, সেজদা দিতে ভুলে গেছিলাম!'
সে বোধহয় ভাবল আমি নামাজের কথা জিজ্ঞেস করছি, বা ভাবতে পারে কিভাবে সেজদা থেকে উঠেই....ইত্যাদি ইত্যাদি এবং হয়তো বা সেই শেষের অপশন টা ও ভেবে রেখেছে নফল নামাজ থেকে স্বামীর...তা-ই একবারে সব পরিষ্কার করে বলে দিলো। কিন্তু সে সেটা ভাবে নি যে আমার অপরিষ্কার গলায় আমি আসলে নামটাই জানতে চেয়েছিলাম তখন কাঁপা কাঁপা স্বরে।
আমি নামেই আটকে আছি যে!
সে চোখ তুলে ভ্রু কাঁপিয়ে মাথা ঈষৎ উপর নীচ করলো যেন। আমি বুঝলাম, ইশারাতে জিজ্ঞেস করছে, কি ব্যাপার? আমি আমার অপজিটের ফিমেল লীডের এই তিন নম্বর মিউট করা ইশারার ডায়লগটা দেখলাম প্রথম এবং দ্বিতীয় টা থেকে ও আরও সুন্দর। আর এ-ও দেখলাম যে এ পর্যন্ত আমার ডায়লগ মাত্র একটা-ই ডেলিভার করা হয়েছে, সে ও অপরপ্রান্তে পৌঁছতে পৌঁছতে অর্থ বদল করে ফেলেছে। আমি আর দেরি না করে বললাম, "না, ওই একটু টেবিলের কোণায় পা টা মানে হাঁটু টা...'
সে বিছানায় রাখা তাঁর ছোট্ট ব্যাগ থেকে বরোলিন বের করে বলল, লাগিয়ে দিচ্ছি। আমি হ্যাঁ না করতে করতেই শুনতে পেলাম...
নাদিয়া ক্বুরেশি!
অস্ফুটস্বরে মনে মনে যেন বললাম, এন ক্বিউ! সে "ওয়েলকাম" বলে একটা মুচকি হাসি দিলো! ভাবলাম আমার এবারের ডায়লগ টা ও অপরপ্রান্তে পৌঁছতে পৌঁছতে অর্থ বদল করেছে। নাদিয়া ক্বুরেশির শর্ট ফর্ম টা থ্যাংকইউ হয়েছে ইথারে!
ক্রমশ:
#যেকটাদিনপৃথিবীতে
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন